২০০৮ সালের মুম্বই জঙ্গি হামলা
২০০৮ মুম্বই জঙ্গি হামলা (যা সাধারণত ছাব্বিশে নভেম্বর বা ২৬/১১ নামে পরিচিত) হল পাকিস্তান থেকে জলপথে অনুপ্রবেশকারী[৪] কয়েকজন কুখ্যাত জঙ্গি কর্তৃক[৫][৬] ভারতের বৃহত্তম শহর মুম্বইতে সংঘটিত ১০টিরও বেশি ধারাবাহিক গুলিচালনা ও বোমাবিস্ফোরণের ঘটনা। এই হামলার জন্য যে সব জঙ্গিরা তথ্যসংগ্রহ করত, তারা পরে স্বীকার করেছে যে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিগেন্স (আইএসআই) তাদের মদত জোগাত।[৭][৮] ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত এই হামলা চলে। ঘটনায় ১৬৪ জন নিহত ও কমপক্ষে ৩০৮ জন আহত হন। সারা বিশ্বে এই ঘটনা তীব্রভাবে নিন্দিত হয়।[২][৯]
২০০৮ মুম্বই জঙ্গি হামলা | |
---|---|
স্থান | মুম্বই, মহারাষ্ট্র, ভারত |
তারিখ | ২৬ নভেম্বর ২০০৮ – ২৯ নভেম্বর, ২০০৮ (ভারতীয় প্রমাণ সময়, ইউটিসি +৫:৩০) |
হামলার ধরন | বোমা বিস্ফোরণ, গুলি চালনা, পণবন্দীকরণ[১] |
নিহত | ১৬৪ জন (১০ জঙ্গি সহ)[২] |
আহত | ৩০৮-এরও বেশি[২] |
হামলাকারী দল | লস্কর-ই-তৈয়বা, হাফিজ মহম্মদ সইদের নেতৃত্বে[৩] |
ঘটনাপ্রবাহ
সম্পাদনাসন্ত্রাসীরা করাচি বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। তারা গভীর সাগর পর্যন্ত একই জাহাজে ছিল। এরপর তারা একটি ভারতীয় মাছ ধরার নৌকা ছিনতাই করে এবং মুম্বই উপকূলে এসে এর নাবিককে হত্যা করে।
আটটি হামলা ঘটে দক্ষিণ মুম্বইয়ে। জায়গাগুলি হল ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস, ওবেরয় ট্রাইডেন্ট,[১০] দি তাজ মহল প্যালেস এন্ড টাওয়ার,[১০] লিওপোল্ড ক্যাফে, কামা হাসপাতাল (মহিলা ও শিশুদের হাসপাতাল),[১০] নরিম্যান হাইস ইহুদি কমিউনিটি সেন্টার,[১১] মেট্রো অ্যাডল্যাবস,[১২] এবং টাইমস অফ ইন্ডিয়া ভবন ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের পিছনের একটি গলি।[১০] এছাড়া মুম্বইয়ের বন্দর এলাকার মাজাগাঁও ও ভিলে পার্লের একটি ট্যাক্সির মধ্যেও বিস্ফোরণ ঘটে।[১৩] ২৮ নভেম্বর সকালের মধ্যেই মুম্বই পুলিশ ও অন্যান্য রক্ষীবাহিনী তাজ হোটেল ছাড়া অন্য সব আক্রান্ত স্থান সুরক্ষিত করে ফেলে। ২৯ নভেম্বর ভারতের জাতীয় রক্ষী বাহিনী (এনএসজি) তাজ হোটেলে আশ্রয়গ্রহণকারী অবশিষ্ট জঙ্গিদের হত্যা করে (এই অপারেশনটির নাম ছিল অপারেশন ব্ল্যাক টর্নেডো) শহরকে জঙ্গিমুক্ত করে।[১৪]
হামলা চলাকালীন কূটনৈতিক সম্পর্ক
সম্পাদনাহামলার দিনে ২৬ নভেম্বর ২০০৮ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মোহাম্মদ কোরেশি ভারত সফরে আসেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির আমন্ত্রণে। ওঠেন দিল্লির হায়দরাবাদ ভবনে। পরেরদিন চণ্ডীগড়ে মধ্যাহ্নভোজে তাদের একত্র হবার কথা ছিল। রাতে প্রণব মুখার্জী মুম্বই হামলার খবর পান। প্রণব তার চণ্ডীগড় যাওয়া বাতিল করে দেন। তিনি কোরেশিকে নিজ দেশে ফিরে যেতে পরামর্শ দেন। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একটি বিমান এসে কোরেশিকে নিয়ে যায়।
হামলা পরবর্তী ঘটনা
সম্পাদনাজীবিত অবস্থায় ধৃত একমাত্র জঙ্গি আজমল কাসাব[১৫] জেরার মুখে স্বীকার করে, জঙ্গিরা ছিল পাকিস্তানি সংগঠন লশকর-ই-তাইয়েবার সদস্য। উক্ত সংগঠনটিকে ভারত, পাকিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘ জঙ্গি-সংগঠনের তালিকাভুক্ত করে রেখেছে।[১৬][১৭] ভারত সরকার জানায়, হামলাকারীরা পাকিস্তান থেকে এসেছিল এবং তাদের নিয়ন্ত্রণও করা হয়েছিল পাকিস্তান থেকে।[১৮]
২০০৯ সালের ১লা জানুয়ারি, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিবরাজ পাটিল কে সরিয়ে দেয়া হয়। সোনিয়া গান্ধী প্রণব মুখার্জীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিতে বলেন। শেষপর্যন্ত পালানিয়াপ্পন চিদম্বরম দায়িত্ব নেন।
২০০৯ সালের ৭ জানুয়ারি,[১৯] পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী শেরি রহমান সরকারিভাবে স্বীকার করে নেন যে, আজমল কাসভ পাকিস্তানের নাগরিক।[২০]
২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি, পাকিস্তানের আভ্যন্তরিণ বিষয় মন্ত্রী রহমান মালিক বলেন, হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল পাকিস্তানেই।[২১]
২০১০ সালের ৬ মে, একটি বিশেষ আদালত পাঁচটি অপরাধের জন্য আজমল কাসভকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।
উইকিলিকসেই এই হামলার সঙ্গে আইএসআই-এর যোগসূত্রের কথা উল্লেখ করা হয়।[২২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Magnier, Mark; Sharma, Subhash (২৭ নভেম্বর ২০০৮)। "India terrorist attacks leave at least 101 dead in Mumbai"। Los Angeles Times। পৃষ্ঠা A1। সংগ্রহের তারিখ ২৮ নভেম্বর ২০০৮।
- ↑ ক খ গ "HM announces measures to enhance security" (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)। Press Information Bureau (Government of India)। ১১ ডিসেম্বর ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০০৮।
- ↑ Rahman, Maseeh (২৭ নভেম্বর ২০০৮)। "Mumbai terror attacks: Who could be behind them?"। The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০০৮।
- ↑ Schifrin, Nick (২৫ নভেম্বর ২০০৯)। "Mumbai Terror Attacks: 7 Pakistanis Charged – Action Comes a Year After India's Worst Terrorist Attacks; 166 Die."। ABC News। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১০।
- ↑ Friedman, Thomas (১৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯)। "No Way, No How, Not Here"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মে ২০১০।
- ↑ Indian Muslims hailed for not burying 26/11 attackers, Sify News, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯, ২৩ অক্টোবর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১১
- ↑ Accused in India massacre claims ties to Pakistani secret service The Globe and Mail, Apr. 11, 2011 11:15PM EDT
- ↑ Rana, Headley implicate Pak, ISI in Mumbai attack during ISI chief's visit to US The Times of India, Apr 12, 2011, 12.13pm IST
- ↑ Black, Ian (২৮ নভেম্বর ২০০৮)। "Attacks draw worldwide condemnation"। The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ৫ ডিসেম্বর ২০০৮।
- ↑ ক খ গ ঘ "Wave of Terror Attacks Strikes India's Mumbai, Killing at Least 182"। Fox News। ২৭ নভেম্বর ২০০৮। ৪ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০০৮।
- ↑ Kahn, Jeremy (২ ডিসেম্বর ২০০৮)। "Jews of Mumbai, a Tiny and Eclectic Group, Suddenly Reconsider Their Serene Existence"। New York Times। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০০৮।
- ↑ Magnier, Mark (৩ ডিসেম্বর ২০০৮)। "Mumbai police officers describe nightmare of attack"। Los Angeles Times। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০০৮।
- ↑ "Tracing the terror route"। Indian Express। ১০ ডিসেম্বর ২০০৮। ১৩ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ ডিসেম্বর ২০০৮।
- ↑ "Police declare Mumbai siege over"। BBC। ২৯ নভেম্বর ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৯ নভেম্বর ২০০৮।
- ↑ "Terrorist's name lost in transliteration"। The Hindu। ৬ ডিসেম্বর ২০০৮। ৮ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ ডিসেম্বর ২০০৮।
- ↑ "Lashkar-e-Taiba (Army of the Pure) (aka Lashkar e-Tayyiba, Lashkar e-Toiba; Lashkar-i-Taiba) – Council on Foreign Relations"। Cfr.org। ৫ জুন ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১০।
- ↑ "US and India See Link to Militants in Pakistan"। New York Times। ৩ ডিসেম্বর ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০০৮।
- ↑ Somini Sengupta and Eric Schmitt (৩ ডিসেম্বর ২০০৮)। "Ex-US Official Cites Pakistani Training for India Attackers"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯।
- ↑ "Pakistan Continues to Resist India Pressure on Mumbai"। TIME। ৮ জানুয়ারি ২০০৯। ১৪ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০০৯।
- ↑ "Surviving gunman's identity established as Pakistani"। Dawn। ৭ জানুয়ারি ২০০৯। ২৮ মে ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০০৯।
- ↑ Masood, Salman (১৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯)। "Pakistan Says Mumbai Attack Partly Planned on Its Soil"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯।
- ↑ Burke, Jason (৯ মে ২০১১)। "Pakistan (News),Mumbai terror attacks (News),US news,Terrorism - international,India (News),World news,ISI Inter-Services Intelligence"। The Guardian।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Channel 4 documentary by Dan Reed – 'Terror in Mumbai'
- Video showing the way in which Indian authorities fought back against the attackers. – CNN-IBN (some Hindi, but mostly English).
- Dossier of evidence collected by investigating agencies of India ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ জুন ২০১১ তারিখে
- List of Blogs & Bloggers who were live blogging during the attacks
- If Each Of Us Had A Gun We Could Help Combat Terrorism – Journalist Richard Munday talks about the horrific terrorist attacks in Mumbai, India