থ্রি ইডিয়টস
থ্রি ইডিয়টস (হিন্দি: ३ ईडियट्स; বাংলা: তিন বোকা) একটি চেতন ভগত-এর "ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান" উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত ভারতীয় চলচ্চিত্র। ২০০৯ সালে এটি মুক্তি পায়। এর পরিচালক রাজকুমার হিরানী, চিত্রনাট্য লিখেছেন অভিজাত যোশি এবং প্রযোজনা করেছেন বিধু বিনোদ চোপড়া। থ্রি ইডিয়টস এ অভিনয় করেছেন আমির খান, কারিনা কাপুর, আর মাধবন, শারমান যোশি। মুক্তির পর এটি ভারতে সব ওপেনিং বক্স অফিস রেকর্ড ভঙ্গ করে। মুক্তির দিন এবং সপ্তাহে এটি বলিউডের সর্বোচ্চ আয় করা সিনেমা। থ্রি ইডিয়টস ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আয় করা চলচ্চিত্র। এই সিনেমাটি ছয়টি ফিল্ম ফেয়ার, দশটি স্টার স্ক্রিন এবং ষোলটি আইফা অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়। চলচ্চিত্রটি তামিল ভাষায় পুনঃনির্মিত হয়ে নানবান নামে যা ২০১২ সালে মুক্তি পেয়েছিলো।
থ্রি ইডিয়টস | |
---|---|
পরিচালক | রাজকুমার হিরানী |
প্রযোজক | বিধু বিনোদ চোপড়া |
রচয়িতা | সংলাপ অভিজাত যোশি রাজকুমার হিরানী |
চিত্রনাট্যকার | অভিজাত যোশি রাজকুমার হিরানী বিধু বিনোদ চোপড়া |
কাহিনিকার | চেতন ভগত |
উৎস | চেতন ভগত কর্তৃক ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান - হোয়াট নট টু ডো অ্যাট আইআইটি! |
শ্রেষ্ঠাংশে | আমির খান কারিনা কাপুর আর মাধবন শারমান যোশি বোমান ইরানি ওমি বৈদ্য মোনা সিং পরীক্ষিত সাহনী |
বর্ণনাকারী | আর মাধবন |
সুরকার | শান্তনু মৈত্র |
চিত্রগ্রাহক | সি কে মুরালিধরন |
সম্পাদক | রঞ্জিত বাহাদুর রাজকুমার হিরানী |
প্রযোজনা কোম্পানি | |
পরিবেশক | বিনোদ চোপড়া প্রোডাকশনস |
মুক্তি | ২৫ ডিসেম্বর ২০০৯ |
স্থিতিকাল | ১৭১ মিনিট[১] |
দেশ | ভারত |
ভাষা | হিন্দি |
নির্মাণব্যয় | ₹ ৫৫ কোটি (ইউএস$ ৬.৭২ মিলিয়ন)[২] |
আয় | ₹ ৪৬০ কোটি (ইউএস$ ৫৬.২৩ মিলিয়ন)[৩] |
কাহিনী
সম্পাদনাচলচ্চিত্রটির গল্প শুরু হয় চতুর রামালিঙ্গমের একটি ফোন কলের মাধ্যমে। সে "৫ সেপ্টেম্বর" ফারহান এবং রাজুকে আইসিইতে (ইম্পেরিয়াল কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং) ডাকে। সেখানে দু’জনকে ডেকে সে মনে করিয়ে দেয় আজ থেকে ১০ বছর আগে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে র্যাঞ্চোর সাথে সে একটি বাজি ধরেছিল যে, ‘আজ থেকে ১০ বছর পর কে সবচেয়ে বেশি সফল হতে পারে’। চতুরের ধারণা সে নিজে সবচেয়ে বেশি সফল হতে পেরেছে এবং র্যাঞ্চো ব্যর্থ হয়েছে, সেজন্য বাজির শর্ত পূরণ করার ভয়ে আজ সে এখানে আসে নি।
র্যাঞ্চো ছিল রাজু ও ফারহানের প্রাণের বন্ধু, কলেজ থেকে পাশ করে বেরিয়ে যাওয়ার পর যে (এক প্রকার) হারিয়ে গিয়েছে। চতুর জানায়- সে র্যাঞ্চোর খোঁজ পেয়েছে; সে এখন সিমলাতে বাস করে।
রাজু ও ফারহান আর কোন সময় নষ্ট না করে র্যাঞ্চোকে খুঁজতে সিমলার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। চতুরও তাদের সঙ্গে রওনা হয়। সে তার কোম্পানীর সাথে সিমলায় বসবাসরত ফুনসুক ওয়াংরু নামে এক বিজ্ঞানীর চুক্তি করবে। সিমলায় যাওয়ার তার আরেকটি উদ্দেশ্য- সে যে বাজিতে জিতেছে এবং র্যাঞ্চো হেরেছে এটা র্যাঞ্চোকে স্বীকার করতে বাধ্য করা এবং একটি ‘স্বীকারক্তিনামায়’ তাকে দিয়ে সাক্ষর করিয়ে নেয়া।
তিন জন গাড়িতে করে সিমলার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। এই যাত্রা পথে ফারহান ফ্লাশব্যাকে ১০ বছর আগে আইসিইতে ঘটে যাওয়া তাদের ঘটনাগুলোর কথা মনে করতে শুরু করে এবং এভাবে সিনেমটির গল্প এগিয়ে যায়।
ফারহান কুরেশি (আর মাধবন) এবং রাজু রাস্তোগি (শারমন জোশী) দিল্লির মর্যাদাপূর্ণ ইম্পেরিয়াল কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনার জন্য আসে এবং হোস্টেলে দু’জন একই রুমে উঠে। ফারহান তার বাবার ইচ্ছে পূরণ করার জন্য চিত্রগ্রহণর প্রতি তাঁর আবেগকে বিসর্জন দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পথ বেছে নিয়েছে, রাজুর ইচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে সে পরিবারের দারিদ্র্যের অবসান ঘটাবে। একদিন তাদের রুমে রাঞ্ছোড় দাস শ্যামল দাস চাঁচর (আমির খান) নামে আরেকটি ছেলে উঠলো, যার ডাকনাম "র্যাঞ্চো"। র্যাঞ্চোর বিজ্ঞান এবং প্রকৌশল বিষয়ে ছিল সত্যিকারে ভালবাসা। সে ‘হ্যান্ডস অন লার্নিংয়ে’ বিশ্বাসী এবং ক্লাসে তাকে করা শিক্ষকদের প্রশ্নের সে অপ্রচলিত এবং বাস্তবসম্মত উত্তর প্রদান করে, যা বইয়ের ভাষার সাথে মোটেও যায় না। ফলস্বরূপ সে অধ্যাপকদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়, বিশেষকরে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বীরু সহস্ত্রবুদ্ধিের (বোমান ইরানি),যাকে আইসিই’র ছাত্ররা গোপনে "ভাইরাস" বলে ডাকে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ভাইরাসের গতানুগতিক এবং কঠোর দর্শনগুলির সাথে র্যাঞ্চোর দর্শনের কোন মিল ছিল না। আইসিইতে চতুর (ওমি বৈদ্য) নামে মুখস্তবিদ্যায় নির্ভরশীল আরেকজন ছাত্র ছিল, যাকে সবাই "সাইলেন্সার" নামে ডাকে। সে ছিল হিন্দি ভাষায় অল্প জ্ঞানসম্পন্ন উগান্ডার তামিল শিক্ষার্থী।
একদিন জয় লোবো নামে এক ছাত্র আইসিইতে পড়াশোনার চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে। র্যাঞ্চো তার মৃত্যুর জন্য আইসিই’র পড়াশোনা পদ্ধতি এবং পড়াশোনায় শিক্ষকদের দেয়া অতিরিক্ত চাপকেই দায়ী করে।
র্যাঞ্চো ভাইরাসের শেখানোর পদ্ধতির সমালোচনা করে এবং এই শিখন পদ্ধতি পরিবর্তন করার অনুরোধ জানায়। ভাইরাস র্যাঞ্চোর প্রতি রাগান্বিত হয়ে উঠেন। তিনি রাজু ও ফারহানের পরিবারকে চিঠি লিখে জানলেন যে, র্যাঞ্চো নামের একটি খারাপ ছেলের সঙ্গদোষে পড়ে তারা দু’জনও খারাপ হচ্ছে।
ফারহানের বাবা তাদের তিনজনকে বাড়িতে ডেকে পাঠালেন, র্যাঞ্চোকে অনুরোধ করলেন যেন সে ফারহানকে আর কোন কুবুদ্ধি না দেয়। র্যাঞ্চো ফারহানের বাবাকে পরামর্শ দেয় যে, ফারহান খুব ভালো ছবি তোলে; তার উচিত ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে ‘ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার’ হওয়া। র্যাঞ্চোর কথায় ফারহানের বাবা প্রচন্ড রেগে যান এবং তাদের খাবার খেতে না দিয়েই বাড়ি থেকে বের করে দেন।
প্রচন্ড ক্ষিদে নিয়ে তারা তিনজন রাস্তায় হাঁটতে থাকে। ক্ষিদে মেটানোর জন্য র্যাঞ্চোর পরিকল্পনা মাফিক তারা নকল অতিথি হয়ে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ঢুকে পড়ে। সেই বিয়ের অনুষ্ঠানটি ছিল ভাইরাসের বড় মেয়ের, যা ওরা তিনজন জানতো না। ঘটনাচক্রে সেখানে পিয়ার (কারিনা কাপুর) সাথে র্যাঞ্চোর পরিচয় হয়। পিয়া ছিল ভাইরাসের ডাক্তারী পড়ুরা ছোট মেয়ে, সুহাস নামে একজনের সাথে যার বাগদান সম্পন্ন হয়েছে।
এই সুহাস কথায় কথায় “প্রাইসট্যাগ” ব্যবহার করে, সে যে খুব দামী জিনিসপত্র ব্যবহার করে -এ কথা সুহাস সবসময় প্রচার করে। র্যাঞ্চো পিয়াকে বলে, ‘সুহাস একটা গাধা, তাকে বিয়ে করো না’। র্যাঞ্চোর কথায় পিয়া প্রচন্ড রেগে যায়।
পরদিন ভাইরাস রাজু ও ফারহানকে ডেকে উপদেশ দেন, র্যাঞ্চোর সঙ্গ ত্যাগ করে চতুর রামালিঙ্গমের রুমে শিফট হওয়ার জন্য। র্যাঞ্চো রাজুকে বুঝায় যে,
সফলতার পেছনে না ছুটে যোগ্যতা অর্জন করার জন্য চেষ্টা করা উচিত। যোগ্যতা অর্জন করতে পারলে সফলতা এমনিতেই চলে আসবে।
রাজু র্যাঞ্চোর কোন কথা না শুনে ভাইরাসের কথা মত চতুরের রুমে শিফট হয়।
র্যাঞ্চো ও ফারহান চতুরকে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য এবং রাজুকে পথে নিয়ে আসার জন্য এক পরিকল্পনা করে। শিক্ষক দিবসে প্রস্তাবনামূলক বক্তব্য দেয়ার জন্য চতুরকে নির্বাচিত করা হয়। র্যাঞ্চো কৌশলে হিন্দিতে অদক্ষ চতুরের লিখিত বক্তব্যের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ পরিবর্তন করে দেয়, যার ফলে পুরো বক্তব্যটিই অশ্লীল ও অগ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। শিক্ষক দিবসে চতুর সেই বক্তব্যটিই উপস্থাপন করে এবং মারাত্মক ভাবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়। সে জানতে পারে তার এই অবস্থার জন্য শুধুমাত্র র্যাঞ্চোই দায়ী। সে র্যাঞ্চোর কাছে গিয়ে তাকে রেগেমেগে প্রশ্ন করে, কেন সে তার এতবড় ক্ষতি করলো? র্যাঞ্চো চতুরের কাছে ক্ষমা চায় এবং বলে চতুরের মুখস্তবিদ্যা নির্ভর পড়াশোনার পদ্ধতিটি ভুল, তার এটি পরিত্যাগ করা উচিত। চতুর বলে, তার গ্রহণ করা পড়াশোনার পদ্ধতিটি দিয়েই একদিন সে সফলতার শিখরে পৌঁছবে। সে দিন ছিল “৫ সেপ্টেম্বর”। সে র্যাঞ্চোকে বলে, আজ থেকে ১০ বছর পর “৫ সেপ্টেম্বর” এই জায়গায় তার সাথে দেখা করতে, সেদিন দেখা যাবে জীবনে কে কত বড় সফল হয়েছে। চতুর “৫ সেপ্টেম্বর” দিনটি দেয়ালের গায়ে খোঁদাই করে লিখে রাখে।
একদিন র্যাঞ্চো ও ফারহান মিলে রাজুর মৃত্যু পথযাত্রী অসুস্থ্য বাবাকে যথা সময়ে হাসপাতালে নিয়ে এসে তাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচায়। র্যাঞ্চোর প্রতি কৃতজ্ঞতায় রাজুর মন ভরে ওঠে। র্যাঞ্চোর অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, বন্ধু বাৎসল্য দেখে পিয়া তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ওঠে এবং তার প্রেমে পড়ে যায়। এভাবে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে সিনেমাটির গল্প এগিয়ে যেতে থাকে। ফারহানের ইচ্ছে ছিল সে ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার হবে, সেজন্য সে তার প্রিয় ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার আন্দ্রে ইস্তেভানকে দেয়ার জন্য একটি চিঠি লেখে, কিন্তু তার বাবার ভয়ে সে তাকে চিঠিটি পোষ্ট করার সাহস পায় না। র্যাঞ্চো কৌশলে ফারহানের ব্যাগ থেকে সেই চিঠিটি নিয়ে এসে আন্দ্রে ইস্তেভাবনে পোষ্ট করে দেয়। কিছুদিন পর... ফারহানকে তিনি তার সহকারী হিসেবে নিযুক্ত করতে চান -এই মর্মে আন্দ্রে ইস্তেভান সেই চিঠিটির জবাবে একটি চিঠি লেখেন। র্যাঞ্চো সেই চিঠিটি ফারহানের হাতে দিয়ে বলে, বাড়ি গিয়ে তার বাবাকে বুঝাতে যে, সে ইঞ্জিনিয়ার না, ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার হতে চায়। ফারহান রাজি হয় না, সে ভয় পায়। র্যাঞ্চো তাকে বুঝায়,
ফারহান আজ আর ভয় পেও না। নয়তো আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরে তুমি কোন হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে মৃত্যুর জন্য দিন গুনতে গুনতে ভাববে- চিঠি হাতে ছিল, ট্যাক্সিও গেটের সামনে ছিল, শুধু একটু সাহস করে বাবাকে নিজের ইচ্ছের কথাটি জানাতে পারলে জীবনটা আজ অন্য রকম হতে পারতো।
র্যাঞ্চোর কথায় কাজ হয়। ফারহান সাহস করে বাবাকে তার ইচ্ছের কথাটি জানায়। অনেক বুঝানোর পর বাবা বুঝতে পারেন যে, ছেলের ইচ্ছেটাকেই তার প্রাধান্য দেয়া উচিত। ফারহান ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে ওয়াইল্ড লাইফ চিত্রগ্রহণতে তার ক্যারিয়ার শুরু করে।
একসময় আইসিইতে র্যাঞ্চোদের পড়াশোনা শেষ হয়ে আসে। কলেজের শেষ দিনে র্যাঞ্চো কাউকে কিছু না বলে গাড়িতে তার মালপত্র তুলে নীরবে চলে যায়। পরবর্তি ১০ বছরে আর তার কোন খোঁজ মেলে না।
১০ বছর পর… চতুর রামালিঙ্গমের এক সেক্রেটারির মাধ্যমে খোঁজ মেলে যে র্যাঞ্চো সিমলাতে বসবাস করছে।
তারা তিনজন র্যাঞ্চোর খোঁজে যখন সিমলায় গিয়ে উপস্থিত হয় তখন কাহিনী অন্যদিকে মোড় নেয়। সেখানে গিয়ে জানা যায় এতদিন ধরে তারা যে রাঞ্ছোড় দাস শ্যামল দাস চাঁচর ওরফে র্যাঞ্চোকে চিনতো সে আসলে এক ধনী লোকের মালির ছেলে, যার ছোটবেলায় মা বাবা মারা গিয়েছে। তাকে সবাই “ছোটে” বলে ডাকে। ছোটের মালিকের ছেলের নাম ছিল র্যাঞ্চো; যে পড়াশোনায় মোটেও ভালো ছিল না, অন্যদিকে ছোটে পড়াশোনায় ছিল অত্যন্ত ভালো। ছোটে বড় হলে তার মালিক তার সাথে একটি চুক্তি করেন যে, ছোটে তার ছেলে র্যাঞ্চোর পরিচয় নিয়ে আইসিইতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বে- তার পড়াশোনার সমস্ত খরচ তারা বহন করবেন। ছোটে পাবে শিক্ষা আর তারা পাবেন ডিগ্রী। চুক্তি অনুযায়ী তাই ঘটে। র্যাঞ্চোর পরিচয় নিয়ে পড়াশোনা করা ছোটেকে এই বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করা হয় যে জীবনে কোনদিন আইসিই’র কারো সাথে সে কোন প্রকার যোগাযোগ রাখবে না। ছোটে তখন তাদের বলে, “আমি না কারো সাথে কোনদিন কোন প্রকার যোগাযোগ করবো না, কিন্তু একদিন দুই ইডিয়ট আমার খোঁজে এখানে চলে আসবে, তখন আপনারা তাদের কী বলবেন?”
আসল র্যাঞ্চো ফারহান ও রাজুকে ছোটের ঠিকানা দিয়ে দেয়। ফারহান, রাজু ও চতুর তখন ছোটের খোঁজে আবার বেড়িয়ে পড়ে। পথে ফারহানের মনে পড়ে যায়, র্যাঞ্চোকে (ছোটে) যে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে এই খবর তো পিয়াকে দেয়াই হয় নি। পিয়া তখন পর্যন্ত র্যাঞ্চোকে বিয়ে করার জন্য ১০ বছর ধরে অবিবাহিত হয়ে রয়েছে।
ফারহান র্যাঞ্চোর খবর পিয়াকে জানাতে ফোন করে জানতে পারে পিয়ার সেদিনই বিয়ে। কোন সময় নষ্ট না করে পিয়াকে বুঝানোর জন্য ওরা পিয়ার বাড়িতে গিয়ে হানা দেয়। সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পায় পিয়া সেই “প্রাইসট্যাগ” সুহাসের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চলেছে।
রাজু পিয়াকে বুঝানোর চেষ্টা করে, যেহেতু র্যাঞ্চোকে (ছোটে) খুঁজে পাওয়া গিয়েছে সেহেতু তার সুহাসের মত গাধাকে বিয়ে না করে র্যাঞ্চোকেই বিয়ে করা উচিত। পিয়া বলে, “এভাবে বিয়ের মন্ডব থেকে পালিয়ে গেলে মানুষ হাসবে!”
রাজু তখন রেগে মেগে বলে উঠে,
আরে মানুষ হাসবে বলে তুমি সুইসাইড করবে নাকি? পিয়া শোন, মানুষ কয়েকদিন এটা নিয়ে গসিব করবে এরপর ভুলে যাবে। কিন্তু তুমি যদি আজ এ বিয়ে করো তাহলে সারাজীবন এই বলে আপসোস করবে যে, গাড়ি গেটের সামনে ছিল; আমরা তোমাকে র্যাঞ্চোর কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছিলাম, কিন্তু তুমি শুধুমাত্র মানুষ হাসবে বলে সুহাসের মত একটা গাধাকে বিয়ে করেছিলে।
রাজুর এই কথায় কাজ হয়। পিয়া রাজুর হাত ধরে বিয়ের মন্ডব থেকে পালিয়ে আসে। সিমলায় গিয়ে তারা র্যাঞ্চোর (ছোটে) খোঁজ পায়। র্যাঞ্চোকে দেখে চতুর নানা ভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। কিন্তু পরে তারা সবাই আবিষ্কার করে এই র্যাঞ্চোই সেই বিখ্যাত বিজ্ঞানী ফুনসুক ওয়াংরু। যার নামে ৪০০ পেটেন্টস নিবন্ধিত করা হয়েছে, জাপানীরা যাকে খুঁজছে।
সিনেমাটি শেষ হয় র্যাঞ্চোর সেই উক্তিটির মাধ্যমে...
সফলতার পেছনে না ছুটে যোগ্যতা অর্জন করো, তখন দেখবে সফলতা দৌড়ে তোমার কাছে চলে আসবে
শ্রেষ্ঠাংশে
সম্পাদনা- আমির খান - রাঞ্ছোড় দাস শ্যামল দাস চাঁচর/ছোটে/ফুংসুক ওয়াংডু
- কারিনা কাপুর - পিয়া সাহাস্ত্রবুদ্ধে
- আর মাধবন - ফারহান কুরেশি
- শারমান যোশি - রাজু রাস্তোগি
- বোমান ইরানি - বীরু সহস্ত্রবুদ্ধে
- ওমি বৈদ্য - চাতুর রামালিঙ্গম
- মোনা সিং - মোনা সাহাস্ত্রবুদ্ধে।
- রাহুল কুমার - মনোমোহন/মিলিমিটার
- অলিভিয়ার ল্যাফন্ট - সুহাস টান্ডন
প্রযোজনা
সম্পাদনাবিনোদ চোপড়া ফিল্মস'র প্রযোজনায় এই চলচ্চিত্রের অভিনয় কাজ শুরু হয় ২০০৮ সালের ২৮ জুলাই।
সূত্রপাত
সম্পাদনাহিরানি লেখক চেতন ভগত-এর প্রারম্ভিক লেখা বিখ্যাত উপন্যাস ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান পেয়েছিলেন। স্ক্রিপ্ট সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য চেতন এই উপন্যাসটি দিয়েছিলেন হিরানীকে পড়ার জন্য । উপন্যাসটি দেখে মুগ্ধ হয়ে, তিনি মূল উপন্যাসে পরিবর্তন এনে চিত্রনাট্যটি মানিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং এটি একটি ফিচার ফিল্ম হিসাবে কাজ করেন।
ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান উপন্যাসের দুটি অভিযোজনের মধ্যে 3 ইডিয়টসকে প্রথম বলে ধরা হয় — দ্বিতীয়টি কাই পো চে! (২০১৩), যা ভগতের লেখা দ্য থ্ৰী মিসটেক অফ মাই লাইফ উপন্যাস থেকেও অনুপ্রেরণা নিয়েছিল।
মুন্না ভাই চলচ্চিত্র সিরিজের পর হিরানির সাথে তৃতীয় সহযোগিতায় বিধু বিনোদ চোপড়া প্রযোজনা সংস্থা বিনোদ চোপড়া ফিল্মস (যা আগে বিনোদ চোপড়া প্রোডাকশন নামে) এর অধীনে প্রকল্পটি তৈরি করেছিলেন।
কলাকুশলী
সম্পাদনাচলচিত্রায়ন
সম্পাদনাফুনসুক ওয়াংডু চরিত্রটি লাদাখির উদ্ভাবক সোনম ওয়াংচুকের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছিলেন, যিনি শ্রীনগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক। বরফ স্তুপ-এর আবিষ্কর্তা সোনাম একজন শিক্ষা সংস্কারক ও ছিলেন যিনি লাদাখের ছাত্রদের শিক্ষাগত ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলেন।
সঙ্গীত
সম্পাদনাথ্রি ইডিয়টস | ||||
---|---|---|---|---|
কর্তৃক সাউন্ডট্র্যাক অ্যালবাম | ||||
মুক্তির তারিখ | ২০০৯ | |||
ঘরানা | চলচ্চিত্রের সঙ্গীত | |||
দৈর্ঘ্য | ২৯:২২ | |||
সঙ্গীত প্রকাশনী | টি-সিরিজ | |||
প্রযোজক | শান্তনু মৈত্র | |||
শান্তনু মৈত্র কালক্রম | ||||
|
পেশাদারী মূল্যায়ন | |
---|---|
পর্যালোচনা স্কোর | |
উৎস | মূল্যায়ন |
বলিউড হাঙ্গামা | [৪] |
বিহাইন্ডউডস | [৫] |
রেডিফ | [৬] |
প্লানেট বলিউড | [৭] |
সিনেমাটির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন শান্তনু মৈত্র এবং সঙ্গীত রচনা করেছেন সানান্দ কিরকিরে।
Track listing | |||
---|---|---|---|
নং. | শিরোনাম | Singer(s) | দৈর্ঘ্য |
১. | "আল ইজ ওয়েল" | সনু নিগম, শান, সানান্দ কিরকিরে | ৪:৩৪ |
২. | "জুবি ডুবি" | সনু নিগম, শ্রেয়া ঘোষাল | ৪:০৬ |
৩. | "বেহতি হাওয়া সা থা বো" | শান, শান্তনু মৈত্র | ৪:৫৯ |
৪. | "গিভ মি সাম সানসাইন" | সুরাজ জাগান, শারমান যোশি | ৪:০৫ |
৫. | "জানে নেহি দেঙ্গে তুঝে" | সনু নিগম | ৩:৩০ |
৬. | "জুবি ডুবি" (রিমিক্সড) | সনু নিগম, শ্রেয়া ঘোষাল | ৩:২৭ |
৭. | "আল ইজ ওয়েল" (রিমিক্সড) | সনু নিগম, শান, সানান্দ কিরকিরে, জাইভ সামসুন | ৪:৪১ |
মোট দৈর্ঘ্য: | ২৯:২২ |
মুক্তি
সম্পাদনা
সংবর্ধনা
সম্পাদনা
সমালোচনামূলক প্রতিক্রিয়া
সম্পাদনাপ্রকাশের কয়েকদিন পরেই একটি বিতর্ক তৈরি হয়, তবে চেতনের ক্রেডিট, "চেতন ভগতের ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে" শুরুর ক্রেডিটগুলির পরিবর্তে সমাপনী ক্রেডিটগুলিতে উপস্থিত হয়েছিল। সেই সময়ে, ভগত বলেছিলেন যে তিনি "একটি উদ্বোধনী ক্রেডিট আশা করছিলম[৮] এবং আমি এটি দেখতে না পেয়ে বেশ অবাক হয়েছিলাম। তারা স্বত্ব কিনেছিল, অর্থ প্রদান করেছিল এবং চুক্তিতে একটি ক্রেডিট করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। এটি আছে, কিন্তু এটি সম্পর্কে নয় এটি সেখানে থাকা, এটি স্থান নির্ধারণ এবং বিশিষ্টতা সম্পর্কে।"[৯] ৩১ ডিসেম্বর ২০০৯ সালে তার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে একটি ব্লগ পোস্টে, ভগত বলেছিলেন যে তাকে বলা হয়েছিল যে সিনেমাটি বইটির উপর ভিত্তি করে মাত্র 2-5%, কিন্তু যখন তিনি এটি দেখেন তখন তিনি অনুভব করেন যে এটি বইটির 70%। তিনি আরও যুক্তি দিয়েছিলেন যে ছবিটির নির্মাতারা তাকে বিভ্রান্ত করেছেন, যদিও তিনি উল্লেখ করেছেন যে "এর সাথে জনাব আমির খানের কোন সম্পর্ক নেই […] আমি আমিরের একজন বড় ভক্ত এবং তিনি আমার গল্পটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। তবে, তাকে নির্মাতারা বইটি না পড়তে বলেছিলেন, এবং তিনি করেননি। সুতরাং, তিনি এই বিষয়ে একটি অর্থপূর্ণভাবে মন্তব্য করতে পারবেন না।"
মুক্তি পরবর্তি ব্যবসা
সম্পাদনা
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনামুভিটি ভারতের ৫২টি পুরস্কার লাভ করে। এর মধ্যে রয়েছে ৩ টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (ভারত), ৬টি ফ্লিমপ্লেয়ার পুরস্কার, ১০টি স্টার স্ক্রিন পুরস্কার অন্য ভাষায় পড়ুন,১৬টি আইফা পুরস্কার , ৫টি গ্লাম পুরস্কার, ২টি আপ্সরা পুরস্কার।
বিতর্ক
সম্পাদনাঅন্যভাষায় পুনর্নির্মাণ
সম্পাদনা
পরবর্তি ঘটনাক্রম
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "3 IDIOTS (12A)"। British Board of Film Classification। ১৭ ডিসেম্বর ২০০৯। ৯ মে ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ "'3 Idiots' grosses Rs.125570 crore in opening weekend"। The Economic Times। ২৮ ডিসেম্বর ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৯ এপ্রিল ২০১০।[অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "Top Worldwide Grossers ALL TIME: 37 Films Hit 100 Crore"। Boxofficeindia.com। ২ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২।
- ↑ "3 Idiots : Music Review by Joginder Tuteja"। ১৯ মে ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "3 Idiots Music review"।
- ↑ "3 Idiots: Short 'n' sweet soundtrack"।
- ↑ "3 Idiots"। ১৬ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ আগস্ট ২০১৯।
- ↑ "Interview With Aamir Khan : glamsham.com"। web.archive.org। ২০১০-১১-২৩। Archived from the original on ২০১০-১১-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৪-১২।
- ↑ Sharma, Neha (25 February, 2010)। ""Chetan Bhagat feeling cheated?""। হিন্দুস্তান টাইমস। ১৩ নভেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২৩। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য)
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে থ্রি ইডিয়টস (ইংরেজি)
- বলিউড হাঙ্গামায় থ্রি ইডিয়টস (ইংরেজি)