হামরাউল আসাদ অভিযান
হামরাউল আসাদ অভিযান[১] (আরবি: غزوة حمراء الأسد), ৩ হিজরির ৮ শাওয়াল (৬২৫ খ্রিষ্টাব্দ) উহুদের যুদ্ধের পরদিন কুরাইশরা মক্কা ফিরে যাওয়ার সময় সংঘটিত হয়। যুদ্ধের পর কুরাইশরা মুসলিমদেরকে চূড়ান্তভাবে উৎখাত করতে চাইছিল।[২] মুহাম্মাদ এই প্রচেষ্টা সফলভাবে প্রতিহত করেন।[৩][৪] ফলে কুরাইশরা আক্রমণ না করে ফিরে যায়।
অভিযান
সম্পাদনাউহুদের যুদ্ধের পর মুহাম্মাদ আশঙ্কা করেন যে কুরাইশরা যুদ্ধে চূড়ান্ত সফলতা লাভ করতে না পারার কারণে মদিনায় আক্রমণ করতে পারে। তাই তিনি তাদের পশ্চাদ্ধাবন করার সিদ্ধান্ত নেন। উহুদের যুদ্ধে অংশ নিয়েছে শুধুমাত্র এমন ব্যক্তিদেরকেই এই অভিযানে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। জাবির ইবনে আবদুল্লাহকে তার পিতা বোনদের[৫] দেখাশোনার দায়িত্ব প্রদান করে যুদ্ধে যাওয়ার অনুমতি দেননি। জাবির এই অভিযানে যাওয়ার অনুমতি চাইলে মুহাম্মাদ তাকে অনুমতি দেন।[২][৫]
মুসলিমরা অগ্রসর হয়ে মদিনা থেকে আট মাইল দূরের হামরাউল আসাদে পৌছে শিবির স্থাপন করে। এখানে মাবাদ ইবনে আবু মাবাদ আল-খুজাআ মুহাম্মাদ এর কাছে উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। কুরাইশরা যাতে মদিনা আক্রমণ করতে না পারে সে উদ্দেশ্যে মুহাম্মাদ তাকে দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেন।[২]
এসময় কুরাইশরা মদিনা থেকে ছত্রিশ মাইল দূরে রাওহায় শিবির স্থাপন করেছিল। মুহাম্মাদ এর আশঙ্কা অনুযায়ী তারা মদিনা আক্রমণ করতে চাইছিল। সংখ্যায় ভারী হওয়া সত্ত্বেও বিজয়ী না হওয়ার ফলে তারা একে আত্মসম্মানের হানি হিসেবে দেখে। এছাড়া লুটপাটের উদ্দেশ্যে যুদ্ধে আসা অন্যান্য গোত্রগুলিও যুদ্ধে সফলতা না পাওয়ায় হতাশ হয়েছিল। কুরাইশ নেতাদের মধ্যে শুধু সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া আক্রমণের বিরোধিতা করেছিলেন। তার মত ছিল যে এর ফলে উহুদে অংশ নেয়নি এমন লোকেরাও কুরাইশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামবে। কিন্তু বাকিরা তার মত মেনে নেয়নি এবং মদিনার দিকে ফিরে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়।[২]
কুরাইশদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর মাবাদ সেখানে উপস্থিত হন। কুরাইশরা মদিনা আক্রমণ করবে জানতে পারার পর কৌশল হিসেবে তিনি আবু সুফিয়ানকে জানান যে মুসলিমরা এক বিরাট বাহিনী গঠন করে কুরাইশদের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং তাতে মদিনার প্রত্যেক মুসলিম যোগ দিয়েছে। এর ফলে আবু সুফিয়ান মদিনার দিকে অগ্রসর না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং কুরাইশদেরকে মক্কা ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তবে ফেরার পূর্বে খাদ্য আনার উদ্দেশ্যে সেই স্থান দিয়ে মদিনাগামী[৫] আবু কায়েস গোত্রের এক কাফেলাকে বলেন যাতে মদিনা পৌছে মুহাম্মাদ কে বলা হয় যে কুরাইশরা মুসলিমদেরকে নির্মূল করার জন্য দ্বিতীয়বার আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খবর পৌছে দেয়ার বিনিময়ে তাদেরকে প্রচুর পরিমাণে কিসমিস প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।[২][৫]
বন্দী কুরাইশ
সম্পাদনাহামরাউল আসাদে তিনদিন অবস্থানের পর মুসলিমরা মদিনায় ফিরে আসে। ফেরার পূর্বে আবু আজ্জাহ জুমাহিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ব্যক্তি ইতিপূর্বে বদরের যুদ্ধে বন্দী হয়েছিল। দরিদ্র এবং ঘরে কন্যা সন্তান থাকায় তাকে কোনো মুক্তিপণ দিতে হয়নি। ভবিষ্যতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করবে না এই শর্তে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে ওয়াদা ভঙ্গ করে উহুদের যুদ্ধে অংশ নেয়। পুনরায় সে ক্ষমা চাইলে মুহাম্মাদ তাকে ক্ষমা না করে হত্যার নির্দেশ দেন। যুবাইর ইবনুল আওয়াম এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করেন। অন্য একটি সূত্রানুযায়ী আসিম ইবনে সাবিত তাকে হত্যা করেছিলেন।[২]
মক্কার এক গুপ্তচর মুয়াবিয়া ইবনে মুগিরা ইবনে আবিল আসকেও হত্যা করা হয়েছিল। এই ব্যক্তি উসমান ইবনে আফফানের চাচাত ভাই ছিল। উহুদের দিনে কুরাইশরা ফিরে যাওয়ার সময় সে উসমানের সাথে সাক্ষাত করতে আসে। উসমান তার জন্য মুহাম্মাদ এর কাছে নিরাপত্তা চান। মুহাম্মাদ তাকে তিন দিন সময় দিয়ে এর ভেতরে মক্কা ফেরার নির্দেশ দেন। কিন্তু সে তথ্য সংগ্রহের জন্য তিন দিনের বেশি মদিনায় অবস্থান করে। মুসলিমরা ফিরে আসার পর সে পালিয়ে যায়। এরপর তাকে হত্যার জন্য জায়েদ ইবনে হারিসা ও আম্মার ইবনে ইয়াসিরকে নির্দেশ দেয়া হয়। তারা তার পিছু নিয়ে তাকে হত্যা করেন।[২]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Mohsin Akhtar, Oracle of the Last and Final Message, Xlibris, পৃষ্ঠা 218, আইএসবিএন 978-1-4363-2203-4
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ আর-রাহীকুল মাখতুম, হামরাউল আসাদ অভিযান অনুচ্ছেদ
- ↑ Habriel, Richard A (২০০৫), Muhammad,Islams first Great general, Blackwell, পৃষ্ঠা 124, আইএসবিএন 978-0-8061-3860-2
- ↑ Abū Khalīl, Shawqī (২০০৩), Hamra al assad, Dar us Salam, পৃষ্ঠা 272, আইএসবিএন 9960-897-54-0
- ↑ ক খ গ ঘ সিরাত ইবনে হিশাম, উহুদ যুদ্ধ অধ্যায়