হেমলক সোসাইটি (চলচ্চিত্র)
হেমলক সোসাইটি সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ২২শে জুন, ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি বাংলা ডার্ক কমেডি চলচ্চিত্র। শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস প্রযোজিত এ চলচ্চিত্রে মুখ্য ভূমিকায় আছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কোয়েল মল্লিক সহ আরো অনেকে।[১] চলচ্চিত্রের নাম আমেরিকার সান্তা মনিকায় অবস্থিত একটি হেমলক সোসাইটি থেকে নেয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল আত্মহত্যা করতে ইচ্ছুক মানুষদের আইনি সহায়তা এবং চিকিৎসকদের সাহায্যে আত্মহত্যা থেকে বিরত করার জন্য মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
হেমলক সোসাইটি | |
---|---|
পরিচালক | সৃজিত মুখোপাধ্যায় |
প্রযোজক | শ্রীকান্ত মোহ্তা মাহেন্দ্র সোনী |
রচয়িতা | সৃজিত মুখোপাধ্যায় |
শ্রেষ্ঠাংশে | পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় কোয়েল মল্লিক দীপঙ্কর দে রূপা গঙ্গোপাধ্যায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় |
সুরকার | অনুপম রায় |
চিত্রগ্রাহক | সৌমিক হালদার |
সম্পাদক | |
প্রযোজনা কোম্পানি | |
পরিবেশক | শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস |
মুক্তি |
|
দেশ | ভারত |
ভাষা | বাংলা |
কাহিনী
সম্পাদনাচলচ্চিত্রটি জীবনের আদিম অস্তিত্ব বিষয়ক এক মানসিক উভয়সঙ্কট নিয়ে গড়ে উঠেছে। এখানে বার বার বলা হয় যে 'তুমি একজনকে মৃত্যু আসন্ন এবং অবশ্যম্ভাবী বলে শক দিতে পারো। এটি একটি ডার্ক কমেডি যা সফলভাবে জীবনের সচেতনতাকে জাগিয়ে তোলে। এর হাস্যকর উপাদানগুলো জীবনের প্রতি ভালবাসাকে ছিনিয়ে আনে। মুখ্য চরিত্রে আছেন মেঘনা (কোয়েল মল্লিক) যে তার মার অনুপস্থিতি অনুভব করে, প্রিয় গায়ক সিদ্ধার্থ রায় (শিলাজিৎ মজুমদার) এর গানগুলো গুনগুন করে গায় এবং তার বাবার জীবনে নতুন সৎ-মার আবির্ভাবকে মানতে পারে না। সে তার বাগদত্তা শান্তনু (সাহেব চট্টোপাধ্যায় এর কাছ থেকে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ। সে আত্মহত্যা করার জন্য দোকানে গিয়ে ঘুমের ঔষধ কিনতে যায়। আনন্দ কর (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) তাকে আত্মহত্যা করা থেকে বিরত করে নিজের তৈরি আত্মহত্যা করার টেনিংয়ের সংস্থা, হেমলক সোসাইটিতে নিয়ে যায়। ঐ স্থানের শিক্ষক-শিক্ষিকারা কীভাবে আত্মহত্যা করতে হয় তা শেখায়। বিচিত্র নামের শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাদের নামানুসারে বিভিন্ন কোর্স করায়। মেঘনা ঐ সংস্থায় ক্লাস করতে রাজি হয় এবং বাবা ডঃ বসু (দীপঙ্কর দে)-মা নীহারিকা (রূপা গঙ্গোপাধ্যায়) কে বিদায়-বার্তা পাঠায়। তারা তাদের মেয়েকে খোঁজার চেষ্টা করে কিন্তু পায় না। এদিকে ঐ সোসাইটিতে তিন দিনের কোর্স করেই মেঘনা তার জীবনের প্রতি ভালবাসাকে বুঝতে পারে। আনন্দ তাকে বলে যে প্রকৃতপক্ষে সংস্থাটি মানুষকে জীবনের প্রতি ভালবাসাকে অনুভব করায়। শেষদিনে মেঘনা বলে যে সে আনন্দকে ভালবাসে। তখন আনন্দ জানায় তার 'লিম্ফোসাইটোপেনিয়া' আছে এবং সে আর দুই বছর বাঁচবে। মেঘনা সোসাইটি ত্যাগ করে। ছয়মাস পর মেঘনা ও আনন্দর মধ্যে মিটমাট হয় এবং আনন্দ তার রক্ত-পরিবর্তনের পর বেঁচে যায়। চলচ্চিত্রটি মেঘনার বাগদত্তাকারীর মজার বার্তা দিয়ে শেষ হয় যে সেও মনমরা হয়ে আত্মহত্যা করতে চায় এবং হেমলক সোসাইটিতেই তাকে নেয়া হয়েছে।[১]
অভিনয়ে
সম্পাদনা- মেঘনা সরকার চরিত্রে কোয়েল মল্লিক
- আনন্দ কর চরিত্রে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়
- নীহারিকা বসু (মেঘনার সৎ-মা) চরিত্রে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়
- ডঃ চিত্তরঞ্জন বসু (মেঘনার বাবা) চরিত্রে দীপঙ্কর দে
- মেঘনার মা চরিত্রে রীতা বসু
- সিদ্ধার্থ রায় চরিত্রে শিলাজিৎ মজুমদার
- শান্তনু চরিত্রে সাহেব চট্টোপাধ্যায়
- শ্রেয়া চরিত্রে অনিন্দিতা বসু
- বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী
- কর্নেল সমরেশ বাগচী চরিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (অতিথি চরিত্র)
- ঝুলন গুপ্ত চরিত্রে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় (অতিথি চরিত্র)
- ধমনী ঘোষ চরিত্রে সব্যসাচী চক্রবর্তী (অতিথি চরিত্র)
- দয়াল খাসনবিশ চরিত্রে সৃজিত মুখোপাধ্যায় (অতিথি চরিত্র)
- রক্তিম গাঙ্গুলী চরিত্রে ব্রাত্য বসু (অতিথি চরিত্র)
- ট্রেনলেট বিশ্বাস চরিত্রে বরুন চন্দ (অতিথি চরিত্র)
- সেতু ভেঙ্কটরমণ চরিত্রে রাজ চক্রবর্তী (অতিথি চরিত্র)
- পরিদর্শন/চিহ্নিত ভাষা বর্ণনাকারী চরিত্রে অক্ষয় কাপুর
- শিখা ধর চরিত্রে সুদেষ্ণা রায় (অতিথি চরিত্র)
- মিস সেলা নেউস চরিত্রে সোহাগ সেন (অতিথি চরিত্র)
- হিয়া চরিত্রে প্রিয়াঙ্কা সরকার (অতিথি চরিত্র)
- জিৎ (অতিথি চরিত্র)
- সুরজিৎ সেন (অতিথি চরিত্র)
সংগীত
সম্পাদনাচলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেন অনুপম রায়।
সংগীত তালিকা | |||
---|---|---|---|
নং. | শিরোনাম | কণ্ঠশিল্পী | দৈর্ঘ্য |
১. | "আমার মতে (নারী)" | লোপামুদ্রা মিত্র | ৫:৩০ |
২. | "এখন অনেক রাত" | অনুপম রায় | ৩:৪৬ |
৩. | "এই তো আমি চাই" | শ্রেয়া ঘোষাল ও অনুপম রায় | ৪:৩০ |
৪. | "জল ফড়িং" | শিলাজিৎ মজুমদার | ৩:২৮ |
৫. | "আমার মতে (পুরুষ)" | রূপঙ্কর বাগচী | ৩:৪৪ |
৬. | "ফিরিয়ে দেয়ার গান" | রূপম ইসলাম | ৫:৫২ |
৭. | "হেমলক সোসাইটি গান" | ইন্দ্রজিৎ দাশগুপ্ত'র সুরারোপকৃত | ৩:২৮ |
অভ্যর্থনা
সম্পাদনাচলচ্চিত্রটি সমালোচকদের থেকে প্রশংসা লাভ করে। পরমব্রতর সাথে সাথে কোয়েলের চরিত্রের অভিনয়ের প্রশংসাও করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২১টি পুরস্কার লাভ করে। সৃজিত ও কোয়েল যথাক্রমে পরিচালনা ও অভিনয়ের জন্য শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। পরমব্রত সেরা অভিনেতা হিসেবে আনন্দলোক অ্যাওয়ার্ড লাভ করে এবং অনুপম রায় সেরা গানের (এখন অনেক রাত) জন্য আনন্দলোক অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। লিসেনারস চয়েজ বিভাগে মির্চি মিউজিক অ্যাওয়ার্ড ২০১৩-এ এটি সেরা অ্যালবাম ও সেরা গান (এখন অনেক রাত) -এর পুরস্কার লাভ করে। এছাড়াও রূপঙ্কর বাগচী সেরা পুরুষ প্লেব্যাক পুরস্কার লাভ করে। ১৩তম টেলিসিনে অ্যাওয়ার্ডে পরমব্রত বিশেষ জুরি অ্যাওয়ার্ডে অভিনয়ের ও অনুপম রায় সেরা লিরিসিস্ট পুরস্কার লাভ করে। সৃজন সম্মান ২০১৩-এ এটি সেরা চলচ্চিত্র পোস্টারের পুরস্কার পায়। বেঙ্গল ইয়থ অ্যাওয়ার্ড ২০১৩-এ সৃজিত ও অনুপম যথাক্রমে সেরা পরিচালক ও সেরা সংগীত পরিচালক অ্যাওয়ার্ড লাভ করে। অনুপম ইটিভি সঙ্গীত সম্মান ২০১৩-এ সেরা পুরুষ প্লেব্যাক গায়ক (এখন অনেক রাত গান) বিভাগে পুরস্কার লাভ করে। এটি সম্মানিত বিএফজেএ অ্যাওয়ার্ড, ভারতের প্রাচীনতম পুরস্কারের অনুষ্ঠানে সেরা অভিনেত্রী, সেরা অভিনেতা (জুরির চয়েজ), সেরা পুরুষ প্লেব্যাক, সেরা নারী প্লেব্যাক এবং সেরা শিল্প নির্দেশনার পুরস্কার লাভ করে। এটি সেরা লিরিসিস্ট, পুরুষ প্লেব্যাক ও সেরা অভিনেত্রী বিভাগে পুরস্কার লাভ করে।[২][৩]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "Hemlock is far from a morbid film: Srijit Mukherji"। Times of India। ২৪ মার্চ ২০১২। পৃষ্ঠা 3। ২৬ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মার্চ ২০১২।
- ↑ Dasgupta, Priyanka (২৪ জুন ২০১২)। "Hemlock Society"। The Times of India। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জুন ২০১২।
- ↑ Khatton, Amina (23 Junme 2012)। "Review: Hemlock Society is just right!"। in.com। ২৫ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 26 June 2012। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য)
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে হেমলক সোসাইটি (ইংরেজি)