নেভিল নক্স

ইংরেজ ক্রিকেটার
(Neville Knox থেকে পুনর্নির্দেশিত)

নেভিল আলেকজান্ডার নক্স (ইংরেজি: Neville Knox; জন্ম: ১০ অক্টোবর, ১৮৮৪ - মৃত্যু: ৩ মার্চ, ১৯৩৫) লন্ডনের ক্ল্যাপহাম এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে সারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, নিচেরসারিতে কার্যকরী ডানহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন নেভিল নক্স

নেভিল নক্স
১৯০৩ সালের অঙ্কিত প্রতিকৃতিতে নেভিল নক্স
ক্রিকেট তথ্য
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৫২)
২৯ জুলাই ১৯০৭ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
শেষ টেস্ট১৯ আগস্ট ১৯০৭ বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৮৮
রানের সংখ্যা ২৪ ৯০৫
ব্যাটিং গড় ৮.০০ ১০.১৬
১০০/৫০ -/- -/-
সর্বোচ্চ রান ৮* ৪৫*
বল করেছে ১২৬ ১৪৫৭০
উইকেট ৪১১
বোলিং গড় ৩৫.০০ ২১.৫৫
ইনিংসে ৫ উইকেট - ৩৮
ম্যাচে ১০ উইকেট -
সেরা বোলিং ২/৩৯ ৮/৪৮
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং -/- ৩২/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১ এপ্রিল ২০১৮

১৯০০-এর দশকের শেষদিকে ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার হিসেবে নেভিল নক্সকে গণ্য করা হতো। কার্যত সারের বিখ্যাত বোলার টম রিচার্ডসনউইলিয়াম লকউডের উত্তরসূরী ছিলেন তিনি। পেশা হিসেবে গায়ক ছিলেন। ফলে তার খেলোয়াড়ী জীবন অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। তবে নিঃসন্দেহে তিনি তার সময়কালে অন্যতম সেরা গতিসম্পন্ন বোলার ছিলেন। ঘণ্টায় তিনি দেড়শত কিলোমিটারেরও অধিক গতিবেগে বোলিং করতেন।

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

ডালউইচ কলেজে পড়াশোনা করেছেন তিনি।[১] ১৯০৪ সালে সারে দলের পক্ষে দুইটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। তবে আহামরি কিছু দেখাতে পারেননি। কিন্তু পরের বছর ওভালের পিচে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন। এ সময়ে তিনি সারের প্রবল প্রতিপক্ষ ওয়াল্টার লিসের বিকল্প হিসেবে উত্তরণ ঘটান। তবে, উইকেট প্রতি ২২ রানেরও অধিক খরচায় ১২৯ পেয়েছিলেন। তার উদীয়মান খেলোয়াড়ী জীবনে ২০ মিটারেরও অধিক দূরত্ব নিয়ে নিখুঁত নিশানা বরাবর বোলিং করতেন। সেজন্য তাকে বেশ শক্তি খরচ করতে হতো।

পরবর্তী মৌসুমে নিজ কাউন্টিতে মে মাসের শুরুতে বেশ চিহ্নিত হয়ে পড়েন নেভিল নক্স। তবে, কাউন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে দীর্ঘদিন পর সর্বাপেক্ষা দ্রুততম বোলারের সংবাদ শুনে উজ্জ্বীবিত হন তিনি।[২] এ সময়ে ওভালের পিচে বলকে বিপজ্জ্বনকভাবে ডেলিভারি দিতেন। এছাড়াও, রিচার্ডসন তার সেরা সময়ের ন্যায় স্পিন করানোর প্রেক্ষিতে তিনিও বলকে স্পিন করাতে দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। নক্সের বোলিংয়ের ফলে সারে দল পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষস্থানে আরোহণ করে। ওভালে লিচেস্টারশায়ার ও সাসেক্সের বিপক্ষে ব্যাটিং উপযোগী পিচে তার পেস বোলিং মারাত্মক ধরনের ছিল। তবে, জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে তার বোলিংয়ের ছন্দপতন ঘটতে থাকে। রৌদ্রকিরণোজ্জ্বল পিচে নক্স ধারাবাহিকভাবে পেশিতে টান অনুভব করতে থাকেন। ফলশ্রুতিতে সারের শেষ ষোলো খেলার নয়টিতে তার অংশগ্রহণ ছিল। উইজডেন মন্তব্য করে যে, বিশ্রামে থেকে প্রায়শঃই খেলায় অংশ নিতেন তিনি। তাস্বত্ত্বেও, জুলাইয়ে লর্ডসে অনুষ্ঠিত প্লেয়ার্সের বিপক্ষের খেলায় ১৭৪ রানে ১২ উইকেট দখল করেন। এ সংগ্রহটি জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের মধ্যকার খেলার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা গতিসম্পন্ন বোলিংয়ের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি।[৩] পেশাদারী ব্যাটসম্যানদের কেউ কেউ একবাক্যে তা মেনে নিয়েছিলেন। নক্স তার এ অর্জনের জন্য স্বীকৃতিও লাভ করেছিলেন। এছাড়াও মৌসুমের শুরুতে অপূর্ব ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের মর্যাদা প্রদান করা হয়।[৪]

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সম্পাদনা

২৯ জুলাই, ১৯০৭ তারিখে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে নেভিল নক্সের। ১৯০৭ সালের ভেজা গ্রীষ্মকাল থাকা স্বত্ত্বেও বেশ কয়েকবার সুযোগ হাতছাড়া করেন। তন্মধ্যে হেডিংলিতে সফরকারী শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তেমন কিছুই করতে পারেননি। অনেকাংশেই এটি ক্ষমার অযোগ্য ভুল হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।[৫] এমনকি ওভালের তৃতীয় টেস্টেও নক্স তেমন সাফল্য পাননি। এর পূর্বে নিয়মিতভাবে না খেলার দরুণ কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপে ৪৪ ও সর্বমোট ৭০ উইকেট পান যা ১৯০৬ সালের ১১৭ ও ১৪৪-এর তুলনায় কিছুই ছিল না।

অবসর সম্পাদনা

১৯০৭ সালের শেষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন নেভিল নক্স। তবে, ১৯০৮ মৌসুম শুরুর পূর্বে প্রত্যাশিতভাবেই জুলাই ও আগস্ট মাসে নিয়মিতভাবে খেলার প্রত্যাশা করা হয়েছিল।[৬] ওভালে জেন্টলম্যানের সদস্যরূপে অত্যন্ত সুন্দর ক্রীড়াশৈলী উপহার দেন তিনি। এরফলে সারে কর্তৃপক্ষ আশাবাদী ছিলেন যে, ১৯০৬ সালের ন্যায় তিনি বেশ ভালো করবেন। কিন্তু, তিনি মাত্র তিনটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। ১৯০৯ সালে ক্রিকেটের জন্য তিনি কোন সময়ই দিতে পারেননি। ১৯১০ সালে দলে ফিরে পাঁচটি খেলায় অংশ নেন। পূর্বের তুলনায় বেশ ভালো বোলিং করলেও জুলাইয়ের পর তাকে আর কাউন্টি ক্রিকেটে দেখা যায়নি। এভাবেই প্রতিভাধর নেভিল নক্সের সংক্ষিপ্ত খেলোয়াড়ী জীবনের অকাল সমাপ্তি ঘটে।

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

মহান যুদ্ধে রয়্যাল আর্মি অর্ডন্যান্স কোরে লেফট্যানেন্ট হিসেবে যোগ দেন নেভিল নক্স। ১৯১৯ সালে ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি পান। কর্মজীবনে মেজর পদবী নিয়ে অবসর গ্রহণ করেন।

গায়ক হিসেবে কর্মজীবন চালিয়ে যান। তবে, দূর্বল স্বাস্থ্য নিয়ে অনেকগুলো বছর পার করে দেন। অবশেষে ৩ মার্চ, ১৯৩৫ তারিখে সারের সারবিটন এলাকায় ৪৯ বছর বয়সে তার দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Hodges, S, (1981), God's Gift: A Living History of Dulwich College, pages 232, (Heinemann: London)
  2. Pardon, Sydney H. (editor); John Wisden’s Cricketers’ Almanack; Forty-Fourth Edition (1907); p. cxxviii
  3. Pardon (editor); John Wisden’s Cricketers’ Almanack; Forty-Fifth edition (1908), part II, p. 101
  4. Wilde S (2013) "1907 Five cricketers of the year" in Wisden Cricketers of the Year: A Celebration of Cricket's Greatest Players, pp.58–60. (Available online)
  5. Pardon (editor) John Wisden’s Cricketers’ Almanack; Forty-Fifth edition (1908), part II, p. 27
  6. Pardon (editor); John Wisden’s Cricketers’ Almanack; Forty-Sixth edition (1909); part II, p. 46

আরও দেখুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা