মেহের বাবা

ভারতীয় আধ্যাত্মিক গুরু

মেহের বাবা (জন্ম ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৪ - ৩১ জানুয়ারি ১৯৬৯), মেরওয়ান শেরিয়ার ইরানি, একজন ভারতীয় আধ্যাত্মিক গুরু, যিনি নিজেকে অবতার বা [১][২][৩] মানুষের রূপে ঈশ্বর বলে দাবী করতেন।[৪][৫]

মেহের বাবা
১৯৪৫ সালে মেহের বাবা
জন্ম
মেরওয়ান শেরিয়ার ইরানি

(১৮৯৪-০২-২৫)২৫ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৪
মৃত্যু৩১ জানুয়ারি ১৯৬৯(1969-01-31) (বয়স ৭৪)
উল্লেখযোগ্য কর্ম
স্রষ্টার বাণী, উপদেশাবলী
প্রধান আগ্রহ
ধর্ম, দর্শনশাস্ত্র, চারুকলা, নীতিশাস্ত্র
ওয়েবসাইটwww.ambppct.org
স্বাক্ষর

মেরওয়ার শেরিয়ার ইরানি ১৮৯৪ সালে ভারতের পুনে শহরে এক জরথুস্ট্রীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯ বছর বয়সে তিনি সাত বছরের একটি আধ্যাত্বিক রূপান্তরের প্রচেষ্টায় মনোনিবেশ করেন। [৬][৭] ২৭ বছর বয়সে, নিজের আধ্যাত্বিক মিশন শুরু এবং ১৯২২ সালে শিষ্য গ্রহণ করা পূর্বে তিনি পাচঁজন আধ্যাত্মিক গুরুর সান্নিধ্যে আসেন।[৮]

১৯২৫ সালের ১০ জুলাই থেকে জীবনের শেষক্ষণ পর্যন্ত, মেহের বাবা নীরবতা পালন করেছিলেন, একটি বর্ণমালার বোর্ড অথবা হাতের বিশেষ অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে ভাববিনিময় করতেন।[৯][১০][১১] তার শিষ্যদের সাথে তিনি নির্জনে দীর্ঘ সময় ব্যয় করতেন, এই সময় তিনি প্রায় উপোস করতেন। তিনি প্রচুর ভ্রমণ করতেন, জনসমাবেশের আয়োজন করতেন এবং কুষ্ঠরোগী, দরিদ্র ও মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষদের সঙ্গে দাতব্য কাজ জড়িত ছিলেন। ১৯৩১ সালে, মেহের বাবা পশ্চিমা দেশে প্রথমবারের মত ভ্রমণ করেন এবং সেখানে তিনি প্রচুর শিষ্যকে প্রভাবিত করেন। [১২] ঊনবিংশ শতাব্দির চল্লিশ দশকের প্রায় পুরোটা সময়, মেহের বাবা আধ্যাত্বিক জগতে উচ্চাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে কাজ করেন, তাদেরকে তিনি আধ্যাত্বিক অভিজ্ঞতার মাধ্যম বিমোহিত করেন। [১৩] ১৯৪৯ এর শুরুরদিকে, কতিপয় নির্বাচিত মণ্ডলী সাথে নিয়ে, ছদ্মবেশে তিনি সমগ্র ভারতজুড়ে ভ্রমণ করেন যে ভ্রমণের বিরাট একটি অংশ এখনো অপরিষ্কার রয়ে গেছে, তিনি এই সময়টির নাম দেন "নব জীবন"।[১৪]

দুইটি রোড দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর, একটি ১৯৫২ সালে আমেরিকায় এবং অন্যাটি ১৯৫৬ সালে ভারতে, তার চলাফেরার ক্ষমতা অনেকাংশেই সীমিত হয়ে পড়ে।[১৫][১৬] ১৯৬২ সালে, তিনি পশ্চিমা বিশ্বে অবস্খানরত তার শিষ্যদেরকে একটি মহান দর্শন, যা পাচ্য-পাশ্চাত্য সম্মেলন নামে পরিচিত, অংশগ্রহণ করার জন্য নিমন্ত্রণ পাঠান।[১৭] এলএসডি এবং অন্যান্য উন্মাদজনক মাদকদ্রব্য গ্রহণের হার মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে গেলে,[১৮] ১৯৬৬ সালে বাবা বিবৃতি দেন যে এগুলো আসলেই কোন উপকারে আসে না।[১৯] স্বাস্থের অবনতি সত্ত্বেও, তিনি তার মৃত্যু ৩১ জানুয়ারি ১৯৬৯ সাল পযর্ন্ত উপোস এবং নির্জনতা, যেটিকে তিনি তার বৈশ্বিক কর্ম হিসেবে অভিহিত করেন, বজায় রাখেন। তার সমাধি (মাজার/কবর), যা ভারতের মেহেরাবাদে অবস্থিত, বর্তমানে আন্তর্জাতিক তীর্থযাত্রায় পরিণত হয়েছে।[২০]

মেহের বাবা জীবনের উদ্দেশ্যসহ পুর্নজন্মবাদ সর্ম্পকে প্রচুর উপদেশ দিয়েছেন। তার মতে এই বিস্ময়কর পৃথিবীটা একটি মোহ। তিনি শিখিয়েছেন পৃথিবীটা হচ্ছে এমন এক কল্পনা যা স্রষ্টার অস্তিত্ব সর্ম্পকে ধারণা দেয়, এবং চিন্তাশক্তির মাধ্যমে ধর্মশাস্ত্রের মূল বাণী বোধগম্য করে নিজ আত্মাকে পরমাত্মায় মিলিত হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। স্রষ্টা অভিলাষী যারা স্বীয় আত্মা সর্ম্পকে জ্ঞান অর্জন করতে এবং জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে যারা মুক্তি পেতে চায় তাদের জন্য তিনি বাস্তবসম্মত উপদেশ দিয়েছেন।[২১] তিনি সম্যক গুরু বা চেতন্যগুরু, অবতার এবং আধ্যাত্বিক জগতের বিভিন্ন মোকাম বা স্তর সর্ম্পকেও শিক্ষা দিয়েছেন। তার অমূ্ল্যবাণীসমূহ তার প্রধান গ্রন্থ উপদেশাবলী এবং স্রষ্টার বাণীতে লিপিবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।

ভারতে তার প্রতিষ্ঠিত অবতার মেহের বাবা চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, তীথযাত্রা এবং তথ্যকেন্দ্র হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে এবং সে সাথে সাথে পপ সঙ্গীতের শিল্পীদের উপর একটি প্রভাব বিস্তার এবং "হতাশ হয়ও না, সুখী হতে শিখ" এই সাধারণ অভি্ব্যক্তিটির প্রচারে ভূমিকা পালন করে।[২২][২৩]

১৯২৫ সালের জুলাইয়ে, মেহের বাবা নির্বাক জীবন শুরু করেন, প্রথমদেক তিনি চক এবং স্লেটের মাধ্যমে, তারপর বর্ণমালা বোর্ডের মাধ্যমে এবং পরবর্তীতে হাতের বিশেষ অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে ভাববিনিময় করতেন। ১৯২৭ সালের জানুয়ারীতে তিনি কলম বা পেন্সিল দিয়ে লেখালেখিও ছেড়ে দেন।

জীবনী সম্পাদনা

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

মেহের বাবা ছিলেন একজন ইরানি,[২৪] যিনি ভারতের পুনে শহরের এক জরথুস্ট্রীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। [২৫] জন্মের পর তার নাম দেয়া হয় মেরওয়ান শেরিয়ার ইরানি।তিনি শেহরিয়ার ইরানি, একজন ফার্সি জরথুস্ট্রীয় যিনি পুনাতে (বর্তমানে পুনে) স্থায়ী হওয়ার আগে আধ্যাত্বিক জ্ঞান অনুসন্ধান বহু বছর অতিবাহিত করেছিলেন, এবং শেরিন ইরানির দ্বিতীয় সন্তান। [২৬]

তরুণ বয়সেই তিনি কসমোপলিটন ক্লাব নামে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান গঠন করেন,[২৭] যা বৈশ্বিক বিষয়ক অবগত থাকার জন্য এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানে সাহায্য প্রদানের জন্য নিবেদিত ছিল। তিনি একাধারে যন্ত্রশিল্পী এবং কবি ছিলেন। তিনি বিভিন্ন ভাষার কাব্যে পারদর্শী ছিলেন, তিনি বিশেষ করে হাফেজ, শেক্সপিয়ার এবং শেলির রচিত কাব্যের প্রতি বিশেষ অনুরাগ ছিল। [২৮]

তরুণে বয়সে, আধ্যাত্বিকতা বিষয়ে তার কোন অভিলাষা বা তা লাভের কোন প্রকারের ইচ্ছে তিনি অনুভব করেননি।[২৯] খেলাধুলার প্রতি তার অধিক আগ্রহ ছিল এবং তিনি তার স্কুল ক্রিকেট দলের সহ-অধিনায়ক ছিলেন। ১৯ বছর বয়সে, পুনের ডেকান কলেজ এর ২য় বর্ষে থাকাকালীন, তিনি হযরত বাবাজান, যিনি স্থানীয়ভাবে সাধক হিসেবে সম্মানিত ছিলেন, নামে এক বৃদ্ধা মুসলিম মহিলার সাথে সাক্ষাত করেন এবং তিনি মেহের বাবার কপালে একটি চুমু দেন। এই ঘটনা তার মনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে, দৃশ্যতভাবে তাকে স্তম্ভিত করে ফেলে এবং তিনি তার সকল প্রকারের পার্থিব কাজ ত্যাগ করেন।[৩০][৩১] ঐ ঘটনার পর তিনি অন্যান্য আধ্যাত্বিক মহীরুদের সান্নিধ্যে আসেন যাদের মধ্যে, যাদেরকে পরবর্তীতে তিনি সম্যক বা চেতনগুরু হিসেবে অভিহিত করেন, হযরত বাবাজানসহ তাজউদ্দিন বাবা, নারায়ণ মহারাজ, শিরডির সাঁই বাবা এবং উপাস্নি মহারাজ উল্লেখযোগ্য।[৩২]

উপাস্নি মহারাজ, তার ভাষ্য মতে, আধ্যাত্বিক অনুভবকে স্বাভাবিক জীবনের সাথে একত্রিত করার ক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করেন যা তাকে স্রষ্টা স্মরণচ্যূতি হওয়া ছাড়াই পার্থিব কর্ম সম্পাদনে সমর্থ করে তুলে।[৩৩] ১৯২১ এর শেষের দিকে, যথন তার বয়স ২৭, উপাস্নির সাথে সাত বছর আধ্যাত্বিক জীবন অতিবাহিত করার পর, মেরওয়ান নিজের প্রতি আকর্ষিত হতে শুরু করলেন। তার প্রথমদিককার শিষ্যরা তাকে "মেহের বাবা" নামে অভিহিত করেন যার অর্থ "দয়াল পিতা "।[৩৪]

১৯২২ সালে, মেহের বাবা এবং তার অনুসারিরা বোম্বেতে (বর্তমানে মুম্বাই) মঞ্জিল-এ-মীম (গুরুধাম) প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে বাবা তার শিষ্যদেরকে কঠোর শৃঙ্খলা এবং আজ্ঞানুবর্তিতা সর্ম্পকে জ্ঞান দান করেন।[৩৫] এক বছর পর, বাবা এবং তার মণ্ডলী (শিষ্যগণের বিশেষ দল) আহমেদনগর থেকে কয়েক মাইল বাহিরে একটি স্থানে, যাকে তিনি মেহেরাবাদ নাম দেন, স্থানান্তরিত হন।[৩৬] এই আশ্রমই পরবর্তীকালে তার কর্মের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। বিশের দশকে, মেহেরাবাদে মেহের বাবা একটি বিদ্যালয়, হাসপাতাল এবং ঔষুধের দোকান প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠান তিনটি সকল জাতি এবং ধর্মবিশ্বাসীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল।[৩৭]

১৯২৫ এর জুলাইয়ে, মেহের বাবা স্বারোপিত নীরব জীবন শুরু করেন। প্রথম দিকে তিনি ছক এবং স্লেটের মাধ্যমে, তারপর বোর্ডে বর্ণের মাধ্যমে এবং পরবর্তীতে নিজস্ব অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে ভাববিনিময় করতেন।[৩৮] ১৯২৭ সালের জানুয়ারীতে তিনি কলম অথবা পেন্সিল দিয়ে লেখনিও পরিত্যাগ করেন।[৩৯]

১৯৩০- পশ্চিমা বিশ্বে মেহের বাবা সম্পাদনা

১৯৩০-এ, মেহের বাবা ইউরোপ ও আমেরিকায় বেশ কয়েকটি সফর সহ বিশ্বময় ব্যাপক ভ্রমণ শুরু করেন। তিনি সে সময় পাশ্চাত্যে তার অনুসারীদের একটি দল প্রথমবারের মত প্রতিষ্ঠা করেন।[১২] ভারতের ব্রিটিশ সরকারের পাসপোর্ট ফর্মে স্বাক্ষরসহ লেখা ও কথা বলার বাধ্যবাধকতা থাকায় তিনি ইরানি পাসপোর্ট দিয়ে ভ্রমণ করেছিলেন।[৪০]

 
১৯৩৬ সালে একটি বোর্ডের মাধ্যমে মেহের বাবা তার এক শিষ্যকে তার বার্তা বুঝিয়ে দিচ্ছেন

১৯৩১ সালে ইংল্যান্ডে তার প্রথমে সফরে তিনি এসএস রাজপুতানা যাত্রীবাহী জাহাজে যাত্রা করছিলেন যে জাহাজে মহাত্মা গান্ধীও, যিনি লন্ডনে ২য় গোল টেবিল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার উদ্দ্যেশে যাত্রা করেছিলেন, ছিলেন। বাবা ও মহাত্মা গান্ধীর মধ্যে এই জাহাজে তিনটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় যার মধ্যে একটি তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকও ছিল।[৪১] ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমে তাদের বৈঠকগুলো গুরুত্বসহকারে প্রকাশিত হয়,[৪২] কিন্তু একটি বিবৃতিতে বলা হয়, “আপনাকে জোরালোভাবে বলতে হবে যে গান্ধী কখনও মেহের বাবা থেকে সাহায্য প্রার্থনা বা আধ্যাত্বিক উপদেশের জন্য অনুরোধ করেননি।”[৪৩]

১৯৩২ সালের ২০ মে, বাবা নিউইয়র্কে পৌঁছান এবং গণমাধ্যমকে প্রায় ১০০০ শব্দের “আমেরিকার প্রতি বার্তা” নামে একটি লিখিত বিবৃতি দেন যা কুয়েনটিন টড নামে তার এক শিষ্য বর্ণনা করেন। বিবৃতিতে তিনি নিজেকে, সকল কিছুর অসীম উৎস হিসেবে ঘোষণা দেন এবং তার মৌন ভঙ্গের ইঙ্গিত দেন। “আামি যখন বলি, আমার মূল বার্তা বিশ্বময় পৌঁছিয়ে দেয়া হবে এবং তা সবর্জন দ্বারা গৃহীত হবে”। ইন্দো-ব্রিটিশ রাজনৈতিক অবন্থা সর্ম্পকে জিজ্ঞেস করলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি, কিন্তু তার এক অনুসারী ব্যাখ্যা করেন যে তিনি গান্ধীকে রাজনীতি ত্যাগ করতে বলেছিলেন।[৪৪]

পশ্চিমা বিশ্বে, মেহের বাবা হলিউডের গ্যারি কপার, চার্লস লাউটন, তাল্লুলাহ ব্যাঙ্কহেড, বরিস কার্লফ, টম মিক্স, মউরিস চেভালিয়ের, আর্নস্ট লুবিটচসহ বেশকিছু উল্লেখযোগ্য খ্যাতিনামা অভিনতা ও শিল্পীর সাথে দেখা করেন।[৪৫] ১ জুন ১৯৩২ সালে, ম্যারি পিকফোড এবং ডগলাস ফ্যারিব্যাংকস জুনিয়র পিকফেয়ারে বাবাকে অভ্যথনা জানানো জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যেখানে তিনি হলিউডের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন।[৪৬] ফলস্বরূপ, মেহের বাবা "ত্রিশের দশকের আগ্রহী ব্যক্তিদের একজন" হিসেবে আবির্ভূত হন।[৪৭]

১৯৩৪ সালে,হলিউডে নিজের মৌন ভঙ্গের ঘোষণা দেয়ার পর হঠাৎ করে তিনি তার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনেন এবং আরএমএস এমপ্রেস অব কানাডা এ উঠে পড়েন এবং কোন প্রকারের ব্যাখ্যা ছাড়াই হংকং এর উদ্দ্যেশে যাত্রা করেন। গণমাধ্যমসমূহ প্রতিবেদন করে যে “বাবা আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মৌন ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারণ পরিস্থিতি তথনো উপযুক্ত ছিলনা”।[৪৮] ১৯৩৪ সালে তিনি ইংল্যান্ডে পুনরায় ফিরে আসেন[৪৯] কিন্তু পঞ্চাশ দশকের শুরু দিক পযর্ন্ত তিনি যুক্তরাজ্যে আর যাননি।[৫০]

ত্রিশ দশকের শেষের দিকে, মেহের বাবা পশ্চিমা বিশ্বের একদল মহিলাকে ভারতে তার সাথে যুক্ত হওয়ার আহবান জানান, যেখানে তিনি ভারত ও সিলন (বর্তমানে শ্রীলঙ্কা) এ একটি ধারাবাহিক সফরের আয়োজন করেন যা ব্লু বাস ট্যুরস নামে পরিচিতি লাভ করে। যখন তারা ফিরে আসেন, বিভিন্ন গণমাধ্যম তাদের এই সফরকে লজ্জাজনককর সফর হিসেবে অভিহিত করেন।[৫১] ১৯৩৬ সালে টাইম ম্যাগাজিন গড ইস মাই এ্যাডভেঞ্চার এর পর্যালোচনা করতে গিয়ে চার বছর আগের "শ্রী সদগুরু [sic] মেহের বাবা নামে এক লম্বা চুলওয়ালা, রেশমী-গোফঁওয়ালা পারসী ব্যক্তি" নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মুগ্ধতার বিষয়টি বণনা করে।[৫২]

১৯৪০-মাস্তগণ এবং নব জীবন সম্পাদনা

 
একজন মাস্ত-এর সাথে মেহের বাবা; ব্যাঙ্গালোর, ১৯৪০

ঊনবিংশ শতাব্দির ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে, মেহের বাবা একটি বিশেষ শ্রেণীর লোকদের, যাদের তিনি মাস্ত নামকরণ করেন, নিয়ে বিশাল এক কর্মযজ্ঞে লিপ্ত হন যারা প্রভুর প্রেমে বিভোর ছিল।[৫৩] বাবার মতে, এই মাস্তগণ তাদের মোহনীয় উচ্চতর আধ্যাত্বিক জগতে সর্বদা বিভোর থাকতেন। যদিও বাহ্যিকভাবে মাস্তগণ বিচারশক্তিহীন বা এমনকি উন্মাদের মত দৃশ্যমান হলেও, বাবা দাবি করতেন যে তাদের আধ্যাত্বিক জগতে তাদের অবস্থান বেশ উন্নতর স্থানে এবং তাদের সাথে সাক্ষাত করে আধ্যাত্বিকভাবে তারা যেন আরো উন্নত স্তর লাভ করতে পারে সেজন্য তিনি তাদের সাহায্য করতেন।[৫৪] এই মাস্তগণদের মাঝে সবচেয়ে পরিচিত মাস্ত হচ্ছেন মোহাম্মদ মাস্ত, তিনি মেহেরাবাদে মেহের বাবার আশ্রমে ২০০৩ সালে বাবার মৃত্যু পর্যন্ত বাস করতেন।[৫৫]

১৯৪৯ এ বাবা হেয়ালিপূর্ণ জীবন শুরু করেন যেটিকে তিনি “নব জীবন” নামে আখ্যায়িত করেন। বাবার কঠিন অনুরোধ এবং হাজারো প্রশ্ন মান্য করার প্রয়াস প্রদর্শন শর্তেও বাবা মাত্র ২০ জনকে “নৈরাশ্য এবং অসহায়ত্ব” ভরা জীবনে তার সহচর হওয়ার অনুমতি দেন।[৫৬]

যারা তার উপর নির্ভর ছিল তিনি তাদের ভবিষ্যত প্রয়োজনের জন্য কিছু জিনিসপত্র রেখে, তিনি এবং তার সহচরগণ তাদের অপরাপর সকল প্রকার সম্পত্তি এবং আর্থিক দায়বদ্ধতা পরিত্যাগ করেন। তারপর তারা ছদ্মবেশে সমগ্র ভারত ভ্রমণ করে এবং খাদ্য ভিক্ষা এবং বাবার কঠোর “নব জীবনের শর্তাদি” নির্দেশ মান্য করে চলছিলেন। যে সকল সহচারী এই সকল নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হতেন তিনি তাদেরকে দূরে পাঠিয়ে দিতেন।[৫৭]

নব জীবন সর্ম্পকে মেহের বাবা লিখেছেন:

এই নব জীবন অনন্ত, এবং এমনকি আমার শারীরিক মৃত্যুর পরও যারা মিথ্যেকথন, ঘৃণা, রাগ, লোভ এবং কামমুক্ত জীবন যাপন করবে, এবং যারা, যৌনাচারে লিপ্ত হবে না, কারো অনিষ্ট করবে না, পরনিন্দা করবে না, বস্তুগত কোন কিছুর অধিকার বা ক্ষমতা অন্বেষণ করবে না, যারা কোন প্রকারের সম্মানের মুখাপেক্ষী হয় না, না সে সম্মানের লোভ করে না কলঙ্ক থেকে দূরে থাকে এবং কোন কিছুকেই ভয় পায় না এবং শুধুমাত্র তারা যারা কেবল স্রষ্টার উপর নির্ভর করে এবং যারা বিশুদ্ধরূপে স্রষ্টাকে ভালবাসে, যারা স্রষ্টানুরাগীদের বিশ্বাস এবং স্রষ্টার প্রকাশ্যবাদে বিশ্বাসী এবং যারা আধ্যাত্বিক বা বস্তুগত কোন প্রকারের প্রতিদান আশা করে না; যারা, দূর্দশায় হতাশ হওয়া ছাড়াই, সাহসিতকা এবং সর্বান্তঃকরণে একশত ভাগ আগ্রহ নিয়ে তারা মোকাবেলা করে এবং জাত, ধর্মীয় মতবাদ এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিকে কোন প্রকারের গুরুত্ব দেয় না, তা সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করবে তাদের মাধ্যমেই এই নব জীবনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। এই নব জীবন অনন্তকাল ধরে চলতে থাকবে এবং এমনকি এইা নব জীবন পালনের মত কেউ না থাকলেও তা চলতে থাকবে।[৫৮]

মেহের বাবা ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নব জীবনের অধ্যায় শেষ করেন[৫৯] এবং ভারত এবং পাশ্চাত্যে তিনি জনসাধারণের মাঝে পুনরায় ফিরে আসেন।[৬০]

১৯৫০-স্রষ্টার বাণী এবং সড়ক দূর্ঘটনা সম্পাদনা

১৯৫০ এর দিকে বাবা ভারতে বাহিরে দুইটি কেন্দ্র খোলেন; আমেরিকার দক্ষিণ ক্যারোলিনার মিরটলে বিচে মেহের আধ্যাত্বিক কেন্দ্র এবং অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনের কাছেই অবতার নিবাস। তিনি ১৯৫২ সালের এপ্রিলে মেহের আধ্যাত্বিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। ১৯৫২ এর ২৪ মে মেহের আধ্যাত্মিক কেন্দ্র থেকে মেহের পর্বতে যাওয়ার সময় তিনি যে গাড়িতে যাত্রী হিসেবে আরোহণ করেছিলেন সে গাড়িটি প্রাগের ওকলাহোমাতে দূর্ঘটনার শিকার হলে তিনি মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হন। তিনি এবং তার সাথীরা গাড়ি থেকে ছিটকে পড়ে এবং গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন। বাবা পা মারাত্মকভাবে ভেঙ্গে যায় এবং তিনি দীর্ঘস্থায়ী মুখের আঘাতপ্রাপ্ত হন, সে সাথে তার নাকের হাড়ও ভেঙ্গে যায়। উত্তর ক্যারোলিনার ডরহমে অবস্থিত ডিউক হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার পর সহচরসহ তিনি মিরটলে বিচে অবস্থিত মেহের আধ্যাত্বিক কেন্দ্রে সেবা গ্রহণের জন্য পুনরায় ফিরে আসেন।[৬১] মিরটলে বিচের জুপন ডিউনেসে, এলিজাবেথ প্যাটেরসানে এর মালিকানাধীন বাড়ি, চিকিৎসা পরবর্তী পুর্নবাসনের সময়, তিনি সুফিদের অধিকারের উপর কাজ করেন, যেটিকে তিনি সুফিবাদ বিষয়ক সনদ নামে আখ্যায়িত করেন।[৬২]

১৯৫৩ এর আগস্টে মেহের বাবা দেরাদুনে সৃষ্টি ও এর উদ্দেশ্য বিষয়বস্তুর উপর তার গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ স্রষ্টা বাণী রচনা করতে শুরু করেন।[৬৩] ১৯৫৪ এর সেপ্টম্বরে, মেহের বাবা মেহেরাবাদে নির্জনে থাকতে শুরু করেন, পরবর্তীতে যা তিনটি অবিশ্বাস্য সপ্তাহ হিসেবে বিখ্যাত হয়ে উঠে।.[৬৪] এই সময় বাবা "মেহের বাবার আহ্বান" নামে একটি ঘোষণা জারি করেন, যেখানে তিনি পুনরায় নিজের অবতাররূপের কথা ব্যক্ত করেন।[৬৫] নির্জনবাসের শেষের দিকে মেহেরে বাবা আমেরিকায় সম্পাদনার এবং প্রকাশনার জন্য সুফিবাদে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটানো দুইজন ব্যক্তিকে, লুডভিগ এইচ ডিমপল এবং ডন ই স্টিভেনস, তার লিখিত স্রষ্টার বাণীর সম্পূর্ণ পান্ডুলিপি প্রদান করেন।[৬৬] গ্রন্থটি পরের বছরই ডড, মেয়াড ও কোম্পানি দ্বারা প্রকাশিত হয়।

১৯৫৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মেহেরে বাবা তার "চূড়ান্ত ঘোষণা" বার্তা দেন, যেটিতে তিনি বিভিন্ন হেঁয়ালিপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী করেন।[৬৭]

১৯৫৪ এর অক্টোবরে, মেহের বাবা তার বর্ণমালা বোর্ড পরিত্যাগ করেন এবং যোগাযোগের জন্য হস্ত দ্বারা বিশেষ অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করা শুরু করেন, যা তিনি তার শেষ জবিন পর্যন্ত ব্যবহার করেছেন।[৬৮]

২ ডিসেম্বর ১৯৫৬ সালে, ভারতের সাতারাতে, যে গাড়িতে বাবা ভ্রমণ করছিলেন সে গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং তিনি দ্বিতীয়বারের মত গুরুতর সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হন। বাবার মেরুদন্ডসহ বিভিন্ন অঙ্গ গুরুতরভাবে জখমপ্রাপ্ত হয়। ডাঃ নিলু, বাবার মান্দালিদের অন্যতম সদস্য, ঐ দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে।[৬৯] সড়ক দূর্ঘটনাটি বাবার শারীরিক শক্তি অনেকাংশেই কেড়ে নেয়। তার চিকিৎসকের ভবিষ্যদ্বাণী সত্ত্বেও, অনেক চেষ্টার পর বাবা পুনরায় হাটঁতে সক্ষম হন, কিন্তু তিনি তখন থেকেই তীব্র ব্যথা অনুভব করতে থাকেন এবং তার চলাচল চরমভাবে সীমিত হয়ে পড়ে। বস্তুত:, ১৯৫৮ সালে পাশ্চাত্যে তার ভ্রমণের সময়, তাকে প্রায় সময় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গা বহন করে নিয়ে যেতে হত।[৭০]

১৯৫৬ সালে, আমেরিকায় তার পনেরতম বারের মত ভ্রমণের সময়, বাবা দক্ষিণ ক্যারোলিনার মিরটলে বিচে অবস্থিত মেহের আধ্যাত্বিক কেন্দ্রে যাওয়ার পূবে নিউ ইর্য়কের হোটেল ডেলমনিকোতে অবস্থান করেন। জুলাইয়ে তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে যান এবং সেখানে তিনি জেমস টেরি (আইভি) ডিউস,[৭১] আরাবিয়ান আমেরিকান তেল কোম্পানীর ভাইস প্রেসিডেন্ট এর স্ত্রী, এর ঘরে তার বন্ধু এবং শিষ্যদের সাখে সাক্ষাত করেন।[৭২] এরপর অস্ট্রেলিয়ার যাওয়ার পূর্বে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার ওজালের মেহের মাউন্ডে যান। ১৯৫৮ সালে তিনি আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়াতে শেষবারের মত সফর করেন।[৭৩]

১৯৬০- পরবর্তী বছরসমূহ এবং মাদকদ্রব্যে বিরুদ্ধে বার্তা সম্পাদনা

১৯৬২ সালে, জনসাধারণের জন্য বাবা একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন, যা পাচ্য-পাশ্চাত্য সম্মেলন নামে পরিচিত। ঐ সম্মেলনে তিনি তার ভারতীয় শিষ্যদের সাথে সাক্ষাতের জন্য পশ্চিমাবিশ্বে অবস্থানরত তার শিষ্যদেরকে আমন্ত্রণ জানান। দূর্ঘটনাজনিত প্রাপ্ত আঘাতের যন্ত্রণা সত্ত্বেও বাবা হাজারো ভক্তদের তার সাক্ষাত দেন।[৭৪] ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে, পশ্চিমাবিশ্বে মারাত্বকহারে মাদকদ্রব্যের ব্যবহারে তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এবং টিমথি লেয়ারি ও রিচার্ড আলপার্টসহ কিছু পাশ্চাত্য সংস্থার সাথে একত্রিত হয়ে কাজ করা শুরু করেন, যেখানে তিনি আধ্যাত্বিক উদ্দেশ্যে মাদ্রক দ্রব্য গ্রহণকে চরমভাবে নিরোৎসাহিত করেন।[৭৫] ১৯৬৬ সালে গড ইন এ পিল নামক একটি প্যাম্পলেটে মাদকদ্রব্যে বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রকাশিত হয়।[৭৬]

মেহের বাবা বিবৃতি দেন যে মাদকদ্রব্য গ্রহণ আধ্যাত্বিকতাকে নষ্ট করে দেয় এবং মাদকদ্রব্য গ্রহণের মাধ্যমে যদি আধ্যাত্বিক উৎকর্ষ সাধন হয় তাহলে, “স্রষ্টার স্রষ্টাত্বে কোন গুরুত্ব নেই”।[৭৬] মেহের বাবা পশ্চিমাবিশ্বে অবস্থানরত কিছু তরুণ শিষ্যকে তার এই বাণী প্রচার করতে নিদেশ দেন; নিদেশ পালন করতে গিয়ে, শিষ্যরা ঐ সময়ে মেহের বাবার উপদেশ সম্পকে তরুণদেরকে সচেতনতা বৃদ্ধি করেন। ফ্রেডরিক চ্যাপমানের সাথে এক সাক্ষাতকারে বাবা বলেন যে এলএসডি “শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্বিক পথে খুবই ক্ষতিকর”, এবং তিনি এই বলে সতক করেন যে “নিয়মিত এলএসডি গ্রহণে গ্রহণকারী মানসিক রোগী বা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে পারে”।[৭৭]

এর ভিত্তিতে, বাবার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার ভক্তরা মাদক বিরোধী একটি প্রচারণার আয়োজন করে। প্রচারণাটি ব্যাপক সফলতা না পেলেও,[৭৮] এটি নতুন অনুসারীদের মাঝে একটি নতুন আবহ সৃষ্টি করে এবং মাদকদ্রব্যের ভয়াবহতার অনুসারে বাবার কিছু দৃষ্টিভঙ্গি প্রাতিষ্ঠানিক বিতর্কের বিষয়বস্তু হয়ে উঠে।[৭৯]

১৯৬২ এর দিকে পাচ্য-পাশ্চাত্য সম্মেলনে, বাবার স্বাস্থ্য নিয়মিত অবনতি ঘটতে থাকে। তার শরীরে শারীরিক জখম থাকা সত্ত্বেও, তিনি দীর্ঘ নির্জনবাস উপবাস চালিয়ে যান।[৮০] ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে, বাবা একটি নিদিষ্ট সময়ে নির্জনবাস সম্পন্ন করেন এবং তারপর তিনি এই বলে বিবৃতি দেন যে তার কাজ “আমার কাজ ১০০% সম্পন্ন হয়েছে এবং আমি সন্তুষ্ট”।[৮১] এই সময় তিনি একটি হুইল চেয়ার ব্যবহার করতেন। পরবতী কয়েক মাসে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং এরপরই তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। তার শরীরের মাংসপেশীতে ভীষণ খিঁচুনী দেখা দেয়। কয়েকজন চিকিৎসকের সেবাদান সত্ত্বেও তার মাংসপেশীর খিঁচুনী ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে।[৮২]

১৯৬৯ সালের ৩১ জানুয়ারীতে, মেহের বাবা মৃত্যুবরণ করেন,[৮৩] তিনি তার সবশেষ অঙ্গিভঙ্গি দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করেন যে, “ভুলে যেও না যে আমি ঈশ্বর”।[৮২] বাবাকে মেহেরাবাদে সমাহিত করা হয়। শেষকৃত্যের আগে মেহের বাবা শরীরকে গোলাপ এবং বরফে ঢেকে প্রায় এক সপ্তাহ রেখে দেওয়া হয় যাতে জনসাধারণ বাবাকে শেষবারের মত সম্মান জানাতে পারে।[৮৪] তার মৃত্যুর পূর্বে, জনসাধারণের সাথে সাক্ষাতের জন্য একটি বিরাট অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেন যা পুনেতে হওয়ার কথা ছিল। অনুষ্ঠানের উদ্দ্যেক্তার অনুপস্থিতি সত্ত্বেও তারা অনুসারীরা অনুষ্ঠানটি আয়োজনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই “শেষ দর্শন” অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অস্ট্রেলিয়ার শত শত ভক্তসহ হাজারো অনুসারী অংশগ্রহণ করেছিল।[৮৫]

নির্বাক জীবন সম্পাদনা

১৯২৫ সালের ১০ জুলাই হতে ১৯৬৯ মৃত্যু পর্যন্ত মেহের বাবা নির্বাক ছিলেন।[৯][১০][৮৬] প্রথমদিকে তিনি একটি বর্ণ বোর্ড ব্যবহার করে যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং পরবর্তীতে হাতের বিশেষ সংকেতের মাধ্যমে যা তার বিশেষ এক ভক্ত এরুক জেসাওয়ালা দ্বারা ব্যক্ত হত।[৮৭] মেহের বাবা বলেন যে তার নীরবতা আধ্যাত্বিক কোন কারণ নয়, বরং কেবল তা শুধুমাত্র পার্থিব কাজের সাথে সর্ম্পকযুক্ত।

যখন যখন মানুষ স্রষ্টার দেখানো পথে চলতে ভুলে যায়, তখন এইসব ভ্রান্তপথে চলা মানুষদেরকে স্রষ্টা প্রদত্ত শিক্ষা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য অবতারের প্রয়োজন হয়ে দাড়াঁয়। স্রষ্টা যে করুণা শিক্ষা দিয়েছেন তা প্রয়োগ না করে, মানুষ রণক্ষেত্রে জড়িয়ে পড়ে। বিনয়ী, ভালবাসা, শুদ্ধতা এবং সত্যতার পরিবর্তে মানুষ ঘৃণা, লোভ এবং নৈরাজ্যের পথ অবলম্বন করছে। মানুষ যেহেতু স্রষ্টা প্রদত্ত আদর্শনীতি ও নৈতিক উপদেশের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে বধির হয়ে আছে, তাই আমি বর্তমান এই অবতাররূপে নীরবতা পালন করছি।[৮৮]

 
১৯২৫ হতে ১৯৫৪ সাল পযর্ন্ত মেহেরে বাবা বর্ণমালার বোর্ডেF অক্ষরের মাধ্যমে ভাব বিনিময় করতেন।

মেহের বাবা প্রায় ইঙ্গিত করতেন যে, “ প্রত্যেক অন্তরে ‘মনের ভাব’ প্রকাশ করানোর মাধ্যমেই তিনি তার নীরবতা রদ করবেন, তদানুযায়ী প্রত্যেক জীবের মাঝে আধ্যাত্বিকতার বীজ বপন করে দেয়া।”[৮৯]

যখন আমি আমার নীরবতা রদ করব, আমার ভালবাসার প্রভাব সমগ্র বিশ্বময় এবং সমগ্র সৃষ্ট জীব তার জানতে পারবে, অনুভব এবং তার স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে। এটি প্রত্যেককে নিজস্ব দাসত্ব থেকে মুক্তকরনে সাহায্য করবে। আমি হচ্ছি সে স্বর্গীয় সত্ত্বা যে তোমাদেরকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভালবাসতে পারে। আমার নীরবতা রদ তোমাদেরকে তোমাদের নিজের আসল পরিচয় লাভে সহায়তা করবে।[৯০]

মেহের বাবা বলেন, তার নীরবতা রদ বিশ্বময় একটি আধ্যাত্বিক বিপ্লবময় ঘটনা হিসেবে গণ্য হবে।

আামি যখন কথা বলব, আমি এমন একটি ভিত্তি স্থাপন করে যাবো যা করতে পরবর্তী সাত শত বছর লেগে যাবে।[৯১]

অনেক কারণেই মেহের বাবা তার মৃত্যুর আগে কখন এবং কোথায়[৯২] শ্রবণসাধ্য শব্দের মাধ্যমে তাঁর নীরবতা ভঙ্গ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।[৯২] কিন্তু সমসাময়িক সকলের মতে, তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নীরব ছিলেন।[৯৩] নীরবতা ভঙ্গে মেহের বাবা র অসফলতা তার কিছু অনুসারীদের মাঝে হতাশার উদ্রেক সৃষ্টি করলেও অন্য অনুসারীরা এটিকে তাদের বিশ্বাসের পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করেন।[৯৪] কিছু অনুসারী মনে করেন যে “মনের ভাব” এখনো “বলা” হয়নি, অথবা মেহের বাবা আধ্যাত্বিকভাবে তার নীরবতা রদ করেছিলেন কিন্তু শারীরিকভাবে করেননি।[৯১]

অনেক বছর ধরেই, বাবা তার অনুসারীদের কঠোরভাবে ১০ জুলাইকে, যেদিন থেকে তিনি নীরবতা শুরু করেছিলেন, নীরবতা পালন, উপোস এবং প্রার্থনার মাধ্যমে পালন করার উদযোগী হতে বলেন। ১৯৬৮ সালে নীরবতা দিবসে তার শেষ অনুরোধে, তিনি তাদেরকে শুধুমাত্র নীরব থাকতে পরামর্শ দেন।[৯৫] বাবার অনেক অনুসারীরা তার সম্মানে নীরবতা দিবসটি পালন করে যাচ্ছে।

উপদেশ সম্পাদনা

মেহের বাবার উপদেশসমূহকে প্রধান দুইটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়: বিশ্বব্রহ্মান্ড এবং আত্মার প্রকৃতির উপর তার অধিবিদ্যা এবং আধ্যাত্বিক অভিলাশার জন্য প্রায়োগিক উপদেশ। এ দুইট পরস্পর সর্ম্পকযুক্ত। তার অধিবিদ্যার অনেকাংশই তার প্রধানতম গ্রন্থ, স্রষ্টার বাণীতে পাওয়া যায়।এটিতে তার সৃষ্টিতত্ব এবং জীবনের উদ্দেশ্যসহ আত্মার অগ্রগমন সর্ম্পকে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। তার অন্য আরেকটি গ্রন্থ উপদেশবলীতে তিনি বাস্তবিক আধ্যাত্বিক জীবনের উপর নিজের ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যদিও এটি স্রষ্টার বাণীতে লিপিবদ্ধ তার অধিবিদ্ধার অনেকাংশ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা দিয়েছেন।[৯৬]

স্রষ্টার বাণী সম্পাদনা

স্রষ্টার বাণীতে, মেহের বাবা আত্মা অচৈতন্য অবস্থা থেকে চৈতন্য অবস্থার পরম সিদ্ধি লাভের সম্পূর্ণ যাত্রা বর্ণনা করেন। সমগ্র যাত্রাটিই একটি কল্পনার যাত্রা, যেখানে স্রষ্টার মূল অবিচ্ছেদ্য সত্তাকে অগণিত আত্মার মূল হিসেবে কল্পনা করেন যেটিকে তিনি একটি অসীম মহাসমুদ্রে পানির বুদ্বুদের সাথে তুলনা করেন।[৯৭]

প্রত্যেক আত্মা, চৈতন্য লাভের ক্ষমতায় ব্যাকুল, চৈতন্যের চরম আদিম বা প্রাথমিক অবস্থাম থেকে নিজের যাত্রা শুরু করে।চরম আদিম অবস্থার এই সীমাবদ্ধতা থেকে আরো উন্নত চৈতন্যবোধ লাভের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়।[৯৮]

মেহের বাবার মতে, প্রত্যেক আত্মায় স্বর্গীয় চৈতন্যকে অনুসরণ করার মাধ্যমে বিকশিত হতে থাকে: যা সাতটি “জগত”: পাথর/ধাতু, উদ্ভিজ্জ, কীট, মৎস, পাখি, প্রাণী এবং মানুষ, বিভিন্ন রূপে আবর্তনের অভিজ্ঞতার মাধ্যম হয়ে থাকে।[৯৯] প্রত্যেক আত্মাই নিজের ধারাবাহিক প্রতিটি রূপের সাথে পরিচিত হয়, এভাবে আত্মাটি মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এই বিবর্তনের সাথে সাথে চিন্তাশক্তিও বাড়তে থাকে, যতক্ষণ পযন্ত না মানবীয় রুপের চিন্তা অসীম না হয়। যদিও মানবরূপে প্রতিটিই আত্মাই স্বগীয় বিষয়ে সজাগে সক্ষম, সকল ধরনের মনোগত বা অনুভূতিগত ধারণা যা আত্মাটি বিবর্তনের সময় অজন করেছিল তা নিছকই মোহ, যা আত্ম পরিচয় জ্ঞান লাভে বাধা সৃষ্টি করে।এই বাধা অতিক্রম করে, আত্ম পরিচয় জ্ঞান লাভের জন্য পুনরায় মানব রুপে জন্ম নেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় যা পুনর্জন্ম বলে পরিচিত।[১০০]

প্রকৃতপক্ষে আত্মাটি এমন একটি স্তরে গিয়ে উপনীত হয় যেখানে আগের জন্মের অজনকৃত সকল ধারণা ক্ষীণ হয়ে যায়। এই স্তরটিতেও কয়েকটি মানব জনমের প্রয়োজন রয়েছে, যার মাধ্যমে আত্মাটি অভ্যন্তরীণ সফরের মাধ্যমে নিজের মূল তথা স্রষ্টার প্রকৃত পরিচয় সর্ম্পকে অবগত হবে। বাবা এই সফরটিকে সাতটি স্তরে ভাগ করেন যেগুলোকে তিনি "জগতসমূহ" বলে সম্বোধন করতেন। সমগ্র প্রক্রিয়াটিই সপ্তম জগতে স্রষ্টা-উপলব্ধিতে এসে পরিসমাপ্তি ঘটে, যেখানে প্রতিটি আত্মার জীবনের মূল উদ্দেশ্য সাধিত হয়।[১০১]

উপদেশাবলী সম্পাদনা

উপদেশাবলী হচ্ছে আধ্যাত্বিক উৎকর্ষ সাধনের বিভিন্ন বিষয়ের উপর মেহের বাবার বিস্তারিত ব্যাখ্যার সংগ্রহ। কিছু অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হল: সংস্কার (মনোসংস্কার), মায়া (মোহের মূলনীতি), অহংবোধের প্রকৃতি, পুনর্জন্মবাদ, কর্ম, নৈরাজ্য, ধ্যান, ভালবাসা, শিষ্যত্ব এবং স্রষ্টা-উপলব্ধি।[১০২] তার ব্যাখ্যায় প্রায় সময় ভারতীয় লোকজ সংস্কৃতি এবং সুফিধারার সংস্কৃতির ঘটনার উপমা পাওয়া যেত। এই রকম একটি ঘটনা, জ্ঞানী ব্যক্তি এবং প্রেতাত্মা, যা বর্ণনা করে কীভাবে কুসংস্কারমূলক বিশ্বাস একজন মানুষের উপর শক্তি প্রদর্শন করে, অপরদিকে অন্য আরেকটি ঘটনা, মজনু এবং লায়লা, যা দেখায় কীভাবে নিঃস্বার্থ ভালবাসা, এমনকি মানুষের সর্ম্পকে, একজন মানুষকে শিষ্যত্বে দিকে ধাবিত করে।[১০৩]

এভাবেই মেহের বাবা প্রচুর পরামর্শ দেন যা স্রষ্টা-উপলব্ধি পখে মানুষকে এক ধাপ এগিয়ে রাখে। নৈতিক নিয়মকানুন ছাড়াও, কিছু পদক্ষেপ কেন একজন ব্যক্তিকে এই জড়জগতে বেধে রাখে, পক্ষান্তরে অন্যজনকে কেন এই ধরাধামের মোহজাল থেকে মুক্তি দেয় সে সর্ম্পকে বাবা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।[১০৪] অনেক অধ্যায় বিভিন্ন কার্য-সাধন যার মাধ্যমে পারষ্পরিক বিপরীত কিছু অভিজ্ঞতা যেমন, সুখ এবং দুঃখ, ভাল এবং মন্দ অনুধাবন অধিকতর সহজ হয়ে উঠে এবং কীভাবে এসব ছাপিয়ে মুক্তি লাভ করা যায় তার পাথেয় নির্দেশ করে দেয়।[১০৫]

সম্যক গুরুগণ এবং অবতার সম্পাদনা

বাবা বলেন যে পৃথিবীতে সবসময় ৫৬ জন স্রষ্টা-জ্ঞান সম্পন্ন আত্মা বিরাজ করেন এবং ঐ আত্মাগুলো মধ্যে পাচঁ জন একত্রিত হয়ে তাদের যুগের “পাচঁ সম্যক গুরু” গঠন করেন।[১০৬] যখন পাঁচ সম্যক গুরুর একজন পরলোক গমন করেন, বাবা বলেন ঐ ৫৬ জন স্রষ্টা-জ্ঞান সম্পন্ন আত্মাদের মধ্যে থেকে একজন তাৎক্ষণিকভাবে তার স্থান পূরণ করেন এবং তার কর্ম সম্পাদন করেন।[১০৭]

অবতার, বাবার মতে, একজন বিশেষ সম্যক গুরু, ঐ সকল আত্মার মধ্যে যিনি সর্বপ্রথম মৌলিক স্রষ্টা-জ্ঞান অর্জন করেন। এই আত্মাটি, মূল সম্যক গুরু, বা আদি গুরু, মানবরূপে আর কখনো আসবেন না। বাবা নির্দেশ করেন যে, ঐ স্বতন্ত্র আত্মাটি স্রষ্টার অস্তিত্বকে নিজের ভিতরে প্রকাশিত করেন যাকে হিন্দু ধর্মে বিষ্ণু এবং সুফিবাদে পরোয়ারদিগার যার মানে স্রষ্টার পালনকর্তা রূপ হিসেবে নাম দেওয়া হয়েছে। মেহের বাবার মতে, প্রতি ৭০০-১৪০০ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে অবতারের আগমন ঘটে এবং তা ঐ সময়ের পাঁচ সম্যক গুরু কর্তৃক মানবরূপে আগমন ঘটে যাতে স্রষ্টার দিকে সৃষ্টির নিরলস যাত্রা যে প্রক্রিয়া রয়েছে তা সমাপ্তকরণে সহযোগিতা প্রদান করতে পারেন। বাবা দাবি করেন যে, জরাথ্রুস্ট, রাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশুখ্রিষ্ট এবং মুহাম্মদ তাদের সময় তারা ঐ ভূমিকাটি পালন করেছিলেন।[১০৮]

বাবা অবতারকে এইভাবে বর্ণনা করেন, তিনি এমন এক মানদন্ড যা দিয়ে মানুষ তাকে বিচার করতে পারেন তিনি কে এবং তিনি কি হিসেবে আবির্ভূত হবেন। তিনি মানুষকে ধর্মীয় বিধি মোতাবেক ব্যাখ্যাদানের মাধ্যমে মানব জীবনের মানবীয় গুণাবলীর মানদন্ডকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন।[১০৯]

মেহের বাবা অধিকাংশ অনুসারী অবতারবাদ সর্ম্পকে তার দাবি সঠিক বলে গ্রহণ করেন[১১০] এবং তাকে “সমসাময়িক যুগের অবতার এবং স্রষ্টা-জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে বিশ্বের লাখো মানুষ দ্বারা শ্রদ্ধার পাত্র” হিসেবে বলা হত।[৭৭]

শিষ্য/উত্তারাধিকার সম্পাদনা

বাবার ভ্রমণ এবং উপদেশ বিশ্বব্যাপী প্রচুর ভক্ত ও অনুসারীদের একটি দল সৃষ্টি করে।[৯]

অবতার মেহের বাবা চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, ১৯৫৯ সালে মেহের বাবা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত, মেহের বাবার স্মৃতিসৌধসহ বিনা বেতনের স্কুল এবং ঔষুদের দোকান, একটি চক্ষু হাসপাতাল এবং একটি ভেটারিনারি হাসপাতাল পরিচালনা করে।[১১১] ট্রাস্টটি মেহের বাবা তার জীবদ্দশায় যে নীতিমালা রেখে গিয়েছিলেন তা অনুসরণ করে, কিন্তু কোন দলের উপর আধ্যাত্বিক কর্তপক্ষ হিসেবে আচরণ করেনি।[১১২]

 
মেহেরাবদে মেহের বাবা এর সমাধি

একইভাবে, ট্রাস্টটি কোন প্রকারের মতবাদ, ধর্মীয় মতবিশ্বাস বা গৌড়া মতবাদ প্রচার, বা ধর্মান্তরে লিপ্ত ছিল না। [১১২] বাবা তার নিজের প্রচারকে অনুৎসাহিত করতেন এই বলে, “আমার কোন প্রকারের প্রচারণা বা প্রচারকার্যের প্রয়োজন নেই”।[১১৩] বরং তিনি তার অনুসারীদেরকে উংসাহ দিতেন এভাবে যে “তোমরা নিজেদের জীবনকে অন্যের আমার ভালবাসা এবং সত্যের বাণীসম্পন্ন জীবন হিসেবে গঠন কর”[১১৪] এবং “তোমাদের পক্ষে যতদূর সম্ভব ভালবাসা ও সত্য বিষয়ক আমার বাণী ছড়িয়ে দাও।”[১১৫] মেহের বাবা অনুসারীদের প্রতিষ্ঠিত কোন আচার-অনুষ্ঠান ছিল না।স অনেকেই নিজেদের পছন্দমত পূজা, আর্তি, প্রার্থনা, সঙ্গীত, নাটক, বাবাকে চিত্রায়িত ছবিসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান পালন করে থাকে, কিন্তু যারা যা পালন করত তা শুধুমাত্রই তাদের নিজস্ব ইচ্ছায় বা পছন্দমত।[১১৬][১১৭]

বাবা অনুসারীরা সাধারণত অনানুষ্ঠানিকভাবে একত্রিত হন। অমরতীথি, বাবার মৃত্যু বার্ষিকী, এবং বাবা জন্মদিনে সবােইকে একত্রিত করার বিশেষ প্রয়াস পরিলক্ষিত হয়। ১০ জুলাইয়ে (নীরবতা দিবস) বাবার জীবদ্দশায় অনুসারীদের প্রতি নীরব থাকার বিষয়ে বাবা অনুরোধের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক অনেক অনুসারীরা কথা বলা থেকে বিরত থাকেন।[১১৮] ভারতে বাবার সমাাধিতে সকালে এবং রাতে পূজো অনুষ্ঠিত হয়। মেহেরাবাদে, বাবার অনুসারীরা প্রতি মাসের ১২ তারিখ বাবার দেখিয়ে যাওয়া ধুনি আগুন জ্বালান।

১৯৩২ এ হলিউডের বেশকিছু সেলিব্রেটিদের সাথে বাবার যোগাযোগের কারণে যদিও বাবা পাশ্চাত্যেেই প্রথম জনসাধারণের মনোযোগ কাড়েন, পশ্চিমা পপ-সংস্কৃতিতে তার নাম উল্লেখের মাধ্যমে তিনি তার মৃত্যুর পর আরও বেশি নজর আসেন।[১১৯]

দি হু এর পেট টাউশেন্ড, যিনি বাবা অনুসারী হয়েছিলেন, ১৯৬৯ এ সুরকৃত রক-অপেরা তন্ময় মেহের বাবা উৎসর্গ করেন।[১২০] ১৯৭১ দি হু’র “বাবা ও’রিলেই” গানটি মেহের বাবা নামানুসারে নামকরণ করা হয়।[১২১] এবং টাউনশেন্ড মেহের বাবাকে উৎসর্গ করে হ্যাপী বার্থ ডে, আই এ্যাম, হু কেম ফার্স্ট এবং উইথ লাভসহ বেশ কয়েকটি গানের অ্যালবাম রেকর্ড করেন।[১২২] ১৯৭০ সালে মেলানিক সাফকা “লে ডাউন (ক্যান্ডেল ইন দ্যা রেইন)” শিরোনামের তার এক গানের লিরিকের “মেহের বাবা লিভস আগেন” নামক এক লাইনে বাবার নাম উল্লেখ করেন।[১২৩] ১৯৮৮ সালে গ্রামি অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত ববি মেকফেরিনের “ডোন্ট ওয়ারি বি হ্যাপী” শিরোনামের গানটি মেহের বাবার জনপ্রিয় উক্তি, যা বাবার অসংখ্য ব্যানার এবং প্রেরণামূলক পত্রে দেখা যেত, থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে রচিত হয়েছিল।[১২৪] হাস্যরসাত্মক গ্রন্থ লেখক জে. এম. ডেম্যাট্টেইসের ডক্টর ফেইট এবং সিকারস ইন টু দি মিসটারি সহ তার বহু গ্রন্থতে মেহের বাবার দর্শনের ধারণা সহ নাম ছাড়া বাবা চরিতের ব্যবহার প্রায়শই পরিলক্ষিত হয়।[১২৫]

১৯৬৭ সালে নির্মিত মেহের বাবার একান্ত সাক্ষাৎকার ২০১২ সালে নির্মিত ফিচার ফিল্ম নেমা আভিওনা জা জাগরেব এর সাথে নেদারল্যান্ডে প্রদর্শিত হয়।[১২৬] সাক্ষাতকারে বাবা স্রষ্টা-উপলব্ধি এবং নেশাজনিত অলীক অস্তিতে বিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরেন[১২৭][১২৮] এবং দৃশটিই তথ্যচিত্রটি সহজেই বিবৃতিকরণে কেন্দ্রীয় ভমিকা পালন করে।[১২৯]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Awakener Magazine, Volume 9, Number 4, 1964, p. 15
  2. Awakener Magazine, Volume 4, Number 2, 1956, p. 27
  3. Kalchuri (1986) p. 2324
  4. Baba (1987) p. 269
  5. Awakener Magazine, Volume 11, Number 1, 1966, p. 9
  6. Hopkinson, Tom & Dorothy: Much Silence, Meher Baba Foundation Australia, 1974, p. 24
  7. Purdom (1964) p. 20
  8. Haynes (1989) pp. 38–39
  9. Encyclopedia of Religion, Macmillan Publishing Company, 1995, vol. 9, p. 346
  10. Haynes (1989) p. 2
  11. Baba (2007) p. 3
  12. Kalchuri (1986) p. 1405ff
  13. Donkin (2001) p. vi
  14. Purdom (1964) p. 431
  15. Haynes (1989) p. 60
  16. Purdom (1964) p. 376
  17. Awakener Magazine, Volume 9, Number 1–2, 1963, p. 1
  18. Brecher, Edward M; ও অন্যান্য (১৯৭২)। "How LSD was popularized"। Consumer Reports/Drug Library। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০০৮ 
  19. Kalchuri (1986) p. 6399ff
  20. Haynes (1989) p. 62
  21. Discourses, 7th edition, 1987. p. 315
  22. Purdom (1964) p. 407 – "Why he ceased to speak and write Baba has explained only vaguely, though much natural curiosity is aroused; the first question asked when people come to know about him or to see him is why he does it. That both silence and nonwriting are of great significance is certain; not surprisingly Baba does not explain. Silence is the answer to silence."
  23. Meher Baba's Silent Semiotic Output, José Sanjinés, Signs and Society, Vol. 2, No. S1, Supplement 2014, The University of Chicago Press, p. S121
  24. In an Indian context, an Irani is a member of one of two groups of Zoroastrians of that subcontinent, the other being the Parsis. They are called "Iranis" by other Indians because they spoke an Iranian language. "Those who left Iran soon after the advent of Islam to escape persecution, reached the shores of Gujarat 1,373 years ago. Their descendants are the Parsis. While the Zoroastrians who migrated to India from Iran relatively recently — 19th century onwards — are called Irani Zoroastrians." (quote from Padmaja Shastri,TNN, What sets Zoroastrian Iranis apart ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৩-০৬-১৮ তারিখে, The Times of India, 21 March 2004. Retrieved 11 July 2008).
  25. Sutcliffe (2002); p. 38.
  26. Purdom (1964), pp. 15–17
  27. Kalchuri (1986) pp. 186–188
  28. Kalchuri (1986) pp. 190–192
  29. Hopkinson, Tom & Dorothy:Much Silence, Meher Baba Foundation Australia, 1974, p. 24
  30. Purdom (1964), p. 20
  31. Haynes (1989), p. 37
  32. Purdom (1964) p. 270
  33. Listen Humanity, ed. D. E. Stevens, 1982. pp. 247–250
  34. Haynes (1989) p. 40
  35. Purdom (1964), pp. 29-30
  36. Kalchuri (1986) p. 501
  37. Purdom (1964), pp. 49–50
  38. Haynes (1989) p. 41
  39. Purdom (1964) p. 66
  40. Kalchuri (1986) p. 1249
  41. Purdom (1964) p. 95.
  42. See articles from the Daily Herald, 4 April 1932 (quoted in Kalchuri (1986), p. 1573) and from Sunday Express, April 1932 (quoted in Purdom (1964), p. 99)
  43. Landau, Rom: "God Is My Adventure", Faber & Faber, London, 1936. p. 111.
  44. Indian Mystic in New York, Associated Press, 20 May 1932, The Lowell Sun
  45. Landau, Rom: "God Is My Adventure", Faber & Faber, London, 1936. p. 108 Available as a Google book
  46. Purdom (1964) pp. 103–105
  47. Ellwood 1973 p. 281
  48. Associated Press, 13 July 1932 , as cited Kalchuri (1986), p. 1670
  49. Kalchuri (1986) p. 2040ff
  50. Kalchuri (1986) pp. 1661–1668
  51. Kalchuri (1986) pp. 2338–2421
  52. "Men, Masters & Messiahs"। Time Magazine। ২০ এপ্রিল ১৯৩৬। ২ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০০৮ 
  53. Donkin (2001) p. vff
  54. Donkin (2001) p. 9
  55. A Tribute to Mohammed Mast
  56. Purdom (1964) p. 177
  57. Purdom (1964) pp. 163–176
  58. Purdom (1964) p. 187
  59. Purdom, (1964), p. 194
  60. Kalchuri (1986) p. 3762
  61. Kalchuri (1986) pp. 3834–3840
  62. Glimpses of the God-Man, Meher Baba, vol. 3, by Bal Natu, Sheriar Press, 1982, pp. 64, 65
  63. Kalchuri (1986) p. 4208
  64. Three Incredible Weeks with Meher Baba: 11–30 September 1954, by Charles Purdom & Malcolm Schloss, Sheriar Press, 1979, pp. xi–xii
  65. Meher Baba: "Meher Baba's Call", Pamphlet, 12 September 1954
  66. Kalchuri (1986) p. 4551
  67. "The Final Declaration"। ৮ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১৫ 
  68. Kalchuri (1986) pp. 4457, 4464
  69. Purdom (1986) p. 289
  70. Kalchuri (1986) p. 5450
  71. Awakener Magazine, Vol. 10, No. 2, pp. 38–39 "Heroines of the Path, Part 7C"। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০০৮ 
  72. Man hasn't spoken in 31 years, Big Spring Daily Herald, 30 June 1957 Note: this article identifies the visit as Meher Baba's 10th US visit, and places the planned date as July 1957, not 1956 as generally accepted.
  73. Kalchuri (1986) p. 5457
  74. Kalchuri (1986) p. 6000
  75. Kalchuri (1986) p. 6412ff
  76. God in a Pill? Meher Baba on L.S.D. and The High Roads, Sufism Reoriented, Inc. 1966
  77. Spiritual Leader Warning on LSD, United Press International, 27 July 1967
  78. Bruce Hoffman, 'Something on an Inner Level,' Glow International Feb 1990, p. 17
  79. Albert Moraczewski, 'Psychedelic Agents and Mysticism,' Psychosomantics Vol. 12:2 (1971), 95–96
  80. Haynes (1989) p. 61
  81. Awakener Magazine, Volume 13 Number 3-4, p. 75
  82. Kalchuri (1986) p. 6713
  83. Enclyclopedia Britannica, retrieved 7/2/14,
  84. Kalchuri (1986) p. 6735
  85. James Ivory, The Talk of the Town, "Jai Baba!", The New Yorker, 21 June 1969, p. 28
  86. Kalchuri (1986) p. 738 "Meher Baba had observed silence three times before, but the silence beginning July 10th, 1925, was to last until the end of his life."
  87. Purdom (1964) p. 52
  88. Meher Baba। "The Universal Message"। Avatar Meher Baba Perpetual Public Charitable Trust। ৮ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  89. Haynes (1989) p. 66
  90. Ullman, Robert; Judyth Reichenberg-Ullman (২০০১)। Mystics, Masters, Saints, and Sages। RedWheel / Weiser। আইএসবিএন 1-57324-507-0 page 125.
  91. Haynes (1989) p. 67
  92. See for example: Kalchuri (1986), pp. 900, 915, 5648, 5655, 5787, 5807, 6015, 6024, 6027, 6037, 6105, 6061, 6090, 6151, 6166, 6170, 6172, 6206, 6164, 6318, 6319, 6341, 6370,, 6425, 6532, 6548, 6579, etc.
  93. Two close disciples have reported hearing Baba speak or make sounds in the days preceding his death. In 1992, Eruch Jessawala, a close disciple of Meher Baba, recalled that "a few days before Meher Baba dropped his body...Meher Baba had covered his mouth with his hand and shouted with great intensity:...'Mmmmmmm!'" [Glow International, May 1992, pp. 13-18]. Similarly, Bhau Kalchuri recalled in 2001 "Baba actually spoke two words to Bhau: 'Yad rakh [remember this]!' and then gestured, 'I am not this body!'...'Although Baba's voice was feeble,' Bhau recalled, 'the sound was audible and clear, and its intensity and impact very, very forceful. It conveyed so great an impression, that my mind itself neither registered nor questioned the fact that Baba was speaking." [see Kalchuri, Bhau (২০০৫)। Lord Meher। Volume 8 (Second (India) সংস্করণ)। Meher Mownavani Publications। পৃষ্ঠা 4765। ] although this recollection contradicted his own earlier accounts [see Kalchuri (1986) p. 6710] and Kalchuri later clarified those recollections, saying that actual words had not been spoken [Glow International, Spring 2012, page 3].
  94. Kalchuri (1986) p. 1668
  95. Glimpses of the God-Man, Meher Baba, vol. 6, by Bal Natu, Sheriar Foundation, 1994, p. 77 – "I want all my lovers to observe complete silence for twenty-four hours, from midnight of July 9th to midnight of July 10th, 1968."
  96. "Avatar Meher Baba Trust Online Library"। ৩ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৫ 
  97. God Speaks, Revised 2nd edition, 1997, p. 7
  98. God Speaks, Revised 2nd edition, 1997, pp. 8–27.
  99. God Speaks, Revised 2nd edition, 1997, pp. 28–30
  100. God Speaks, Revised 2nd edition, 1997, pp. 31-40
  101. God Speaks, Revised 2nd edition, 1997, pp. 41–54
  102. Discourses, 7th edition, 1987, p. v
  103. Discourses, 7th edition, 1987, p. 147
  104. Discourses, 7th edition, 1987, pp. 5, 42, 46, 53, 62, 65, etc.
  105. Discourses, 7th edition, 1987, pp. 26, 61, etc.
  106. Kalchuri (1986) p. 944
  107. Adriel, Jean. Avatar: The Life Story of the Perfect Master, Meher Baba (1947), p. 49 , J. F. Rowny press
  108. The Path of Love, by Meher Baba, Sheriar Press, US, 2000, p. 30. (originally published in 1976 by Samuel Weiser, New York)
  109. Meher Baba: "Discourses", Sufism Reoriented, 6th ed., 1967. Vol III, p. 15
  110. New Religious Movements in the United States and Canada: A Critical Assessment and Annotated Bibliography. Contributors: Diane Choquette – compiler. Publisher: Greenwood Press. Place of Publication: Westport, CT. Publication Year: 1985. Page Number: 12.
  111. Medical facilities at the Trust ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে Educational programs at the Trust ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৮ জুলাই ২০১৮ তারিখে
  112. Avatar Meher Baba Trust Website ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে "Meher Baba never wanted nor encouraged propaganda. The Trust does not, accordingly, work to promote creeds or dogmas, nor does it seek "converts"."
  113. Baba, Meher (1954): "What Baba Means by Real Work", Universal Spiritual League in America, Inc.
  114. Luck, Irwin: "The Silent Master Meher Baba", 1967. p. 17
  115. Purdom (1964) p. 282.
  116. Cohen (1977) pp. 152–154
  117. Eastern Mysticism and the Resocialization of Drug Users: The Meher Baba Cult, Thomas Robbins, Journal for the Scientific Study of Religion, Vol. 8, No. 2 (Autumn, 1969), pp. 308–317
  118. Kalchuri (1986) pp. 5476, 4933, 5609, 6465, 2294, 3179, 3864, etc.
  119. Brunton, Paul, A Search in Secret India, First published in England by Rider & Co., London, (1934), First American publication, New York, S. Weiser, (1935)
  120. "Tommy", The Who, Gatefold cover acknowledgements, 23 May 1969
  121. The Who: The Ultimate Collection (মিডিয়া টীকা)। The Who। MCA Records। ২০০২। পৃষ্ঠা 12। 
  122. The Who - Pete Townshend Albums
  123. Lyric Freaks – Melanie Safka Candles In The Rain Lyrics
  124. Bruce Fessier, USA Weekend Magazine, 21–23 October 1988
  125. jmdematteis.com – Avatar Meher Baba: the Short Answer
  126. "EYE film"। ২৮ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০১৫ 
  127. Kalchuri (1986) p. 6531
  128. Draaiboek, Nema Aviona Za Zagreb, Een film van Louis van Gasteren, Eeen Spectrum Film Publicatie, (2012), pp. 18-19.
  129. Seventy Fourth Family Letter, 1 September 1967, 82 Family Letters, Mani S. Irani, Sheriar Foundation, 1976. "The appearance of the Avatar in my film is more than functional, it is necessary, to give all the other happenings and sequences the final and right dimension." (Louis van Gasteren to Meher Baba in 1967)

পাদটীকা সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা