ইস্টার দ্বীপ (স্প্যানিশ ভাষায় যার নাম: Isla de Pascua [ˈisla ðe ˈpaskwa]; রাপা নুই: রাপা নুই) দক্ষিণ-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে চিলির একটি দ্বীপ এবং বিশেষ অঞ্চল, ওশেনিয়ার পলিনেশিয়ান ত্রিভুজের দক্ষিণ-পূর্ব বিন্দুতে অবস্থিত। দ্বীপটি তার প্রায় ১,০০০টি বিদ্যমান স্মারক মূর্তিগুলির জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত, যার নাম মোয়াই, যা প্রথম দিকের রাপা নুই সম্প্রদায়ের লোকেরা তৈরি করেছিল। ১৯৯৫ সালে, ইউনেস্কো ইস্টার দ্বীপকে একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের স্বীকৃতি প্রদান করে, যেখানে এই দ্বীপের বেশিরভাগ অংশই রাপা নুই নামক জাতীয় উদ্যানের মধ্যে সুরক্ষিত রয়েছে।

তবে দ্বীপের পলিনেশিয়ান বাসিন্দারা কখন দ্বীপে প্রথম পৌঁছেছিল তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা দ্বিমত পোষণ করেন। যদিওবা গবেষণা সম্প্রদায়ের অনেকেই বিভিন্ন প্রমাণে উদ্ধৃত করেছেন যে তারা ৮০০ সালের কাছাকাছি এসেছিলেন, এছাড়াও ২০০৭ সালের একটি গবেষণায় জোরালো প্রমাণ পাওয়া গেছে যে তারা ১২০০ সালের কাছাকাছি সময়ে পৌঁছেছিল। সেসময়ে সেখানকার বাসিন্দারা একটি সমৃদ্ধ এবং পরিশ্রমী সংস্কৃতি তৈরি করেছিল, যা দ্বীপের অসংখ্য বিশাল মোয়াই পাথর এবং অন্যান্য শিল্পকর্ম দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু সেসময়ের অধিবাসীদের চাষের জন্য জমি পরিষ্কার করা এবং পলিনেশিয়ান ইঁদুরের প্রবর্তনের ফলে ধীরে ধীরে সেখানকার বন উজাড় হয়ে যায়। তবে ১৭২২ সালে ইউরোপীয়দের আগমনের সময়, দ্বীপের জনসংখ্যা ২,০০০ থেকে ৩,০০০ জনে অনুমান করা হয়েছিল। বিভিন্ন ইউরোপীয় রোগ, ১৮৬০-এর দশকে পেরুভিয়ান ক্রীতদাস অভিযান এবং তাহিতির মতো অন্যান্য দ্বীপে দেশত্যাগ এর মতো ঘটনা জনসংখ্যাকে আরও কমিয়ে দেয়। যার ফলে ধারনা করা হয়, ১৮৭৭ সালে সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দার সংখ্যা ১১১ জনে নেমে আসে।

চিলি ১৮৮৮ সালে ইস্টার দ্বীপকে তাদের মানচিত্রে সংযুক্ত করে। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালে, রাপা নুই সম্প্রদায়কে চিলির নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। ২০০৭ সালে দ্বীপটি "বিশেষ অঞ্চল" (স্প্যানিশ ভাষায়: territorio especial) এর সাংবিধানিক মর্যাদা লাভ করে। প্রশাসনিকভাবে, এটি Valparaíso অঞ্চলের অন্তর্গত, যেটি পরবর্তীতে Isla de Pascua নামক প্রদেশের একটি একক কমিউন (Isla de Pascua) গঠন করে। ২০১৭ সালে চিলির আদমশুমারি অনুযায়ী দ্বীপের বাসিন্দা ৭,৭৫০ জন লোক নিবন্ধিত হয়, যাদের মধ্যে ৩,৫১২ জনের মত বাসিন্দা (৪৫.৩২%) নিজেদের রাপা নুই সম্প্রদায়ের বলে মনে করেছে।

ইস্টার দ্বীপ বিশ্বের প্রত্যন্ত জনবসতিপূর্ণ দ্বীপগুলির মধ্যে একটি। এই দ্বীপের নিকটতম জনবসতিপূর্ণ ভূমি (২০১৩ সালে প্রায় ৫০ জন বাসিন্দা) হল পিটকেয়ার্ন দ্বীপ, যা প্রায় ২,০৭৫ কিলোমিটার (১,২৮৯ মাইল) দূরে; ৫০০-এর বেশি জনসংখ্যার নিকটতম শহরটি হল রিকিটিয়া, যার অবস্থান ম্যাঙ্গারেভা দ্বীপে, যা ২,৬০৬ কিমি (১,৬৭৯ মাইল) দূরে; এই দ্বীপ থেকে নিকটতম মহাদেশীয় বিন্দুর দূরত্ব প্রায় ৩,৫১২ কিমি (২,১৮২ মাইল) দূরে যার অবস্থান মধ্য চিলিতে।

ব্যুৎপত্তি সম্পাদনা

"ইস্টার দ্বীপ" নামটি দ্বীপের প্রথম নথিভুক্ত ইউরোপীয় পরিদর্শক, ডাচ অভিযাত্রী জ্যাকব রোগভেন দ্বারা দেওয়া হয়েছিল, যিনি "ডেভিস ল্যান্ড" অনুসন্ধান করার সময় ইস্টার সানডে (৫ এপ্রিল), ১৭২২-এ এটির সম্মুখীন হন।Roggeveen এর নামকরণ করেন Paasch-Eyland ("ইস্টার দ্বীপ" এর জন্য ১৮ শতকের ডাচ)। দ্বীপের সরকারী স্প্যানিশ নাম, Isla de Pascua, এর অর্থ "ইস্টার দ্বীপ"।

দ্বীপের বর্তমান পলিনেশিয়ান নাম, রাপা নুই ("বিগ রাপা"), এই নাম ১৮৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে ক্রীতদাসদের অভিযানের পরে তৈরি করা হয়েছিল এবং যেখানে অস্ট্রাল দ্বীপপুঞ্জ গ্রুপের বাস দ্বীপপুঞ্জের রাপা দ্বীপের সাথে ইস্টার দ্বীপের টপোগ্রাফিক সাদৃশ্যকেও বোঝায়। কিন্তু নরওয়েজিয়ান নৃতাত্ত্বিক থর হেয়ারডাহল যুক্তি দিয়েছিলেন যে রাপা ছিল ইস্টার দ্বীপের আসল নাম এবং বাস দ্বীপপুঞ্জের রাপা (রাপা ইতি) এর নামকরণ করা হয়েছিল সেখানকার বসবাসরত উদ্বাস্তুদের দ্বারা।

ফরাসি নৃতাত্ত্বিক আলফোনস পিনার্ট এটিকে ১৮৭৭ সালে প্রকাশিত তার ভয়েজ à l'Île de Pâques-এ রোমান্টিক অনুবাদ "বিশ্বের নাভি" দিয়েছেন, যেখানে তিনি তে পিটো ও তে হেনুয়া এই শব্দটি দ্বীপের আসল নাম বলে উল্লেখ করেছিলেন। উইলিয়াম চার্চিল ১৯১২ সালে এই শব্দগুচ্ছ সম্পর্কে অনুসন্ধান করেছিলেন এবং তিনি তখন বলেছিলেন যে তিনটি তে পিটো ও তে হেনুয়া ছিল, এগুলি দ্বীপের তিনটি কেপ (ভূমির প্রান্ত)। কিন্তু শব্দগুচ্ছটি কর্নওয়ালের ভাষ্যমতে় "ল্যান্ডস এন্ড" নামের উপাধি হিসাবে একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে বলে ধারণা করা হত়। তিনি দ্বীপের জন্য একটি পলিনেশিয়ান নাম প্রকাশ করতে পারেনি তখন এবং যার ফলে তিনি তার ব্যাখ্যার উপসংহারে সেখানে একটি না থাকার আশংকাও করেছিলেন।

আবার বার্থেল (১৯৭৪) এর মতে, দ্বীপটির প্রথম নামকরণ করা হয়েছিল তে পিটো ও তে কাইঙ্গা এ হাউ মাকা, যার অর্থ "হাউ মাকার জমির ছোট অংশ", যা মৌখিক ঐতিহ্য থেকে রাখা। কিন্তু রাপা নুইতে পিটো উচ্চারিত দুটি শব্দ আছে, যার একটির অর্থ "শেষ" এবং আরেকটি "নাভি" এবং এই বাক্যাংশটির অর্থ "বিশ্বের নাভি" হতে পারে। এছাড়াও আরেকটি নাম রাখা ছিল, মাতা কি তে রাঙ্গি, যার অর্থ "চোখ আকাশের দিকে তাকিয়ে"।

স্থানীয় দ্বীপবাসীদের স্প্যানিশ ভাষায় pascuense হিসাবে উল্লেখ করা হয়, কিন্তু আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্যদেরকেই  সাধারণত রাপা নুই বলা হয়।

Felipe González de Ahedo তখনই এর নামকরণ করেছেন Isla de San Carlos  এই নামে("সেন্ট চার্লস দ্বীপ", স্পেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের পৃষ্ঠপোষক সন্ত) অথবা ইসলা দে ডেভিড (সম্ভবত ডেভিস ল্যান্ডের ফ্যান্টম দ্বীপ); আবার  কখনও কখনও "ডেভিস দ্বীপ" হিসেবে অনুবাদও করা হয় ১৭৭০ সালের দিকে।