আবদুল মান্নান (পটুয়াখালীর মুক্তিযোদ্ধা)

বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত পটুয়াখালী জেলার মুক্তিযোদ্ধা

আবদুল মান্নান ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি প্রথমে চট্টগ্রাম এবং পরে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলায় যুদ্ধ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।

আবদুল মান্নান
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১৯৩৫ আনু.
পটুয়াখালী, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু৭ অক্টোবর ২০২১(2021-10-07) (বয়স ৮৫–৮৬)
আলীপুর, দশমিনা উপজেলা, পটুয়াখালী, বাংলাদেশ
দাম্পত্য সঙ্গীমোসাম্মৎ নয়ন নেছা
সন্তান১ ছেলে, ৩ মেয়ে
পিতানুর মোহাম্মাদ হাওলাদার[১]
ধর্মইসলাম
পুরস্কারবীর প্রতীক
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য পাকিস্তান (১৯৭১-এর পূর্বে)
 বাংলাদেশ (১৯৭১ থেকে)
শাখা পাকিস্তান সেনাবাহিনী (১৯৭১-এর পূর্বে)
 বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (১৯৭১ থেকে)
কাজের মেয়াদ১৯৭১ – ১৯৮৮
পদহাবিলদার
ইউনিটইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট
যুদ্ধবাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলার অন্তর্গত আলীপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁদপুরা গ্রামে আনুমানিক ১৯৩৫ সালে আবদুল মান্নান জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নুর মোহাম্মাদ হাওলাদার।

কর্মজীবন সম্পাদনা

মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে আবদুল মান্নান পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে নায়েক (করপোরাল) পদে চাকরি করতেন। যুদ্ধের সময় তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন এবং সেখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

যুদ্ধ শেষে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ফিরে আসেন এবং পরবর্তীতে হাবিলদার (সার্জন) পদে পদোন্নতি পান। ১৯৮৮ সালের ৫ জানুয়ারি তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন।[২]

মুক্তিযুদ্ধে অবদান সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ছিলেন। সে রাতে পাক সেনারা বাঙালি সেনাদের ঘেরাও করে রাখে এবং রাত একটার দিকে গুলিবর্ষণ করে। তখন বাঙালিরাও পাল্টা গুলিবর্ষণ করে পাশের আমবাগানে ঢুকে পড়ে। পরে সেখানে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী– ইপিআর সদস্যরাও এসে যোগ দেয়।

এ ঘটনার পর বাঙালি সেনারা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। চট্টগ্রামের হালিশহরে টানা ৪-৫ দিন যুদ্ধ হয়। তারপর সীতাকুণ্ডে আক্রমণ চালানো হয় এবং সেখানকার একটি সেতু ধ্বংস করা হয়। এতে প্রায় ৩০০ পাকিস্তানি সেনা মারা যায়।[২]

মার্চ মাসের শেষের দিকে পাক সেনাদের একটি মর্টারশেল আবদুল মান্নানের বাম পা ও বাম হাতে আঘাত করে। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন এবং জ্ঞান হারান। তাকে প্রথমে স্থানীয় একটি মাদরাসায় নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর হাতিয়ায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিছুটা সুস্থ হলে হাবিলদার আবদুল মান্নান পটুয়াখালীতে ফিরে শ্বশুর-বাড়িতে যান।

সুস্থ হওয়ার পর তিনি আবারও যুদ্ধে যোগ দেন। পটুয়াখালীবরগুনা জেলার বিভিন্ন স্থানে তিনি যুদ্ধ করেন। ৮ ডিসেম্বর পটুয়াখালী মুক্ত করার পেছনে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়ায় তার বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীরা।[২]

সম্মাননা সম্পাদনা

মৃত্যু সম্পাদনা

আবদুল মান্নান ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর রাতে ৮৫ বছর বয়সে নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন। পরের দিন স্থানীয় মসজিদ মাঠে জানাজা ও রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।[৩][৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান হাওলাদারের ইন্তেকাল"আজকালের খবর। ৮ অক্টোবর ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০২১ 
  2. "জীবনযুদ্ধে পরাজিত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান"আর টিভি। ২৬ মার্চ ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০২১ 
  3. "বীরপ্রতীক আবদুল মান্নান আর নেই"যুগান্তর। ৮ অক্টোবর ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০২১ 
  4. "আবদুল মান্নান বীর প্রতীকের ইন্তেকাল"দৈনিক নয়া দিগন্ত। ৯ অক্টোবর ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৯ অক্টোবর ২০২১