দোয়া কুনুত

বিতরের নামাজের তৃতীয় রাকাতে পঠিত একটি দোয়া

দোয়া কুনুত (আরবি: القنوت) বিতর সালাতে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) মাঝে মাঝে দোয়া কুনুত পাঠ করতেন। এক/তিন/পাঁচ/সাত/এগারো রাকাত বিতর সালাতের শেষ রাকাতে রুকুতে যাওয়ার আগে বা রুকু থেকে উঠে দুই হাত তুলে বা বেধে দোয়া কুনুত পাঠ করতে হয়।

দোয়া সম্পাদনা

দোয়া কুনুত হিসেবে এই দোয়াটি সর্বাধিক প্রচলিত:

পাঠ সম্পাদনা

اَللَّهُمَّ اِنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ

উচ্চারণ

আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা, ওয়া নাস্তাগফিরুকা, ওয়া নু'মিনু বিকা, ওয়া নাতাওয়াক্কালু 'আলাইকা, ওয়া নুছনি 'আলাইকাল খইর, ওয়া নাশকুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ, ওয়া নাতরুকু মাই ইয়াফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা নাবুদু ওয়া লাকানুসল্লী, ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস'আ, ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিল কুফ্ফারি মুলহিক্ক।

অর্থ

হে আল্লাহ আমরা তোমারই সাহায্য চাই, তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সকল কিছু তোমার দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি অকৃতজ্ঞ হই না, এবং যারা তোমার অবাধ্য হয় তাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদেরকে পরিত্যাগ করি। হে আল্লাহ আমরা তোমারই দাসত্ব করি তোমারই জন্য নামায পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি, আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি আর তোমার আযাবতো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত।

অনেকে নিম্নোক্ত দোয়াটিও পড়ে থাকেন:

পাঠ সম্পাদনা

‏ اللھم اهدني فيمن هديت وعافني فيمن عافيت وتولني فيمن توليت وبارك لي فيما أعطيت وقني شر ما قضيت إنك تقضي ولا يقضى عليك وإنه لا يذل من واليت ولا يعز من عاديت تباركت ربنا وتعاليت

উচ্চারণ

আল্লাহুম্মাহ দিনী ফীমান হাদাইত, ওয়া’আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফাইত, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইত, ওয়া বা-রিক লী ফীমা আ’তাইত, ওয়াক্বিনী শাররামা ক্বাদাইত, ইন্নাকা তাক্বদী ওয়ালা ইউক্‌দা ‘আলাইকা, ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াযিল্লু মান ওয়ালাইত, ওয়ালা ইয়াইয্‌যু মান ‘আ-দাইত, তাবা-রাকতা রব্বানা ওয়া তা'আলাইত।

অর্থ

হে আল্লাহ! আপনি যাদেরকে হেদায়াত করেছেন তাদের মধ্যে আমাকেও হেদায়াত দিন, আপনি যাদেরকে নিরাপত্তা প্রদান করেছেন তাদের মধ্যে আমাকেও নিরাপত্তা দিন, আপনি যাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছেন, তাদের মধ্যে আমার অভিভাবকত্বও গ্রহণ করুন, আপনি আমাকে যা দিয়েছেন তাতে বরকত দিন। আপনি যা ফয়সালা করেছেন তার অকল্যাণ থেকে আমাকে রক্ষা করুন। কারণ আপনিই চূড়ান্ত ফয়সালা দেন, আপনার বিপরীতে ফয়সালা দেওয়া হয় না। আপনি যার সাথে বন্ধুত্ব করেছেন সে অবশ্যই অপমানিত হয় না এবং আপনি যার সাথে শত্রুতা করেছেন সে সম্মানিত হয় না। আপনি বরকতপূর্ণ হে আমাদের পালনকর্তা ! আর আপনি সুউচ্চ-সুমহান।

ইতিহাস সম্পাদনা

আহমদ বিন হাম্বল, মুহাম্মাদ ইবনে ইসা আত-তিরমিজি এবং আবু দাউদের বর্ণনা থেকে জানা যায় হাসান ইবনে আলী রাঃ এই দোয়াটি মুহাম্মাদের (সা.) কাছ থেকে শিখেছিলেন। দাউদ আরো বলেছেন যখন মুসলমানদের উপর কোন বিপদ অথবা বিপর্যয় আসতো তখন মুহাম্মদ (সা.) দোয়া কুনুত পড়তেন। "আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা, ওয়া নাস্তাগফিরুকা রয়েছে" মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা (৬৯৬৫)

দোয়া কুনুত এর ফজিলত সম্পাদনা

দোয়া কুনুত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। প্রত্যেক মুসল্লিরই বিতর নামাজে এই দোয়া পড়তে হয়। এতে ওয়াজিব পালন করার সওয়াব পাওয়া যায়। পাশাপাশি এর আরও বেশ কিছু ফজিলত রয়েছে। যেমন-

  • মহান আল্লাহ তায়ালা নামাজের অভ্যন্তরিন দোয়া কবুল করেন। দোয়াটির মাধ্যমে আমরা নামাজের অভ্যন্তরে আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া চাইতে পারি।
  • যখন বান্দা মন থেকে আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবেসে নামাজে দাড়িয়ে দোয়াটি পড়ে তখন দয়ালু মহান আল্লাহ তা কবুল করে নেন।
  • দোয়া কুনুত নির্ধারিত ও সীমাবদ্ধ দোয়া নয়, তাই আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজনের কথা ব্যক্ত করা যায়।
  • মুসলিমদের উপর যখন কোনো বিপদ আসতো তখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দোয়াটি পড়তেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ-৬৯৬৫)
  • তাই বিতর সালাতে দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থসহ বুঝে পড়া অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা