কাঁকড়াভুক ব্যাঙ

উভচর প্রাণীর প্রজাতি

কাঁকড়াভুক ব্যাঙ বা ম্যানগ্রোভ ব্যাঙ বাংলাদেশের প্রাপ্ত ব্যাঙের একটি প্রজাতি। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল ২ অনুযায়ী প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[১]

Crab-eating Frog
Fejervarya cancrivora from Bogor, West Java
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণী জগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
উপপর্ব: Vertebrata
শ্রেণী: Amphibia
বর্গ: Anura
পরিবার: Ranidae
গণ: Fejervarya
প্রজাতি: F. cancrivora
দ্বিপদী নাম
Fejervarya cancrivora
(Gravenhorst, 1829)

বৈজ্ঞানিক নাম সম্পাদনা

Fejervarya cancrivora [২] আগে এর নাম ছিল Rana cancrivora বা Limnonetes (Hoplobatrachus) cancrivora।

শনাক্তকরণের ইতিহাস সম্পাদনা

২০০৭ সালের জুলাইয়ে অধ্যাপক দত্ত উড়িষ্যার উপকূলে প্রথমবারের মতো এমন ব্যাঙের প্রজাতির সন্ধান পান। মালয়েশিয়ায় কর্মরত ভারতীয় উভচর-সরীসৃপ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল দাস ছবিগুলোকে এ প্রজাতির বলেই শনাক্ত করেন। ১৯৯৪ সালে সুন্দরবনে কাজ করার সময় জার্মান বিজ্ঞানী জুটি জেরট্রাড নিউম্যান-ডেনজু ও হেলম্যাট ডেনজু বুড়িগোয়ালিনী থেকে একটি ব্যাঙের ছবি তোলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ও জাপানের বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে সুন্দরবনের এ ব্যাঙ নিয়ে গবেষণা করেন। [৩]

বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

কাঁকড়াভুক ব্যাঙের সঙ্গে আমাদের দেশে সচরাচর দেখা পাওয়া কোলা বা সোনা ব্যাঙ ও কটকটি ব্যাঙের সাদৃশ্য রয়েছে। কিন্তু এরা উপকূলীয় এলাকা থেকে দূরে বাস করে না। চোখের পেছন থেকে উভয় পাশে টানা শৈলশিরা বা উত্তোলিত রেখা এই ব্যাঙের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। উপরন্তু পিঠের ওপর শৈলশিরা বা উত্তোলিত রেখা একটানা নয়, ভঙ্গুর। চোখের সামনে থেকে নাকের ছিদ্র পর্যন্ত পারতপক্ষে কোনো রেখা নেই, যা সহযোগী প্রজাতিতে আছে। এ ছাড়া চঞ্চু থেকে দেহের শেষ ভাগ পর্যন্ত সচরাচর কোনো হালকা ডোরা দেখা যায় না। এরা ছয় থেকে আট সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, বিশেষ করে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞানীদের মতে, পুরুষ-ব্যাঙের চেয়ে স্ত্রী-ব্যাঙ বড় হয়। এই ব্যাঙ আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আর তা হলো, এরা শরীরে অতিমাত্রায় ইউরিয়া জমা রাখতে পারে। এ কারণে এরা প্রায় সাগরজলের সমপরিমাণ লবণাক্ততা সহনক্ষম।ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত Knut Schmidt-Nielsen তার প্রাণীর শারীরবৃত্ত: অভিযোজন ও পরিবেশ গ্রন্থে বলছেন, পূর্ণ বয়সী ব্যাঙের চেয়ে ব্যাঙাচির লবণাক্ততা সহনক্ষমতা বেশি। এই ব্যাঙ যে পরিমাণ ঘন লোনাপানিতে বাস করে, দেশের অন্য কোনো ব্যাঙ তা পারে না।

খাদ্য সম্পাদনা

এরা মূলত কাঁকড়া (crab) খেয়ে থাকে। cancri অর্থ কাঁকড়া (crab) আর vorus মানে খাওয়া (feeder, eating)। এদের খাদ্যাভ্যাস থেকেই এ ধরনের নামকরণ। তবে ম্যানগ্রোভ অঞ্চলের বাইরে থাকার সময় এটি পতঙ্গ ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী খেয়ে থাকে।

বিচরণ সম্পাদনা

ম্যানগ্রোভ অঞ্চলের বাইরে মনুষ্যবসতির কাছে স্বাদু পানির পরিবেশেও এদের বাস করতে দেখা যায়।

বংশবিস্তার সম্পাদনা

এদের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয় কেবল স্বাদু পানিতে। বাংলাদেশে বর্ষাকালে সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে সাময়িক কিছু ডোবা তৈরি হয়। এসব ডোবার মধ্যে এদের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ১০ ২০১২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, পৃষ্ঠা- ১১৮৫০২
  2. বৈজ্ঞানিক নাম
  3. সুন্দরবনে নতুন প্রজাতির ব্যাঙ ‘কাঁকড়াভুক’[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা