ইসলাম এবং আধুনিক অর্থনীতি ও ব্যবসায়নীতি

তাকি উসমানির বই

ইসলাম এবং আধুনিক অর্থনীতি ও ব্যবসায়নীতি (উর্দু: اسلام اور جدید معیشت و تجارت‎‎) পাকিস্তানি অর্থনীতিবিদ তাকি উসমানির রচিত একটি উর্দু গ্রন্থ, যাতে সংক্ষিপ্তাকারে প্রচলিত অর্থনীতির দর্শন ও তার প্রয়োগবিধির বিপরীতে ইসলামী অর্থনীতির দর্শন এবং তার প্রয়োগবিধি সম্পর্কে তুলনামূলক পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়েছে। আধুনিক কালের ব্যবসায়ের বিভিন্ন জটিল পদ্ধতি সম্পর্কে ইসলামের বিধান এবং নাজায়েয ক্ষেত্রে বিকল্প ইসলামি প্রক্রিয়া উপস্থাপন করা হয়েছে।[১][২]

ইসলাম এবং আধুনিক অর্থনীতি ও ব্যবসায়নীতি
বাংলা অনুবাদের প্রচ্ছদ
লেখকতাকি উসমানি
মূল শিরোনামউর্দু: اسلام اور جدید معیشت و تجارت‎‎
দেশপাকিস্তান
ভাষাউর্দু
বিষয়ইসলামি ব্যাংকিং ও অর্থসংস্থান
প্রকাশিত২০১১
মিডিয়া ধরনশক্তমলাট
পৃষ্ঠাসংখ্যা২১৬
৩৩২/.০৯১৭/৬৭১
ওয়েবসাইটmuftitaqiusmani.com

প্রেক্ষাপট সম্পাদনা

গ্রন্থটি রচনার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তাকি উসমানি বলেন, "বর্তমান যুগে ব্যাপক পরিমণ্ডলে ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেনের নতুন নতুন প্রকৃতি এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট নতুন নতুন মাসআলা সৃষ্টি করেছে। যার উপর বিশ্বব্যাপী চিন্তা গবেষণা চলছে এবং তার বিভিন্ন সমাধান পেশ করা হচ্ছে। এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্য স্বতন্ত্র একটি শাস্ত্রের রূপ ধারণ করেছে। আধুনিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে এর উপর শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। আলহামদু লিল্লাহ, কিছুদিন থেকে মুসলমানদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে যে, পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদ যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মুসলমানদের প্রতি চাপিয়ে দিয়েছে তার অভিশাপ থেকে যুক্ত হয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ইসলামী আঙ্গিকে ঢেলে সাজাতে তারা সচেষ্ট হচ্ছে। আল্লাহর ফযলে ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত পর্যায়ে এ চিন্তা ইসলামী দুনিয়ার প্রায় সর্বত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে যেসব মুসলমান ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি দ্বীনের উপর আমল করার অথবা রাখেন তারা তাদের কারবার ইসলামী শিক্ষার আলোকে পরিচালিত করতে চান। আর সমষ্টিগত পর্যায়েও বিভিন্ন দেশে অর্থনীতিকে ইসলামী বিধান অনুসারে পরিচালনা করার চেষ্টা চলছে। এ উভয় শ্রেণীর প্রচেষ্টার জন্য কুরআন-সুন্নাহ ও ইসলামী ফিকার অভিজ্ঞ উলামায়ে কিরামের দিকনির্দেশনার অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদের যুগে উলামায়ে কিরাম ও আধুনিক শিক্ষিতদের মাঝখানে এমন একটি অন্তরাল সৃষ্টি হয়েছে যে, উভয়ের চিন্তার ধরন, তাদের ভাষা এবং পরিভাষা এতটা ভিন্ন যে, একে অন্যের কথা বুঝতেও কষ্ট হয়। এ কারণে এ মাসআলাগুলোর উপর পরম্পর আলোচনা পর্যালোচনা এবং অভিজ্ঞতার আদান প্রদানে বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। অন্তত অর্থনৈতিক মাসআলার ক্ষেত্রে এ দূরত্ব দূর করার জন্য উভয় শ্রেণীর পরস্পরকে কাছে আনতে এবং উভয়ের মাঝে পরস্পর বোঝাপড়ার পথ প্রশস্ত করতে 'মারকাযুল ইकডিসাদিল ইসলামী' নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটি দারুল উলূম করাচীর কয়েকটি প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেছে। কিছু প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করা হয়েছে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং অর্থনীতির অন্যান্য বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে। এ সকল কোর্সের মধ্যে তাদেরকে ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পর্কিত মৌলিক ইসলামী বিধান সম্পর্কে অবগত করানো হয়েছে। আল্লাহর ফযলে এ কোর্স অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কারণ এ সকল কোর্সে অর্থনীতির বিভিন্ন বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট শত শত উচ্চ শিক্ষিত লোক অত্যন্ত আগ্রহ এবং গভীর নিষ্ঠার সাথে অংশগ্রহণ করেছেন এবং তারা অবগত হয়েছেন আপন আপন বিভাগ সম্পর্কিত মৌলিক ইসলামী বিধান সম্পর্কে। এসব কোর্সের ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে কিছু কোর্সের আয়োজন করা হয়েছে উলামায়ে কিরাম বিশেষত ফতোয়ার কাজের সাথে সংশ্লিষ্টদের জন্য। এ সকল কোর্সের মধ্যে তাদেরকে অর্থনীতির বর্তমান ধারণা এবং আধুনিক কালে ব্যবসায়ের বিভিন্ন প্রকৃতি সম্পর্কে মৌলিক ধারণা দেয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল, ব্যবসা-বাণিজ্যের যে মাসআলাগুলো সরাসরি ফিকাহর সাথে সম্পৃক্ত তার বর্তমান অবস্থা সুস্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে যেন তাদের গোচরে এসে যায়। যাতে তারা সেটা পুরোপুরিভাবে বুঝে তার ফিকহী বিধান ব্যাখ্যা করতে পারেন। এ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তাদের পুরো অর্থনীতি বা পুরো ব্যবসায়নীতি শেখানোর প্রয়োজন ছিল না; বরং উভয় বিষয়ের আধুনিক নির্বাচিত বিষয়গুলোই যথেষ্ট ছিল, যা তাদের আলোচিত প্রয়োজনগুলো পূরণ করতে পারে। অন্যদিকে তাদের সামনে এ বিষয়গুলো বোঝানোর জন্য এমন একজন ব্যক্তির প্রয়োজন ছিল, যিনি তাঁদের পরিচিত ঢংয়ে এবং তাঁদের নিজের ভাষায় বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করবেন। সুতরাং কিছু প্রাথমিক অভিজ্ঞতা লাভের পর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, এ পাঠদানের দায়িত্ব আমি নিজে পালন করব। যাতে উল্লিখিত দুটি প্রয়োজনই পূর্ণ হয়। কিন্তু যেহেতু অর্থনীতি ও ব্যবসারনীতি আমার গবেষণার বিষয় নয়, ভাই আমার দুজন শ্রদ্ধেয় বন্ধুর কাছে আবেদন জানালাম, তাঁরা যেন আমাকে একটু সাহায্য করতে ক্লাসে উপস্থিত থাকেন। যাতে করে আমি কোথাও ভুল করলে তারা শুধরে দেন। প্রয়োজনের সময় বিস্তারিত ব্যাখ্যাত পেশ করতে পারেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন জনাব ডক্টর আরশাদ জামান সাহেব, যিনি আমাদের দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। দীর্ঘ দিন পর্যন্ত আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিফ ইকোনোমিস্ট পদে আসীন ছিলেন। তিনি পুরো কোর্সে -যা ১৪১৩ হিজরীর রজব মাসে প্রায় চার সপ্তাহ ধরে দারুল উলু কুরঙ্গিতে চলছিল- স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের উপকৃত করেছেন। বিশেষত বিনিময় হারের বিভিন্ন ব্যবস্থার পরিচয় এবং সরকারি অর্থ ব্যবস্থার উপর তিনি লেকচারও নিয়েছেন। অন্যজন হলেন জনাব সাইয়িদ মুহাম্মদ হুসাইন সাহেব, যিনি আমাদের দেশের একজন বিশিষ্ট চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট। এ নামে তিনি সারা দেশে পরিচিত। বর্তমানে তিনি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস-এর চেয়ারম্যান এবং মারকাযুল ইকতিসাদিল ইসলামীর ভাইস চেয়ারম্যান। তিনিও কোর্সের অনেক সময় জুড়ে উপস্থিত ছিলেন এবং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আমাকে ও প্রশিক্ষণার্থীদেরকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বিশেষত কোম্পানির হিসাবের উপর তিনি যথারীতি লেকচার দিয়েছেন। এ দুজনের উপস্থিতি আমার জন্য সাহস ও উৎসাহের কারণ হয়েছে। এভাবে আল্লাহর ফযলে এ কোর্স সাফল্যের সাথে শেষ হয়েছে। এটি যেহেতু একটি পর্যবেক্ষণধর্মী কোর্স ছিল, তাই তা দারুল উলুমের শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছিল। তবে ফয়সালাবাদ থেকে দারুল উলুমের ইফতা বিভাগের ফাযেল, বর্তমানে জামিয়া ইমদাদিয়ার মুহাদ্দিস ও মুফতি মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ মুজাহিদ সাহেবও অংশগ্রহণ করেন। তিনিই পুরো কোর্স টেপরেকর্ডারের সাহায্যে লিখিত আকারে সংরক্ষণ করেছেন। যেহেতু উপস্থিত প্রশিক্ষণার্থীগণ এ কোর্সের খুব উপকারিতা উপলব্ধি করেছেন, তাই পরবর্তী বছর অর্থাৎ ১৪১৪ হিজরীর জুমাদাল উলায় এ ধরনের আরো একটি কোর্সের ব্যবস্থা করা হয়। যাতে অংশগ্রহণের জন্য দাওয়াত দেয়া হয় দেশের উল্লেখযোগ্য জীনি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং মুফতিদেরকেও। সুতরাং এ কোর্সে অংশগ্রহণের জন্য ডেরা ইসমাইল খান থেকে শুরু করে করাচী পর্যন্ত বিশিষ্ট দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, মুফতি এবং উলামায়ে কিরাম দারুল উলূম কুরঙ্গিতে তাশরিফ আনেন। বাইরে থেকে আগতদের সংখ্যা ছিল পঞ্চাশ জন। তাদের সুবিধার জন্য দরসের প্রতিদিনের সময় বৃদ্ধি করে কোর্সকে দুই সপ্তায় সংকুচিত করা হয়। এবারও এ খেদমত আমি পালন করি। দরসের শেষে পরীক্ষাও হয়। মারকাযুল ইকতিসাদিল ইসলামীর পক্ষ থেকে সনদও প্রদান করা হয়। এ দ্বিতীয় কোর্সের সময় আমার আগের অভিজ্ঞতা এবং নতুন অবস্থার আলোকে দরসের আলোচনা ও বিষয়বস্তুর মধ্যে সংযোজন বিয়োজনেরও সুযোগ হয়। আল্লাহর রহমতে এ দ্বিতীয় কোর্স আগের তুলনায় আরো বেশি সফল হয়। বন্ধু-বান্ধবের পক্ষ থেকে এ আলোচনা গ্রন্থাকারে প্রকাশের প্রয়োজন উপলব্ধি করা হয়। যাতে এ কোর্সে যারা অংশগ্রহণ করতে পারেন নি তারাও এর থেকে উপকৃত হতে পারেন। সে সাথে এ বক্তৃতামালা একটি স্বতন্ত্র উপকারী বস্তুও হতে পারে। আমি আমার বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে এ সব বক্তৃতা লিখিতভাবে সংরক্ষণ করতে অপারগ ছিলাম। সুতরাং মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ মুজাহিদ সাহেব টেপরেকর্ডারের সাহায্যে যে পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছেন তা প্রকাশ করাই উপযুক্ত মনে হল। সুতরাং এ মুহূর্তে আপনাদের সামনে যে গ্রন্থটি রয়েছে, তা মূলত সে বক্তৃতামালাই যা টেপরেকর্ডারে ধারণ করা হয়েছিল। তবে আমি তাতে সম্পাদনা করে উপযুক্ত সংযোজন সংশোধন করে দিয়েছি। এখন তা আল্লাহর নামে প্রকাশ করা হচ্ছে।"

বৈশিষ্ট্য সম্পাদনা

গ্রন্থের লেখক তাকি উসমানির গ্রন্থটির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। যথা:

  1. এটি যথারীতি প্রণীত কোনো গ্রন্থ নয়; বরং ধারাবাহিক বক্তৃতার সংকলন।
  2. এ বক্তৃতাগুলোর সরাসরি সম্বোধিত ছিলেন উলামায়ে কিরাম। তাই বিশেষভাবে ফিকহী আলোচনার মধ্যে ফিকহী পরিভাষা বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়েছে।
  3. এতে তাকি উসমানির নিজস্ব ফিকহি দৃষ্টিভঙ্গিও আলোচিত হয়েছে।

অনুবাদ সম্পাদনা

জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগের শিক্ষক শামসুল আলম ২০১১ সালে এটির বঙ্গানুবাদ করেন, যা মাকতাবাতুল আযহার থেকে প্রকাশিত হয়।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

উদ্ধৃতি সম্পাদনা

  1. জিল হুমা, ডক্টর (৩০ জুন ২০১৯)। "مفتی محمد تقی عثمانی کی معروف تصنیفات و تالیفات کا تعارفی جائزہ:" [মুফতি মুহাম্মদ তাকি উসমানির বিখ্যাত লেখাগুলির একটি পরিচিতিমূলক পর্যালোচনা]। রাহাতুল কুলুব (উর্দু ভাষায়): ২০৯। আইএসএসএন 2521-2869ডিওআই:10.51411/rahat.3.1.2019.66 
  2. আব্দুল ওয়াহিদ, ডক্টর (২০০৯)। جدید معاشی مسائل اور مولانا تقی عثمانی کے دلائل کا جائزہ [মাওলানা তাকি উসমানির আধুনিক অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের যুক্তি পর্যালোচনা]। পাকিস্তান: মজলিসে নাশরিয়াতে ইসলাম করাচি – আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামাবাদ-এর মাধ্যমে। [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা