আন্না মনি

ভারতীয় আবহাওয়াবিদ

আন্না মনি (২৩শে আগস্ট ১৯১৮ – ১৬ই আগস্ট ২০০১) একজন ভারতীয় পদার্থবিদ এবং আবহাওয়াবিদ ছিলেন।[১] তিনি ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের উপ মহাপরিচালক হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন এবং তারপর রমন রিসার্চ ইন্সটিটিউটে ভিজিটর অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন।[১] তিনি আবহাওয়া নির্ধারক যন্ত্রের উন্নতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন অবদান রেখেছেন, গবেষণা করে সৌর বিকিরণ, ওজোন এবং বায়ু শক্তি পরিমাপের ওপর অসংখ্য লেখা প্রকাশ করেছেন।[২]

আন্না মনি
അന്ന മാണി
আন্না মনি
জন্ম২৩শে আগস্ট ১৯১৮
মৃত্যু১৬ আগস্ট ২০০১(2001-08-16) (বয়স ৮২)
জাতীয়তাভারতীয়
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রআবহাওয়াবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান
প্রতিষ্ঠানসমূহভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ, পুনে

প্রথম জীবন সম্পাদনা

আন্না মোদায়িল মনি ১৯১৮ সালে পরমকুড়ি, রমনাথপুরমে এক প্রাচীন সিরিয়ান খ্রীষ্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[১][৩] তার বাবা একজন পুরকৌশল বিশেষজ্ঞ এবং অজ্ঞেয়বাদী ছিলেন।[১] তিনি তার পরিবারের আট সন্তানের মধ্যে সপ্তম ছিলেন।তার শৈশবকালে, তিনি প্রচুর পড়তেন।[১] গান্ধীজীর ভৈকম সত্যাগ্রহ আন্দোলন দেখে তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন।জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, তিনি শুধুমাত্র রেশম তন্তুর পোশাক পরতেন।

মনি পরিবার একটি আদর্শ উচ্চ শ্রেণীর পেশাদার পরিবার ছিল, যেখানে শৈশব থেকে ছেলেদের উচ্চ স্তরের কর্মজীবন পাবার জন্য তৈরি করা হ্ত, অথচ মেয়েদের মুখ্যতঃ বিবাহের জন্য তৈরী করা হত। কিন্তু আন্না মনিকে এর কোনওটাই করা হয়নি। তার গঠনমূলক সময় বইয়ে ডুবে থেকে কেটে গেছে। আট বছর বয়সের মধ্যে, তিনি মালয়লী ভাষার প্রায় সব বই তাদের পাবলিক গ্রন্থাগারে পড়ে নিয়েছিলেন এবং, বারো বছর বয়সের মধ্যে, ইংরেজি সব বই তার পড়া হয়ে গেছিল। তার অষ্টম জন্মদিনে, তার পরিবারের প্রথামত উপহার, হীরার কানের দুল তিনি নিতে অস্বীকার করেছিলেন, পরিবর্তে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার একটি সেট তিনি চেয়েছিলেন। বইয়ের বিশ্ব তার নতুন ধারনাগুলিকে খুলে দেয় এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের গভীরে গভীরভাবে আলোকিত করে, যা তার জীবনকে অবগত হতে সাহায্য করে এবং আকার দেয়।

শিক্ষা সম্পাদনা

তিনি নাচ নিয়ে এগোতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি পদার্থবিদ্যার পক্ষেই সিদ্ধান্ত নেন কারণ তিনি এই বিষয়টি পছন্দ করতেন। ১৯৩৯ সালে, তিনি ম্যাড্রাসের পাচায়াপ্পাস কলেজ থেকে স্নাতক হন, পদার্থবিদ্যা এবং রসায়নে বিএসসি সাম্মানিক ডিগ্রী নিয়ে। ১৯৪০ সালে, ব্যাংগালোরের ভারতীয় বিজ্ঞান সংস্থা থেকে গবেষণার জন্য তিনি একটি বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৪৫ সালে, পদার্থবিজ্ঞান স্নাতক অধ্যয়নের জন্য, তিনি লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানে তিনি আবহাওয়া যন্ত্র বিশেষজ্ঞ হয়ে পাস করেন।[৪]

কর্ম জীবন সম্পাদনা

পচাই কলেজ থেকে স্নাতক হবার পর, তিনি অধ্যাপক সলোমন পাপ্পাইয়ার কাছে কাজ শুরু করেন, রুবি এবং হীরকের আলোক বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা করতে থাকেন তিনি।[২] তিনি পাঁচটি গবেষণা পত্র লেখেন এবং পিএইচডির জন্য জমা দেন, কিন্তু তার পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ছিল না বলে তাকে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হয়নি। ১৯৪৮ সালে ভারত ফিরে আসার পর, তিনি পুনের আবহাওয়া বিভাগে যোগ দেন। তিনি আবহাওয়া যন্ত্র বিষয়ে অনেক গবেষণামূলক কাগজপত্র প্রকাশ করেন। অধিকাংশ সময়ে তার দায়িত্ব থাকত, ব্রিটেন থেকে আমদানি করা আবহাওয়া যন্ত্রগুলি সাজিয়ে রাখা। ১৯৫৩ সালের মধ্যে, তিনি বিভাগের প্রধান হয়ে যান, এবং ১২১ জন পুরুষ তার জন্য কাজ করত।[৫]

আন্না মনি চেয়েছিলেন ভারত যাতে আবহাওয়া যন্ত্রের উপর নির্ভরশীল হয়। তিনি প্রায় ১০০ টি বিভিন্ন আবহাওয়া যন্ত্রের আঁকাগুলির মানকে মানানসই করেছেন। ১৯৫৭-৫৮ সাল থেকে তিনি সৌর বিকিরণ পরিমাপের জন্য কিছু স্টেশনের একটি নেটওয়ার্ক তৈরী করেন। ব্যাঙ্গালোরে, তিনি বায়ু গতি এবং সৌর শক্তির পরিমাপের উদ্দেশ্যে যন্ত্র তৈরি করে একটি ছোট কর্মশালা স্থাপন করেছিলেন। তিনি ওজোন পরিমাপ করার জন্য যন্ত্রপাতি উন্নয়নে কাজ করেছিলেন। তাকে আন্তর্জাতিক ওজোন এসোসিয়েশনের সদস্য করা হয়। তিনি একটি আবহাওয়া মানমন্দির স্থাপন করেন এবং থুম্বা রকেট লঞ্চিংয়ে একটি যন্ত্রের স্তম্ভ বসান।[৪][৬]

গভীরভাবে নিজের কাজের প্রতি উৎসর্গীকৃত থেকে, আন্না মনি কখনও বিয়ে করেননি। তিনি ভারতীয় জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমী, আমেরিকান মিটিওরোলজিকাল সোসাইটি, ইন্টারন্যাশনাল সৌর শক্তি সমিতি, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডাব্লিউএমও), ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর মিটিওরোলজি এবং এটোমস্ফিয়ারিক পদার্থবিজ্ঞান প্রভৃতি অনেক বৈজ্ঞানিক সংস্থার সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৮৭ সালে, তিনি আইএনএসএ কে. আর. রমানাথন পদক লাভ করেন।

১৯৬২ সালে তিনি ডেপুটি মহাপরিচালক হিসাবে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হন। ১৯৭৫ সালে, তিনি মিশরে ডাব্লিউএমও পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছিলেন। ১৯৭৬ সালে, তিনি ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের উপ-মহাপরিচালক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।[৬]

১৯৯৪ সালে, তার পক্ষাঘাত হয়, এবং ১৬ই আগস্ট ২০০১ সালে তিনি তিরুবনন্তপুরমে এ মারা যান।[১]

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা তার ১০০তম বার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করে এবং তার সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি তার জীবনী পরিলেখ প্রকাশ করে। [৭]

প্রকাশনা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Sur, Abha (১৪ অক্টোবর ২০০১)। "The Life and Times of a Pioneer"The Hindu। ১৩ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১২ 
  2. Sur, Abha (২০০৭)। Lilavati's daughters: The women scientists of India। Indian Academy of Science। পৃষ্ঠা 23–25। 
  3. |work=Platinum Jubilee Publishing of INSA|publisher=Indian National science academy|accessdate=7 October 2012}}
  4. Gupta, Aravind। "Anna Mani" (পিডিএফ)Platinum Jubilee Publishing of INSA। Indian National science academy। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১২ 
  5. Ashford, Oliver। "Anna Modayil Mani - A Tribute" (পিডিএফ)Indian Institute of Science। ১০ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  6. "Anna Mani Is One of India's Greatest Woman Scientists. Yet You Probably Haven't Heard Her Story"The Better India (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০১-২১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-২০ 
  7. Deepshikha, Singh। "WMO Remembers Indian meteorologist Anna Mani" (Online)। ABC Live। ২৫ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০১৮