কুম্ভকর্ণ

মহাভারতের রাবণের মধ্যম ভ্রাতা
(Kumbhakarna থেকে পুনর্নির্দেশিত)

কুম্ভকর্ণ (সংস্কৃত: कुम्भकर्ण) (আক্ষরিক অর্থে যার কর্ণ বা কান কুম্ভ বা কলসির মতো) হলেন সংস্কৃত মহাকাব্য রামায়ণে উল্লেখিত একটি অন্যতম খলচরিত্র। কুম্ভকর্ণকে রাক্ষসকুলের রাজা ও অধিপতি রাবণের মধ্যম ভ্রাতা৷ তার বিরাট দানবাকৃৃতি চেহারা এবং খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপকতা সত্ত্বেও তাকে সুচরিত্র এবং দক্ষ যোদ্ধা হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যদিও তিনি রাম-রাবণ যুদ্ধের এক পর্যায়ে নিজের শক্তি প্রদর্শনের জন্য বহু বানরসৈন্যকে হত্যা করেন৷

কুম্ভকর্ণ
অসময়ে ধ্যানভঙ্গের ফলে কুম্ভকর্ণের জৃৃম্ভণ
পরিবারঋষি বিশ্রবা (পিতা)
নিকষা (মাতা)
বজ্রমালা (স্ত্রী)
কুম্ভ, নিকুম্ভ ও ভীমাসুর (পুত্রত্রয়)
রাবণ, বিভীষণ (ভ্রাতা), কুবের (বৈমাত্রেয় ভ্রাতা), শূর্পণখা (ভগিনী)

বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে তিনি এতটাই ধার্মিক, বিচক্ষন ও অজেয় ছিলেন যে স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র ও তার শক্তির প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিলেন৷ তারা ভ্রাতাদ্বয় রাবণবিভীষণের সহিত এক মহাযজ্ঞে অংশগ্রহণ করে তারা প্রজাপতি ব্রহ্মাকে তুষ্ট করতে সফল হন৷ কিন্তু ব্রহ্মার কাছে বর চাওয়ার সময় দেবরাজ ইন্দ্রের অনুরোধে দেবী সরস্বতী তার জিহ্বা আড়ষ্ট করে দেন৷ এই কারণে বর হিসাবে 'ইন্দ্রাসন' চাওয়ার বদলে তিনি 'নিদ্রাসন' চেয়ে বসেন৷ অন্য তথ্য থেকে এরকমও পাওয়া যায় যে তিনি 'নির্দেবত্বম' (দেব নির্বাণ) চাওয়ার বদলে 'নিদ্রাবত্বম' চেয়ে বসন৷ তার এই অনুরোধই ব্রহ্মা গ্রহণ করেন৷ তার জ্যেষ্টভ্রাতা রাবণ বিভিন্নভাবে ব্রহ্মাকে এই শাপরূপী আশীর্ব্বাদ না দেওয়ার অনুরোধ করলেও তিনি তাতে সম্মতি দেন নি৷ কুম্ভকর্ণ টানা ছয়মাসযাবৎ নিদ্রাচ্ছন্ন থাকতেন এবং তার ঘুম ভাঙলে মানুষসহ হাতের সামনে যা পেতেন তা-ই ভক্ষন করতেন বলে জানা যায়৷ আলবেনীয় ভাষায় কুম্ভকর্ণ চরিত্রটি 'বুকুরোশ্জ এ জেতুর' নামে পরাচিত৷

উৎস সম্পাদনা

ভাগবত পুরাণ মতে কুম্ভকর্ণ ছিলেন বিষ্ণুর দ্বাররক্ষক বিজয়ের অবতার৷ জয় ও বিজয় শ্রীবিষ্ণুর পবিত্র বৈকুণ্ঠদ্বার রক্ষাকালে চতুর্কুমারের দ্বারা শাপগ্রস্থ হন৷ তারা প্রাথমিকভাবে অমর বরপ্রাপ্ত হলেও বিষ্ণুর সহকারী হিসাবে আত্মসমর্পণের পর তিনিই এই বর স্খলনের সচেষ্ট হন৷ তিনি বিজয়কে বলেন যতদিন না তিনি তাদেরকে বৈকুণ্ঠধামে আসার অনুমতি দিচ্ছেন ততদিন পর্যন্ত মর্তলোকে তিনবার তিনি বিষ্ণুর অবতারেহ শত্রুপক্ষে সদস্য হিসাবে জন্মগ্রহণ করবেন৷ তাদের তিনটি পুর্বনির্ধারিত জন্মের দ্বিতীয় জন্মে জয় রাবণ হিসাবে এবং বিজয় তার ভ্রাতা কুম্ভকর্ণ হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন৷

যুদ্ধবর্ণনা সম্পাদনা

 
চিত্রকর বলসাহেব পণ্ডিত পন্থ প্রতিনিধির দ্বারা অঙ্কিত কুম্ভকর্ণের যুদ্ধে প্রবেশ

যুদ্ধকালে রাবণ যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করলে রামচন্দ্রের বানরসেনার দ্বারা চরম অপদস্ত হন৷ ফলে তিনি তার মধ্যম ভ্রাতা কুম্ভকর্ণের প্রয়োজন অনুভব করে৷ কিন্তু কুম্ভকর্ণ খুব কম সময়ের জন্য জেগে থাকে, শুধু তাই নয় তার ওপর দিয়ে সহস্র হাতি হেঁটে না যাওয়া পর্যন্ত তার ঘুম ভাঙতো না৷ (রামায়ণ ৬.৪৮.৪৭)

জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রাবণের থেকে আগে থেকেই সমস্ত ঘটনা জানার পর তিনি রাবণকে তার দুষ্কর্মের ব্যাপারে সচেতন করেছিলেন ও ভবিষ্যৎ পরিণতির আশঙ্কা করেছিলেন কুম্ভকর্ণ৷ তা সত্ত্বেও ভাইয়ের প্রতি আনুগত্যের কারণে তিনি যুদ্ধে রাবণের পক্ষ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ মদ্যপানের পর কুম্ভকর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রে পদার্পণ করেন এবং রামসেনাকে কিঞ্চিৎ বিধ্বস্ত করতে সক্ষম হন৷ তিনি বানররাজ সুগ্রীবকে অবচেতন করে দেন এবং বানরকুলের সংহার করতে সক্ষম হন৷ কিন্তু শেষপর্যন্ত তিন রামের হাতে নিহত হন৷ যখন রাবণ তার ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ পান তখন তিনি খুব বিমর্ষ হয়ে পড়েন এবং নিজেকে যুদ্ধবিদ্ধস্ত জাহির করেন৷[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

 
যুদ্ধক্ষেত্রে কুম্ভকর্ণের মৃত্যু

কুম্ভকর্ণ ও তার প্রথম পত্নী বজ্রমালার কুম্ভ ও নিকুম্ভ নামে দুই পুত্র সন্তান ছিলো৷ উভয়েই রাম রাবণের যুদ্ধে রাবণের পক্ষের হয়ে লড়াই করে ও যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হয়৷ সহ্যাদ্রির ডাকিন্যা অঞ্চলের (বর্তমান ওড়িশা) রাজকুমারী কর্কটীকে বিবাহ করেন৷ তাদের ভীমাসুর নামে একটি পুত্রসন্তান হয়৷ স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে তিনি রামের প্রতি প্রতিশোধ না নিয়ে বরং নিজপুত্রকে আদেশ দেন যেন সে কঠোর তপস্যা করে ব্রহ্মাকে সন্তুষ্ট করেন এবং অমরত্ব লাভ করন৷ তপস্যা অসমাপ্ত অবস্থায় ভগবান শিব দ্বারা ভীমাসুর নিহত হন৷[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা