হাবিবুর রহমান (মুক্তিযোদ্ধা)

হাবিবুর রহমান (জন্ম: ১২ আগস্ট, ১৯৩৭) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[]

হাবিবুর রহমান
জন্ম১২ আগস্ট, ১৯৩৭
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

জন্ম ও শিক্ষাজীবন

সম্পাদনা

হাবিবুর রহমানের জন্ম বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার গাববাড়ী গ্রামে। তার বাবার নাম আবুল হাসেম হাওলাদার এবং মায়ের নাম মন্নুজান বেগম। তার স্ত্রীর নাম নূরজাহান বেগম। তাদের চার ছেলে, তিন মেয়ে। []

কর্মজীবন

সম্পাদনা

ইপিআরে চাকরি করতেন হাবিবুর রহমান । ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন খুলনার ৫ নম্বর ইপিআর উইংয়ের সাপোর্ট প্লাটুনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। পরে যুদ্ধ করেন ৯ নম্বর সেক্টরের টাকি সাবসেক্টরে। রাজাপুর থানা, বাকেরগঞ্জ থানা, বাবুগঞ্জ থানা আক্রমণ, চাচৈর, গাবখান, বানারিপাড়া যুদ্ধসহ অনেক যুদ্ধে তিনি অংশ হাবিবুর রহমান। চাচৈর যুদ্ধ ঝালকাঠি জেলায় সংঘটিত উল্লেখযোগ্য এক যুদ্ধ। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি একদল মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছিলেন সেখানে। পাকিস্তানি সেনারা বরিশাল ও ঝালকাঠি—দুই দিক থেকে সেখানে এসে তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। ১৪ নভেম্বর সারাদিন সেখানে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে হাবিবুর রহমান, মানিক, সেকেন্দার আলীসহ কয়েকজন বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। সন্ধ্যার দিকে পাকিস্তানি সেনারা পিছু হটতে শুরু করে। এ সময় খাল পার হতে গিয়ে কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়। কয়েকজন পালাতে না পেরে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে লুকিয়ে থাকার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের খুঁজে বের করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা

সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ১৩ বা ১৪ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠি জেলার অন্তর্গত নলছিটিতে থানায় সফল আক্রমণ চালিয় মুক্তিযোদ্ধারা। হামলা শেষে হাবিবুর রহমান সহযোদ্ধাদের সঙ্গে ফিরে যান তাদের গোপন ঘাঁটিতে। পরদিন তারা জানতে পারেন, থানা আক্রমণের খবর পেয়ে ঝালকাঠি থেকে এক দল পাকিস্তানি সেনা এসে থানার পার্শ্ববর্তী দুটি গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে গ্রামবাসীর ওপর অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে। গ্রামবাসীর এই বিপদের মুহূর্তে তিনি নীরব থাকতে পারলেন না। সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে। তাদের বীরত্ব ও সাহসিকতায় শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যায়। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত নেন নলছিটি থানা আক্রমণের। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ বা ১৪ সেপ্টেম্বর তারা থানা আক্রমণ করেন। এই আক্রমণে অংশ নেন হাবিবুর রহমানসহ ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধারা পরমপাশা স্কুল, তালতলা ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর সাহসিকতার সঙ্গে আক্রমণ চালান। তাদের কাছে ভারী অস্ত্র বলতে ছিল একটি এলএমজি। এলএমজি ম্যান ছিলেন হাবিবুর রহমান। তিনি তখন এলএমজি হাবিব নামেই খ্যাতি পেয়েছিলেন। তিনি বীরত্বের সঙ্গে বিকেল তিনটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা যুদ্ধ করেন। তার দুঃসাহসিকতায় পাকিস্তানি সেনারা টিকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যায়। হতাহত হয় বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনা। সেদিন যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে দুজন শহীদ হন। []

পুরস্কার ও সম্মাননা

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ৩০-১২-২০১১"। ২০২০-০২-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৩-৩১ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৭৭। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৩১৭। আইএসবিএন 9789843338884 

পাদটীকা

সম্পাদনা
  • এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা