উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়
উপসালা বিশ্ববিদ্যালয় (সুইডীয়: Uppsala universitet) সুইডেনের উপসালা এলাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগার। ১৪৭৭ সালে এটি স্ক্যান্ডিনেভিয়া এলাকায় প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[৩] আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে উত্তর ইউরোপের দেশগুলোয় বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান শীর্ষস্থানীয়।[৪] এছাড়াও, ইউরোপের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাকে অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্নরূপে গণ্য করা হয়।[৫] ষোড়শ শতকের শেষার্ধ্বে বৃহৎ শক্তি হিসেবে সুইডেনের আবির্ভূত হবার সময় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপযোগিতা ছিল অপরিসীম। রাজা গুস্তাভাস অ্যাডলফাস সপ্তদশ শতকের শুরুর দিকে বড় ধরনের উপহারস্বরূপ প্রয়োজনীয় আর্থিক স্থিরতা আনয়ণের মাধ্যমে এর ভিত্তি আরো মজবুত করেন। সুইডেনের জাতীয় সংস্কৃতি, পরিচিতি এবং সুইডেন প্রতিষ্ঠায় উপসালা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
Uppsala universitet | |
লাতিন: Universitas Regia Upsaliensis, এছাড়া Academia Regia Upsaliensis | |
নীতিবাক্য | Gratiae veritas naturae (লাতিন) |
---|---|
বাংলায় নীতিবাক্য | ক্ষমা ও প্রকৃতির মাঝে সত্য বহমান |
ধরন | সরকারী |
স্থাপিত | ১৪৭৭ |
রেকট্রিক্স ম্যাগণিফিকা ও ভাইস চ্যান্সেলর | অধ্যাপক ইভার আকেসন[১] |
প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ | ৬,০০০ (৪,০০০ শিক্ষক) |
শিক্ষার্থী | ২১,৮৬১ (এফটিই, ২০১১)[২] |
১,৭৭৪[২] | |
অবস্থান | , |
পোশাকের রঙ | তামাটে লাল, সাদা |
অধিভুক্তি | কয়েমব্রা গ্রুপ ইইউএ মাতারিকি নেটওয়ার্ক অব ইউনিভার্সিটিজ |
ওয়েবসাইট | www.uu.se |
নারীর অংশগ্রহণ
সম্পাদনাকৃষকদের সদস্য কার্ল যোহন ভেনসেনের নেতৃত্বে ১৮৬৫ সালের শেষ অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়াশোনায় নারীদের অধিকার সংক্রান্ত দাবী উত্থাপিত হয়। এরফলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এর পরের বছরগুলোয় এ বিতর্ক অব্যাহত থাকে। ১৮৭০ সালে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক নারীদেরকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অণুমতি দেয়া হয়। এরফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনায় তাদের অধিকার জন্মে এবং উপসালার চিকিৎসা অণুষদে ভর্তি সহজতর হয়। নারীরা চিকিৎসক হিসেবে অংশগ্রহণ করলেও ব্যক্তিগত পর্যায়ে কাজ করার ব্যাপারে বাঁধা প্রদান করা হয়। ১৮৭৩ সালে নারীদের উচ্চ শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ প্রক্রিয়া আরো বিস্তৃত করা হয়। একমাত্র ধর্মতত্ত্ব এবং আইন বিষয় বাদে সকল বিষয়েই তারা শিক্ষালাভের সুযোগ পায়।
প্রশাসন ব্যবস্থা
সম্পাদনাবিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের কনজিসটরি বা সভা রয়েছে। এতে অণুষদের প্রধানগণসহ ৩জন অধ্যাপক, ৩জন ছাত্র এবং সুইডেন সরকার থেকে ১০জন ব্যক্তিকে নিয়ে এ পরিচালনা পরিষদ গঠিত। সকল সদস্যেরই সভায় ভোটদানের অধিকার রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ রয়েছে ও তারা তিনজন প্রতিনিধি প্রেরণ করে থাকে। তাদের কথা বলার অধিকার থাকলেও ভোটাধিকার প্রদানের ক্ষমতা নেই।
১৯৯৯ সাল থেকে পৃথক একটি পরিচালনা পরিষদ রয়েছে যা অ্যাকাডেমিক সিনেট নামে পরিচিত। এ পরিষদের বিস্তৃতি থাকলেও তারা পরামর্শ গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত হতো। শিক্ষক, গবেষক এবং ছাত্ররা এতে অংশ নিতো। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহীকে রেক্ট ম্যাগণিফিকাস বা ভাইস চ্যান্সেলর ও তার সহকারী প্রোরেক্টর নামে পরিচিতি পেতেন। ১৯৯৯ সাল থেকে তিন জন ভাইস রেক্টর 'কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান', 'ঔষধ ও ঔষধবিজ্ঞান' এবং 'বিজ্ঞান ও প্রকৌশল' নামে ডোমেইন রয়েছে। এ ডোমেইনগুলো নয়টি অণুষদে বিভক্ত। প্রত্যেক অণুষদে ফ্যাকাল্টি বোর্ড এবং এর প্রধান হিসেবে ডীন বা ডেকানাস রয়েছেন। অণুষদের একজন অধ্যাপক খণ্ডকালীনভিত্তিতে ডীনের দায়িত্ব পালন করেন।
সেডবার্গ গবেষণাগার
সম্পাদনাথিওডর দ্য সেডবার্গের নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত সেডবার্গ গবেষণাগারে 'গুস্তাফ ওয়ার্নার সাইক্লোট্রন বা তড়িৎকণা সৃষ্টির যন্ত্র' রয়েছে।[৬] অ্যাকাডেমিক হাসপাতালের সহযোগিতায় এর মাধ্যমে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্যে প্রোটন থেরাপী ব্যবহার করা হয়।[৭] এ গবেষণাগার পরিচালনা ও দাপ্তরিক ব্যয়ের জন্যে বার্ষিক ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১০০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করা হয়।[৮] অ্যাকাডেমিক হাসপাতালের ৪০টি কেন্দ্রের একটি ওয়ার্ড হিসেবে এখানে ক্যান্সারের চিকিৎসা দেয়া হয়।
র্যাঙ্কিং
সম্পাদনাবিশ্ববিদ্যালয় অনেক ধরনের র্যাঙ্কিং ব্যবস্থাতেই শীর্ষস্থানে রয়েছে।[৯]
র্যাঙ্কিং (বছর) | বৈশ্বিক র্যাঙ্ক | ইউরোপীয় র্যাঙ্ক | জাতীয় র্যাঙ্ক |
---|---|---|---|
অ্যাকাডেমিক র্যাঙ্কিং অব ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজ (২০১০)[১০] | # ৬৬ | # ১৮ | # ২ |
ওয়েব র্যাঙ্কিং অব ইউরোপীয়ান ইউনিভার্সিটিজ (২০০৯)[১১] | # ৮০ | # ১৪ | # ১ |
কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং[১২] (২০১২) | # ৮১ | # ২৯ | # ২ |
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
সম্পাদনাবিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ পর্যন্ত ৮জন নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।[১৩] এছাড়াও অগণিত রাজন্যবর্গ, শিক্ষক এবং উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব রয়েছেন। বিশিষ্ট উদ্ভিদবিজ্ঞানী, চিকিৎসক এবং প্রাণীবিজ্ঞানী কার্ল লিনিয়াস এ বিশ্ববিদ্যালয়েই অধ্যয়ন করেন।
সপ্তদশ শতকের শুরুতে রেমের চ্যান্সেলর যোহন অক্সেনস্টেইরনা, লর্ড প্রধান বিচারপতি ম্যাগণাস গ্যাব্রিয়েল ডে লা গার্দি, সুইডেনের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট হালমার ব্রান্টিংসহ অনেক প্রথীতযশা রাজনীতিবিদ এর শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৯৬১ সালে ড্যাগ হ্যামারশোল্ড আইন বিষয়ে পড়াশোনা করে পরবর্তীকালে জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে মরণোত্তর নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮১-১৯৯৭ মেয়াদে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার প্রধান হিসেবে সুয়েডিয় কূটনীতিবিদ হ্যান্স ব্লিক্স এখানে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ University Management, Uppsala University, retrieved 16 January 2012
- ↑ ক খ Swedish Higher Education Authority (Högskoleverket) – Annual report 2011 (Swedish), page 95[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Ridder-Symoens, Hilde de. A History of the University in Europe. Cambridge University Press, 2003. Page 84.
- ↑ http://www.timeshighereducation.co.uk/world-university-rankings/2011-2012/top-400.html ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ অক্টোবর ২০১১ তারিখে Times Higher Education 2011.
- ↑ [Lindroth, Sten, A history of Uppsala University 1477–1977 (Almqvist & Wiksell 1976)]
- ↑ The Svedberg Laboratory main page. Retrieved July 2012
- ↑ The Svedberg Laboratory, proton therapy page ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ এপ্রিল ২০১২ তারিখে. Retrieved July 2012
- ↑ PROTON THERAPY ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে news from May 2011, at The National Association for Proton Therapy
- ↑ "QS Top Universities: Schools"। ১৯ জুলাই ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১৩।
- ↑ "ARWU 2010"। ২২ আগস্ট ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১৩।
- ↑ "Webomatrics 2009"। ৮ মে ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১৩।
- ↑ http://www.topuniversities.com/institution/uppsala-university
- ↑ "Eight Nobel laureates have been connected with the Uppsala University"। ২০১০-০৬-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৬-১২।