হায়াৎ সাইফ

বাংলাদেশী লেখক

সাইফুল ইসলাম খান যিনি হায়াৎ সাইফ নামেই সমধিক পরিচিত (১৬ ডিসেম্বর ১৯৪২ - ১৩ মে ২০১৯) ছিলেন একজন বাংলাদেশি আধুনিক কবি এবং সাহিত্য সমালোচক। তাকে বাংলাদেশের সমসাময়িক জীবন ও সংস্কৃতির একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে গণ্য করা হত। ২০০৫ সালে তিনি বিশ্ব স্কাউট সংস্থার একমাত্র ও বিশ্ব স্কাউট পরিমন্ডলের সবচেয়ে সম্মানজনক ব্রোঞ্জ উলফ পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৮ সালে ভাষা ও সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে। তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য ছিলেন। কর্মজীবনের এক পর্যায়ে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এর চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

হায়াৎ সাইফ
Hayat Saif 2009.JPG
জন্মসাইফুল ইসলাম খান
(১৯৪২-১২-১৬)১৬ ডিসেম্বর ১৯৪২
ঢাকা, বাংলাদেশ
মৃত্যু১৩ মে ২০১৯(2019-05-13) (বয়স ৭৬)
পেশাকবি, সাহিত্য সমালোচক
জাতীয়তাবাংলাদেশি
সময়কাল১৯৫৯ - ২০১৯
বিষয়ভালবাসা, নির্জনতা
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারব্রোঞ্জ উলফ পুরস্কার (২০০৫)
একুশে পদক (২০১৮)
দাম্পত্যসঙ্গীতাহামিনা ইসলাম লাকি
সন্তান৩ ছেলে
ওয়েবসাইট
www.hayatsaif.com

প্রারম্ভিক জীবনসম্পাদনা

সাইফ ১৯৪২ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন।[১] তার পিতার নাম মোসলেম উদ্দিন খান ও মাতার নাম বেগম সুফিয়া খান। পিতার কর্মস্থল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার সুবাদে তিনি তার শৈশব কাটান রাজশাহীতে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবনসম্পাদনা

১৯৬৫ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্নের পর রাজশাহী কলেজে ৩ বছর শিক্ষকতা করেন।[২] ১৯৬৮ সালে ব্যবসা ক্যাডার হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তান ‘সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিসে’ (বর্তমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) যোগদান করেন। তিনি তিন দশকের বেশি সময় রাজস্ব প্রশাসন ও কর নীতি প্রণয়নের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৯৯ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।[১]

১৯৬০-এর দশকে ছাত্রাবস্থাতেই তিনি ঢাকায় তৎকালীন রেডিও পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ বেতার) কেন্দ্রে ও পরবর্তীতে পাকিস্তান টেলিভিশনের লাহোর কেন্দ্রে নৈমিত্তিক ঘোষক ও সংবাদপাঠক হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে চাকরি থেকে অবসরের পর মাঝে মাঝে সাহিত্য বিষয়য়ক অনুষ্ঠান ও আলোচনাসভায় উপস্থাপনা করতেন।[১]

১৯৯৩ সালে ফিসকাল ফ্রন্টিয়ার্স (ইং:Fiscal Frontiers) নামে একটি ইংরেজি জার্নাল প্রকাশ করা শুরু করেন এবং ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি এটি সম্পাদনা করেন। সময়িকীটি রাজস্ব নীতি ও প্রশাসন, রাজস্ব নীতি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে লেখা প্রকাশ করত। ২০০৫ সালে তিনি আইস টুডে সাময়িকীতে ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন এবং বেশ কয়েক বছর তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন।[১]

সাহিত্য জীবনসম্পাদনা

সাইফ ১৯৬০-এর দশক থেকে লেখালেখির মাধ্যমে সাহিত্যজীবনে প্রবেশ করেন। ১৯৬২ সালে তার প্রথম কবিতা তৎকালীন সমকালে প্রকাশিত হওয়ার পর ১৯৮৩ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ সন্ত্রাসে সহবাস প্রকাশিত হয়।[২] তার ১৫টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে যার মধ্যে বাংলা কবিতার ৮টি সংকলন ও ২টি প্রবন্ধ সংকলন রয়েছে।[২] এছাড়া, বিভিন্ন সময়িকীতে তার অসংখ্য লেখাসহ তার কাব্যগ্রন্থ বাংলা ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ও স্প্যানিশ ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৯২ সালে তার লেখা সাহিত্য বিষয়ক সংকলন গ্রন্থ উক্তি ও উপলব্ধি প্রকাশিত হয়। ২০০৪ সালে মাহবুব তালুকদারের সাথে যৌথভাবে বাংলাদেশের সমসাময়িক গদ্য নিয়ে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয় কবিতা সংকলন প্রধানত স্মৃতি এবং মানুষের পথচলা যাতে ৭৫টি কবিতা রয়েছে।[৩]

১৯৯৮ সালে দিব্য প্রকাশ থেকে ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর সম্পাদনায় ভয়েস অব হায়াৎ সাইফ নামে একটি ইংরেজি অনুবাদকৃত কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটিতে ৪৫টি কবিতা রয়েছে। ২০০১ সালে পাঠক সমাবেশ থেকে হায়াৎ সাইফ: সিলেক্টেড পয়েম্‌স নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।[১]

স্কাউট আন্দোলনসম্পাদনা

খান ১৯৯০ সালের শুরু থেকে আমৃত্যু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্কাউট আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ স্কাউটসের জাতীয় কমিশনার (জনসংযোগ এবং প্রকাশনা) ও এশিয়া প্যাসিফিক স্কাউট অঞ্চলের সদস্য হিসেবে হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালে তিনি বিশ্ব স্কাউট কমিটির একমাত্র ও বিশ্ব স্কাউট পরিমন্ডলের সবচেয়ে সম্মানজনক ব্রোঞ্জ উলফ পুরস্কার লাভ করেন।[৪] তিনি ৩০৫তম পুরস্কার গ্রহীতা হিসেবে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন।

ব্যক্তিগত জীবনসম্পাদনা

সাইফ ব্যক্তিগত জীবনে তাহামিনা ইসলামের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[১] এই দম্পতির তিন ছেলে রয়েছে।

পুরস্কারসম্পাদনা

তথ্যসূত্রসম্পাদনা

  1. "Hayat Saif:: Biography"hayatsaif.com। ২২ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০১৯ 
  2. "বাংলাদেশের কবি ও কবিতার জগতে এক বিশিষ্ট নাম হায়াৎ সাইফ"মাছরাঙ্গা টেলিভিশন (ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০১৯ 
  3. "At A Glance"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ১৫ মার্চ ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০১৯ 
  4. "List of recipients of the Bronze Wolf Award"scout.org (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ নভেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০১৯ 
  5. "কবি ফজল শাহাবুদ্দীন কবিতা পুরস্কার পেলেন হায়াৎ সাইফ ও হাবিবুল্লাহ সিরাজী"জনকন্ঠ (ইংরেজি ভাষায়)। ২৬ মার্চ ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০১৯ 
  6. "তকীয়ুল্লাহ-মনজুরুল-ফরীদি-কাঞ্চনসহ ২১ জনকে একুশে পদক"বাংলানিউজ২৪.কম (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০১৯