ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা

(Trump peace plan থেকে পুনর্নির্দেশিত)

Peace to Prosperity: A Vision to Improve the Lives of the Palestinian and Israeli People, সাধারণভাবে যা পরিচিত ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনা হিসেবে ; হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসনের ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত সমাধানে একটি প্রস্তাবনা। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে পাশে নিয়ে কথিত এই শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফিলিস্তিনের প্রতিনিধিত্ব করে এমন কেউই সে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিল না।[১]

The proposed Israeli-Palestinian borders
The yellow circles on the outskirts of Jerusalem highlight the areas proposed as Palestinian "East Jerusalem":The sovereign capital of the State of Palestine should be in the section of East Jerusalem located in all areas east and north of the existing security barrier, including Kafr Aqab, the eastern part of Shuafat and Abu Dis, and could be named Al Quds or another name as determined by the State of Palestine
The creation of a Palestinian state is contingent on a number of conditions, for which compliance is to be assessed by Israel and the United States.
President Trump and Prime Minister Netanyahu unveiling Peace Plan, Map of proposed Israeli-Palestinian borders, Proposed areas for a Palestinian capital (yellow circles), Conditions to a Palestinian state, President Trump's opening remarks

এই পরিকল্পনা তৈরি করার দায়িত্বে ছিলেন ট্রাম্পের জামাতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সিনিয়র উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার.[২] ইসরায়েলের দখল অংশে (পশ্চিম তীর) বসতি স্থাপনবিষয়ক সংস্থা ইয়েশা কাউন্সিল[৩] এবং ফিলিস্তিনি নেতৃবৃন্দ উভয়েই এ পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ইয়েশা কাউন্সিল একে প্রত্যাখ্যান করেছে, কারণ এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রকে সুস্পষ্টভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে,[৩] এবং ফিলিস্তিন নেতৃবৃন্দের এ পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করার যুক্তি হচ্ছে এটি পক্ষপাতমূলক পরিকল্পনা, যা ইসরায়েলের পক্ষে প্রণীত হয়েছে।[১] এই পরিকল্পনাটি দুই ভাগে বিভক্ত। একটি হচ্ছে অর্থনৈতিক অংশ এবং অপরটি হচ্ছে রাজনৈতিক অংশ। ২০১৯ সালের ২২ জুন ট্রাম্প প্রশাসন এ পরিকল্পনার অর্থনীতি দিক প্রকাশ করেন, যার শিরোনাম ছিল "Peace to Prosperity". রাজনৈতিক দিক প্রকাশিত হয় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে।[১]

পরিকল্পনাটি ঘোষণার সংবাদ সম্মেলন চলাকালীন সময় নেতানিয়াহু জানান ইসরাইল সরকার জর্ডান উপত্যকা এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ইসরায়েলের সঙ্গে একীভূত করে নেবেন। ফিলিস্তিনিদের জন্য বরাদ্দ অঞ্চল নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে অন্তত চার বছর আলোচনা করতে পারবে ফিলিস্তিন। ওই চার বছর ফিলিস্তিনিরা এ পরিকল্পনা নিয়ে গবেষণা ও ইসরায়েলের সঙ্গে মধ্যস্থতা করতে পারবে। এভাবেই ফিলিস্তিনিরা অর্জন করবে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সেই চারবছর সেখানে কোনো বসতি নির্মাণ হবে না। ইসরাইলে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ডেভিড ফ্রায়েডম্যান নিশ্চিত করেন, ট্রাম্প প্রশাসন ইসরাইলকে অনুমতি দিয়েছে যাতে করে তারা একীভূতের কাজ শুরু করে দেয়। ডেমোক্রেট শিবির থেকে রাষ্ট্রপতির জন্য পদপ্রার্থী[৪] এবং ট্রাম্প বিরোধীরা এই একীভূতকরণের তীব্র সমালোচনা করেন এবং পরিকল্পনাটিকে ধুম্রজাল বলে আখ্যায়িত করেন।[৫][৬]

নামকরণ সম্পাদনা

ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনাকে এর প্রবক্তা, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সংবাদ সম্মেলনে "শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চড়" বলে অভিহিত করেছেন।[৭] এই প্রস্তাবনা সমালোচকরা দ্রুততার সাথে এই শব্দপুঞ্জকে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস একে অভিহিত করেছেন শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চপেটাঘাত হিসেবে। [৮] ফিলিস্তিন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের সেক্রেটারি জেনারেল সায়েব এরেকাত টুইটে বলেছেন, এই পরিকল্পনা "বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাওতাবাজি" হিসেবে পরিচিত হবে।[৯] দ্য ইকোনমিস্ট একে অভিহিত করেছে "শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চৌর্যবৃত্তি" হিসেবে।[১০]বহু নেতিবাচক মন্তব্যের পর একজন হারেটজ মন্তব্যকারী লিখেছেন এই পরিকল্পনাটি "শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ রসিকতা"। [১১]

প্রেক্ষাপট সম্পাদনা

বেলফোর ঘোষণা এমন একটি প্রকাশ্য বিবৃতি; যা ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফিলিস্তিনে "ইহুদী জনগোষ্ঠীর জন্য জাতীয় আবাসস্থল" হিসেবে নির্ধারিত হবে- এই মর্মে ঘোষণাপত্রে বলা হয়। এই প্রস্তাবনা অটোমান সাম্রাজ্যের বিভাজনের অংশ হিসেবে পরবর্তীতে লীগ অব নেশন একে স্বীকৃতি দেয়। ১৯১৭ সালে সেখানে মোট জনগোষ্ঠীর ৮ শতাংশ ছিল ছিল ইহুদী। কিন্তু ১৯৪৭ সালে মোট ভূমির সাত শতাংশে জনগোষ্ঠীর এক তৃতীয়াংশে ইহুদীরা উন্নতি হয়। সেই বছরে জাতিসংঘ তাদের বিভাজন পরিকল্পনায় জমির ৫৬% ইহুদি জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ রাখে; যা আরব জাতিগোষ্ঠী দ্বারা প্রত্যাখান হয়। দুই পক্ষ থেকে সহিংসতা বাড়তে থাকে; যা ইসরাইল স্বাধীনতা ঘোষণা করার পরে প্রতিবেশী আরব দেশগুলো দ্বারা একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে পরিণত হয়। সেসময় ফিলিস্তিন তাদের বরাদ্দের চেয়ে বেশি নিয়ে মোট ৭৮ শতাংশ ভূমি দখল করে এবং স্থানীয় আরব জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগকেই তারা বিতাড়িত করে[১২][১৩]ফিলিস্তিন উদ্বাস্তুদের সংখ্যা ইসরায়েলের মতে ৫,০০,০০০ তবে ইউএনপিআরের মতে তা ৯,১০,০০০।[১৪]—প্রতিবেশী দেশগুলোতে যেসব ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু শিবিরে বাস করছেন, তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জাতীয়তা প্রশ্নের মুখে পরেছে।[১৫] এরপর বেশিরভাগ জমি ৮,৫০,০০০ ইহুদীদের জন্য বরাদ্দ; যাদের কেও আরব দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে অথবা অভিবাসী হিসেবে আসতে থাকে।[১৬]

পশ্চিম তীর এবং গাজা ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের মাধ্যমে দখল করা হয়। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন ইসরায়েল অধিকৃত এলাকায় আস্তে আস্তে বসত নির্মাণ শুরু করে।[১৭]জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রতিনিধিনিকোলাই ম্লাদেনভ ২০১৫ সাল থেকে বারংবার উল্লেখ করেছেন "বিপদ বাড়ছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে কোনো শান্তি প্রক্রিয়াই চলছে ন"া।[১৮]

পরিকল্পনার সমালোচনা সম্পাদনা

জেরুজালেমর অবস্থান সম্পাদনা

ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাস প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন "জেরুজালেম বিক্রির জন্য নয়, আমাদের সব অধিকার বিক্রি হবে না এবং এ নিয়ে দর কষাকষিও হবে না এবং আপনাদের চুক্তি, ষড়যন্ত্র পাস করা হবে না।"[১৯]

অঞ্চল এবং সীমানায় সম্পাদনা

ফিলিস্তিনের জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস যা গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করে, তারাও এই চুক্তি নাকচ করেছে এবং বলেছে, এর লক্ষ্য হচ্ছে ‘ফিলিস্তিনিদের জাতীয় প্রকল্প নিঃশেষ করে দেওয়া।’[২০]

পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সম্পাদনা

  • ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জানুয়ারী সহস্রাধিক ফিলিস্তিনি এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে গাজা উপত্যকায় বিক্ষোভ করেন।[১৯]
  • ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জানুয়ারী রাষ্ট্রপতি নেতানিয়াহু জানান পশ্চিম তীরের শতকরা ৩০ ভাগ দখল সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে তার। এ বিষয়টি আগামী রোববার (২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রীপরিষদের ভোটে উঠতে পারে। [১৯]
  • ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি রয়টার্স জানায় রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প আব্বাসকে ফোন করতে চাইলে, আব্বাস না বলে দেন। পরবর্তীতে আব্বাসকে তিনি চিঠি পাঠাতে চাইলে …আব্বাস তাও প্রত্যাখান করেন।[২১]
  • ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি সহযোগিতাসহ ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তার সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।[২১]

গ্রন্থবিবরণী সম্পাদনা

  • Staff, White House (২০২০)। Peace to Prosperity (পিডিএফ) (প্রতিবেদন)। Washington: White House।  The content of the website is in the public domain or licensed under Creative Commons Attribution license.[২২]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Trump reveals Israeli-Palestinian peace plan"Deutsche Welle। জানুয়ারি ২৮, ২০২০। 
  2. "Trump releases long-awaited Middle-East peace plan"BBC News। জানুয়ারি ২৮, ২০২০। 
  3. Magid, Jacob (জানুয়ারি ২৮, ২০২০)। "'Settler leaders call on PM to oppose Trump plan, even at the cost of annexation"The Times of Israel 
  4. "Democratic candidates censure Trump peace plan, warn against annexation"The Times of Israel। জানুয়ারি ২৮, ২০২০। Biden: "This is a political stunt that could spark unilateral moves to annex territory; Warren: "Trump's 'peace plan' is a rubber stamp for annexation"; Buttigieg: "Peace requires both parties at the table. Not a political green light to the leader of one for unilateral annexation. 
  5. "Opinion: Trump's Israel-Palestine 'deal' has always been a fraud"Financial Times। জানুয়ারি ২৮, ২০২০। It always looked like a smokescreen to mask the burial of the two-state solution — an independent Palestinian state on the occupied West Bank, and Gaza with Arab East Jerusalem as its capital living in peace alongside Israel — and greenlight the Israeli annexation of most of the West Bank. 
  6. J Street, IT'S NOT A PEACE PLAN, IT'S AN ANNEXATION SMOKESCREEN, "If there was ever any doubt that the Trump-Netanyahu "peace plan" was anything other than a smokescreen for annexation, it was disabused just moments after the plan's glitzy White House announcement."
  7. Full text of Netanyahu’s speech: Today recalls historic day of Israel’s founding The Times of Israel 28 January 2020
  8. Ali Sawafta, Nidal al-Mughrabi, 'Slap of the century': Palestinians reject Trump Mideast plan Reuters 28 January 2020
  9. Jihan Abdalla, 'What we know about Trump's Middle East plan,' Al-Jazeera 27 January 3030
  10. Deal of the century/Steal of the century: Donald Trump gives Israel the green light to annex occupied lands The Economist 28 January 2020,
  11. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Verter নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  12. Masalha, Nur (1992). "Expulsion of the Palestinians." Institute for Palestine Studies, this edition 2001, p. 175.
  13. Rashid Khalidi (সেপ্টেম্বর ১৯৯৮)। Palestinian identity: the construction of modern national consciousness। Columbia University Press। পৃষ্ঠা 21–। আইএসবিএন 978-0-231-10515-6। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১১  "In 1948 half of Palestine's... Arabs were uprooted from their homes and became refugees"
  14. Henry Laurens, La Question de Palestine, Fayard vol.3 2007 p.239.
  15. Pedahzur, Ami; Perliger, Arie (২০১০)। "The Consequences of Counterterrorist Policies in Israel"। Crenshaw, Martha। The Consequences of Counterterrorism। New York: Russell Sage Foundation। পৃষ্ঠা 356। আইএসবিএন 978-0-87154-073-7। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১১ 
  16. https://www.nytimes.com/2007/11/04/world/americas/04iht-nations.4.8182206.html
  17. "Long line of Israeli-Palestinian peace bids precede Trump push"। Reuters। জানুয়ারি ২৭, ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২০ 
  18. "Nickolay Mladenov: 'There is no Middle East peace process'"। Al Jazeera। জানুয়ারি ১২, ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  19. "Palestinians reject Trump's Middle East peace plan"BBC News। জানুয়ারি ২৯, ২০২০। 
  20. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; BBC2 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  21. Staff (১ ফেব্রুয়ারি ২০২০)। "Palestinian Authority cuts ties with Israel and U.S."Reuters (ইংরেজি ভাষায়)। 
  22. "Copyright Policy"whitehouse.gov। জানুয়ারি ১৬, ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৪, ২০১৭ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা

টেমপ্লেট:Donald Trump