হার্টফোর্ড, কানেটিকাট

হার্টফোর্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাট অঙ্গরাজ্যের রাজধানী। কানেটিকাট ১৯৬০ সালে কাউন্টি সরকার বিলুপ্ত করার আগে এটি হার্টফোর্ড কাউন্টির সদর দপ্তর ছিল। ২০১০ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, জনসংখ্যায় হার্টফোর্ড কানেটিকাটের চতুর্থ বৃহত্তম শহর। [১] এটি গ্রেটার হার্টফোর্ড মেট্রোপলিটন এলাকার প্রধান শহর।

হার্টফোর্ড ১৬৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম শহরগুলোর একটি। এখানে সরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম শিল্প জাদুঘর (ওয়াডসওয়ার্থ অ্যাথেনেয়াম), সরকারি অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত প্রথম পার্ক(বুশেল পার্ক), যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম পত্রিকা যেটি আজও প্রকাশিত হচ্ছে (হার্টফোর্ড কুর‍্যান্ট) এবং দ্বিতীয় প্রাচীনতম মাধ্যমিক বিদ্যালয় (হার্টফোর্ড সরকারি উচ্চবিদ্যালয়) অবস্থিত। বিখ্যাত রম্যলেখক মার্ক টোয়েন এখানেই বসবাস করতেন। তিনি ১৮৬৮ সালে এ শহর সম্পর্কে লিখেছেন- "আমার যতগুলো সুন্দর শহর দেখার সৌভাগ্য হয়েছে, তার মধ্যে এটিই শ্রেষ্ঠ।"

আমেরিকান গৃহযুদ্ধের পরের কয়েক দশক হার্টফোর্ড যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী শহর ছিল। [২] কিন্তু বর্তমানে হার্টফোর্ড যুক্তরাষ্ট্রের দরিদ্রতম শহরগুলোর একটি। এর প্রতি ১০টি পরিবারের ৩টিই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। একাই সময়ে গ্রেটার হার্টফোর্ড মেট্রোপলিটন এলাকা অর্থনৈতিক উৎপাদন বিবেচনায় ৩১৮-টি এলাকার মধ্যে ৩২তম ও মাথাপিছু আয় বিবেচনায় ২৮০টি মেট্রোপলিটন পরিসংখ্যানগত এলাকার মধ্যে ৮ম।[৩]

হার্টফোর্ড বিশ্বের বীমা রাজধানী হিসেবে পরিচিত। এখানে অনেকগুলো বীমা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় অবস্থিত। [৪]

ইতিহাস সম্পাদনা

আলগনকুইন আদিবাসীদের বেশ কিছু গোত্রের মানুষ হার্টফোর্ড শহরে বসবাস করত। এরা হলো- পদুংকস, মাসাকোয়ে,টাংক্সিস, ওয়াংগুক ও সাউকিয়োগ।

১৬১৪ সালে আদ্রিয়েন ব্লকের নেতৃত্বে ডাচরা সর্বপ্রথম কানেটিকাট বন্দরে এসে পৌঁছে। ১৬২৩ সালে নিউ আমস্টারডাম থেকে ডাচরা পশম বিক্রয়কেন্দ্র ও ডাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোম্পানির জন্য সুরক্ষিত জায়গার সন্ধানে হার্টফোর্ড আগমন করে। পার্ক নদীর দক্ষিণ তীরে চার্টার ওক এলাকায় তারা হোপ দুর্গ নির্মাণ করে। ১৬৩৩ সালে জ্যকব ভ্যান কার্লার পেকুয়েট গোত্রপ্রধানের কাছ থেকে হোপ দুর্গের নিকটস্থ ভূমি ক্রয় করেন। ১৬৫৪ সালে দুর্গটি পরিত্যক্ত হয়। দুর্গসংলগ্ন এলাকা "ডাচ পয়েন্ট"নামে পরিচিত। [৫][৬]

ক্রমান্বয়ে হার্টফোর্ড শহরে ইংরেজদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ডাচরা শুরুতে এ বিষয়টি লক্ষ্য করেনি। একসময় হার্টফোর্ডে ইংরেজদের সংখ্যা ডাচদের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। ১৬৫০ সালে পিটার স্টুভেস্যান্ট ইংরেজ ও ডাচদের মধ্যে সীমানা নির্ধারণে ভূমিকা রাখেন। আদি বসতির ৫০ মাইল পশ্চিমে সীমান্তরেখার অবস্থান ছিল।

ইংরেজরা ১৬৩৬ সালে এখানে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। সংস্কারপন্থী যাজক টমাস হুকার ও স্যামুয়েল স্টোন গভর্নর জন হ্যানেস এর নেতৃত্বে ম্যাসাচুসেটস বে উপনিবেশের নিউটাউন থেকে এখানে আগমন করেন ও হোপ দুর্গের উত্তরে বসতি স্থাপন করেন। বসতির নাম শুরুতে ছিল নিউটাউন। ১৬৩৭ সালে স্টোনের জন্মভূমি ইংল্যান্ডের হার্টফোর্ড শহরের নামানুসারে শহরটির নাম হয় "হার্টফোর্ড।" [৭]

ভূগোল সম্পাদনা

হার্টফোর্ড শহরের আয়তন ১৮.০ বর্গমাইল। এর ১৭.৩ বর্গমাইল স্থল ও ০.৭ বর্গমাইল জল। [৮]

হার্টফোর্ড শহর কতগুলো শহর দ্বারা পরিবেষ্টিত। এগুলো হলো- ওয়েস্ট হার্টফোর্ড, নিউইংটন, ওয়েদার্সফিল্ড, ইস্ট হার্টফোর্ড,ব্লুমফিল্ড, সাউথ উইন্ডসর, গ্লাস্টনবুরি ও উইন্ডসর। শহরের পূর্বে কানেটিকাট নদী অবস্থিত।[৯]

জলবায়ু সম্পাদনা

হার্টফোর্ডের জলবায়ু আর্দ্র মহাদেশীয় ধরনের। মে থেকে অক্টোবর মাসে হার্টফোর্ডে উষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করে। জুন,জুলাই ও আগস্ট মাসে এর তাপমাত্রা বেশি থাকে। নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাসে শীতল আবহাওয়া বিদ্যমান।

বছরে গড়ে ৪৫.৯ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়। [১০] হার্টফোর্ডে প্রতি শীতে গড়ে ৪৪.৫ ইঞ্চি তুষারপাত হয়। এখানে বেশ কিছু ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় সংঘটিত হয়েছে। এগুলো হলো- ১৯৩৮ সালের নিউ ইংল্যান্ড ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় ও ২০১১ সালের আইরিন ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়।

জনমিতি সম্পাদনা

২০১০ এর আদমশুমারি অনুযায়ী, হার্টফোর্ডের জনসংখ্যা ১,২৪,৭৭৫। এখানে ২৭,১৭১টি পরিবার বসবাস করে। শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২,৭১১.৮ জন।

বাসিন্দাদের ২৯.৮% শ্বেতাঙ্গ, ৩৮.৭% আফ্রিকান আমেরিকান বা কৃষ্ণাঙ্গ, ০.৬% আদিবাসী আমেরিকান। বাসিন্দাদের ৪৩.৪% হিস্পানিক অথবা লাতিনো।

পরিবারগুলোর গড় আয় ২২,০৫১ ডলার। পুরুষদের গড় আয় ২৮,৪৪৪ ডলার ও নারীদের গড় আয় ২৬,১৩১ ডলার। শহরের মাথাপিছু আয় ১৩,৪২৮ ডলার।[১১]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. https://www.census.gov/prod/cen2010/cph-2-8.pdf
  2. https://query.nytimes.com/gst/fullpage.html?res=9801E0D8103CF935A1575BC0A9649C8B63
  3. "Wayback Machine" (পিডিএফ)web.archive.org। ৬ জুলাই ২০১৪। Archived from the original on ৬ জুলাই ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  4. "GaWC - The World According to GaWC 2020"www.lboro.ac.uk 
  5. https://books.google.com/?id=x6QkVFi7l6UC&pg=PA81&lpg=PA81&dq=sheldon+charter+oak+neighborhood#v=onepage&q&f=false[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  6. "House of Hope - A Tour of New Netherland"www.newnetherlandinstitute.org 
  7. Shuffelton, Frank (৮ মার্চ ২০১৫)। "Thomas Hooker, 1586-1647"। Princeton University Press – Google Books-এর মাধ্যমে। 
  8. "Department of Economic Community Development"CT.gov - Connecticut's Official State Website 
  9. GRANT, By STEVE। "Hartford: A City On The River"courant.com 
  10. Team, National Weather Service Corporate Image Web। "National Weather Service Climate"w2.weather.gov 
  11. "Hartford (city) QuickFacts from the US Census Bureau"web.archive.org। ৮ মে ২০১২। Archived from the original on ৮ মে ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা