অক্সফোর্ড মিশন এপিফানী গির্জা

গির্জা

এপিফ্যানি গির্জা বা অক্সফোর্ড মিশন চার্চ দক্ষিণ এশিয়ার দ্বতিীয় বৃহত্তম [২] এবং বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এবং শৈল্পিক গির্জা। এর মুল নাম এপিফানী গির্জা হলেও স্থানীয় সাধারনের কাছে অক্সফোর্ড মিশন চার্চ নামেই বেশি পরিচিত। বরিশাল সদরের প্রানকেন্দ্রে বগুড়া রোডের ধারে এর অবস্থান। ১১৩ বছর পুরনো দৃষ্টিনন্দন এ গির্জাটি ‘লাল গির্জা’ নামেও পরিচিত।

Oxford Mission Epiphany Cathedral Church
চার্চ অব বাংলাদেশের বরিশাল ধর্মপ্রদেশ
এপিফানী ক্যাথেড্রাল গির্জা
মানচিত্র
অবস্থানকবি জীবনানন্দ দাস স্ট্রিট, বগুড়া রোড বরিশাল
দেশবাংলাদেশ
মণ্ডলীAnglican
পাদ্রির ঘরানাChurch of Bangladesh
ইতিহাস
প্রতিষ্ঠাকাল১৯০৩ (1903)
প্রতিষ্ঠাতা(বৃন্দ)Oxford Mission
স্থাপত্য
স্থপতিসিস্টার এডিথ ল্যাংগিজ (Sister Edith Langridge), Father E. L. Strong
শৈলীGreek architecture
প্রশাসন
ধর্মপাল রাজ্যDiocese of Barisal
যাজকমণ্ডলী
ধর্মপাল (গণ)Rt Revd Shourabh Pholia[১]
যাজকফাদার ফ্রান্সিস, এফই
অক্সফোর্ড মিশন এপিফানী গির্জা

ইতিহাস সম্পাদনা

 
গীর্জার ভিতরের দৃশ্য

১৮শতকের গোড়ার দিকে নদীবিধৌত বরিশাল শহরে খৃস্টান মিশনারীদের পদচারনা শুরু হয়। ইংল্যান্ড ভিত্তিক খৃস্টান উপগ্রুপ এ্যাংলিক্যান মিশনারী সংস্থা ১৮৯৫ সালে এখানে তাদের কার্যক্রম শুরু করে।[৩] ১৮৯৫ সালে ব্রিটিশ রাজের সমর্থনে ব্রিটিশ সংস্কৃতির বাহক হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশে কাজ করার উদ্দেশ্যে ব্রাদারহুড অব এপিফানী সংগঠন তৈরী হয়। এই সংগঠনের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ১৯০২ সালের পর থেকে পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়, আবাসিক হোস্টেল, শিশু সদন, স্বাস্থসেবা কেন্দ্র ইত্যাদি তৈরী হয়। এপিফানী গির্জার নির্মান কাজ ১৯০৩ সালে শুরু হয়। ২৬ জানুয়ারি এটি উদ্বোধন করা হয়[৪] তবে পূর্নাঙ্গ রূপে আসতে সময় লাগে। নির্মান কাজ অব্যাহত থাকে বেশ কয়েক বছর । ১৯০৭ সালে দ্বিতীয় ধাপের কাজ শেষ হয়। এই কমপ্লেক্সকে কেন্দ্র করে এপিফানী ব্রাদারহুড এবং সিস্টারহুড সংগঠনের তত্বাবধানে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ৩৫ একর জমির উপরে পুরো কমপ্লেক্সটি অবস্থিত। কমপ্লেক্সেে আরো আছে তেরটি ছোট-বড় পুকুর, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আবাসিক ছাত্রও ছাত্রী হোস্টেল, ফাদার ও সিস্টারদের আবাসন, পাঠাগার ও হাসপাতাল[৫]

বর্ণনা সম্পাদনা

একতলা গির্জার মূল প্রার্থনাকক্ষটির উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। [৬]। তিন দিক দিয়েই একাধিক দরজা আছে। চারদিকে বারান্দা এবং চলাচলের পথ ।মূল বেদীর উপর একটি বড়ো ক্রশ স্থাপিত আছে যেটি প্যালেস্টাইনের বেথেলহেম থেকে সংগৃহিত।[৭] টেরাকোট রঙের ইট দিয়ে বহিভাগ তৈরী। এর ছাদ কাঠের তৈরি, আর ফ্লোরে সুদৃশ্য মার্বেলের টাইলস।

গির্জাটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে, যাতে বড়ো কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগেও এর স্থাপত্যশৈলী বিনষ্ট না হয়। ১৯৬০ ও ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়েও গির্জাটি সম্পূর্ণ অক্ষত থেকে যায়।চল্লিশটি খিলানের উপরে এ গির্জাটি দাঁড়িয়ে। দিনে সাত বার এশিয়ার সবচে বড়ো ঘণ্টা এ চার্চেই বেজে ওঠে। সুদৃশ্য ঘণ্টার নিচেই চার্চের ছোট্ট অফিস। এ গির্জার সব নির্মাণসামগ্রীই বাংলাদেশের। শুধু ভেতরের চারটি বেদির মার্বেল পাথর আনা হয়েছিল ভারতের কলকাতা থেকে।[৮] এটি দেশীয় মাটি দিয়ে তৈরি আস্তনে পোড়া লাল শক্ত ইট দিয়ে নির্মিত হয়েছিল। এর সঙ্গে রড, বালু, সিমেন্ট, কাঠ এবং নির্মাণশ্রমিক সবই ছিল বাংলাদেশের।

স্থাপত্য শৈলী সম্পাদনা

 
গীর্জার পশ্চিম দৃশ্য

গ্রিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এ গির্জার প্রধান আকর্ষণ বিশাল ও নান্দনিক প্রার্থনাকক্ষ সংবলিত। এমন স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের গির্জা আর দুটি চোখে পড়ে না। প্রায় পাচতলার সমান উচ্চতার বিশাল স্থাপনা। স্থপতি হিসেবে সিস্টার এডিথের (Sister Edith Langridge) নাম উল্লেখ করা হয়। নকশা কাজ তত্বাবধান করেন ফাদার সট্রং(Father E. L. Strong)। কাঠামোর প্রধান প্রকৌশলী ফ্রেডেরিক ডগলাস। পুরো কাঠামোটি পূর্ব-পশ্চিমে প্রলম্বিত। প্রায় ৪২ মিটার লম্বা এবং ২২ মিটার চওড়া কাঠামোর সাথে পূর্ব দিকে অর্ধ-বৃত্তাকার একটি বর্ধিত অংশ সংযুক্ত। অর্ধবৃত্তাকার অংশের ব্যাসার্ধ প্রায় ৬ মিটার।

পূর্ব-দক্ষিণ কর্নারে ঘণ্টা ঘর। এটি পরে তৈরী হলেও গীর্জার মুল নকশাকে অনুসরন করে তৈরী হয়েছে। পশ্চিমে একটি আলাদা ছাদ ঢাকা করিডোর সংযুক্ত হয়েছে। রক্ষনাবেক্সনের কারণে এটি এখনো বেশ সুদৃশ্য এবং দৃঢ় অবস্থায় রয়েছে। আজও এর আদি ও অকৃত্রিম রূপের কোন পরিবর্তন ঘটেনি।

গ্যালারী সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Bishop of Barisal - Anglican Communion: Position"Anglican Communion (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ 
  2. "Oxford Mission Church: The 114-year-old spectacular red beauty of Barisal". Dhaka Tribune. 24 December 2017. Retrieved 12 January 2019.
  3. "The Oxford Mission"www.oxford-mission.org। সংগ্রহের তারিখ ১১ জানুয়ারি ২০১৯ 
  4. "Oxford Mission, a century old church in Barisal"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১৯ 
  5. বরিশালের অক্সফোর্ড মিশন চার্চ এশিয়ার সেরা পুরাকীর্তি. www.banglanews24.com (in Bengali). September 25, 2017. Retrieved 12 January 2019.
  6. অক্সফোর্ড মিশন (in Bengali). December 18, 2016. Retrieved 12 January 2019.
  7. অক্সফোর্ড মিশন। ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬। ১৫ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১৯ 
  8. dailyjanakantha, Sep 30, 2017 | গ্রিক স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত ১১৪ বছরের পুরনো 'লাল গির্জা' - জনকন্ঠ

বহি:সংযোগ সম্পাদনা