অমিতা সিং

ভারতীয় রাজনীতিবিদ

অমিতা সিংহ (জন্ম অমিতা কুলকার্নি, ৪ঠা অক্টোবর ১৯৬২) হলেন ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের একজন রাজনীতিবিদ, যিনি পূর্বে একজন জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। তিনি আমেথি/সুলতানপুর জেলার জিলা পঞ্চায়েতের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং উত্তর প্রদেশ বিধানসভার আমেথি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধানসভার সদস্য হিসাবে তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি উত্তরপ্রদেশ সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

অমিতা সিং
বিধানসভার সদস্য, উত্তরপ্রদেশ
কাজের মেয়াদ
২০০২ – ২০১২
উত্তরসূরীগায়ত্রী প্রসাদ প্রজাপতি
সংসদীয় এলাকাআমেথি
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মঅমিতা কুলকার্নি
(1962-10-04) ৪ অক্টোবর ১৯৬২ (বয়স ৬১)
মুম্বাই, মহারাষ্ট্র, ভারত[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
জাতীয়তাভারতীয়
রাজনৈতিক দলভারতীয় জনতা পার্টি
অন্যান্য
রাজনৈতিক দল
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
দাম্পত্য সঙ্গীসৈয়দ মোদি (বি. ১৯৮৪; মৃ. ১৯৮৮)
সঞ্জয় সিং (বি. ১৯৯৫)
পেশারাজনীতিবিদ, প্রাক্তন জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী

তাঁর প্রথম স্বামী সৈয়দ মোদীর মৃত্যুর পর, হত্যার অভিযোগে তাঁকে এবং আমেথির একজন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) রাজনীতিবিদ সঞ্জয় সিংকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তিনি পরে সঞ্জয় সিংকে বিয়ে করেছিলেন। সঞ্জয় ছিলেন নেহেরু-গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ এবং দত্তক হিসেবে আমেথির প্রাক্তন রাজপরিবারের একজন বংশধর।

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

অমিতা সিংহের জন্ম ১৯৬২ সালের ৮ই অক্টোবর। তিনি ১৯৭০-এর দশকে ব্যাডমিন্টন খেলায় জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন।[১] ১৯৮৪ সালে, তিনি আরেকজন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন সৈয়দ মোদীকে বিয়ে করেন, এরপরে তাঁরা জুটি হিসেবে একটি সফল ব্যাডমিন্টন জীবনের অংশীদার হয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালে সৈয়দ মোদীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। প্রথমে অমিতা এবং সঞ্জয়কে অভিযুক্ত করা হলেও পরে তাঁদের সমস্ত অভিযোগ থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সিবিআই অভিযোগ করেছিল যে অমিতা এবং সঞ্জয় বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত ছিলেন, যদিও সঞ্জয় তখনও বিবাহিত ছিলেন। সঞ্জয় গরিমার সাথে বিবাহবিচ্ছেদের ফরমান পেয়েছিলেন। সেই বিবাহবিচ্ছেদের একটি আইনি চ্যালেঞ্জের ফলে সেটি ১৯৯৮ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দ্বারা বাতিল করা হয়েছিল। যদিও অমিতা এবং সঞ্জয় এখনও দাবি করেন যে তাঁরা আইনিভাবে বিবাহিত। গরিমার সাথে সঞ্জয় তিনটি সন্তানের পিতা হয়েছেন এবং আইনগতভাবে অমিতার মেয়েকে দত্তক নিয়েছেন।[২] সৈয়দ মোদির মৃত্যুর দুই মাস আগে তাঁর মেয়ের জন্ম হয়।[৩]

অমিতা ২০০৩ সালে ফৈজাবাদের ডঃ রাম মনোহর লোহিয়া অবধ বিশ্ববিদ্যালয়, থেকে স্নাতক হন এবং ২০১১ সালে একই প্রতিষ্ঠান থেকে সমাজবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।[৪]

উত্তরাধিকার নিয়ে সঞ্জয় এবং গরিমার মধ্যে আইনি লড়াইয়ে অমিতা একটি পক্ষ হয়েছিলেন।[৫] ভারতে সমস্ত রাজকীয় সুযোগ-সুবিধা বিলুপ্ত করার পূর্বে, আমেথির রাজা রণঞ্জয় সিং তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে সঞ্জয়কে দত্তক নিয়েছিলেন এবং সেই হিসেবে সঞ্জয় প্রাক্তন রাজকীয় সম্পত্তির উত্তরাধিকার পেয়েছিলেন। ১৯৮৯ সালে, তিনি গরিমাকে রাজপ্রাসাদ থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন কিন্তু ২০১৪ সালে গরিমা এবং তাঁর সন্তানেরা আমেথির অন্য একটি প্রাসাদে বাস করেছিলেন, যার নাম ভূপতি ভবন। তাঁরা সেখান থেকে সরতে অস্বীকার করেছিলেন। স্থানীয় লোকেরা তাঁকে সমর্থন করার জন্য জড়ো হয়েছিল, দাবি করেছিল যে অমিতা নন, গরিমাই আসল রানি।[৬]

রাজনৈতিক জীবন সম্পাদনা

অমিতা ২০০০ সালের আগস্ট মাস থেকে ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমেঠি/সুলতানপুর জেলার জিলা পঞ্চায়েতের চেয়ারম্যান ছিলেন।[৭] তিনি ২০০২ সালের উত্তর প্রদেশ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রার্থী হিসেবে আমেথি বিধানসভা আসনে জয়লাভ করেন।[৮] আবার ২০০৭ সালের নির্বাচনে তিনি জিতেছিলেন, তবে এবার আইএনসি প্রার্থী হিসেবে।[৬] তাঁর স্বামীও ২০০২ সালের নির্বাচনের সময় একজন বিজেপি রাজনীতিবিদ ছিলেন। আইএনসি-এর সাথে তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু করে, তিনি প্রথমে জনতা দলে এবং তারপর বিজেপিতে চলে যান। তিনি ২০০৩ সালে আবার আইএনসিতে ফিরে আসেন।[৯] তিনি কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

২০১২ সালে, অমিতা সেই বছরের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের সময় আমেথি কেন্দ্রে আইএনসি প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি সমাজবাদী পার্টির গায়ত্রী প্রজাপতির কাছে হেরে গিয়েছিলেন।[১০] তিনি ২০১৪ সালে ভারতের সংসদে একটি আসনের জন্য আইএনসি প্রার্থী হিসাবে সুলতানপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কিন্তু পরাজিত হন, বিজয়ী হন বিজেপির বরুণ গান্ধী[১১]

২০১৭ সালের উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে, অমিতা আমেথি আসনে আইএনসি প্রার্থী হিসাবে দাঁড়ান, তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন বিজেপির গরিমা সিং। বিজেপি ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ভিপি সিং- এর আত্মীয় গরিমার জন্য স্থানীয় সহানুভূতি কাজে লাগিয়ে আসনটি জয়ের আশা করেছিল।[৮] উভয় মহিলাই তাঁদের নির্বাচনী হলফনামায় সঞ্জয় সিংকে তাঁদের পতি হিসাবে নাম দিয়েছিলেন এবং গরিমাই এই লড়াইতে জিতেছিলেন। বিজেপির মুখপাত্র দাবি করেছেন যে এই ফলাফলটি প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘদিন ধরে চলা পারিবারিক নাটক সম্পর্কে ভোটারদের অনুভূতির উপর ভিত্তি করে এসেছিল।[১০] ২০১৯ সালের জুলাই মাসে, অমিতা সিং তাঁর স্বামী সঞ্জয় সিংহের সাথে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেন।[১২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Naqvi, L. H. (১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০২)। "Political mood in Nehru-Gandhi land"The Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-০৪ 
  2. Mathur, Swati (৩ আগস্ট ২০১৪)। "Battle royal in Amethi"The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-০৪ 
  3. Weinraub, Bernard (২৮ আগস্ট ১৯৮৮)। "India Murder Scandal Mixes Sex and Politics"New York Times। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-০৭ 
  4. myneta (এপ্রিল ২০১৭)। "AMEETA SINGH(Criminal & Asset Declaration)"myneta। সংগ্রহের তারিখ ১৭ এপ্রিল ২০১৩ 
  5. Rai, Manmohan (২০ সেপ্টেম্বর ২০১৪)। "Royal feud: 50-year-old Bhupati Bhavan Palace in Amethi locked in inheritance battle"The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-০৭ 
  6. Srivastava, Piyush (১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। "'Queens' & knight in Amethi battle"The Telegraph। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-০৭ 
  7. "List of Zila Panchayat Adhyaksh, Sultanpur" (পিডিএফ)। sultanpur.nic.in। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-০৬ 
  8. Pathak, Vikas (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। "Star wars in Amethi: Amita versus Garima"The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-০৭ 
  9. "Sanjay Singh comes full circle"The Times of India। ২১ আগস্ট ২০০৩। ৪ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-০৭ 
  10. Agha, Eram (১১ মার্চ ২০১৭)। "Riding Garima Singh's 'Sympathy Wave', BJP Storms Gandhi Bastion"News18 
  11. "Election Results 2014: BJP Leader Varun Gandhi Wins From Sultanpur"NDTV। ১৬ মে ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০২-০৭ 
  12. "Former Amethi royal Sanjay Sinh, wife Ameeta join BJP"DNA। ৩১ জুলাই ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৫-২৮ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা