হেনিয়ো (হান্‌গেউল্: 해녀; বুৎপত্তিগত অর্থ সমুদ্র নারী) কোরিয়ার জেজু দ্বীপে স্বাধীনভাবে কর্মরত নারী ডাইভার। হেনিয়ো নারীরা একইসাথে জেজু দ্বীপে প্রচলিত অর্ধ-মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করে।[১]:

হেনিয়ো
হাঙ্গুল해녀
হাঞ্জা海女
সংশোধিত রোমানীকরণHaenyeo
ম্যাক্কিউন-রাইশাওয়াHaenyŏ
হেনিয়ো
Korea-Ulsan-Haenyeo-01

ইতিহাস সম্পাদনা

জেজুতে ডাইভিংয়ের ঐতিহ্য প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৪৩৪ থেকে প্রাপ্ত।[২]:১০০ মূলত ডাইভিং শুধুমাত্র পুরুষদের পেশা থাকলেও; হাতেগোণা কিছু নারী তখন তাদের স্বামীদের সাথে এই পেশায় জড়িত হয়।[২]:১০১ ঐতিহাসিকভাবে ১৭শ শতকের আগে কোনো নারী ডাইভারের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। ১৭শ শতকের একটি জেজু দ্বীপের ভূগোল নিয়ে রচিত রচনায় প্রথম নারী ডাইভারের কথা বর্ণনা করা হয়। এতে জামনিয়ো উল্লেখ আছে যার শাব্দিক অর্থ "ডাইভিং করে এমন নারী"।[২]:১০১

১৮শ শতকে সাধারণভাবেই নারী ডাইভাররা হেনিয়ো নামে পরিচিতি লাভ করে এবং এই সময়ে নারী ডাইভারের সংখ্যা পুরুষ ডাইভার সংখ্যা ছাড়িয়ে যায়।[৩]: এই সংখ্যা প্রাবল্যতার পেছনে একাধিক ব্যাখ্যা প্রচলিত রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ এক ব্যাখায় দাবী করা হয়, ১৭শ শতকে বহুলসংখ্যক পুরুষ, সাগরে যুদ্ধ অথবা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে।[১]:[৪] অপর একটি ব্যাখ্যায় বলা হয়, নারী দেহের সাবকিউট্যানস ফ্যাটের হার পুরুষ দেহের তুলনায় বেশি। তাই সমুদ্রের ঠাণ্ডা পানিতে নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি মানিয়ে নিতে পারে।[২]:১০১ ১৮শ শতকের কিছু সরকারি কাগজে লক্ষণীয় যে, এই সময়ে সাধারণ মানুষের উপর অপ্রত্যাশিতভাবে খাদ্য হিসেবে গ্রহণযোগ্য শুকনো সামুদ্রিক অ্যাবালোনের জন্য কর আরোপ করা হয়। ফলে অনেক সন্তাসম্ভবা নারীকেও ঠান্ডা পানিতে অর্থোপার্জনের জন্য ডাইভ দিতে হতো।[৪]

যে কারণেই হোক না কেন, দ্রুতই সমুদ্রে ডাইভিং নারী প্রধান পেশা হয়ে পড়ে এবং অনেক হেনিয়ো তাদের পরিবারের পুরুষদের হটিয়ে নিজেরাই প্রধান কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করে।[৩]:[৫][৬]: বিশেষ করে ১৯১০ সালে কোরিয়া জাপানের অধিকারে চলে যাবার পর হেনিয়ো পেশা তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।[৭] এর আগ অব্দি চোসন আমলে হেনিয়োরা সমুদ্র থেকে যা তুলে আনতো তার বেশিরভাগ অংশ সরকারকে দিতে হতো।[৭] জাপানীরা এই নিয়ম রদ করে এবং হেনিয়োরা সমুদ্র থেকে তুলে আনা শিকার বাজারে বিক্রি করে অর্থোপার্জন করতে শুরু করে। এছাড়াও জাপান ও কোরিয়ার ব্যবসায়ীরা হেনিয়োদের বিভিন্ন চুক্তি ভাড়া করতো। ফলে তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটতে থাকে। ইয়নপিয়ং-রি, ইনছনের কাছাকাছি একটি দ্বীপের অনেক হেনিয়ো কাজ করতো। গড়পড়তা একজন হেনিয়োর বেতনেই গোটা পরিবারের ৪০ থেকে ৪৮ শতাংশ ব্যয়ভার চালানো যেতো।[৭] ১৯৬০ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, জেজু দ্বীপের মোট মৎস সংক্রান্ত আর্থিক লেনদেনের অন্তত ৬০ শতাংশ হেনিয়োদের ফসল এবং ৪০ শতাংশ হেনিয়োর স্বামী বেকার ছিল।[২][৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Woman Power Deep Below the Sea"। Business Korea। জানুয়ারি ২০০৩। 
  2. Hong, SK (১৯৬৫)। "Hae-nyo, the diving women of Korea"In: Rahn, H; Yokoyama, T (eds) Physiology of Breath-Hold Diving and the Ama of Japan.। United States: National Academy of Sciences - National Research Council: 99–112। আইএসবিএন 0-309-01341-0। ২০১০-১২-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১০-০৬ 
  3. Lee, Joo-Young; Lee, Hyo Hyun (আগস্ট ১৩, ২০১৪)। "Korean Women Divers 'Haenyeo': Bathing Suits and Acclimatization to Cold"। Journal of the Human-Environment System 
  4. Sang-hun, Choe (২০১৪-০৩-২৯)। "Hardy Divers in Korea Strait, 'Sea Women' Are Dwindling"The New York Timesআইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১১-০৮ 
  5. Choe Sang-Hun (২৯ মার্চ ২০১৪)। "Hardy Divers in Korea Strait, 'Sea Women' Are Dwindling"New York Times। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০১৪ 
  6. Byun, Kyeonghwa; Kang, Eun-Jung (সেপ্টেম্বর ২০১৫)। "Spatial Transformation and Functions of Bulteok as Space for Haenyeo on Jeju Island, Korea"। Journal of Asian Architecture and Building Engineering 
  7. Gwon, Gwi-Sook (২০১৫)। "Changing labor processes of women's work: the haenyo of Jeju Island"। Korean Studiesডিওআই:10.1353/ks.2006.0006 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা