আয়নাবাজি

অমিতাভ রেজা চৌধুরী পরিচালিত ২০১৬-এর চলচ্চিত্র

আয়নাবাজি ২০১৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলাদেশী অপরাধধর্মী থ্রিলার চলচ্চিত্র। ছবিটির পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী ও প্রযোজক কনটেন্ট ম্যাটারস লিমিটেড। ছবির কাহিনী ও চিত্রনাট্য লিখেছেন গাউসুল আলম শাওনঅনম বিশ্বাস। এই চলচ্চিত্রে মূল চরিত্রগুলোতে অভিনয় করছেন চঞ্চল চৌধুরী, মাসুমা রহমান নাবিলা এবং পার্থ বড়ুয়া। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীদের বদলে ভাড়ায় জেলখাটা আয়না (চঞ্চল), তার বান্ধবী হৃদি (নাবিলা) এবং ক্রাইম রিপোর্টার সাবেরের (পার্থ) জীবনের প্রেম-আনন্দ-বেদনা নিয়ে অপরাধ জগতের ছায়ায় এগিয়েছে চলচ্চিত্রটির কাহিনী।

আয়নাবাজি
আয়নাবাজি চলচ্চিত্রের পোস্টার
পরিচালকঅমিতাভ রেজা
প্রযোজক
  • জিয়াউদ্দিন আদিল
  • গাউসুল আলম শাওন
চিত্রনাট্যকার
কাহিনিকারগাউসুল আলম শাওন
শ্রেষ্ঠাংশে
সুরকারশায়ান চৌধুরী অর্ণব
হাবিব ওয়াহিদ
ফুয়াদ আল মুকতাদির
চিরকুট
আবহসঙ্গীত:
ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত
চিত্রগ্রাহকরাশেদ জামান
সম্পাদকইকবাল কবির জুয়েল
প্রযোজনা
কোম্পানি
কন্টেন্ট ম্যাটারস লিমিটেড
হাফ স্টপ ডাউন
মুক্তি
  • ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ (2016-09-30)
স্থিতিকাল১৪৭ মিনিট[১]
দেশবাংলাদেশ
ভাষাবাংলা
নির্মাণব্যয়১.৭০ কোটি
আয়২.১৩ কোটি (দুই সপ্তাহে)[২]

চলচ্চিত্রটি ২০১৬ সালের ১৭ মে কান চলচ্চিত্র উৎসবের মার্শে দ্যু ফিল্ম বিভাগে প্রদর্শিত হয়।[৩] পরে ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে মুক্তি পায়। নভেম্বর মাসের ১২ থেকে ১৫ তারিখ মানহেইম-হেইডেলবের্গ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটির ৪টি প্রদর্শনী হয়।[৪] দর্শক-সমালোচক উভয়ের কাছেই চলচ্চিত্রটি প্রশংসিত হয়। ১৯তম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ ছয়টি বিভাগে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয় ও তিনটি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে। এছাড়া ছবিটি সিয়াটল সাউথ এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভালে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র এবং ১৬তম টেলি সিনে পুরস্কারে সেরা ছবির সম্মান লাভ করে।

২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল 'জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬' ঘোষণা করা হয়, এতে ৭টি পুরস্কার পায় এই চলচ্চিত্রটি।[৫]

কাহিনী-সংক্ষেপ সম্পাদনা

শরাফত করিম আয়না, পুরান ঢাকায় ছোটদের একটি নাটকের স্কুল চালায়, সেখানেই থাকে, সবাই জানে যে সে জাহাজে কুকের (বাবুর্চি) কাজ করে এবং সেকাজে মাঝেমধ্যে দুই-তিন মাসের জন্য চলে যায়। তবে আসলে সে এসময়ে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের হয়ে জেল খাটে আর স্থানীয় হলিউড স্টুডিওর পরিচালক গাউসুল তাকে অর্ডার এনে দেয়। ছবির প্রথমদিকে দেখা যায় নারী-নির্যাতন মামলার আসামী ব্যবসায়ী কুদ্দুস সিদ্দিকীর বদলী জেলখাটার জন্য লোক পেতে তার উকিল গাউসুলের সাথে যোগাযোগ করে, গাউসুল আয়নাকে জানায়। আয়না কুদ্দুসের সাথে দেখা করে এবং দ্রুত তার আচার-আচরণ রপ্ত করে ফেলে। আদালতে কারাদণ্ডাদেশ পেয়ে জেলে নেয়ার পথে পুলিশের যোগসাজশে কুদ্দুস ও আয়না বদলাবদলি করে; আয়না জেলে চলে যায় আর কুদ্দুস পার্টি করে বেড়ায় এবং রাতে গিয়ে মামলাকারী নির্যাতিত তানিশার বাড়ির সামনে গাড়ি নিয়ে ঘোরাঘুরিও করে। দৈনিক সকাল বেলা পত্রিকার রিপোর্টার সাবের হোসেন তানিশার সাক্ষাৎকার নিতে গেলে সে এসব জানায়, সাবের তখন খোঁজখবর নেয়া শুরু করে।

মামলার রায়ের সময় জেল থেকে কুদ্দুসরূপী আয়নাকে বের করে পথে আসল কুদ্দুসের সাথে বদল করে আদালতে নেয়া হয়; তাদের অনুসরণকারী সাবের এসব দেখতে পেলেও দুর্ভাগ্যক্রমে ছবি তুলতে ব্যর্থ হয়। মামলায় কুদ্দুস খালাস পায়, আয়নাও ঘরে ফেরে। নাটকস্কুলে গিয়ে তার চেনা-পরিচয় হয় তাদের মহল্লার নতুন প্রতিবেশী তরুণী হৃদির সাথে, আয়নার না-থাকা সময়টাতে সে ওখানে যাওয়া শুরু করেছিল। পরে আয়নার সাথে তার প্রায়ই পথে-বাজারে দেখা হয়, কথা হয়। এদিকে রিপোর্টার সাবের আয়নাকে খুঁজে বের করে জিজ্ঞাসাবাদ করে, আয়না কৌশলে সেসব এড়িয়ে যায়।

এরমধ্যে আয়না নতুন কাজ পায়, উচ্চবিত্ত পরিবারের এক পাগলাটে ছেলে তাদের ড্রাইভারের ছেলেকে খুন করেছে, আয়নাকে বদলী হাজতবাস করতে হবে। কিন্তু সাবের আয়নার বাড়ির সামনে ভোর থেকে অপেক্ষা করে পিছু নেয়ার জন্য। বিভিন্ন ছলেবলে আয়না তাকে এড়িয়ে জেলে চলে যায়, ফেরে কয়েক মাস পর। ফেরার পর হৃদি দেখা করতে এসে অনুযোগ করে, তাকে না বলে চলে যাবার জন্য। আয়না তাকে শোনায় সেবার কাম্পিয়ান সাগরে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ার কাহিনী।

রিপোর্টারের পিছু নেয়াতে অতিষ্ঠ হয়ে আয়না বাসাবদল করে নদীর ওপারে গিয়ে থাকতে শুরু করে। বাসা খুঁজতে তাকে সাহায্য করে হৃদি। ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এরই মাঝে তারা ঠিক করে সিলেটে বেড়াতে যাবে; আয়নাও অপরাধ জগত থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু রওনা দেবার দিন সকালে নিজাম সাঈদের গুন্ডারা আয়নাকে ধরে নিয়ে যায়। রাজনীতিবিদ নিজাম সাঈদ চৌধুরী এক স্কুলশিক্ষককে খুন করেছে, এখন জেলে তার বদলী হিসেবে আয়নাকে পাঠাতে চায়, কিন্তু আয়না ওকাজ ছেড়ে দিয়েছে বলে জানায়। নিজাম অর্থ, অভিনয় প্রভৃতির প্রলোভন দেখায় এবং শেষে জোর করে তাকে কাজ করতে বাধ্য করে। ওদিকে স্টেশনে অপেক্ষা করছিল হৃদি, সিলেটের ট্রেন ছেড়ে যায়, আয়না আসে না, হৃদি ফিরে যায় ভাঙা মন নিয়ে। আয়না নিজাম সাঈদ চৌধুরী সেজে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

রিপোর্টার সাবের আয়নাকে পূর্বের ঠিকানায় না পেয়ে খোঁজাখবর নেয়া শুরু করে। এরমধ্যে আদালতে নিজামের ফাঁসির রায় হয়। আসল নিজাম পালিয়ে যায়, আয়না পড়ে থাকে কারাগারে। নিজাম পরে গুন্ডা লাগিয়ে গাউসুলকে মেরে ফেলে যাতে করে আয়না তার আসল পরিচয় প্রমাণ করতে না পারে এবং সে-ই যেন ফাঁসিতে ঝোলে। রিপোর্টার সাবের এরিমধ্যে মহল্লার পুরির দোকানদার মজনুর কাছ থেকে আয়নার সব খবর জানতে পারে। হৃদির সাথে দেখা করে সে তাকে সব বলে। ততদিনে হৃদির বাবা স্ট্রোক করে মারা গেছেন। সাবের জানায়, বছর সাতেক আগে আয়নার মার চিকিৎসার জন্যে টাকা সংগ্রহ করতে আয়না প্রথম একাজে নেমেছিল, পরে মায়ের মৃত্যুর পরও অভিনয়ের টানে সে এই কাজ চালিয়ে গেছে। হৃদি জেলে গিয়ে আয়নার সাথে দেখা করে, ফিরে আসে কাঁদতে কাঁদতে। সাবের আয়নার খবর পত্রিকায় ছাপতে চাইলেও সম্পাদক তা প্রত্যাখ্যান করেন।

জেলে নিজামরূপী আয়নার সাথে মাঝেমধ্যে কথা হয় কারারক্ষী বুড়ো লাবু মিয়ার। সহমর্মী লাবু মিয়াকে আয়না একবার অভিনয় করতে প্রোরোচিত করে, নিজাম সাঈদ চৌধুরীর চরিত্রে অভিনয়। সরলমনা লাবু মিয়াকে নিজাম সাজিয়ে আয়না নিজে লাবু মিয়া সাজে, এবং জেল থেকে পালিয়ে যায়।

চলচ্চিত্রের শেষে কিছু খণ্ড দৃশ্যে দেখা যায় আয়না সাবেরকে ফোন করে আসল নিজামের ঠিকানা জানিয়ে দেয় এবং পুলিশও তাকে গ্রেফতার করে। শেষদৃশ্যে আয়না ও হৃদি তাদের শেখানো ছোটদের নাট্যাভিনয় তাসের দেশ দেখতে থাকে।

কুশীলব সম্পাদনা

শরাফত করিম আয়না শৌখিন অভিনেতা এবং দক্ষ অনুকরণকারী। আগে কুষ্টিয়ায় থাকতো, যাত্রাশিল্পী মায়ের কাছ থেকেই সে অভিনয় শেখে। মায়ের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আসে এবং চিকিৎসার টাকার জন্যে অন্য একজনের হয়ে জেল খাটে; এরমধ্যে মা মারা যান। প্রচন্ড মাতৃভক্ত আয়নার অবচেতন মন কল্পনা করে নেয় যে মা বেঁচে আছেন। আয়নাও সেটাই ভাবতে শুরু করে। অভিনয়ের টানে জেলে বদলীর কাজ সে চালিয়ে যায়। ছবিতে তার কথানুসারে সে মোট দশটি কেসে জেল খেটেছে। এছাড়া পুরান ঢাকায় ছোট ছেলেমেয়েদের একটা স্কুলে অভিনয় শেখায়। কথাবার্তার মাধ্যমে সে কাউকে খানিকটা সম্মোহিতও করতে পারে।
নিজাম সাঈদ চৌধুরী প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা; নিজস্ব গুন্ডাবাহিনী পোষেন এবং স্বার্থ হাসিলে খুন পর্যন্ত করতে পারেন।
পরিচালক অমিতাভ রেজা নতুন কোনো অভিনেতাকে "আয়না" চরিত্রে নিতে চাইলেও পরে চরিত্রায়ণের দক্ষতার প্রয়োজনবোধে এবং কাহিনীকার গাউসুল আলম শাওনের অনুরোধে চঞ্চল চৌধুরীকে বাছাই করেন। তবে অন্য সব কুশীলবের মতো চঞ্চলকেও স্ক্রিন টেস্ট দিতে হয়েছিল।[৬] ছবিতে চঞ্চলকে ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। পরিচালকের নির্দেশে তিনি শুটিংয়ের সময় সাড়ে তিন মাস ভাত খান নি এবং এরপর চলচ্চিত্রে আয়নার ভাত খাওয়ার দৃশ্যটিতেই প্রথম ভাত খান। এছাড়া চরিত্রের প্রয়োজনে নিয়মিত ব্যায়াম ও খাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রণ করে তিনি ১৫ কেজি ওজন কমিয়ে ফেলেন।
আয়নার প্রতিবেশী তরুণী, ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক। তার মা মারা গেছে; অবসরপ্রাপ্ত বাবা আর কাজের লোক মোসাদ্দেককে নিয়ে আয়নার কাছাকাছি এক বাড়িতে থাকে। আয়নার নাটকের স্কুলে প্রায়ই যায়, আয়নাকে নতুন বাসা খুঁজতে সাহায্য করে - ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে সহজাত প্রেম হয়।
টিভি-উপস্থাপিকা নাবিলা এই প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
দৈনিক সকাল বেলা পত্রিকার ক্রাইম রিপোর্টার; স্ত্রীর সাথে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে, তবে তার একমাত্র মেয়েকে সে খুব ভালোবাসে, যদিও স্ত্রী তা পছন্দ করে না। কর্মক্ষেত্রে ও দাম্পত্যজীবনে ব্যর্থতার হতাশায় সে মাঝেমাঝে মদপান করে, সাথে থাকে বাসার কাজের ছেলে। একটি মামলার ভিকটিমের সাথে দেখা করতে গিয়ে সে আয়নার অপরাধকর্মের আঁচ পায় এবং তার পিছনে লেগে থাকে, তবে প্রতিবারই আয়না তাকে এড়িয়ে নিজের কাজ চালিয়ে যায়।
দুশ্চরিত্র শিল্পপতি; অফিসের নারী কর্মীদের সাথে ঢলাঢলি করে, মদ খেয়ে পার্টি করে বেড়ায়। তানিশা নামের এক মেয়ে তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করে। কুদ্দুস তখন তার উকিল বাদশাকে দিয়ে ব্যবস্থা করে আয়নাকে তার বদলে জেলে পাঠায়। পরে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে আদালতে খালাস পেয়ে যায়।
হলিউড স্টুডিওর পরিচালক। আয়নাকে সে-ই অপরাধ জগতে নিয়ে আসে। পরে নিজাম সাঈদের লোকেরা তাকে খুন করে।
এক বয়স্ক জেলপ্রহরী, তার ভালো নাম জামশেদ মিয়া। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নিজাম সাঈদ চৌধুরী সেজে থাকা আয়না তাকে বিভিন্নভাবে প্ররোচিত করে নিজাম সাজতে রাজি করায় এবং নিজে লাবু মিয়া সেজে জেল থেকে পালিয়ে যায়।
প্রথমে অন্য একজনকে এই চরিত্রে নিলেও পরে তার বদলে বৃন্দাবন দাশকে নেয়া হয়। পরিচালক জানান যে, "উনি [বৃন্দাবন] বাস্তবেও চঞ্চলের বন্ধু। দুজনের কেমিস্ট্রিটা আমি ধরতে চেয়েছি।"[৬]
কুদ্দুস সিদ্দিকীর নির্যাতনের শিকার হয় এবং পরে মামলা করে।
  • শাহরিয়ার ফেরদৌস সজীব - মজনু
আয়নার মহল্লার পুরির দোকানদার। আয়নাকে খুব পছন্দ করে এবং তার বদলি খাটার খবরও সে রাখে। আয়নার যখন ফাঁসির রায় হয় তখন তাকে বাঁচানোর জন্য সাংবাদিক সাবেরকে সব খুলে বলে।
হলিউড স্টুডিওর মেইল বয়। গাউসুলকে স্টুডিওর কাজে টুকিটাকি সাহায্য করে। গাউসুল তার মাধ্যমেই আয়নার সাথে যোগাযোগ রাখে।
  • সোহেল মণ্ডল - মজনুর দোকানে আড্ডারত ক্রেতা
  • হাসান শাহরিয়ার
  • এইচ এম আক্তার
  • তপন মজুমদার
  • আশফাকুজ্জামান বিপুল
  • মাহফুজুর রহমান

কারাগারের শেষ দৃশ্যে বন্দী হিসেবে দেখা যায় ছবিটির পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরীকে। এছাড়া আরও কয়েকটি স্বল্পস্থায়ী চরিত্রে অভিনয় করেন আসাদুজ্জামান সকাল, হুমায়ুন কবির, এজাজ বারি, মেজর জন, বাবলু বোস, কাজী তানভির রশিদ, মোঃ শাকিলুর রহমান শেখ, মিতা মাহমুদ, শোভন, পঙ্কজ মজুমদার, আলমগীর রহমান, হিমু, তানভির অভি, হযরত আলী সাগর, গৌরাঙ্গ মণ্ডল, বুলবুল আহমেদ, কনক, আব্দুর রহিম খান, আসিফুর রহমান, রশিদ, রোমেল, দর্পন খান, শাহরিয়ার রেজা শুভ, ডঃ পাপ্পু, ফারজানা সান, লিখন।

নির্মাণ সম্পাদনা

কাহিনী ও চিত্রনাট্য সম্পাদনা

"গাউসুল আলম শাওন ভাই একদিন এক লাইনের একটা ব্রিফ দিলেন পত্রিকায় আসা একটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে। মূল গল্পটা এতটাই সিনেম্যাটিক যে আমাদের কাছে মনে হলো এখান থেকে সিনেমা করলে ভালো হবে। গল্পটা নিয়ে আমি আর শাওন ভাই নিয়মিত বসতে শুরু করলাম। আড্ডাবাজির মধ্যেই আয়নাবাজির জন্ম। পরে গল্পটা নিয়ে অমিতাভের সঙ্গে বসি।"

-অনম বিশ্বাস[৬]

২০১৫ সালের ২৬ মার্চ একটি সংবাদ সম্মেলনে আয়নাবাজি চলচ্চিত্রের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। জানা যায় ছবিটি পরিচালনা করবেন অমিতাভ রেজা, প্রযোজনা করবে কনটেন্ট ম্যাটারস এবং নির্মাণ করবে হাফ স্টপ ডাউন লিঃ।[৭] ছবিটি বিজ্ঞাপননির্মাতা অমিতাভ রেজার অভিষেক চলচ্চিত্র। এর কাহিনী লিখেছেন সৈয়দ গাউসুল আলম শাওন; চিত্রনাট্য রচনা করেছেন তিনি নিজে এবং অনম বিশ্বাস। এছাড়া সংলাপ লিখেছেন অনম বিশ্বাস এবং আদনান আদীব খান।

দৃশ্যায়ন সম্পাদনা

ছবিটির দৃশ্যায়ন শুরু হয় ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে এবং শেষ হয় একই বছরের আগস্টে।[৮] সম্পূর্ণ দৃশ্যায়ন ঢাকাতেই করা হয়। কেবল আদালত ও পুরান ঢাকার পুরির দোকানের দৃশ্যগুলো কৃত্রিম সেট বানিয়ে ধারণ করা হয়, বাকি বেশিরভাগ দৃশ্যই ছিল বাস্তব লোকেশনে।[৯] জেলখানার দৃশ্যগুলোর শুটিং করা হয় কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এবং নবনির্মিত কেরানীগঞ্জ কারাগারে (তখনো উদ্বোধন হয়নি)। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সংশ্লিষ্ট দৃশ্যগুলোর শুটিং হয়। ছবির অনেক দৃশ্য ড্রোন ব্যবহার করে ধারণ করা হয়েছে। চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামান তার "অনবদ্য" সিনেমাটোগ্রাফির জন্য প্রশংসিত হন।[১০]

সাউন্ডট্র্যাক সম্পাদনা

আয়নাবাজি চলচ্চিত্রের গানের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন শায়ান চৌধুরী অর্ণব, ফুয়াদ আল মুকতাদির, হাবিব ওয়াহিদচিরকুট ব্যান্ড।[১১] চলচ্চিত্রের থিম সং তৈরি করে চিরকুট। গানগুলোর কথা লিখেছেন অনম বিশ্বাস ও অমিতাভ রেজা চৌধুরী। আবহসংগীতের দায়িত্বে ছিলেন ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত এবং রিপন নাথ। ছবি মুক্তির আগে প্রাক-প্রচারণা হিসেবে ইউটিউব শান ও হাবিবের গানদুটির অডিও সংস্করণ এবং অর্ণব ও চিরকুটের করা গানদুটোর মিউজিক ভিডিও প্রকাশ করা হয়।[১২]

গানের তালিকা সম্পাদনা

নং.শিরোনামগীতিকারসুরকারকণ্ঠশিল্পীদৈর্ঘ্য
১."আলু পিঁয়াজ এর কাব্য" শায়ান চৌধুরী অর্ণবশান০১:৩১
২."ধীরে ধীরে যাও না সময়"অনম বিশ্বাসহাবিব ওয়াহিদহাবিব ওয়াহিদ, অন্বেষা০৩:৫৮
৩."দুনিয়া"শারমিন সুলতানা সুমিচিরকুটচিরকুট০৩:৪৪
৪."এই শহর আমার"অমিতাভ রেজা চৌধুরীশায়ান চৌধুরী অর্ণবশায়ান চৌধুরী অর্ণব০৩:২৯
৫."লাগ ভেলকি লাগ" ফুয়াদ আল মুকতাদিরফুয়াদ আল মুকতাদির, জোহান আলমগীর, শেখ ইশতিয়াক০২:০২

প্রচারণা সম্পাদনা

আয়নাবাজির প্রযোজকেরা ছবিটি মুক্তির এক মাস আগে থেকেই প্রচারণা শুরু করেন। টিজার, ট্রেইলার ও পোস্টার প্রকাশের পাশাপাশি পত্রপত্রিকা ও গণমাধ্যমে ছবির পরিচালক ও অভিনেতাগণ সাক্ষাৎকার দিতে থাকেন। তবে প্রচারণার মূল ক্যাম্পেইন চালানো হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।[১৩] ছবি মুক্তির একদিন আগে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ওয়ানডে ম্যাচে ছদ্মবেশে স্টেডিয়ামে যান চঞ্চল চৌধুরী ও অমিতাভ রেজা, এবং যেসব দর্শক তাদেরকে খুঁজে বের করতে পারেন তাদেরকে পূর্বেঘোষিত কথানুসারে আয়নাবাজির ফ্রি টিকেট দেয়া হয়।[১৪] পরদিন ২৯ সেপ্টেম্বর ছবির প্রধান কলাকুশলীরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে প্রচারণা চালান।[১৫]

মুক্তি সম্পাদনা

আয়নাবাজি চলচ্চিত্রটি ২০১৬ সালের ১৭ মে কান চলচ্চিত্র উৎসবের মার্শে দ্যু ফিল্ম বা বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র বিভাগে প্রদর্শিত হয়।[১৬][১৭][১৮] বাংলাদেশে ছবির প্রযোজকরা আগস্ট মাসের যেকোনো শুক্রবারে ছবিটি মুক্তি দিতে চাইলেও সারাদেশে বন্যাদুর্গত পরিস্থিতির কারণে তা পিছিয়ে দেয়া হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা ও আরো কয়েক জেলার ২০টি প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তি পায়।[১৯] পরবর্তীতে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলার মোট ৭৫টি হলে তা প্রদর্শিত হয়। পরীক্ষামূলকভাবে সিরাজগঞ্জ (চালা), খুলনা, রংপুর প্রভৃতি স্থানে এক-দুটি হলেও ছবিটি প্রদর্শিত হয়। এদিকে রবি অনলাইন টিভিতে ছবিটি ছাড়ার পর তা পাইরেসির শিকার হয়।[২০]

পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ১১তম সিয়াটল সাউথ এশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভালে আয়নাবাজি অংশগ্রহণ করে এবং সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতে নেয়।[২১] নভেম্বর মাসের ১২ থেকে ১৫ তারিখ মানহেইম-হেইডেলবের্গ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটির ৪টি প্রদর্শনী হয়।[৪] বহির্বিশ্বে ফেস্টিভালের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও ছবিটি মুক্তি দেয়া হয়,[২২] যার লক্ষ্য ছিল মূলত প্রবাসী বাংলাদেশি ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পরিবেশকগণ। ১৮ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে ফ্রান্সের প্যারিসে ছবিটি মুক্তি দেয়া হয়।[২৩] একই দিনে কানাডায় মুক্তি পেয়ে ছবিটি তিন সপ্তাহ চলে।[২৪] ১৪ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে আমেরিকার সিয়াটলে শুরু হয় ‘সিয়াটল দক্ষিণ এশীয় চলচ্চিত্র উৎসব’। সেখানে উদ্বোধনী দিনে প্রদর্শিত হয় ছবিটি। অস্ট্রেলিয়ায় সিডনিতে ২৬ নভেম্বর ছবিটি প্রথম প্রদর্শিত হয়, পরে আরো পাঁচটি শহরে তা দেখানোর পরিকল্পনা জানান ছবিটির প্রযোজক জিয়াউদ্দিন আদিল। এছাড়া সীমিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক, শিকাগো, সান ফ্রান্সিসকো প্রভৃতি শহরে এবং যুক্তরাজ্য লন্ডনের প্রেক্ষাগৃহেও ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছে।[২৫][২৬]

অমিতাভ রেজা পরিচালিত ব্লকবাস্টার হিট ‘আয়নাবাজি’ সিনেমাটি আবারও মুক্তি পেতে যাচ্ছে ঢাকার প্রেক্ষাগৃহে। ২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়ে ঢালিউডে ইতিহাস গড়ে ‘আয়নাবাজি’। দেশে-বিদেশে সমানভাবেই সুনাম কুড়িয়েছে সিনেমাটি। শুক্রবার (২রা ফেব্রুয়ারি ২০১৮) থেকে এই দুটি হলে আবার ‘আয়নাবাজি’ প্রদর্শিত হবে।

মূল্যায়ন সম্পাদনা

সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া সম্পাদনা

আয়নাবাজি সমালোচকদের কাছ থেকে প্রচুর ইতিবাচক রিভিউ পেয়েছে[১০] এবং দর্শকেরাও ভালো প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।[২৭] দ্য ডেইলি স্টারের জাহিদ আকবর ছবিটিকে ৫ এর মধ্যে ৪ স্টার রেটিং দিয়েছেন; তিনি বলেন "ছবিটি দর্শকদের কাছে চরিত্রগুলোর প্রতি সহমর্মী একটা চিত্র তুলে ধরেছে, সাথে আছে ঝরঝরে কাহিনীবর্ণনা যা দর্শকদের উন্মুখ করে রাখে আরো বেশি কিছুর জন্য।" তিনি চলচ্চিত্রটির গল্প, অভিনয়, চঞ্চল চৌধুরীর পারফরমেন্স এবং "অনবদ্য" সিনেমাটোগ্রাফির প্রশংসা করেন, তবে চলচ্চিত্রটির লম্বা দৈর্ঘ্যের সমালোচনা করেছেন।[২৮] বাংলাদেশের চলচ্চিত্র বিষয়ক ম্যাগাজিন মুখ ও মুখোশ-এ তুহিন তালুকদার লিখেন, "ছবিটি যত্ন নিয়ে নির্মিত হলেও নিখুঁত নয় এবং কিছু চরিত্র অপেশাদার ও সংলাপ অতিরঞ্জিত ছিল।" তবে তিনি চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয়, রূপসজ্জা, ও চিত্রগ্রহণের প্রশংসা করেছেন।[২৯] দ্য ডেইলি স্টারেই ফাহমিম ফেরদৌস লিখেন, "এই ছবির অনেক প্রশংসা করার মত দিক রয়েছে। ছবির গল্প চমৎকার, গল্পে অনেক বাঁক ও বিস্ময় রয়েছে, চিত্রগ্রহণ অনবদ্য।" তিনি চঞ্চলের বহুমুখী অভিনয়, চঞ্চল ও নাবিলার সূক্ষ্ম রসায়ন, অনম বিশ্বাসের চিত্রনাট্য ও সংলাপের প্রশংসা করেছেন।[১০] চলচ্চিত্র সমালোচক ও লেখক ফাহমিদুল হক বলেন, "আয়নাবাজি র অনেক কিছুর সঙ্গে গল্পটি দুর্দান্ত। একদিক থেকে মানবিক গল্প। ক্রাইম উঠে এসেছে। সেই সঙ্গে ছিল একটা ‘লাভ স্টোরি’। এ কারণেই দর্শক ছবিটা ভালোমতো নিয়েছে।[৩০]

পুরস্কার ও মনোনয়ন সম্পাদনা

আয়োজন বিভাগ বিজয়ী/মনোনীত ফলাফল সূত্র
১৯তম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র কনটেন্ট ম্যাটারস লিমিটেড মনোনীত [৩১]
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী বিজয়ী [৩২]
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী মনোনীত [৩৩]
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী মাসুমা রহমান নাবিলা বিজয়ী [৩৪]
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা (সমালোচক) চঞ্চল চৌধুরী বিজয়ী [৩৫]
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী (সমালোচক) মাসুমা রহমান নাবিলা মনোনীত [৩৬]
১১তম সিয়াটল দক্ষিণ এশীয় চলচ্চিত্র উৎসব সেরা চলচ্চিত্র আয়নাবাজি বিজয়ী [২১]
১৬তম টেলিসিনে পুরস্কার সেরা ছবি আয়নাবাজি বিজয়ী [৩৭]
৪১তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী বিজয়ী [৩৮]
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী বিজয়ী
শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার অনম বিশ্বাসগাউসুল আলম শাওন বিজয়ী
শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামান বিজয়ী
শ্রেষ্ঠ চিত্রসম্পাদক ইকবাল আহসানুল কবির বিজয়ী
শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক রিপন নাথ বিজয়ী
শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা সাত্তার ও ফারজানা সান বিজয়ী
২০১৬ বাচসাস পুরস্কার শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক রাশেদ জামান বিজয়ী [৩৯]

বক্স অফিস সম্পাদনা

দ্য ডেইলি স্টার-এর রাফি হোসাইন ছবিটিকে "তাৎক্ষণিক ব্লকবাস্টার হিট" বলে উল্লেখ করেন। ১০ দিনের মধ্যে ছবিটির রেকর্ড ৯১টি শো হয় যা যেকোনো বাংলাদেশী সিনেমার পক্ষে সর্বোচ্চ। হলগুলো গড়ে ৯৮.৮৯% দর্শকপূর্ণ ছিল এবং আট সপ্তাহে ছবিটি ২.১৩ কোটি (২১.৩ মিলিয়ন) টাকা আয় করে।[৪০] বাংলাদেশী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার হিসাবমতে ২০১৬ সালের ছবিগুলোর মধ্যে আয়ের দিক দিয়ে আয়নাবাজি তৃতীয় স্থানে আছে।

বিতর্ক সম্পাদনা

ছবিটি মুক্তির পর এর কাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ান চ্যাং সু (টাম্বলউইড) (২০১৩) চলচ্চিত্রের নকল বলে অভিযোগ ওঠে। লী ডাক-হী পরিচালিত ঐ ছবির প্রধান অভিনেতা ইম চ্যাং-জাং অপরাধীদের হয়ে জেল খেটে থাকে এবং একসময় সন ইউন-সিও নামে একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে। আয়নাবাজির সাথে ছবিটির থিমের এই আংশিক মিল দেখা যায়। তবে ছবিদুটি ভিন্ন ঘরানার এবং কাহিনীও পরস্পর সম্পর্কহীন।[৪১] এ বিষয়ে চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখক ও ব্লগার নাজমুল হাসান দারাশিকো লিখেন, "আয়নাবাজি শতভাগ মৌলিক চলচ্চিত্র কিনা জানি না, অন্ততঃ এতটুকু জানি, এটি টাম্বলউইডের নকল নয়।"[৪২] এছাড়া ছবির পোস্টারের সাথে অনেকে ভারতীয় চলচ্চিত্র রমন রাঘব ২.০ (২০১৬) পোস্টারের তুলনা করেন। আয়নাবাজি মুক্তির মাসদুয়েক পরে এক টিভি অনুষ্ঠানে বাণিজ্যিক ধারার চিত্রপরিচালক কাজী হায়াৎ ছবিটিকে "উদ্ভট সিনেমা" বলে অভিহিত করেন। তিনি মত দেন যে "সিনেমাটি সেন্সর বোর্ডে আটকে দেয়া উচিত ছিলো।" অনুষ্ঠানের আরেক অতিথি গাজী মাজহারুল আনোয়ার বলেন, "আয়নাবাজি সিনেমায় যে কাহিনী দেখানো হয়েছে বিশেষ করে ফাঁসির আসামিকে কীভাবে প্রদর্শন করতে হয় তা সেন্সর বোর্ডের বোঝা উচিত ছিলো।[৪৩]

স্পিন-অফ সম্পাদনা

২০১৭ সালের এপ্রিলে পরিচালক অমিতাভ রেজা জানান যে আয়নাবাজি চলচ্চিত্রের থিম "দ্বৈত চরিত্রে অভিনয়"কে অবলম্বন করে একগুচ্ছ নাটক নির্মিত হবে আয়নাবাজি অরিজিনাল সিরিজ নামে।[৪৪] পরিকল্পনা অনুসারে সাতজন ভিন্ন ভিন্ন নির্মাতা সাতটি নাটক তৈরি করেন; অমিতাভ রেজা ছিলেন ডিরেকটরিয়াল কনসালট্যান্ট এবং সিরিজে তার পরিচালিত একটি নাটক মার্চ মাসে শুটিং অন্তর্ভুক্ত হয়। ঈদুল ফিতরের পরপর সাত দিন ২৬শে জুন থেকে ১লা আগস্ট পর্যন্ত সাতটি নাটক একইসাথে তিনটি টিভি চ্যানেল দীপ্ত টিভি, গাজী টিভি ও আরটিভিতে দেখানো হয় এবং দর্শক-সমালোচকদের থেকে বেশ ইতিবাচক রিভিউ পাওয়া যায়।[৪৫]

আগস্ট মাসের শুরুর দিকে আয়নাবাজির প্রযোজক গাউসুল আলম শাওন জানান যে ভারতে ছবিটির পুনঃনির্মাণ হবে। ভারতীয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শ্রী লক্ষ্মী প্রসন্ন পিকচার্স ভারতের সবকটি ভাষায় ছবিটি নির্মাণ করার স্বত্ব কিনে নেয়। প্রথমে তামিল ও তেলুগু এবং পরে হিন্দিসহ অন্যান্য ভাষায় ছবিটির পুনঃনির্মাণ করার ঘোষণা দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৮ সালে আয়নাবাজির তেলুগু পুনঃনির্মাণ গায়ত্রী মুক্তি পায়[৪৬][৪৭]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Aynabaji (2016)"ব্রিটিশ বোর্ড অফ ফিল্ম ক্লাসিফিকেশন (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৭ 
  2. "Decoding aynabaji"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ অক্টোবর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৭ 
  3. "কান চলচ্চিত্র উৎসবে 'আয়নাবাজি'"দৈনিক ইত্তেফাক। ১৭ মে ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৭ 
  4. "Aynabaji (2016)"মানহেইম-হেইডেলবের্গ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬" (পিডিএফ)তথ্য মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ সরকার। ৪ এপ্রিল ২০১৮। ৫ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০১৮ 
  6. "আড্ডায় আয়নাবাজি"দৈনিক কালের কণ্ঠ। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৭ 
  7. "চঞ্চলকে নিয়ে অমিতাভ রেজার আয়নাবাজি"জাগো নিউজ 24। ২৯ মার্চ ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৭ 
  8. "মার্চে আসছে অমিতাভের ‌'আয়নাবাজি'"বাংলা ট্রিবিউন। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫। ৩০ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৭ 
  9. আলী, মাসুম (২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭)। "আয়নাবাজদের আড্ডাবাজি"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৭ 
  10. Ferdous, Fahmim (৭ অক্টোবর ২০১৬)। "Aynabaji: A gripping story told well"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৭ 
  11. "টিজারেই চমকে দিল আয়নাবাজির আয়না! (ভিডিও)"জাগোনিউজ২৪। ১৯ জানুয়ারি ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০১৬ 
  12. "চিরকুটের ভিডিও এবং 'আয়নাবাজি'"বাংলা ট্রিবিউন। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  13. উল্লাহ, মাহমুদ (১৬ জুন ২০১৭)। "'পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাড়াবে'"ঢাকাটাইমস। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৭ 
  14. "খেলার মাঠে 'আয়নাবাজি' কি করছে?"বিডিসারাদিন ডটকম। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  15. "জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে 'আয়নাবাজি'"বাংলা ট্রিবিউন। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  16. চৌধুরী, ইকবাল হোসাইন (২৮ এপ্রিল ২০১৬)। "কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশ"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৭ 
  17. "কান চলচ্চিত্র উৎসবে আয়নাবাজি প্রদর্শিত"দৈনিক ইনকিলাব। ১৯ মে ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৭ 
  18. "Aynabaji scores well at Cannes Film Festival"The Daily Star। ১৮ মে ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ১৮ মে ২০১৬ 
  19. জনি, তানজিল আহমেদ (১৩ অক্টোবর ২০১৬)। "বক্সঅফিসে 'আয়নাবাজি'র রাজত্ব!"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। ১৪ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৭ 
  20. "Internet service provider arrested over 'Aynabaji' movie piracy"bdnews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৬ 
  21. ""Aynabaji" bags best film award at Seattle"The Daily Star। ২৫ অক্টোবর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৬ 
  22. "Aynabaji to begin world tour"New Age। Dhaka। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৬ 
  23. "প্যারিসেও হাউসফুল 'আয়নাবাজি'"দৈনিক প্রথম আলো। ১৯ নভেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৭ 
  24. "কানাডায় তৃতীয় সপ্তাহ 'আয়নাবাজি'"Bangladesh International Movie Database। ২ ডিসেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  25. "লন্ডনে 'আয়নাবাজি'র প্রদর্শনী শুরু"বাংলা ট্রিবিউন। ৭ জানুয়ারি ২০১৭। ১০ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৭ 
  26. "Aynabaji to be released in theatres overseas"Dhaka Tribune। ১৫ নভেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২২ নভেম্বর ২০১৬ 
  27. Javed, Nadim (১৫ অক্টোবর ২০১৬)। "Aynabaji: A breath of fresh air"The Financial Express (ইংরেজি ভাষায়)। Dhaka। সংগ্রহের তারিখ ১৫ অক্টোবর ২০১৬ 
  28. Akbar, Zahid (৮ অক্টোবর ২০১৬)। "Aynabaji Review"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৮ অক্টোবর ২০১৬ 
  29. তালুকদার, তুহিন (১৩ অক্টোবর ২০১৬)। "ভেলকি লাগাল আয়নাবাজি"মুখ ও মুখোশ। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৭ 
  30. "যে ১০ কারণে আয়নাবাজি দর্শকপ্রিয়"দৈনিক প্রথম আলো। ২২ ডিসেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৭ 
  31. "মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৬: সমালোচকদের রায়ে সেরা চলচ্চিত্র 'অজ্ঞাতনামা'"দৈনিক প্রথম আলো। ২১ এপ্রিল ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৭ 
  32. "সমালোচক পুরস্কার ২০১৬"দৈনিক প্রথম আলো। ২১ এপ্রিল ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৭ 
  33. "ছেলে আব্রামকে পুরস্কার উৎসর্গ করলেন শাকিব"দৈনিক প্রথম আলো। ২২ এপ্রিল ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৭ 
  34. "দর্শক জরিপ: সেরা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নাবিলা"দৈনিক প্রথম আলো। ২২ এপ্রিল ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৭ 
  35. "সমালোচকদের রায়ে সেরা চলচ্চিত্র অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী"দৈনিক প্রথম আলো। ২১ এপ্রিল ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৭ 
  36. "সমালোচকদের রায়ে সেরা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সাঁঝবাতি"দৈনিক প্রথম আলো। ২১ এপ্রিল ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৭ 
  37. "কলকাতায় সম্মানিত রাজ্জাক, সেরা ছবি হলো ‌'আয়নাবাজি'"বাংলা ট্রিবিউন। ৫ জুন ২০১৭। ৩ মে ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৭ 
  38. "জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৬" (পিডিএফ)তথ্য মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ সরকার। ৪ এপ্রিল ২০১৮। ৫ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০১৮ 
  39. "বাচসাস ২০১৬: সেরা ছবি অজ্ঞাতনামা, পরিচালক তৌকীর"channelionline.com। ৬ এপ্রিল ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৯ আগস্ট ২০১৯ 
  40. Hossain, Rafi (২২ অক্টোবর ২০১৬)। "Decoding aynabaji"The Daily Star। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৬ 
  41. "নকলের ধকল-২০১৬"Bangladesh Movie DataBase। ১ জানুয়ারি ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৭ 
  42. "Tumbleweed থেকে কতটুকু নকল করেছে আয়নাবাজি?"দারাশিকো। ১৬ অক্টোবর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  43. "'আয়নাবাজি' নিয়ে যা বললেন ক্ষুব্ধ কাজী হায়াৎ"bdlive24.com। ২৯ নভেম্বর ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  44. "ঈদে আসছে 'আয়নাবাজি অরিজিনাল সিরিজ'"দৈনিক প্রথম আলো। ২৩ এপ্রিল ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৭ 
  45. শাহনেওয়াজ, আলতাফ (৬ জুলাই ২০১৭)। "আয়না খেলা"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৭ 
  46. "তামিল ও তেলুগু ভাষায় হবে 'আয়নাবাজি'"চ্যানেল আই অনলাইন। সংগ্রহের তারিখ ৭ আগস্ট ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  47. "এবার 'আয়নাবাজি' তামিল ও তেলুগু ভাষায় রিমেক"কালের কণ্ঠ। ৮ আগস্ট ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৬ অক্টোবর ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা