দ্বিতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ

(Second Anglo-Afghan War থেকে পুনর্নির্দেশিত)

দ্বিতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ (পশতু: د افغان-انګرېز دويمه جګړه) যুক্তরাজ্যআফগানিস্তানের মধ্যে ১৮৭৮ সাল থেকে ১৮৮০ সালের মধ্যে সংঘটিত হয়। এসময় শের আলি খান ছিলেন আফগানিস্তানের শাসক। ব্রিটিশ ভারত কর্তৃক এটি দ্বিতীয় আফগানিস্তান আক্রমণ। যুদ্ধে ব্রিটিশরা বিজয়ী হয়। অধিকাংশ ব্রিটিশ ও ভারতীয় সৈনিক আফগানিস্তান থেকে ফিরে এসেছিল। আফগান গোত্রগুলিকে আভ্যন্তরীণ শাসন ও স্থানীয় প্রথা বজায় রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছিল তবে বৈদেশিক বিষয়াদির নিয়ন্ত্রণ ব্রিটিশদের হাতে চলে যায়। ভারতের দিকে রুশ সাম্রাজ্যের বিস্তার রোধের জন্য ব্রিটিশরা এই পদক্ষেপ নেয়।[৪][৫]

দ্বিতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: গ্রেট গেম

কান্দাহারে ৯২তম হাইল্যান্ডার্স‌, রিচার্ড‌ ক্যাটন উডভিলের তেলচিত্র
তারিখ১৮৭৮–১৮৮০
অবস্থান
ফলাফল

ব্রিটিশদের বিজয়[১]

  • গান্দামাকের চুক্তির মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের পর ব্রিটিশরা আফগানিস্তান থেকে ফিরে আসে[২][৩][৪][৫]
  • আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী গোত্রীয় এলাকাকে ব্রিটিশ ভারতের সাথে একীভূত করে নেয়া হয়
  • আফগানিস্তান ব্রিটিশ প্রটেক্টরেটে পরিণত হয়।
বিবাদমান পক্ষ
আফগানিস্তান আমিরাত

যুক্তরাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্য

সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
শের আলি খান
মুহাম্মদ আইয়ুব খান
ব্রিটিশ ভারত স্যামুয়েল ব্রাউন
ব্রিটিশ ভারত ফ্রেডেরিক রবার্টস
ব্রিটিশ ভারত ডোনাল্ড স্টেওয়ার্ট‌
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
প্রধান লড়াইসমূহে ৫,০০০+ নিহত
সর্বমোট অজ্ঞাত[৬]
১,৮৫০ লড়াইয়ে নিহত বা আহত হয়ে মৃত্যু
৮,০০০ রোগাক্রান্ত হয়ে মৃতু[৬]

যুদ্ধ সম্পাদনা

পটভূমি সম্পাদনা

১৮৭৮ সালের বার্লিন কংগ্রেসের মাধ্যমে ইউরোপে চলমান রাশিয়া ও ব্রিটেনের মধ্যকার উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থার অবসান। এরপর রাশিয়া মধ্য এশিয়ার দিকে মনোযোগ দেয়। সেই গ্রীষ্মে রাশিয়া কোনো আমন্ত্রণ ছাড়া কাবুলে কূটনৈতিক মিশন প্রেরণ করে। আফগানিস্তানের আমির শের আলি খান তাদের দূর করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ১৮৭৮ সালের ২২ জুলাই রুশ প্রতিনিধিদল কাবুল পৌছায়। ১৪ আগস্ট ব্রিটিশরা দাবি জানায় যাতে শের আলি খান একটি ব্রিটিশ মিশনও মেনে নেন।[৭]

শের আলি খান নেভিল বোলস চেম্বারলেইনের অধীনে মিশন গ্রহণের ব্রিটিশ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের সাথে সাথে যদি মিশন প্রেরণ করা হয় তবে তাদের থামিয়ে দেয়ার হুমকি দেন। ভাইসরয় লর্ড লিটন ১৮৭৮ সালের সেপ্টেম্বরে কাবুলে কূটনৈতিক মিশন প্রেরণের নির্দেশ দেন। কিন্তু খাইবার গিরিপথের দিকে একে ফিরিয়ে দেয়া হয়। ফলে দ্বিতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধ শুরু হয়।[৭]

প্রথম দফা সম্পাদনা

আফগানিস্তানে প্রবেশের সময় অধিকাংশ ভারতীয় সৈনিক নিয়ে গঠিত ৫০,০০০ সৈনিকের ব্রিটিশ বাহিনীকে তিনটি ভিন্ন স্থানে সামরিক কলামে বণ্টন করে দেয়া হয়। জারের কাছ থেকে সহায়তার জন্য শের আলি খান ব্যক্তিগতভাবে আবেদন জানাতে চেয়েছিলেন। মাজার-ই-শরিফ পৌছানোর পর ১৮৭৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি সেখানে মারা যান।[৮]

 
গান্দামাকের চুক্তি স্বাক্ষরের সময় মুহাম্মদ ইয়াকুব খানস্যার পিয়েরে কাভাগনারি, ২৬ মে ১৮৭৯। জন বার্কে‌র তোলা ছবি।

সন্ধি সম্পাদনা

ব্রিটিশরা দেশের অধিকাংশ দখল করে নেয়ার পর শের আলি খানের ছেলে ও উত্তরসূরি মুহাম্মদ ইয়াকুব খান ১৮৭৯ সালের মে মাসে গান্দামাকের চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তি অনুযায়ী বার্ষিক ভর্তুকি ও বিদেশি আগ্রাসনের সময় সহায়তা প্রদানের বিনিময়ে ব্রিটেন আফগানিস্তানের বৈদেশিক সম্পর্কের নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। কাবুল ও অন্যান্য স্থানে ব্রিটিশ প্রতিনিধিদের পুনরায় নিযুক্ত করা হয়, গিরিপথমিচানি গিরিপথে ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আফগানিস্তান বিভিন্ন উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এলাকা ও কোয়েটা ব্রিটেনের হাতে সমর্পণ করে। এরপর ব্রিটিশ বাহিনী ফিরে আসে।[৯]

১৮৭৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কাবুলে সংঘটিত একটি অভ্যুত্থানে ব্রিটিশ প্রতিনিধি স্যার লুইস কাভাগনারি তার দেহরক্ষী ও কর্মচারীসহ নিহত হন। এর ফলে যুদ্ধের দ্বিতীয় দফা শুরু হয়।[১০]

দ্বিতীয় দফা সম্পাদনা

মেজর জেনারেল স্যার ফ্রেডেরিক রবার্টস কাবুল ফিল্ড ফোর্স‌কে নেতৃত্ব দেন এবং শুটারগার্ডেন গিরিপথ দিয়ে মধ্য আফগানিস্তান পৌছান। ১৮৭৯ সালের ৬ অক্টোবর চার আসিয়াবে তিনি আফগান বাহিনীকে পরাজিত করেন। এর দুই দিন পর কাবুল দখল করে নেয়া হয়।[১১] গাজি মুহাম্মদ জান খান ওয়ারদাক ১০,০০০ আফগান সৈনিকের বাহিনী নিয়ে অভ্যুত্থান করে ১৮৭৯ সালের ডিসেম্বরে কাবুলে ব্রিটিশদেরকে শেরপুর সেনানিবাসে অবরোধ করেন। অবরোধ করা সত্ত্বেও তিনি তা চালিয়ে যেতে ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত তার অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়। ইয়াকুব খান সিংহাসনচ্যুত হন। ব্রিটিশরা সম্ভাব্য কয়েকটি রাজনৈতিক সমাধানের চিন্তা করে। এর মধ্যে আফগানিস্তানকে কয়েকজন শাসকের মধ্যে বিভক্ত করে এবং ইয়াকুব খানের ভাই মুহাম্মদ আইয়ুব খানকে সিংহাসনে বসানোর পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত তার চাচাত ভাই আবদুর রহমান খান আমির হিসেবে ক্ষমতায় বসেন।[১২][১৩] তিনি গান্দামাকের চুক্তি অনুমোদন করেছিলেন।[১৪]

হেরাতের গভর্নর আইয়ুব খান বিদ্রোহ করেন। ১৮৮০ সালের জুলাই মাসে তিনি মাইওয়ান্দের যুদ্ধে একটি ব্রিটিশ সেনাদলকে পরাজিত করেন এবং কান্দাহার অবরোধ করেন। এরপর রবার্টস কাবুল থেকে মূল ব্রিটিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব দেন এবং ১ সেপ্টেম্বর কান্দাহারের যুদ্ধে আইয়ুব খানকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করেন। ফলে বিদ্রোহ সমাপ্ত হয়।[১২]

অন্যান্য সকল উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারলেও ব্রিটিশরা কাবুলে ব্রিটিশ রেসিডেন্ট রাখার নীতি থেকে সরে আসে। এরপর ব্রিটিশরা আফগানিস্তান থেকে ফিরে আসে।[১২]

যুদ্ধের সময়রেখা সম্পাদনা

১৮৭৮ থেকে ১৮৮০ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধে বেশ কয়েকটি লড়াই সংঘটিত হয়েছে। নিম্নে সময়ানুক্রমে এসকল লড়াইয়ের নাম দেয়া হল:

 
মাইওয়ান্দের যুদ্ধে ব্রিটিশ আর্টিলারির পশ্চাদপসারণ।
 
মাইওয়ান্দের যুদ্ধে আফগান বিজয়ীরা।

১৮৭৮ সম্পাদনা

  1. আলি মসজিদের যুদ্ধ (ব্রিটিশদের বিজয়)
  2. পেইওয়ার কোটালের যুদ্ধ (ব্রিটিশদের বিজয়)

১৮৭৯ সম্পাদনা

  1. তখত-ই-পুলের যুদ্ধ (ব্রিটিশদের বিজয়)
  2. মাতুনের যুদ্ধ (ব্রিটিশদের বিজয়)
  3. খুশক-ই-নাকুদের যুদ্ধ (ব্রিটিশদের বিজয়)
  4. ফাতেহাবাদের যুদ্ধ (ব্রিটিশদের বিজয়)
  5. কাম দাক্কার যুদ্ধ (আফগানদের বিজয়)
  6. চার আসিয়াবের যুদ্ধ (ব্রিটিশদের বিজয়)[১৫]
  7. শাজুইয়ের যুদ্ধ
  8. খারেজ মীরের যুদ্ধ
  9. তখত-ই-শাহের যুদ্ধ
  10. আসমাই মালভূমির যুদ্ধ (আফগানদের যুদ্ধ)
  11. শেরপুর অবরোধ (ব্রিটিশদের বিজয়)

১৮৮০ সম্পাদনা

  1. আহমেদ খেলের যুদ্ধ (ব্রিটিশদের বিজয়)
  2. আরজুর যুদ্ধ
  3. চার আসিয়াবের দ্বিতীয় যুদ্ধ
  4. মাইওয়ান্দের যুদ্ধ (আফগানদের বিজয়)
  5. দেহ কোজার যুদ্ধ (আফগানদের বিজয়)
  6. কান্দাহারের যুদ্ধ (ব্রিটিশদের বিজয়)

১৮৮১ সম্পাদনা

  1. কান্দাহার (ও আফগানিস্তান) পরিত্যাগ

চিত্রশালা সম্পাদনা

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Schmidt, Karl J. (১৯৯৫)। An Atlas and Survey of South Asian History। M.E. Sharpe। পৃষ্ঠা 74আইএসবিএন 978-1563243332 
  2. Adamec, L.W.; Norris, J.A., Anglo-Afghan Wars, in Encyclopædia Iranica, online ed., 2010
  3. Norris, J.A., Anglo-Afghan Relations ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ মে ২০১৬ তারিখে, in Encyclopædia Iranica, online ed., 2010
  4. Barfield, Thomas (২০১০)। Afghanistan: A Cultural and Political HistoryPrinceton University Press। পৃষ্ঠা 145। আইএসবিএন 978-0-691-14568-6। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০১০ 
  5. Posturee, Bad (২০০২)। Understanding Holocausts: How, Why and When They Occur। iUniverse। পৃষ্ঠা 84। আইএসবিএন 978-0-595-23838-5। সংগ্রহের তারিখ ২২ আগস্ট ২০১০ 
  6. Robson, Brian. (২০০৭)। The Road to Kabul: The Second Afghan War 1878–1881। Stroud: Spellmount। পৃষ্ঠা 299। আইএসবিএন 978-1-86227-416-7 
  7. Barthorp, Michael (২০০২) [1982]। Afghan Wars and the North-West Frontier 1839–1947। London: Cassell। পৃষ্ঠা 66–67। আইএসবিএন 0-304-36294-8 
  8. Hanna, Henry Bathurst (১৯০৪)। The Second Afghan War, 1878-79-80: Its Causes, Its Conduct and Its Consequences2। Archibald Constable & Co। পৃষ্ঠা 150–155। 
  9. Barthorp, Michael (২০০২) [1982]। Afghan Wars and the North-West Frontier 1839–1947। London: Cassell। পৃষ্ঠা 71আইএসবিএন 0-304-36294-8 
  10. Wilkinson-Latham, Robert (১৯৯৮) [1977]। North-West Frontier 1837–1947। London: Osprey Publishing। পৃষ্ঠা 15আইএসবিএন 0-85045-275-9 
  11. Barthorp, Michael (২০০২) [1982]। Afghan Wars and the North-West Frontier 1839–1947। London: Cassell। পৃষ্ঠা 77–79। আইএসবিএন 0-304-36294-8 
  12. Wilkinson-Latham, Robert (১৯৯৮) [1977]। North-West Frontier 1837–1947। London: Osprey Publishing। পৃষ্ঠা 16–17। আইএসবিএন 0-85045-275-9 
  13. Barthorp, Michael (২০০২) [1982]। Afghan Wars and the North-West Frontier 1839–1947। London: Cassell। পৃষ্ঠা 81–85। আইএসবিএন 0-304-36294-8 
  14. Barthorp, Michael (২০০২) [1982]। Afghan Wars and the North-West Frontier 1839–1947। London: Cassell। পৃষ্ঠা 85–90। আইএসবিএন 0-304-36294-8 
  15. Alikuzai, Hamid Wahed (২০১৩)। A Concise History of Afghanistan in 25 Volumes, Volume 14। Trafford Publishing। পৃষ্ঠা 594। আইএসবিএন 1490714413 

গ্রন্থপঞ্জি সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা