কাকিনা জমিদার বাড়ি

বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলায় অবস্থিত ১৬ শতকের একটি জমিদার বাড়ি

কাকিনা জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের অন্তর্গত লালমনিরহাট জেলায় অবস্থিত এক ঐতিহাসিক নিদর্শন। যার রয়েছে অনেক ইতিহাস। কাকিনা জমিদার বাড়ির অধিক বিস্তার লাভ করার কারণে এটি কাকিনা রাজাবাড়ি নামেও পরিচিত। [১]

কাকিনা জমিদার বাড়ি
সাধারণ তথ্য
ধরনবাসস্থান
অবস্থানকালীগঞ্জ উপজেলা
শহরকালীগঞ্জ উপজেলা, লালমনিরহাট জেলা
দেশবাংলাদেশ
খোলা হয়েছে১৬ শতকের শেষদিকে
স্বত্বাধিকারীরাম নারায়ণ চৌধুরী
কারিগরী বিবরণ
উপাদানইট, সুরকি ও রড

অবস্থান সম্পাদনা

রংপুর বিভাগের লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কালীগঞ্জ ইউনিয়নের কাকিনা গ্রামে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক কাকিনা জমিদার বাড়ি[১]

ইতিহাস সম্পাদনা

প্রায় চারশত বছর আগে ১৬৮৭ সালে এই কাকিনা জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কাকিনার এই জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে এটি ছিল একটি চাকলা। যা ছিল কোচবিহার রাজ্যের মহারাজা মোদ নারায়ণের অধীনে। তখন এই কাকিনা চাকলার চাকলাদার ছিলেন ইন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী। ১৬৮৭ সালে ঘোড়াঘাটের ফৌজদার এবাদত খাঁ কোচবিহারের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তার পরীপ্রেক্ষীতে রঘু রামের দুই পুত্র রাঘবেন্দ্র নারায়ণ ও রাম নারায়ণ ফৌজদারের পক্ষে চলে যায়। রাঘবেন্দ্র নারায়ণ ও রাম নারায়ণ পিতা রঘু রাম ছিলেন চাকলাদার ইন্দ্র নারায়ণ চত্রুবর্তীর কাকিনা চাকলার সাধারণ কর্মচারী। মোগলদের এই অভিজানে কোচবিহাররা পরাজিত হয় এবং মোগলদের জয় হয়। তখন তারা চাকলাদার ইন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তীকে চাকলাদার থেকে বহিষ্কার করেন। তারপরে রঘু রামের দুই পুত্র রাঘবেন্দ্র নারায়ণকে পরগনা বাষট্রি ও রাম নারায়ণকে পরগনা কাকিনার চৌধুরী নিযুক্ত করা হয়। আর এরই মধ্য দিয়ে ইন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী কাকিনার চাকলাদারী শেষ হয়ে রাম নারায়ণের মাধ্যমে কাকিনা জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে এই কাকিনা জমিদার বাড়ির জমিদার বংশধররা দীর্ঘদিন জমিদারি করার পর এই জমিদার বাড়ির জমিদারির পতন হয় জমিদার মহেন্দ্র রঞ্জনের জমিদারির সময়। তার বিশাল ব্যয় ও বিলাসিতার কারণেই মূলত ধ্বংসের কারণ। মহাজন ও সরকারি রাজস্ব দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ১৯২৫ সালে তার জমিদারি নিলাম হয়ে যায়। তখন এটি ভারকোর্ট অব ওয়ার্ডসের অধীনস্থ হয়। আর জমিদার মহেন্দ্র রঞ্জন জমিদারি হারিয়ে প্রায় নিঃস্ব অবস্থায় পড়ে যান। তখন তিনি তার পরিবার নিয়ে ১৯৩৯ সালে কার্সিয়াং বা দার্জিলিংয়ে চলে যান এবং ঐ বছরেই সেখানে তার মৃত্যু হয়। ঐ বছরেই সেখানে তার মৃত্যু হয়। জমিদার মহেন্দ্র রঞ্জন জমিদার এর অবশিষ্ট বংশধর পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। সর্বশেষ হামিদা খাতুন গংগাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়ন, কামদেব শেখপাড়া গ্রামে তার স্বামীর বাড়ীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। হামিদা খাতুন এর বড় ছেলে মর্ণেয়া ইউনিয়ন এর বর্তমান চেয়ারম্যান মোছাদ্দেক আলী আজাদ।

[১][২][৩]

অবদান সম্পাদনা

কাকিনা জমিদার বাড়ির জমিদার বংশরা দীর্ঘদিন জমিদারি করেন এবং একএক জমিদার একএক অবদান রেখে গেছেন। যা তাদের ইতিহাসের খাতায় নাম গেঁথে রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো - ১৮৪৯ সালে এই জমিদার বাড়ির জমিদারি পাওয়া শম্ভুচরণ রায়। তিনি একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা বের করেন ১৮৬০ সালে, যার নাম দেওয়া হয় 'রঙ্গপুর প্রকাশ।' এটিই হলো রংপুর জেলার প্রথম পত্রিকা। আর একটা হাসপাতাল তৈরি করেন। নাম দেন 'শম্ভুচরণ চ্যারিটাবল হসপিটাল'। পরবর্তীকালে সেটা রাণী শান্তিবালা চ্যারিটাবল হসপিটাল নামে পরিচিতি লাভ করে। এই হাসপাতালে ইনডোর ও আউটডোর সেবার ব্যবস্থা ছিলো। তারপর ওনার দত্তক পুত্র মহিমা রঞ্জন রায় জমিদারি পাওয়ার পর ১৯০৮ সালে বগুড়ার 'উডবার্ণ' লাইব্রেরী, রংপুর জেলার রেলপথ, রেল স্টেশন ও জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন। দুটি রেল স্টেশন মহেন্দ্রনগর ও মহিমাগঞ্জ তার নিজের এবং পুত্রের নামে করেন। এছাড়াও রংপুর শহরে 'কৈলাশ রঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয়' ও 'মহিমা রঞ্জন স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়' (হাই ইংলিশ স্কুল) তার মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৯ সালে। [১]

বর্তমান অবস্থা সম্পাদনা

বর্তমানে জমিদার বাড়িটিতে জমিদার বাড়ির সাক্ষী হিসেবে মূলত হাওয়া খানাই আছে যা ৪ তলা বিশিষ্ট। জমিদারদের শ্যাওলা ভরা গোপন আস্তানা, মিলনায়তন ও বাড়ির দূরের জমিদার বাড়ির ঔষুধখানা আছে। আর মূল বাড়িটি এখন 'উত্তর বাংলা কলেজ' হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। [৪]

গ্যালারী সম্পাদনা

যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পাদনা

ঢাকা হতে সড়কপথ ও রেলপথে প্রায় ৩৬৮ কি.মি.। সড়কপথে ঢাকা থেকে লালমনিরহাট জাতীয় মহাসড়ক পথে বুড়িমারী (পাটগ্রাম উপজেলা) মহাসড়ক পথে লালমনরিহাট হতে প্রায় ২১ কি.মি. কাকিনা বাজার বাসস্ট্যান্ড। বাসস্ট্যান্ড হতে ২০০ গজ পশ্চিমে জমিদার বাড়ির ভগ্নাবশেষ অবস্থিত। আর রংপুর হতে লালমনিরহাট হয়ে বুড়িমারি স্থল বন্দরের রাস্তায় ৬৬ কি.মি. দূরে জমিদারবাড়ি অবস্থিত। রেলপথে লালমনিরহাট হতে বুড়িমারি রেলপথে কাকিনা রেল স্টেশন নেমে প্রায় ২ কি.মি. দক্ষিণ দিকে জমিদারবাড়ি অবস্থিত। [১]

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা