উলিপুর মহারাণী স্বর্ণময়ী উচ্চবিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়

উলিপুর মহারানী স্বর্ণময়ী উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা শহরে অবস্থিত একটি মাধ্যমিক, কারিগরি ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি দেশের উত্তরাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।[১]

উলিপুর মহারানী স্বর্ণময়ী উচ্চবিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়
নীতিবাক্যশিক্ষার জন্য এসো, সেবার জন্য বেড়িয়ে যাও
অধ্যক্ষমোঃ জাহাঙ্গীর আলম সরদার
শিক্ষার্থীস্কুল- 1100, কলেজ- 1100
ঠিকানা, ,
মানচিত্র

প্রতিষ্ঠা ও নামকরণ সম্পাদনা

 
পুরোনো একাডেমিক ভবন

প্রায় দুই শতক পূর্বে ব্রিটিশ শাসনামলে, ১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন অত্র অঞ্চলের জমিদারপত্নী মহারাণী স্বর্ণময়ীর নামানুসারে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষা-দীক্ষায় পশ্চাদপর উত্তরাঞ্চলের শিক্ষার প্রসার ও মানোন্নয়নের মহৎ উদ্দেশ্যে মহারানী তার জমিদারী ও সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিদ্যালয়টিকে দান করে যান। প্রথমদিকে মহারানীর বাসভবনটি একাডেমিক ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হয় বহুদিন। ধীরে ধীরে এর আশেপাশে গড়ে ওঠে অন্যান্য ভবন ও স্থাপনাগুলো।[২]

শিক্ষার ইতিহাস সম্পাদনা

 
প্রাক্তন শিক্ষক ও কর্মচারী, ১৯৬৮-৬৯

বিদ্যালয়টি প্রথমে উচ্চবিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও ১৯৯৭ সালে এতে কারিগরি ও ১৯৯৯ সালে মহাবিদ্যালয় শাখা অন্তর্ভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই সকল ধর্মের শিক্ষার্থী এখানে অধ্যয়নের সুযোগ পেতো। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও অন্যান্য সুবিধা দিয়ে বিদ্যাশিক্ষায় উৎসাহিত করা হতো। অঞ্চলটি কিছুটা পশ্চাদপরায়ন ও অবহেলিত হওয়ায় এখানে নারী শিক্ষার তেমন প্রসার ঘটেনি বলে বহুকাল এতে নারীশিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিলো। সম্প্রতি নারীরাও সমানভাবে এখানে অধ্যয়নের সুযোগ পাচ্ছে।

ধারণা করা হয়, প্রতিষ্ঠাকালে এ বিদ্যাপীঠের প্রথম প্রধানশিক্ষক ছিলেন ‘কবিশেখর কালিদাস রায়’। দুই শতক যাবত বিদ্যালয়টিতে দেশের বহু গুনী পণ্ডিত ও শিক্ষাচার্য্যরা বিদ্যাদান করেছেন। উনিশ শতকের মধ্যভাগে উত্তরাঞ্চলের স্বনামধন্য পণ্ডিত সৈয়দ হামিদুর রহমান প্রতিষ্ঠানপ্রধান হিসেবে যোগদান করে এটির অবকাঠামো, পরিবেশ ও শিক্ষার মানের বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেন। পরবর্তীতে মোঃ আবুল কাশেম ও ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার প্রমুখের ন্যায় প্রধানশিক্ষকের হাতে এটি আরো পূর্নতা পায়।

এ বিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করেছেন বহু গুনীজন, পাঠলাভ করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন বহু সাধারন শিক্ষার্থী। একসময় সমগ্র উত্তরাঞ্চলের দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে বিদ্যালাভ করতে আসতো। এ বিদ্যাপীঠকে ঘিরে উলিপুর জনপদটি শিক্ষানগরী হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করে।[৩]

বিবরন সম্পাদনা

 
বর্তমান একাডিমক ভবন ও পাশে অধ্যক্ষ ভবন

শহর সংলগ্ন এই বিদ্যালয়ের প্রাচীন মূলভবনটি ছিলো একটি দ্বিতল-দ্বিমুখী ভবন, যেটি বর্তমানে সংস্কারকল্পে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে সেস্থলে একটি নতুন ত্রিতল ভবন স্থাপিত হয়েছে। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য একটি আলাদা ভবন সহ আরো পাঁচটি একাডেমিক ভবন রয়েছে। উচ্চবিদ্যালয়, কারিগরি ও মহাবিদ্যালয় শাখার জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা ভবন ও ক্লাশরুম। এর পাশে একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, যেটি একি নাম বহন করলেও প্রশাসন থেকে আলাদা।

বিদ্যালয়টি লাইব্রেরী, পর্যাপ্ত কম্পিউটার ও ল্যাব সুবিধা সরবরাহ করে। এছাড়া শিক্ষক-ছাত্রছাত্রীদের সুবিধার্থে নিজস্ব ক্যান্টিন ও গ্যারেজও রয়েছে। মূল ভবনের সামনে একটি সুবিশাল খেলার মাঠ ও দুটি পুকুর আছে। বিদ্যালয়টিতে খেলাধুলা ও শরীরচর্চার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। ধর্মচর্চার জন্য বিদ্যালয়ের পাশেই উলিপুর শাহী মসজিদ ও বিদ্যালয়ের নিজস্ব মন্দির রয়েছে। ধর্মীয় উৎসবগুলো এখানে যথাযথ মর্যাদার সাথে পালিত হয়।

বর্তমানে এখানে প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করে। শিক্ষক-কর্মকর্তার সংখ্যা প্রায় একশত। উচ্চবিদ্যালয়, কারিগরি ও মহাবিদ্যালয় শাখাত্রয় আলাদা অবকাঠামো নিয়েও পাশাপাশি এগিয়ে চলছে শিক্ষাদানের মহান ব্রত নিয়ে। প্রতিবছর বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় এ বিদ্যালয়ের ফলাফল ইর্ষনীয়। জুনিয়র বৃত্তি, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে এর সাফল্য অত্র জেলায় শীর্ষস্থানীয়।

প্রশাসন সম্পাদনা

এটি একটি বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মহাবিদ্যালয়ে উন্নীত হবার পর থেকে এটি একজন অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হয়। এছাড়া স্থানীয় বিদ্যানুরাগী, সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সহোযোগীতা এর শিক্ষার মানোন্নয়োনে অবদান রেখে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

আনুষঙ্গিক নিবন্ধ সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "উলিপুর মহারানী স্বর্ণময়ী উচ্চ বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়" |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)জাতীয় তথ্য বাতায়ন (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "কুড়িগ্রাম জেলার পরিচিতি ইতিহাস-ঐতিহ্য :: দৈনিক ইত্তেফাক"archive.ittefaq.com.bd (Bengali ভাষায়)। ২০২০-১০-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০৩ 
  3. "মহারানী স্বর্ণময়ী স্কুল এন্ড কলেজ দেড়শ বছরেও জাতীয়করণ হয়নি"পত্রিকা: ভোরের কাগজ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-০৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]


বহিসংযোগ সম্পাদনা

  1. শিক্ষাবোর্ড
  2. বাংলাপিডিয়া
  3. কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন