ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে মরুকরণ বা মরুভূমি গঠন প্রক্রিয়ার অধ্যয়নকেই বলা হয় ঐতিহাসিক মরুকরণ। অতীতে ধারণা করা হত যে ফসলি জমির অতিরিক্ত ব্যবহার মাটির আর্দ্রতা হ্রাস করে, তাই পরবর্তীতে উক্ত জমি মরুভূমিতে পরিণত হয়। জমিতে সবুজ আচ্ছাদনের পরিমাণ হ্রাস পাওয়া, খরার প্রকোপ বৃদ্ধি কিংবা ঘূর্ণিবাত (Wind erosion)- এগুলোও মরুকরণের নিয়ামক হিসেবে বিবেচিত হত। কিন্তু সম্প্রতি দেখা গেছে, মরুভূমিগুলোকে সবুজায়নের মাধ্যমে পূর্বের ভূমিরূপ ফিরিয়ে আনার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এতে মরুকরণের প্রাচীন তত্ত্বগুলোর যথার্থতা নিয়েও অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন। সাম্প্রতিক গবেষণা দাবি করছে, কোনো প্রচণ্ড বা প্রলয়ঙ্করী ঘটনাই মরুকরণের সূত্রপাত করে - কম বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট খরা নয়। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট বন্যার পানিতে পলি ধৌত হয়ে চলে যায়; এবং ঐতিহাসিক পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বাইজেন্টীয় যুগের শেষের দিকে এরকম প্রলয়ঙ্করী ঘটনা সংঘটিত হতে দেখা যায়। মরু এলাকায় বসতি হ্রাসের জন্য খরাকে দায়ী না করে এরকম ঘটনাপ্রবাহকেই দায়ী করা হয়েছে।

মরুকরণের কারণ সম্পাদনা

ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় মরুকরণ প্রক্রিয়া রোমান ও বাইজেন্টীয় সাম্রাজ্যের ব্যাপক ধ্বংসের পরিচয়বাহী। রোমান ও বাইজেন্টীয় সাম্রাজ্যের জাঁকজমকপূর্ণ শহরগুলো কীভাবে এরূপ মরুভূমিতে পরিণত হলো, এ নিয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন যে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও যাযাবর জাতিগুলোর অধিক ভূমি ব্যবহার জমির সবুজ আচ্ছাদন সম্পূর্ণভাবে বিনষ্ট করে ও এর ক্ষয় ত্বরান্বিত করে। এ সকল ক্রিয়াকলাপের ফলে বৃষ্টিপাত হ্রাস পায়, যার দরুন ঐ ভূমি শেষাবধি মরুভূমিতে পরিবর্তিত হয়।[১]

তবে মরুকরণ প্রক্রিয়া প্রতিহত করা দুঃসাধ্য হওয়ায় এটি নিয়ে আদৌ অধিক পর্যালোচনার অবকাশ আছে কিনা- এ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- জর্ডানের জেরাশ শহরে কিং-তালাল বাঁধের নিকটস্থ এলাকায় ভূমিক্ষয় ও পলি সৃষ্টির প্রক্রিয়া প্রতিরোধের সকল প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়। সেখানে ভূমি সংরক্ষণের জন্য বিশেষ যন্ত্র স্থাপিত হলেও ব্যাপক বৃষ্টি-ঝড়ের ফলে পলি সৃষ্টির প্রক্রিয়া সেটি আটকাতে পারেনি। এমনকি পুনর্বনায়নের চেষ্টাও সেখানে সফল হয়নি। পাইন গাছ অত্যন্ত দাহ্য হওয়ায় অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। তাই পশুচারণক্ষেত্রগুলো মরুভূমির অধিক সংবেদনশীল এলাকায় সরিয়ে নেওয়া হয়।

গবেষণা সম্পাদনা

জর্ডানে চলমান গবেষণা প্রকল্পগুলোর অনুসন্ধান অনুযায়ী নব্য দ্রায়াস যুগ ও সর্বশেষ বরফ যুগে জর্ডানের মূল ভূমিরূপ টেরা রোসার ক্ষয় শুরু হয়। এখান থেকে ধারণা করা হয়, ঐতিহাসিক আমলে ভূমির ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত ছিল, যার ফলে মরুকরণে এটি প্রভাব সৃষ্টি করতে পারেনি।[২]

মরুকরণের পর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে যে বিষয়টি অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত, সেটি হলো খরা। কোনো কোনো লেখক দাবি করেন বৃষ্টিপাত হ্রাসই ঐতিহাসিক পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের মরুকরণের মূল কারণ। কেউ কেউ আবার ঐসকল এলাকায় বসতি নির্মাণের ধারাকেই মরুকরণের মূল কারণ হিসেবে দায়ী করেন। তবে বৃষ্টিপাত নিয়ে অধিক আলোচনা প্রকারান্তরে কৃষি উৎপাদনশীলতার ধরন নিয়ে অধিক আলোচনার পথ রুদ্ধ করে দেয়। বাইজেন্টীয় সাম্রাজ্যে এমন অনেক বৃষ্টিপাতের ঘটনা ঘটেছে, যেগুলো প্রলয়ঙ্করী হিসেবে আখ্যা পাওয়ার যোগ্য এবং মরুকরণে এরা খরার চেয়েও অধিক ভূমিকা রাখে । সেখানে জনসংখ্যা-ও ঠিক একই কারণে হ্রাস পেয়েছে।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা