হয়া
হয়া বা মোম ফুল মূলত এপোকিনাসি পরিবারের ট্রপিক্যাল উদ্ভিদ। একই সাথে এদেরকে milkweed family ও বলা হয়। এদের ২০০-৩০০ প্রজাতি রয়েছে।
হয়া Hoya | |
---|---|
![]() | |
Hoya lanceolata ssp. bella | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Plantae |
শ্রেণীবিহীন: | Angiosperms |
শ্রেণীবিহীন: | Eudicots |
শ্রেণীবিহীন: | Asterids |
বর্গ: | Gentianales |
পরিবার: | Apocynaceae |
উপপরিবার: | Asclepiadoideae |
গণ: | Hoya R.Br. |
Species | |
See text. | |
প্রতিশব্দ | |
Madangia |
জীবন প্রক্রিয়া
সম্পাদনাপ্রায়ই দেখা যায় হয়া পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ হয়ে অন্য গাছের উপর বেড়ে ওঠে এবং বসবাস করে। আশ্রয়দাতা গাছ থেকে এরা খাবার বা রস কোন কিছুই গ্রহণ করে না। এরা বাতাস, ধুলোবালি বা বৃষ্টির পানি থেকে খাবার গ্রহণ করে।মাঝে মাঝে দেখা যায় পাহাড়ি এলাকায় এরা গাছ বেয়ে লতার মত পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে বেয়ে ওঠে। হয়া চিরসবুজ বহু বর্ষজীবী ক্রিপার অথবা ভাইন এবং খুব কমই গুল্ম হয়।
ইংরেজি নাম ও নামকরণ
সম্পাদনাএদেরকে ইংরেজিতে ওয়াক্সপ্লান্ট (waxplant), ওয়াক্সভাইন (waxvine), ওয়াক্সফ্লাওয়ার (waxflower) অথবা শুধু হয়া hoya বলে ডাকা হয়। উদ্ভিদ বিজ্ঞানী থমাস হয় (Thomas Hoy) এর নাম অনুসারে এদের হয়া নামকরণ করা হয়।[১]
বৈশ্বিক বিস্তৃতি
সম্পাদনাহয়ার বেশির ভাগ প্রজাতির আদি বাস এশিয়াতে। বিশেষ করে ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় গাছ এরা। ফিলিপাইনে হয়ার বিভিন্ন প্রজাতির অনেক ডাইভারসিটি পাওয়া গেছে এবং পলিনেশিয়া, নিউ গিনি এবং অস্ট্রেলিয়াতেও অনেক প্রজাতি পাওয়া গেছে।
ফুলের বিবরণ
সম্পাদনাহয়া ফুল সাধারণত একটি পুষ্প বৃন্তের মাথায় গুচ্ছাকার (umbellate cluster) বা থোকা হয়ে ফুটে থাকে। আম্বেল অর্থাৎ অনেকগুলো ছোট ফুলের ডাঁটা যখন একত্রে একটি কমন ডাঁটার সাথে যুক্ত থাকে তাকে পেডিসেল (pedicel) বলে। দেখতে অনেকটা আমব্রেলা রিবস (umbrella ribs) এর মত মনে হয়। ল্যাটিন শব্দ umbella (sunshade) থেকে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে এই শব্দটি ১৫৯০ সালে যুক্ত হয়।ফুলের দন্ডগুলো সাধারণত পাতার বোঁটার কোনা থেকে বার হয় এবং বেশির ভাগ প্রজাতিতে এই দন্ড গুলো অনেক বছর ধরে বেঁচে থাকে। বার বার ফুল হওয়াতে ফুলের দন্ডগুলো বড় হতে থাকে। ফুলগুলির থোকার ব্যাস ৩ মিলি মিটার থেকে ৯৫ মিলি মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
ফুলগুলো মুলত তারা আকৃতির হয়ে থাকে। প্রতিটি ফুলে পাঁচটি মোমের মত পুরু পাপড়ি থাকে যার উপরে আরও পাঁচটি তারা গঠনের পাপড়ি থাকে যাকে করোনা বলে। অসাধারণ চোখ জুড়ানো রঙের বৈচিত্র দেখা যায় এই ফুলে। সাদা, গোলাপি, হলুদ,কমলা, গাড় লাল ইত্যাদি মনোমুগ্ধকর রঙের কম্বিনেশনে অপরূপ সাজে সেজে থাকে এই ফুলেরা। বেশির ভাগ ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ থাকে এবং প্রচুর পরিমানে মধু তৈরি করে।
পরাগায়ন ও বীজ
সম্পাদনাএই ফুলের পরাগায়ন সাধারণত মথ, মাছি বা পিঁপড়া করে থাকে। এদের পরাগায়ন সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য নেই। এদের পরাগায়ন স্থানীয় পোকা দ্বারা সংঘটিত হয় বলে মনে করা হয়। বীজগুলো সাধারণত টুইন পডের মতো হয়। বীজকোষ গুলি বেশ হালকা এবং বাতাসে ভেসে ভেসে দূর দুরান্তে যেয়ে এদের বিস্তার লাভ করতে পারে। বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম বেশ তাড়াতাড়ি হয় কিন্তু সহজে বাঁচে না এদের চারা।
হয়ার কিছু প্রজাতি পিঁপড়ার সাথে সহ-অবস্থান করে সিমবায়োটিক ভাবে। H. imbricata প্রজাতিতে পাতা গুলো কনকেভ লেন্সের আকৃতির কাপ তৈরি করে এবং এই কাপ-শেল্টার পিঁপড়া পর্যন্ত পৌঁছে যায়। H. darwinii তে পাতাগুলো বুলেটের মত এবং সেভাবেই পিঁপড়ার শেলটার তৈরি করে। পাতাগুলো সাধারণত আদর্শ সাকুলেন্ট। বিভিন্ন ধরনের পাতা দেখা যায় এই জেনাসে। সাধারণত মসৃণ এবং রোমশ। অনেকগুলো প্রজাতি আছে যাদের পাতার ওপরের পিঠে ডোরাকাটা থাকে এবং তার মাঝখানে বিভিন্ন রঙের ফোটা থাকে।
বাগান উদ্ভিদ
সম্পাদনাহয়ার অনেকগুলো প্রজাতি হাউসপ্লান্ট হিসেবে বাড়িতে লাগানো হয় নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে (H. carnosa)। এরা আদ্রিত হয় এদের আকর্ষণীয় ফুলের জন্য এবং এদের সুগন্ধির জন্য। অনেক কাল্টিভার কে হাউসপ্লান্ট হিসেবে নির্বাচন করা হয় এদের পাতা, ফুলের সৌন্দর্য এবং অপূর্ব সুন্দর রঙের কারণে। তীব্র সুমিষ্ট ঘ্রাণের কারণেও হয়া ইনডোর প্লান্ট হিসেবে লাগানো যায়। এরা উজ্জ্বল আলো পেতে পছন্দ করে কিন্তু অল্প আলোতেও এরা বেঁচে থাকতে পারে। অল্প আলোতে এরা ফুল তৈরি নাও করতে পারে। হয়া নার্সারিতে বিক্রি হয় হাউসপ্লান্ট হিসেবে। বিশেষ করে H. carnosa, H. purpurea-fusca, H. kerrii প্রজাতি। হয়া সহজেই বংশবিস্তার করতে পারে গ্রাফটিং এর মাধ্যমে। সাধারণত কাটিং হিসেবেই বেশি বিক্রি হয়।
ভেষজ ব্যবহার ও বিষক্রিয়া
সম্পাদনাবিভিন্ন দেশে এবং বিভিন্ন কালচারে বিশেষ করে পলিনেশিয়ান কালচারে হয়াকে ওষধি গাছ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়াতে কিছু হয়া পাওয়া গেছে যারা হাস-মুরগি এবং ভেড়ার জন্য বিষক্রিয়া হয়ে কাজ করেছে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Robert Brown (১৮১০)। Prodromus florae Novae Hollandiae et Insulae Van-Diemen, exhibens characteres plantarum quas annis 1802-1805 per oras utriusque insulae collegit et descripsit Robertus Brown; insertis passim aliis speciebus auctori hucusque cognitis, seu evulgatis, seu ineditis, praaesertim Banksianis, in primo itinere navarchi Cook detectis। 1। London: Richard Taylor and Biodiversity Heritage Library। পৃষ্ঠা 459।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- UGA research shows some plants can remove indoor pollutants December 2, 2009