হিমানীশ গোস্বামী
১৯২৬ সালে বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুরের অন্তর্গত রতনদিয়া গ্রামে লেখক ও ব্যঙ্গচিত্রশিল্পী হিমানাশ গোস্বামী জন্মগ্রহণ করেন। পিতা পরিমল গোস্বামী ছিলেন স্বনামধন্য লেখক, পত্রিকার সম্পাদক এবং চিত্রগ্রাহক। হিমানীশ গোস্বামীর দাদু যতীন্দ্রনাথ বাগচী এবং মামা জ্ঞানেন্দ্রনাথ বাগচী বহু পত্রপত্রিকায় লিখতেন। দুই পরিবারের সাহিত্যের বাতাবরণে তাঁর শিল্পীমন বিকাশ লাভ করে। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁরা সপরিবারে কলকাতায় চলে আসেন। হিমানীশ গোস্বামী ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হন।
হিমানীশ গোস্বামী | |
---|---|
জন্ম | ১৮ মার্চ ১৯২৬ কালিকাপুর, ফরিদপুর, বৃটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ) |
মৃত্যু | ১৪ মার্চ ২০১২ (বয়স ৮৬) |
মাতৃশিক্ষায়তন | বিদ্যাসাগর কলেজ |
পেশা | লেখক, সাংবাদিক ও ব্যঙ্গচিত্রী |
দাম্পত্য সঙ্গী | এনাক্ষী গোস্বামী |
পিতা-মাতা | পরিমলগোস্বামী (পিতা) জ্যোৎস্না দেবী (মাতা ) |
আনন্দবাজার পত্রিকায় নিযুক্ত হওয়ার আগে হিমানীশ গোস্বামী বহুবিচিত্র জীবিকার সূত্রে নানান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৮৬ এই চোদ্দো বছর তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। কিন্তু লাহিড়ী ও বাঘা কাকা, গোয়েন্দা দে ও গোয়েন্দা দা, জিব্রাম, তিতুল মামা, মহারাজা সিং প্রভৃতি গ্রন্থে তাঁর হাস্যরসসৃষ্টির অনবদ্য সাক্ষ্য ছড়িয়ে রয়েছে। দীর্ঘ রোগভোগের পর ২০১২ সালের ১৪ মার্চ তিনি পরলোক গমন করেন। আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬</ref> হিমানীশ গোস্বামীর লেখা বহু গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে আনন্দনগরী ও অন্যান্য দুঃখের কাহিনী, আমার রামায়ণ, এক যে ছিল ভোঁদড়, কলকাতার শয়তান, কিছু ভূতুড়ে কিছু অদ্ভুতুড়ে, তেঁতুলমামার কান্ডকারখানা, দাবা কেমন করে খেলতে হয়, বুনো হাঁসের সন্ধানে, ভীষণ বিপদ, ভুবনচোরা কালো প্যাঁচা, মজার খেলা দাবা, শক্তির সঙ্গে ঝোলাঝুলি, হারিয়ে যাওয়া ঘোড়ার গাড়ী, সব গল্পই চালিয়াতের, সব গল্পই চোরের, সব গল্পই ভূতের, হাসতে হাসতে প্রভৃতি।
অপদার্থ তাঁর সম্পাদিত একটি গ্রন্থ।
এ ছাড়াও বাংলার শেষ ডিটেকটিভ, বড়ো গোঁসাইয়ের বন্ধুবান্ধব, জীবনের গল্প, কিছু ভূতুড়ে কিছু অদ্ভুতুড়ে, কিট্টু লাহিড়ীর তিন কীর্তি, লন্ডনের পাড়ায় পাড়ায়, লন্ডনের হালচাল, মহারাজা সিং-দি গ্রেট, সব গল্পই মজার, সব গল্পই জীবজন্তুর ইত্যাদি তাঁর লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই।
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবনসম্পাদনা
হিমানীশ গোস্বামীর জন্ম বৃটিশ ভারতের তৎকালীন বাংলার বর্তমানে বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার কালিকাপুরে মামার বাড়িতে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ই মার্চ । তাঁদের আদি বাড়ি ছিল ফরিদপুরেরই রতনদিয়া। পিতা পরিমল গোস্বামী ছিলেন জনপ্রিয় বাঙালি সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিত্রগ্রাহক । তার মাতা জ্যোৎস্না দেবী। দাদামশাই ছিলেন বাঙালি কবি যতীন্দ্রনাথ বাগচী ও কাকা জ্ঞানেন্দ্রনাথ বাগচী বিভিন্ন পত্র পত্রিকার প্রাবন্ধিক ছিলেন। সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তিনি বড় হয়ে ওঠেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে হিমানীশ পিতার সঙ্গে কলকাতার সিঁথির বাড়ীতে চলে আসেন। এখানে রাণী ভবানী স্কুলে তার বাল্যশিক্ষা শুরু। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে ম্যাট্রিক পাশ করেন । কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে বিলেত যান কার্টুন আঁকা শিখতে। সেখানে থাকেন ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাস পর্যন্ত ।
কর্মজীবনসম্পাদনা
বিলেতে কার্টুন শিক্ষা শেষ করে বেশ কয়েকটি প্রকাশন সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেন। বিখ্যাত বিদেশি প্রকাশন সংস্থা ম্যাকগ্রহিলে তিনি ছিলেন বেশ কয়েক বছর । পরে যোগ দেন আনন্দবাজার পত্রিকায় (১৯৭২-৮৬)। শরৎচন্দ্র পণ্ডিত (দাদাঠাকুর) ও শিবরাম চক্রবর্তী দ্বারা প্রভাবিত হিমানীশের লেখায় ছিল অনায়াস লঘু-পরিহাস । কথার 'পান' (Pun) আর নতুন শব্দ তৈরিতে তার জুড়ি মেলা ভার । সেই সঙ্গে তীক্ষ্ণ-রসসমালোচনায় বিদ্ধ করতেন রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে জনপ্রিয় সাহিত্যিকের রচনাকেও । হিমানীশের কথায়-
"বাবা বিশিষ্ট লেখক-সাংবাদিক হওয়ায় আমাদের বাড়িতে বহুগুণীমানুষের সমাগম হত। খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম দাদাঠাকুরকে, শব্দ নিয়ে 'পান' করার অমন মানুষ বিরল। শিবরাম চক্রবর্তীকে কাছ থেকে দেখেছি - উল্লসিত হয়ে উঠেছি তার শব্দের খেলায়।"
ছাত্রাবস্থায় তার লেখা প্রকাশিত হত 'সচিত্র ভারত' পত্রিকায় । আর কলেজে পড়ার সময় থেকেই নিয়মিত লেখালেখির কাজ শুরু । ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে এশিয়াটিক সোসাইটির প্রকাশনা উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। তার প্রথম প্রকাশিত বই টি ছিল ডেল কার্নেগির ইংরাজী গ্রন্থে এর বাংলা অনুবাদ । বিলেতে থাকাকালীন অভিজ্ঞতা নিয়ে তার লেখা 'লণ্ডনের পাড়ায়' , 'বিলিতি বিচিত্রা', 'লণ্ডনের আড্ডায়'৷ তার বিলেত-বাসের কাহিনীগুলি আজকাল থেকে প্রকাশিত হয়েছে দুই খণ্ডে 'লণ্ডন সমগ্র' । ছোটদের কাছেও তিনি ছিলেন প্রিয় লেখক। আর তার লেখার সঙ্গে জড়িয়ে থাকত তারই আঁকা কার্টুনধর্মী ছবিগুলি। শিশু সাহিত্যে সর্বভারতীয় সম্মান ছাড়াও ২০০১ খ্রিস্টাব্দে পেয়েছিলেন 'প্রাচ্য কলাকেন্দ্র পুরস্কার'।
গ্রন্থাবলিসম্পাদনা
হিমানীশ গোস্বামী র গ্রন্থ সংখ্যা শতাধিক । তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল -
- ভাজা মাছ
- আমার রামায়ণ
- কিট্টু লাহিড়ীর তিন কীর্তি (আনন্দ পাবলিশার্স)
- বড় গোঁসাইয়ের বন্ধু-বান্ধব (আনন্দ পাবলিশার্স)
- বুনো হাঁসের সন্ধানে ( আনন্দ পাবলিশার্স)
- মজার খেলা দাবা (আনন্দ পাবলিশার্স)
- কলকাতার শয়তান (দে'জ পাবলিশিং)
- আনন্দনগরী ও অন্যান্য দুঃখের কাহিনী
- ভুবনচরার কালোপ্যাঁচা (দে'জ পাবলিশিং)
- বাংলাবন্ধ
- শেষের শুরু
- হাসতে হাসতে (পুনশ্চ)
- পরচর্চা
- ভীষন বিপদ (আনন্দ পাবলিশার্স)
- তেঁতুলমামার আজব কাণ্ডকারখানা(প্রতিক্ষণ)
- কিছু ভূতের কিছু অদ্ভুতের
- হারিয়ে যাওয়া ঘোড়ার গাড়ি (করুণা প্রকাশনী)
- অপদার্থ (প্রতিক্ষণ)
- জীব্রামের গল্প (লাল মাটি)
- অভিধানাই-পানাই (সাহিত্য সংসদ)
মৃত্যুসম্পাদনা
প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘরোগভোগের পর হিমানীশ গোস্বামী ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ই মার্চ কলকাতার এক নার্সিং হোমে ৮৬ বৎসর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।