অবিভক্ত রংপুর জেলা

ব্রিটিশ রংপুর বা অবিভক্ত রংপুর বা বৃহত্তর রংপুর ছিলো ব্রিটিশ ভারতের একটি জেলা যা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে অবস্থিত ছিলো। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ব্রিটিশদের আদলেই রংপুর জেলা গঠন করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৮৪ সালে জেলা পুনর্বিন্যাসের ফলে বৃহত্তর রংপুর জেলা বিভক্ত হয়ে রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারীগাইবান্ধা জেলা স্থাপিত হয়।

দেওয়ানী লাভের ফলে রংপুর এলাকা কোম্পানি শাসনভূক্ত হয়। এ অঞ্চলের বিস্তৃতি ছিল (১) রংপুরের ফৌজদারী এলাকা (২) রাজশাহী জমিদারির স্বরুপপুর, বাজুয়া, বাহারবন্দ, ভিতরবন্দ, পশ্চিম গারো পাহাড় এলাকার পরগনাসমূহ এবং (৩) ইন্দ্রাকপুর জমিদারি।

রংপুর জেলায় ১২ই আগষ্ট ১৭৬৫ সালে রেভিনিউ কালেক্টর, ১৭৭২ সালে সুপারভাইজার, ১৭৮১ সালে সিভিল জজ এবং ২৭শে জুন ১৭৮৭ সালে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। ১৮১৭ সালে রংপুর বিহার এবং বেনারসের কমিশনারের অধীনে ন্যস্ত হয় এবং ১৮১৯ সালে পুনরায় বোর্ড অব রেভিনিউ কলকাতার অধীন করা হয়।

বৃটিশকালে বাহের দেশ রংপুর প্রদেশের ন্যায় একটি জেলা ছিল। রংপুরের থানাগুলো ভেঙ্গে ভারত বাংলাদেশ মিলে অনেকগুলো জেলার সৃষ্টি হয়েছে । রংপুর ভেঙ্গে প্রথম ১৮২৬ সালে পৃথক গোয়ালপাড়া জেলা হয়, গোয়ালপাড়া থেকে আবার বঙ্গাইগাঁও, ধুবড়ী, দক্ষিণ শালমারা-মানকাচর, কোকড়াঝাড় জেলা সৃষ্টি হয় । ১৮৬৯ সালে রংপুর থেকে জলপাইগুড়ি জেলা। জলপাইগুড়ি ভেঙ্গে আলিপুরদুয়ার জেলা । ১৯৪৭ সালের আগে পঞ্চগড় জেলা জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে ছিল পরে তা দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমার অধীনে দেয়া হয় ।


রংপুরের কিছু থানা প্রতিবেশি জেলার সাথে সংযুক্ত হয়েছে এরকম কয়েকটি হল হাবড়া ( বর্তমান পার্বতীপুর), মলোঙ্গা, বাগদুয়ার দিনাজপুর জেলায়। ক্ষেতলাল বগুড়া জেলায় ( বর্তমান জয়পুরহাট জেলা) , দেওয়ানগঞ্জ ময়মনসিংহ জেলায় (বর্তমান জামালপুর জেলা) ।


মহকুমা গঠনের পর্যায়ে ২৭শে আগষ্ট ১৮৫৮ সাভে ভবানীগঞ্জে মহকুমা স্থাপিত হয়। পরে ভবানীগঞ্জের আয়তন খানিকটা কমিয়ে গাইবান্ধায় মহকুমা সদর স্থানান্তর করা হয়। ১৮৬৬ সালের ৭ই ডিসেম্বর সদর মহকুমা গঠিত হয়।

১৮৫৭ সালে ভবানীগঞ্জ থানা হতে সুন্দরগঞ্জ থানা সৃজন করা হয় এবং ভবানীগঞ্জকে গাইবান্ধায় যুক্ত করা হয়। ১৮৮৫ সালে উলিপুর এবং নাগেশ্বরী থানার অংশ বিশেষ নিয়ে কুঁড়িগ্রাম থানা গঠন করে ইহাকে কুঁড়িগ্রাম মহকুমা সদর দপ্তর করা হয় এবং বাগডোগরায় পৃথক আরেকটি মহকুমা স্থাপন করা হয়। ১৯শে আগষ্ট বাগডোগরা হতে মহকুমা সদর নীলফামারীতে স্থানান্তরিত হয়। ১৯০৩ সালে গোবিন্দগঞ্জ থানা বিভক্ত করে গোবিন্দগঞ্জ ও সাঘাটা থানা গঠন করা হয়। কোতয়ালী বা রংপুর থানা ১৮৭৫ সালে প্রথমে মাহিগঞ্জ এলাকায় (পুরাতন রংপুর) স্থাপিত হয়। ১৯১৬-১৯১৮ সালের মধ্যে কোতয়ালী থানা ভাগ করে গংগাচড়া থানা সৃজন করা হয়। ১৯১৮ সালে মাহিগঞ্জ থানা বিলুপ্ত করে পীরগাছা এবং কাউনিয়া নামক দুইটি পৃথক থানা গঠন করা হয়। কুমারগঞ্জ থানার নাম পরিবর্তন করে বদরগঞ্জ রাখা হয়। তিস্তা নদীর পশ্চিমাঞ্চল জলঢাকা হিসেবে নামকরণ হয়। ১৯১৩ সালে কালিগঞ্জ ও হাতিবান্ধা থানা গঠিত হয় এবং ১৯১৪ সালে ডিমলা থানা বিভক্ত হয়ে কিশোরগঞ্জ ও ডিমলা থানা স্থাপিত হয়। ১৯১৪ সালে লালমনিরহাট থানা বিভক্ত হয়ে লালমনিরহাট ও ফুলবাড়ী থানা এবং উলিপুর ও চিলমারী থানা বিভক্ত করে উলিপুর, রৌমারী ও চিলমারী থানা গঠিত হয়। ১৯১৪ সালে গাইবান্ধা বিভক্ত করে গাইবান্ধা ও ফুলছড়ি থানা এবং ১৯১৫ সালে নাগেশ্বরী থানা বিভক্ত করে নাগেশ্বরী ও ভুরুংগামারী থানা গঠিত হয়। ১৯১৯ সালে গোবিন্দগঞ্জ পুনরায় বিভক্ত করে গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ী থানা গঠন করা হয়।[১] বর্তমানে বৃহত্তর এই জেলা ৫টি জেলায় বিভক্ত হয়ে রংপুর বিভাগের সিংহভাগ এলাকা দখল করে আছে।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "রংপুর জেলা" |ইউআরএল= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)http (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১১-৩০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]