হাসিব আহসান ( ১৫ জুলাই, ১৯৩৯ - ৮ মার্চ, ২০১৩) একজন পাকিস্তানি ক্রিকেটার যিনি ১৯৫৮ থেকে ১৯৬২ সালের মধ্যে পাকিস্তানের হয়ে মোট ১২ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। তিনি পেশোয়ার, পাকতুনখাওয়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন ডানহাতি অফ স্পিনার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৪৯.২৫ গড়ে ২৭ টি উইকেট সংগ্রহ করেন; যার মধ্যে ২ বার ৫ টি উইকেট শিকার করেন। প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে তিনি ৪৯ ম্যাচে ২৭.৭১ গড়ে ১৪২ টি উইকেট শিকার করেন।[১] সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার ওয়াকার হাসান তার সম্পর্কে বলেন, "পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য সে সম্মান ও যথার্থ মর্যাদার সাথে কাজ করে গেছেন এবং সে ছিল কেন্দ্রস্থলের যোদ্ধা।"[২]

হাসিব আহসান
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামহাসিব আহসান
জন্ম(১৯৩৯-০৭-১৫)১৫ জুলাই ১৯৩৯
পেশোয়ার, পাকিস্তান
মৃত্যু৮ মার্চ ২০১৩(2013-03-08) (বয়স ৭৩)
করাচি, পাকিস্তান
ব্যাটিংয়ের ধরনডান হাতি
বোলিংয়ের ধরনডান হাতি অফ স্পিন
ভূমিকাবোলার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ২৫)
১৭ জানুয়ারি ১৯৫৮ বনাম ওয়েস্টইন্ডিজ
শেষ টেস্ট২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬২ বনাম ইংল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট প্রথম শ্রেণী
ম্যাচ সংখ্যা ১২ ৪৯
রানের সংখ্যা ৬১ ২৪২
ব্যাটিং গড় ৬.৭৭ ৫.৬২
১০০/৫০ ০/০ ০/০
সর্বোচ্চ রান ১৪ ৩৬
বল করেছে ২৮৩৫ ৮২৪৪
উইকেট ২৭ ১৪২
বোলিং গড় ৪৯.২৫ ২৭.৭১
ইনিংসে ৫ উইকেট ১৩
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৬/২০২ ৮/২৩
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ১/০ ৯/০
উৎস: ESPNcricinfo, ১২ ডিসেম্বর ২০১৫

আহসানের সাথে সাবেক পাকিস্তানি অধিনায়ক জাভেদ বুরকি এর বিবাদ ছিল। মাত্র ২৩ বছর বয়সে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে বিতর্কের কারণে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের অকালে সমাপ্তি ঘটে। তিনি পাকিস্তান ক্রিকেট দলের প্রধান নির্বাচক, ম্যানেজার ও ১৯৮৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপ এর সাংগঠনিক দলের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন। ৮ মার্চ, ২০১৩ তারিখে ৭৩ বছর বয়সে করাচিতে তিনি মৃত্যুবরণ করে।

ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ার সম্পাদনা

 
এই নেহেরু স্টেডিয়াম মাঠে আহসান ব্যক্তিগত সেরা অর্জন পান

আহসান ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৩ সালের মধ্যে পাকিস্তান, করাচি, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পি আই এ), রাওয়ালপিন্ডি, পেশোয়ার এবং অন্যান্য দলের হয়ে ৪৯ টি প্রথম শ্রেনির ম্যাচ খেলেছেন।[৩] প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে তিনি এক ইনিংসে ৫ কিংবা তার বেশি উইকেট ১৩ বার এবং ওক ম্যাচে ১০ কিংবা তার বেশি উইকেট ২ বার নেয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন।

আহসান নর্থ ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার প্রদেশ ও ভাওয়ালপুর এর হয়ে প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে অভিষেক করেন। ১৯৫৫-৫৬ মৌসুমে মেরিলিবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে খেলা তার অভিষেক ম্যাচটি ঐ মৌসুমে তার একমাত্র ম্যাচ ছিল।[৪] ১৯৫৬-৫৭ মৌসুমে তিনি পেশোয়ারের হয়ে ৩ টি ম্যাচ খেলেন এবং পাঞ্জাব বি দলের সাথে ৭৬ রানে ৮ উইকেট নেয়া বোলিং ফিগার মৌসুম সেরা ছিল।[৫][৬] পরের মৌসুমে ৯ ম্যাচে ৪৩ উইকেট নিয়ে তিনি বল হাতে আরো কার্যকর হয়ে ওঠেন। ঐ একই মৌসুমে পাঞ্জাব বি দলের সাথে তিনি ২৩ রান খরচে ৮ উইকেট পান; প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে এটি তার ব্যক্তিগত সেরা অর্জন।[৭] ঐ মৌসুম চলাকালে কেনসিংটন ওভালে ওয়েস্টইন্ডিজ এর বিপক্ষে তার টেস্ট ম্যাচ অভিষেক হয়। ঐ ম্যাচে হানিফ মোহাম্মদ ৩৩৭ রান করেন। ১৯৫৮ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া ঐ সিরিজের প্রথম ম্যাচে তিনি উইকেটশূন্য থেকে ২১ ওভার বল করে ৮৪ রান দেন।[৮][৯] সিরিজের ৩ টি ম্যাচ খেলে তিনি ৫ টি উইকেট সংগ্রহ করেন।[১০]

আহসান পরের দুই মৌসুমে মাত্র ১৪ টি উইকেট শিকার করেন এবং ৫১ রানে ৫ উইকেট ছিল এই দুই মৌসুমের তার সেরা অর্জন। ১৯৬০-৬১ সালে ভারত সফরে যাওয়া পাকিস্তান দলের সাথে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। সেখানে তিনি ৫ টি টেস্ট ম্যাচ সহ মোট ৯ টি ম্যাচ খেলেন এবং ২৮.৭৫ গড়ে ২৪ টি উইকেট শিকার করেন। ১৯৬০-৬১ মৌসুমে তিনি ২৬ টি উইকেট শিকার করেন যার মধ্যে ওয়েস্ট জোনের সাথে খেলা ম্যাচে তিনি ৮০ রানে ৬ উইকেট শিকার করেন। টেস্টে ৩২.৬৬ গড়ে ১৫ উইকেট নিয়ে তিনি ভারতের বিপক্ষে সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন।[১১] নেহেরু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে তিনি ২০২ রানে ৬ উইকেট নেন; যা তার ব্যক্তিগত সেরা অর্জন।

১৯৬১-৬২ ও ১৯৬২ মৌসুমে আহসান ১০ ম্যাচে ২৮ উইকেট নেন, যার মধ্যে ওরসেস্টারশায়ার এর বিপক্ষে তিনি ৫ উইকেটে শিকার করেন। পরের ২ ঘরোয়া মৌসুমে তিনি ৮ টি ম্যাচ খেলে ১২ টি উইকেট নেন, যার মধ্যে আইয়ুব ট্রফিতে পিআইএ এর হয়ে সারগোদা ক্রিকেট টিমের বিপক্ষে খেলা ম্যাচে তিনি ৪৩ রানে ৫ উইকেট নেন। করাচিতে অবস্থিত জাতীয় স্টেডিয়ামে তিনি তার বিদায়ী টেস্ট খেলেন; যেখানে তিনি ৬৪ রান দিয়ে ২ উইকেট পান।

আহসান তার গোটা ক্যারিয়ারে ১২ টেস্টে ৫০ এর কাছাকাছি গড়ে ২৭ টি উইকেট পান। এর মধ্যে তিনি ২ বার ৫ উইকেট শিকার করেন। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৪ রানের সাহায্যে তিনি মোট ৬১ রান করেন।

প্রসাশনিক কর্মজীবন সম্পাদনা

১৯৮০ সালে আহসান পাকিস্তান ক্রিকেট দলের প্রধান নির্বাচকম্যানেজার ছিলেন। তিনি সর্বপ্রথম ১৯৯৮৪-৮৫ সালে ওয়াসিম আকরামকে নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য মনোনীত করেন। আকরাম তার সম্পর্কে বর্ণনা দেন, "একজন শক্তিশালী নির্বাচক, যিনি তরুণ দের সুযোগ দেন এবং তাদের বড় লড়াই-এ প্রেরণ করেন।[১২][১৩] তিনি ১৯৮৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপ এর ট্যাকনিকেল কমিটির চেয়ারম্যান এবং সাংগঠনিক দলের সদস্য ছিলেন। ঐ বিশ্বকাপে তিনি পাকিস্তান ক্রিকেট দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ড এর তৌকির জিয়া ২০০৩ সালে তাকে সিন্ধু ক্রিকেট এসোসিয়েশন এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত করেন। তিনি আয়ারল্যান্ডের অবৈর্তনিক সাধারণ পরামর্শক এবং আমেরিকা এক্সপ্রেস করাচি এর পরিচালক ছিলেন।[১৪] পিসিবি চেয়ারম্যান যাকা আশরাফ আহসান সম্পর্কে বলেন, "সে শুধু একজন ভালো টেস্ট খেলোয়াড়-ই নয়, একজন ভালো প্রশাশক ছিলেন এবং খেলাটিকে সে অন্ত্যন্ত ভালো ভাবে বুঝতো।" শোয়েব আকতার ও মোহাম্মদ আসিফ এর উপর ওঠা ডোপিং ব্যানের বিরোধীতার আপিল শোনানির কমিটির তিনি সদস্য ছিলেন।[১৫] তার সহকর্মীরা তাকে 'নিঁখুত প্রশাশক' আখ্যা দিয়ে থাকেন।[১৬]

ব্যক্তিগত জীবন ও বিবাদ সম্পাদনা

আহসান ১৫ জুলাইস ১৯৩৯ সালে পেশোয়ার, নর্থ ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার প্রদেশ ( বর্তমান খাইবার পাকতুনখাওয়া) শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন উর্দুভাষী[১৭] তিনি ইসলামিয়া কলেজ, পেশোয়ার থেকে শিক্ষা লাভ করেন।[১৮] তিনি কখনোই বিবাহ করেন নি। সাবেক পাকিস্তানি খেলোয়াড়, আফতাব বালোক বলেছেন যে, "আহসান বেশ ভদ্রলোক ছিলেন।" সাবেক পাকিস্তান অধিনায়ক জাভেদ বুরকির সাথে তার দ্বন্দ্ব ছিল। ভারতেরে বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ চলাকালে তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে বিতর্ক ওঠে। ১৯৬২ সালে পাকিস্তানের ইংল্যান্ড সফরে বিষয়টি আবার না ওঠা পর্যন্ত তিনি বোলিং চালিয়ে যান; এই বিতর্কের কারণে মাত্র ২৩ বছর বয়সে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়।

মৃত্যু সম্পাদনা

আহসান ২ বছর যাবত মূত্রাশয় ঘটিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন। তার ডায়ালাইসিস ছিল এবং তিনি করাচির আগা খান হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। করাচি সিটি ক্রিকেট এসোসিয়েশন (কেসিসিএ) এর প্রেসিডেন্ট সিরাজুল ইসলাম বুখারি তার অসুস্থতা সম্পর্কে বলেন, "সে সাহসের সাথে অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়েছে।" ৭৩ বছর বয়সে, ৮ মার্চ ২০১৩ সালে তিনি করাচিতে মৃত্যুবরণ করেন। পিইসিএইচএস গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। পিসিবি চেয়ারম্যান, পরিচালনা পর্ষদের প্রধান অফিসার সুবহান আহমেদ এবং সাধারণ পরিচালক জাভেদ মিয়াদাদ তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।[১৯] পাঞ্জাবের প্রধানমন্ত্রি শাহবাজ আশরাফ তার মৃত্যুতে গভীর শোক, দুঃখ এবং সহানুভূতি প্রকাশ করেন।[২০]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Oops… Looks like something went wrong! This page does not exist or has been moved."। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  2. url=http://dawn.com/2013/03/09/former-test-cricketer-haseeb-ahsan-dies/
  3. "The Home of CricketArchive"। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  4. "The Home of CricketArchive"। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  5. "The Home of CricketArchive"। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  6. "The Home of CricketArchive"। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  7. "The Home of CricketArchive"। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  8. "1st Test: West Indies v Pakistan at Bridgetown, Jan 17-23, 1958 - Cricket Scorecard - ESPN Cricinfo"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  9. http://dawn.com/2013/03/08/former-cricketer-and-respected-administrator-haseeb-ahsan-dies
  10. "Cricket Records - Records - Pakistan in West Indies Test Series, 1957/58 - Most wickets - ESPN Cricinfo"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  11. "The Home of CricketArchive"। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  12. "Former offspinner Haseeb Ahsan dies aged 73 - Cricket - ESPN Cricinfo"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  13. http://www.dailytimes.com.pk/default.asp?page=2013\03\09\story_9-3-2013_pg2_2
  14. "PCB announces provincial office bearers"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  15. "New panel to hear doping appeal"Cricinfo। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  16. url=http://www.espncricinfo.com/magazine/content/story/624201.html
  17. "Transitions: Former chief selector Haseeb Ahsan dies"The Express Tribune। ৮ মার্চ ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  18. http://dawn.com/2013/03/10/haseeb-ahsan-a-man-of-conviction-and-self-belief/
  19. "PCB condoles the death of Haseeb Ahsan"। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  20. "The Lahore Times - Lahore, Pakistan News"The Lahore Times। ১১ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫ 

বহিরাগত সংযোগ সম্পাদনা