আটকবর বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলায় অবস্থিত একটি গণকবর।[১] বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ৮জন মুক্তিযোদ্ধার মৃতদেহ এখানে কবর দেওয়া হয় বলে এর নামকরণ করা হয়েছে আট কবর।[১]


ইতিহাস সম্পাদনা

১৯৭১ সলের ৩ আগস্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা গ্রুপ কমান্ডার হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একদল বীর মুক্তিযোদ্ধা দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম জগন্নাথপুর গ্রামের শেল্টার ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন। ৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা পাশের বাগোয়ান গ্রামের মুসলিম লীগের দালাল কুবাদ খাঁকে ধরে নিয়ে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদারদের উপর আক্রমণ করার পরিকল্পনা করছিল। ৫ আগস্ট সকালে পাকিস্তানি দালাল কুবাদ খাঁর দু'জন লোক মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে গিয়ে খবর দেয়, রাজাকাররা তাদের ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এ খবর শুনে মুক্তিযোদ্ধা হাসান জামানের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারদের শায়েস্তা করার জন্য অস্ত্র নিয়ে আনুমানিক ২ কিলোমিটার দূরে বাগোয়ান গ্রামের মাঠে দুই দলে বিভক্ত হয়ে অগ্রসর হতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের রেকি দল ফিরে যাওয়ার সাথে সাথে নাটুদহ ক্যাম্পের পাকিস্তানি সেনারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠের আখ ক্ষেতে 'ইউ'কাটিং অ্যাম্বুশ করে। মুক্তিযোদ্ধারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের অ্যাম্বুশে পড়ে যায়। এখানে পাকিস্তানি হানাদারদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় আড়াই ঘণ্টা যুদ্ধ হয়। পাকিস্তানি হানাদারদের কাছে থাকা আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের উপর ব্যবহার করতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে মুক্তিযোদ্ধারা কৌশলে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে শত্রম্নকে আক্রমণ করতে থাকে। এ অবস্থায় যে কোনো একজনকে কাভারিং ফায়ার দিয়ে নিজ দলকে বাঁচাতে হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান জামান স্বাভাবিক ফায়ারের দায়িত্ব নিয়ে শহীদ হন। পিছু হটার সময় তারা অন্য সাথীদের বাঁচাতে পারলেও শহীদ হন ৮ বীর মুক্তি সেনা। পাকিস্তানি হানাদাররা তাদেরকে ঘিরে ফেলে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। এই সম্মুখযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের অনেক সদস্য মারা যায় এবং আহত হয়। পরে জগন্নাথপুর গ্রামের মানুষ রাস্তার পাশে দুটি কবরে চারজন করে আটজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার লাশ কবর দেয়। কালক্রমে এই আটজন মুক্তিযোদ্ধার কবরকে ঘিরেই এ স্থানটির নামকরণ হয়েছে 'আটকবর'।[২]

আটজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাগণ হচ্ছেন-

  1. হাসান জামান - গোকুলখালি, চুয়াডাঙ্গা
  2. খালেদ সাইফুদ্দিন তারেক - পোড়াদহ, কুষ্টিয়া
  3. রওশন আলম - আলমডাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা
  4. আলাউল ইসলাম খোকন - চুয়াডাঙ্গা শহর
  5. আবুল কাশেম - চুয়াডাঙ্গা শহর
  6. রবিউল ইসলাম - মোমিনপুর, চুয়াডাঙ্গা
  7. কিয়ামুদ্দিন - আলমডাঙ্গা
  8. আফাজ উদ্দিন চন্দ্রবাস - দামুড়হুদা[১]

অবকাঠামো সম্পাদনা

এখানে পরবর্তীতে একটি মুক্ত মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে।[৩] পাশেই তৈরি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রহশালা। চারপাশে বাগান তৈরি করে সৈন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের রাজধানী মুজিবনগর এখান থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "আট কবর - দামুড়হুদা উপজেলা-"damurhuda.chuadanga.gov.bd। ১১ জুলাই ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০১৮ 
  2. "ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক 'আটকবর'"jaijaidinbd.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১৪ 
  3. jugantor.com। "জগন্নাথপুরের আট কবর - ঘরে বাইরে - Jugantor" [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]