হেলেঞ্চা, হিঞ্চা, হিঞ্চে, হিংচা, হাড়হাচ, হেলচী, হিমলোচিকা (সংস্কৃত ভাষায়), তিতির ডগা, তিতির শাক, তিতির ডাটা, তিতা ডাটা এক প্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ। কোথাও হারহস, কোথাও হিংজা আবার কোথাও এলিচি শাক বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Enhydra fluctuans যা Asteraceae পরিবারভুক্ত।[১] এর ইংরেজি নাম Common Enhydra, Buffalo spinach, Helancha ইত্যাদি। এটি কাদা জলে জন্মায়। এর বেশ কিছু ঔষধি গুণ রয়েছে। এটি দেখতে কিছুটা মালঞ্চ শাকের মত হলেও এর পাতার কিনারা খাঁজকাটা এবং স্বাদ খানিকটা তেত। এটি শাক ভাজা এবং ঝোল রান্না করে খাওয়া হয়। ডাল মিশিয়ে বড়া বানিয়েও এটি খাওয়া হয়।

হেলেঞ্চা
Enhydra fluctuans
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Plantae
পর্ব: Magnoliophyta
শ্রেণীবিহীন: Magnoliopsida
বর্গ: Asterales
পরিবার: Asteraceae
গণ: Enhydra
প্রজাতি: E. fluctuans
দ্বিপদী নাম
Enhydra fluctuans
Lour.
হেলেঞ্চা

বর্ণনা সম্পাদনা

ভারতের পূর্বাঞ্চলে ও বাংলাদেশের পুকুর বা এই জাতীয় জলাশয়ের অগভীর জলে বা জলাশয়ের ধারে আর্দ্র ভূমিতে জন্মে। এই গাছগুলো পানিতে ভেসে থাকে। এদের ফুলের রঙ সাদা। কাণ্ডের শীর্ষে গুচ্ছাকারে এর ফুল ফোটে। শীতকালে ফুল ও ফল হয়। বাংলাদেশে এই গাছের পাতা শাক হিসাবে খাওয়া হয়। এই কারণে বাংলাদেশ একে হিংচা শাক বা হেলেঞ্চা শাক বলে। হেলেঞ্চা বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত আনাবাদি শাক হিশেবে খেয়ে থাকে। এটা তিতা-কষা স্বাদ যুক্ত।

আবাস সম্পাদনা

ক্রান্তীয় অঞ্চলের জলাশয়, ডোবা, নর্দমা, পুকুরের ধারে, অগভীর জলে বা ভেজা মাটিতে জন্মায়। পুকুরে জন্মালে পুকুর ভরে যায় হেলেঞ্চায়। এর আদি নিবাস ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ, ব্রাজিল, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা ইত্যাদি। একই ধরনের জলবায়ু আছে এমন অনেক দেশেই এটি দেখা যায়।[২] হেলেঞ্চা গাছ ৩০-৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এদের কান্ডে বহু শাখা থাকে। কান্ডের প্রতিটি গাঁট থেকে শিকড় বের হয়। এর পাতা ২.৫-৭.৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। পত্রফলক বল্লমাকৃতির। পাতার কিনারা সূক্ষ্ম খাঁজকাটা। গাছের শীর্ষে শীতকালে ছোট সাদা গুচ্ছফুল ফোটে।[৩]

উপাদান সম্পাদনা

হেলেঞ্চাতে ২.৯ শতাংশ আমিষ, ০.২ শতাংশ চর্বি, ৫.৫ শতাংশ শর্করা, এবং ২.২ শতাংশ লবণ আছে।[১] এছাড়া এতে ৬৩% ভিটামিন এ, ৭১% ভিটামিন সি এবং ৪১মি.গ্রা. সোডিয়াম, ৩৩০ মি.গ্রা. পটাশিয়াম আছে।

ঔষধি গুণ সম্পাদনা

হেলেঞ্চা ভেষজ চিকিৎসায় কোষ্ঠকাঠিন্য, হাঁপানি, স্নায়ুরোগ, বাতের ব্যাথা, ঘামাচি, হাত-পা জ্বালা ইত্যাদিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।[১] আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেও এর অনেক গুণ পাওয়া গেছে; যেমন- এন্টি অক্সিডেন্ট, জীবাণু নাশক, ব্যথা নাশক, ডায়ারিয়া হ্রাস, স্নায়ু উত্তেজনা প্রশমন ইত্যাদি। আয়ুর্বেদে হেলেঞ্চাকে রক্তশোধক, পিত্তনাশক, ক্ষুধাবর্ধক, ব্যথানাশক, জীবাণুনাশক ও জ্বরনাশক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কবিরাজরা চর্মরোগ নিরাময়ে এই শাক খাওয়ার পরামর্শ দেন। এই শাক নিয়মিত খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে। কোষ্ঠকাঠিন্য, হাঁপানি, ডায়রিয়া ও স্নায়ুরোগের ভেষজ চিকিৎসায় হেলেঞ্চা ব্যবহৃত হয়। দীর্ঘ জ্বরভোগের পর হেলেঞ্চা শাক দিয়ে মাছের ঝোল খেলে ক্ষুধা বাড়ে ও মুখে রুচি ফেরে। চর্ম রোগ, ঘামাচি, অরুচিতে, হাত-পায়ে জ্বলায়, ধবল, ব্রঙ্কাইটিস রোগেও হেলেঞ্চা বেশ উপকারী। হেলেঞ্চা শাকে যথেষ্ট এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় এর ক্যানসার প্রতিরোধী ভূমিকা রয়েছে। মাথার যন্ত্রণায় মাথায় এই শাক বেটে লাগালে যন্ত্রণা কমে। স্নায়ুরোগের ভেষজ চিকিৎসায় হেলেঞ্চা  ব্যবহৃত হয়। হেলেঞ্চা শাক নিয়মিত খেলে ব্লাড সুগার কমে।[৪]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. গগৈ, সুনীল (২০১২)। "ভেষজ গুণসম্পন্ন কেইবিধমান জলজ উদ্ভিদ"। প্ৰান্তিকXXXI (12): ২৬। 
  2. "Helancha(Enhydra fluctuans)"। সংগ্রহের তারিখ October 03, 2012  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  3. Enhydra fluctuans Lour: A Review- http://www.academia.edu/5686298/Enhydra_fluctuans_Lour_A_Review
  4. Enhydra fluctuans Lour: A Review- Md. Ramjan Ali et al. Research J. Pharm. and Tech. 6(9): September 2013 -http://www.academia.edu/5686298/Enhydra_fluctuans_Lour_A_Review