হিশাম ইবনুল আস (মৃত্যু-১৩ হিজরি/৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দ) রাসুল এর একজন প্রখ্যাত সাহাবা ছিলেন। তিনি আমর ইবনুল আসের ছোট ভাই ছিলেন ।তিনি আজানাদাইনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

হিশাম ইবনুল আস
মুহাম্মাদের সাহাবা
জন্মবনী সাহম শাখা, কুরাইশ গোত্র, মক্কা
মৃত্যু৬৩৪ খ্রিস্টাব্দ
আজনাদাইনের প্রান্ত
যার দ্বারা প্রভাবিতমুহাম্মাদ, আবু বকর
পিতামাতা
উল্লেখযোগ্য কাজ
  • আজানাদাইনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ
  • হিরাক্লিয়াসের পত্র বাহক
আত্মীয়আমর ইবনুল আস (বড় ভাই)
হিশাম ইবনুল আস মসজিদ, বেনগাজী, লিবিয়া

নাম ও বংশ পরিচয় সম্পাদনা

হিশাম ইবনুল আস এর মূলনাম নাম হিশাম । ডাকনাম ছিল আবুল আস ও আবু মুতী। ইবন হিব্বান বলেন,ইসলাম পূর্ব যুগে হিশামের ডাকনাম ছিল আবুল আস অর্থাৎ অবাধ্যের পিতা। ইসলাম গ্রহণের পর রাসূল তা পরিবর্তন করে রাখেন আবু মুতী-(অর্থ অনুগতের পিতা)।[১] তার পিতার নাম আল-আস ইবনে ওয়াইলকুরাইশ গোত্রের বনী সাহম শাখার সন্তান। এবং মিসর বিজয়ী প্রখ্যাত সাহাবী আমর ইবনুল আসের ছোট ভাই।

ইসলাম গ্রহণ ও হিজরত সম্পাদনা

তিনি তার বড় ভাই আমর ইবনুল আসের পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেন । ইসলাম প্রাথমিক লগ্নেই ইসলাম গ্রহণ করে হাবশায় হিজরত করেন ।সেখানে কিছুদিন অবস্থানের পর এই মিথ্যা গুজব শুনেন যে,মক্কাবাসীরা ইসলাম কবুল করেছে, তখন অনেকের সাথে তিনিও মক্কায় ফিরে আসেন। মক্কায় প্রবেশ বিপদযুক্ত দেখে তিনি আইয়াশ ইবন রাবীয়া ও উমার ইবনুল খাত্তাবের সঙ্গে থেকে আবার মদীনায় হিজরতের পরিকল্পনা করেন । কিন্তু হিশাম তার পিতা ও বংশীয় লোকদের হাতে বন্দী হন। এবং আইয়াশ ইবনে রাবিয়া পরিবারের চাপে পুনরায় মক্কায় ফিরে যান। ইবন হিশাম বলেন, পরবর্তীতে রাসুল এর নির্দেশে ওয়ালীদ ইবনে ওয়ালীদ ইবনুল মুগীরা, হিশাম ইবনুল আস ও আইয়াশ ইবনে রাবিয়াকে বন্ধী দশা থেকে মুক্তি করে মদিনায় নিয়ে আসেন ।[২]

যুদ্ধে অংশগ্রহন সম্পাদনা

হিশাম ইবনুল আস খন্দক যুদ্ধের পর তিনি মদীনায় আসেন । এজন্য বদর,উহুদ ও খন্দক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি । খন্দকের যুদ্ধের পর ইসলামের সকল যুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। ওয়াকিদী বলেন, মক্কা বিজয়ের পূর্বে রমযান মাসে রাসূলুল্লাহ হিশামকে কোন এক অভিযানে পাঠান।[৩]

আবু বকরের খিলাফতে সম্পাদনা

হিরাক্লিয়াসের দাওয়াত সম্পাদনা

একটি বর্ণনায় জানা যায়, ১ম খলিফা আবু বকর তাকে নাঈম ইবন আবদুল্লাহ ও অন্য কতিপয় ব্যক্তির সাথে রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াসকে ইসলামের দাওয়াত দানের জন্য তার দরবারে পাঠান ।তারা 'গুতা' বা দামেশকে পৌঁছে জাবালা ইবন আয়হাম আল-গাসসানীর বাড়ীতে উপস্থিত হন এবং পরবর্তিতে হিরাক্লিয়াসের সম্রাটের ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন এবং তার সাথে সুদীর্ঘ আলোচনা করেন ।তারা সেখানে ৩ দিন অবস্থান করেছিলেন । বিভিন্ন জীবনী গ্রন্থে এই দাওয়াতী মিশনের বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। [৪][৫]। অবশ্য কোন কোন বর্ণনায় বলা হয়েছে, সম্রাট হিরাক্লিয়াসের দরবারে তাবলীগী মিশন নিয়ে যিনি গিয়েছিলেন তিনি এ হিশাম নন, তিনি অন্য আর এক হিশাম। (‍আল ইসাবা-৩/৭০৪)।[৬]

আজনাদানাইনের যুদ্ধ সম্পাদনা

খলিফা আবু বকরের খিলাফতকালে দু একটি সংঘর্ষের পর রোমানরা আজনাদাইনে বিপুল সৈন্য সমাবেশ করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়। ১৩ হিজরীর জুমাদাল-উলা মাসে সংঘর্ষ শুরু হয়। ওয়াকিদী উল্লেখ করেছেন, এ যুদ্ধে যখন কিছু মুসলিম সৈনিকের মধ্যে পলায়ন শুরু করে তখন হিশাম তাদের ফিরে আসতে উৎসাহিত করে এবং তাদেরকে নিয়ে রোমাদের উপর ঝাপিয়ে পরে ।ফলে রোমানরা পালানোর সময় সম্মিলিতভাবে আক্রমণ করে হিশাম ইবনুল আসকে হত্যা করে এবং তার লাশের ওপর দিয়ে পালিয়ে যায়।[৩] তবে ইবনুল মুবারকের মতে তিনি খলিফা ‍উমারের যুগে ইয়ারমুক যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। রাসূল তাদের দুই ভাই (হিশাম ইবনুল আস ও আমর ইবনুল আস) এর ঈমানী দৃঢ়তার সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। রাসুল বলেছেনঃ আসের দুই পুত্র হিশাম ও আমর মুমিন।

মৃত্যু সম্পাদনা

হিশাম ইবনুল আস ১৩ হিজরি/৬৩৪ খ্রিষ্টাব্দে আজনাদাইনের যুদ্ধেমৃত্যুবরণ করেন । তবে কোন বর্ণনামতে ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ইয়ারমুকের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন ।[৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. আল ইসাবা - (২/৬০৪) 
  2. সীরাতু ইবন হিশাম - (১/৪৭৬) 
  3. আল ইসাবা - (৩/৬০৪) 
  4. আল ইসাবা - (২/ ৪৭১) 
  5. হায়াতুস সাহাবা - (১/২০৪, ৪০৫, ৩/৫৫৭-৫৬২) 
  6. আল ইসতীয়াব, টীকা আল ইসাবা - (৩/৫৯৩-৫৯৫)