আবু জাহিদ একজন কিশোর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি রণাঙ্গণে শহীদ হন। তিনি "আবু" নামে কুমিল্লার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরিচিত ছিলেন।

জীবন সম্পাদনা

কিশোর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবু জাহিদের জন্ম ১৯৫৬ সালের জানুয়ারি মাসে কুমিল্লা শহরের মগবাড়ী চৌমুহনীতে। বাবা আবুল হাসেম দুলা মিয়া ও মা ভেলুয়া বিবির পাঁচ পুত্রসন্তানের একজন আবু। ১৯৬৭ সালে কুমিল্লা জিলা স্কুল এ পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধে অবদান সম্পাদনা

কুমিল্লা জিলা স্কুলের নবম শ্রেণীতে থাকার সময় তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। একাত্তরের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে আবু গোমতী নদী সাঁতরে পার হয়ে কুমিল্লা শহরের অদূরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সোনামুড়া টিলার কাছে মুক্তি শিবিরে এসে উপস্থিত হন। তখন তার শরীরের সব কাপড় ছিল ভেজা। সেখানে উপস্থিত অন্য মুক্তিযোদ্ধারা তাকে বয়স কম বলে মুক্তিযুদ্ধে যেতে বারণ করেন। অনেক পীড়াপীড়ির পর সেক্টর ইস্টার্ন জোনের কমান্ডার শেখ ফজলুল হক মনি তাকে প্রশিক্ষণের সুযোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে আবু অবস্থান করছিলেন নিমবাগ বাদাম ঘাট হেড কোয়ার্টারে।

মৃত্যু সম্পাদনা

১২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ রাতে নাজমুল হাসান পাখীর নেতৃত্বে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার চারগাছ বাজারে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি ঝটিকা অপারেশনে বের হন। নয়জন মুক্তিযোদ্ধার একটি বহর নৌপথে ওই অপারেশনে রওনা হয়। ওই দলে ছিলেন শিব নারায়ণ দাস, নৃপেণ পোদ্দার, মুমিনুল হক ভূঞা, মোজাম্মেল হক, সাইফুল ইসলাম, আবু জাহিদসহ আরও অনেকে। রাতের অপারেশন, তাই কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর এ দেশের আলবদর বাহিনীর সহায়তায় মাঝনদীতে দলটির ওপর গুলি চালায়। তখন পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে মারা যান মোজাম্মেল হক ও সাইফুল ইসলাম। কনিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা আবুও গুলিবিদ্ধ হয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন। কিন্তু তিনিও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সঙ্গী এবং মুক্তিকামী জনতা নদী থেকে কিশোর আবুর মরদেহ উদ্ধার করে। অতঃপর তাকেসহ তিন মুক্তিযোদ্ধাকে চারগাছ উচ্চবিদ্যালয় এলাকায় সমাধিস্থ করা হয়। পরে সেখানে তাদের স্মরণে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়।

স্বীকৃতি সম্পাদনা

আবু জাহিদের নামে কুমিল্লা জিলা স্কুলে মিলনায়তনের নামকরণ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

দৈনিক প্রথম আলো, "মুক্তিযোদ্ধা আবুর কথা বলছি", গাজীউল হক | তারিখ: ১২-০৯-২০০৯ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৫ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে