কমলকৃষ্ণ স্মৃতিতীর্থ

মহামহোপাধ্যায় কমলকৃষ্ণ স্মৃতিতীর্থ (মার্চ ১৮৭০ - ২৫ জানুয়ারি ১৯৩৪) ছিলেন সিদ্ধ পুরুষ বাশিষ্ট শ্রীশ্রী নারায়ণ ঠাকুরের অধস্তন একাদশ পুরুষ।

মহামহোপাধ্যায় কমলকৃষ্ণ স্মৃতিতীর্থ

বংশ পরিচয় সম্পাদনা

মহামহোপাধ্যায় কমলকৃষ্ণ স্মৃতিতীর্থ (১৮৭০ - ১৯৩৪) ভাটপাড়ায় বাশিষ্ঠ বংশের পন্ডিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভট্টপল্লীর প্রখ্যাত পন্ডিত নন্দলাল ন্যায়রত্ন এবং মাতা ভৈমী দেবীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। বাংলা ১২৭৬ ফাল্গুনে (১৮৭০ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে) তাঁহার জন্ম হয়।

শিক্ষালাভ সম্পাদনা

তদানীন্তন প্রধান বৈয়াকরণ দিগম্বর তর্কসিদ্ধান্তের চতুষ্পাঠীতে ব্যাকরণ ও কাব্য পাঠ করে ১২৯৩ শশাঙ্কাব্দে (১৮৮৭) গভর্ণমেন্ট পরীক্ষায় ``কাব্যতীর্থ" উপাধি প্রাপ্ত হন। তার পরে তাঁহার পিতা এবং ভট্টপল্লী স্থিত অন্যান্য বিদ্বানদের কাছে স্মৃতি এবং ন্যায় শাস্ত্রাদি পাঠ করেন।

কর্মক্ষেত্র সম্পাদনা

বাঙ্গাবাসী কার্য্যালয়ের প্রকাশিত ``শাস্ত্রপ্রকাশ" পত্রিকায় কতিপয় পুরাণের অনুবাদ করেন। ১৩০২ সনে (১৮৯৭) মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সাথে প্রথম নেপাল যাত্রায় নেপালের দরবার লাইব্রেরীতে স্মৃতি ও অন্যান্য শাস্ত্রের পুস্তক সংগ্রহার্থে বঙ্গীয় এশিয়াটিক সোসাইটি দ্বারা প্রেরিত হন। ১৩০৬ সনে (১৯০০) এশিয়াটিক সোসাইটির ``Bibliotheca Indica"র সম্পাদন কার্য্যে নিযুক্ত হন এবং নয়টি স্মৃতি এবং একটি জ্যোতিষ গ্রন্থ তাঁহার দ্বারা সম্পাদিত হয়। একই বর্ষে ভাটপাড়া সংস্কৃত কলেজে কাব্যের অধ্যাপক পদে নিযুক্ত হন। ১৩১২ সনে (১৯০৬) গভর্ণমেন্ট পরীক্ষায় স্মৃতিতীর্থ উপাধি প্রাপ্ত হয়ে ভাটপাড়া সংস্কৃত কলেজে স্মৃতিশাস্ত্রের অন্যতর অধ্যাপক-পদে উন্নীত হন এবং আমৃত্যু এই পদের মর্যাদা রক্ষা করেছেন। ১৩৩০ সনে ২৩শে মাঘ (১৯২৪ খ্রীষ্টাব্দ) এশিয়াটিক সোসাইটির সহযোগী সদস্য নির্বাচিত হন।

১৩৩২ সনে (১৯২৬ খ্রীষ্টাব্দ) গভার্ণমেন্ট হইতে মহামহোপাধ্যায় উপাধি দ্বারা ভূষিত হয়েছিলেন। তাঁর সাথে সেই বছর এই উপাধির সহ-প্রাপক ছিলেন ফণীভূষণ তর্কবাগীশ। উপাধি দেওয়ার সময় গবর্নমেন্টের হয়ে আর্ল অফ লিটন বলেছেন:

"Your family was famous for its learning and piety and you have followed faithfully in the footsteps of your fathers. A pandit of the old school, you have proved yourself a Sanskrit scholar of unusual profundity and width. You have rendered signal services to Sanskrit learning by editing in the Bibliotheca Indica series, some of the rarest works of Smriti and a work on Astronomy; and no less an authority than the Asiatic Society of Bengal has shown its appreciation of your merit by making you an associate member. You have done much to farther the spread of Sanskrit learning, and I congratulate you on this farther recognition of your high character and profound scholarship."[১]

১৩৩৩ সনে (১৯২৭) ``প্রাচীন ভারতে সাক্ষ্যবিধি'' নামক গবেষণামূলক প্রবন্ধের জন্য কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগেন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার প্রাপ্ত হন। ১৩৩৪ সনে (১৯২৮) বরোদা গভার্ণমেন্ট তাঁহাকে `গাইকোয়াড় ওরিয়েন্টাল সিরিজে'র অন্যতম সম্পাদক নিযুক্ত করেন। ১৩৩৫ সনে (১৯২৯) থেকে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ. পরীক্ষায় পরীক্ষক নিযুক্ত হন। সংস্কৃত শ্লোক রচনা ইনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন এবং ভট্টপল্লীর সংস্কৃত নাটকাভিনয়ের সময়ে ইনি মুখ্য ভূমিকা পালন করতেন। স্বীয় বাস্তুতে পিতামহের নামে ``কৈলাস চতুষ্পাঠী" স্থাপন করে প্রায় শত সংস্কৃত পণ্ডিতদের স্মৃতি, যজুর্বেদ এবং অন্যান্য শাস্ত্রাধ্যয়ন করেছেন।

পুরস্কার/উপাধি সম্পাদনা

  • কাব্যতীর্থ
  • স্মৃতিভূষণ
  • স্মৃতিতীর্থ
  • মহামহোপাধ্যায়
  • কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগেন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার
  • এশিয়াটিক সোসাইটির সহযোগী সদস্য (Associate Member)

গ্রন্থ সম্পাদনা

সম্পাদিত সম্পাদনা

অনুদিত সম্পাদনা

  • অগস্ত্য সংহিতা
  • রাজতরঙ্গিণীর শেষার্দ্ধ
  • কথা সরিৎ সাগরের বঙ্গানুবাদ

প্রণীত সম্পাদনা

মৃত্যু সম্পাদনা

১৩৪০ সনে ১১ই মাঘ (২৫শে জানুয়ারী ১৯৩৪) ভট্টপল্লীতে স্বীয় বাসভবনে সজ্ঞানে ‍৺গঙ্গালাভ করেন। তাঁর মৃত্যুতে পঞ্চানন তর্করত্ন লিখেছিলেন:

কবি, সুবক্তা, সদানন্দ কমলকৃষ্ণ --- যাও! যাও আমার কমল, যাও সোনার কমল --- মন্দাকিনীই তোমার প্রকৃত স্থান, --- এ মর্ত্ত্যভূমি কয়দিনের জন্য তোমার সৌরভসুখ ভোগ করিয়াছে --- সৌভাগ্যক্রমে। এখন তোমার নিত্যস্থানের নিজ আসনে গিয়া আমোদ বিস্তার কর।

তথ্যবিবরণী সম্পাদনা

  1. Chakravarti, Chintaharan. "Mahamahopadhyaya Kamalkrishna Smrititirtha." Modern Review 55, no. 5 (1934): 517-518.
  2. Bhattacharya, Bhabatosh. "Obituary Notices - M.M. Pandit Kamal Krishna Smrititirtha." Year-Book of the Royal Asiatic Society of Bengal I (1935): 186-188.
  3. তর্করত্ন, পঞ্চানন. (১৩৪০). মহামহোপাধ্যায় কমলকৃষ্ণ স্মৃতিতীর্থ. মাসিক বসুমতি, ১২শ বর্ষ, ২য় খন্ড(৪র্থ সংখ্যা), ৬৮৩-৬৮৪.

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Speeches Delivered By H.E. The Earl Of Lytton During 1926। ১৯২৬। পৃষ্ঠা 170-171।