হাফসা সুলতান
আয়শে হাফসা সুলতান বা হাফসা সুলতান (উসমানীয় তুর্কি: حفصه سلطان, আনু. ১৪৭৮ - মার্চ ১৫৩৪) উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রথম সেলিমের স্ত্রী এবং তাঁদের পুত্র প্রথম সুলাইমানের মা হিসেবে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সর্বপ্রথম ভালিদে সুলতান ছিলেন। ১৫২০ সালে তাঁর ছেলের রাজ্যাভিষেককালে এবং ১৫৩৪ সালে তার মৃত্যুর সময়কালে তিনি ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি।
হাফসা সুলতান | |||||
---|---|---|---|---|---|
উসমানীয় সাম্রাজ্যের ভালিদে সুলতান | |||||
রাজত্বকাল | ৩০শে সেপ্টেম্বর ১৫২০ – ১৯শে মার্চ ১৫৩৪ | ||||
পূর্বসূরি | গুলবাহার হাতুন (ভালিদে হাতুন হিসেবে) | ||||
উত্তরসূরি | নুরবানু সুলতান | ||||
জন্ম | আনু. ১৪৭৮[১] | ||||
মৃত্যু | মার্চ ১৫৩৪ ( ৫৫–৫৬ বছর বয়সকালে)[২] ইস্তাম্বুল, উসমানীয় সাম্রাজ্য | ||||
সমাধি | ইয়াভুজ সেলিম মসজিদ, ফাতিহ, ইস্তাম্বুল | ||||
দাম্পত্য সঙ্গী | প্রথম সেলিম | ||||
বংশধর | প্রথম সুলাইমান হেতিজা সুলতান ফাতমা সুলতান | ||||
| |||||
পিতা | প্রথম মেনলি গিরাই[৩](বিতর্কিত) বা আবদুল-মুইন[৪][৫] অথবা আব্দুলহাই[৫] |
উৎপত্তি
সম্পাদনাঐতিহ্যগত দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, হাফসা সুলতান ১৪৬৬ থেকে ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যকার অধিকাংশ সময় জুড়ে শাসন করা ক্রিমিয়ার তাতারদের খান প্রথম মেনলি গিরায়(১৪৪৫-১৫১৫) এর কন্যা হওয়ার মতবাদটি সপ্তদশ শতাব্দীর পশ্চিমা লেখকদের বিবরণ অবলম্বনে, উসমানীয় দলিলসংক্রান্ত প্রমাণের উপর ভিত্তি করে খ্রিস্টান ক্রীতদাস বংশীয় হওয়ার পক্ষে দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।[৬][৭] যদিও হাফসা সুলতানের উৎপত্তি নিয়ে ব্রায়ান গ্লিন উইলিয়ামস সহ কতিপয় ঐতিহাসিকগণ এখনও ঐতিহ্যগত দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেন।[৩] রেশাত কাসাবা, প্রথম সেলিম এবং হাফসা সুলতানের বিবাহের কথা উল্লেখ করে বলেন, ''উসমানীয় সুলতান এবং একটি পার্শ্ববর্তী মুসলিম রাজকীয় পরিবারের সদস্যের মধ্যকার শেষ বিবাহ''। তবে এসিন আদিল বলেন যে, কিছু ঐতিহাসিকগণ বলে থাকেন যে তিনি গিরাই এর কন্যা ছিলেন যখন অন্য ঐতিহাসিকগণ ''আয়শে'' নামক ক্রিমিয়ার রাজকন্যার কথা উল্লেখ করেন যে, যিনি প্রথম সেলিমের আরেকজন স্ত্রী ছিলেন এবং সম্ভবত ''হাফসা'' ক্রীতদাস বংশীয় হতে পারেন।[৫] ইলিয়া জায়েদসেভ দাবি করেন যে, প্রথম মেনলি গিরায় এর কন্যা আয়শে প্রথমে কেফের গভর্নর শাহজাদা মেহমেতের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনি প্রথম সেলিমকে বিবাহ করেন; ফলস্বরূপ, উসমানীয় রাজবংশে তার বিয়ে ছিল গিরাই এবং উসমানীয়দের মধ্যে হওয়া দুটি উল্লেখযোগ্য বিবাহের মধ্যে একটি (অন্য বিয়েটি ছিল প্রথম সাদাত গিরায় এর সাথে প্রথম সেলিমের কন্যার বিবাহ)।[৮] এলান ডব্লিউ. ফিশার, লেসলি পিয়ার্স এবং ফেরিদুন এমেসেনদের প্রত্যেকেই হাফসাকে ক্রীতদাস বংশীয় হিসেবে দেখেন, ক্রিমিয়ার খানের কন্যা হিসেবে নয়।[৯]
জীবনকাল
সম্পাদনাহাফসা সুলতান, তাঁর ছেলে সুলেমানের(যিনি ১৫১৩ থেকে ১৫২০ সাল পর্যন্ত মানিসা এবং আশেপাশের অঞ্চলসমূহ শাসন করেছিলেন) সাথে পশ্চিম তুরস্কের মানিসা শহরে(শহরটি ভবিষ্যত ক্ষমতার জন্য উসমানীয় যুবরাজদের (শাহজাদা) শিক্ষানবিশির ঐতিহ্যবাহী আবাসস্থল হিসেবে গণ্য হতো) বসবাস করাকালীন মাসির উৎসব নামক স্থানীয় উৎসবের প্রবর্তন করেন যা আজও প্রচলিত। তিনি সুলতান মসজিদ নামক একটি মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি বিশাল কমপ্লেক্স, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মহাবিদ্যালয় এবং একটি ধর্মশালা নির্মাণ করান।
তিনি হলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রথম নারী যিনি তাঁর নামে হাতুন উপাধি বদলেসুলতান উপাধি ধারণ করেছিলেন। উপাধির এই ব্যবহার উসমানীয় ধারণাব্যবস্থাকে পারিবারিক বিশেষাধিকারের সার্বভৌম শক্তি হিসাবে প্রতিবিম্বিত করে।[১০] ফলস্বরূপ, ''ভালিদে হাতুন''(ষষ্ঠদশ শতাব্দীর পূর্বে গদিনাসীন সুলতানের জীবিত মাতার ব্যবহৃত উপাধি) উপাধিকে ভালিদে সুলতান-এ রূপান্তর করে, যা হাফসা সুলতানকে প্রথম ভালিদে সুলতান-এ পরিণত করে। তাঁর শাসনকাল সুলতানের মায়ের পরিবর্তিত পদমর্যাদা এবং ক্ষমতায় তাঁর অংশীদারত্বের ইঙ্গিত দেয়।[১১] এছাড়া তিনি হারেমের প্রথম মহিলা ছিলেন যিনি সর্বপ্রথম নির্ধারিত কিরা(উসমানীয় রাজবংশের নারীদের প্রতিনিধি) রেখেছিলেন যার নাম ছিল স্ত্রোনগিলাহ।[১২]
মৃত্যু
সম্পাদনাহাফসা সুলতান ১৫৩৪ সালের মার্চ মাসে মৃত্যুবরণ করেন এবং ইস্তাম্বুলের ফাতিহ-এ অবস্থিত ইয়াভুজ সেলিম মসজিদের ক্বিবলা প্রাচীরের পেছনে একটি সমাধিস্তম্ভে তাঁর স্বামী সুলতান সেলিমের সন্নিকটে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। সমাধিসৌধটি ১৮৮৪ সালের ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। ১৯০০-এর দশকে সেটি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা অসম্পূর্ণই থেকে যায় এবং তাঁর মাজার মূলত যেভাবে নির্মিত হয়েছিলো বর্তমানে তার চেয়ে অনেক অনাড়ম্বর দেখায়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Sakaoğlu, Necdet (২০০৮)। Bu mülkün kadın sultanları: Vâlide sultanlar, hâtunlar, hasekiler, kadınefendiler, sultanefendiler। Oğlak Yayıncılık। পৃষ্ঠা 199। আইএসবিএন 978-9-753-29623-6।
- ↑ পিয়ার্সে, লেসলি পি. (১৯৯৩)। The Imperial Harem: Women and Sovereignty in the Ottoman Empire। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 121। আইএসবিএন 0-19-508677-5।
- ↑ ক খ Glyn Williams, Brian (২০০১)। The Crimean Tatars: The Diaspora Experience and the Forging of a Nation। Brill Publishers। পৃষ্ঠা 56। আইএসবিএন 0295801492।
Ottoman princes, such as the future Ottoman Sultans Selim I (who married Mengli Giray Khan's daughter, Hafsa Hatun...
- ↑ Sakaoğlu, Necdet (২০০৮)। Bu mülkün kadın sultanları: Vâlide sultanlar, hâtunlar, hasekiler, kadınefendiler, sultanefendiler। Oğlak Yayıncılık। পৃষ্ঠা 148। আইএসবিএন 978-9-753-29623-6। (Her name is given as "Hafsa bint-i Abdü'l-Muin" in Kitâbeler by İ. H. Uzunçarşılı. This shows that she was of non-Turkish origin, and later converted to Islam.)
- ↑ ক খ গ Atıl, Esin (১৯৮৭), The Age of Sultan Süleyman the Magnificent, National Gallery of Art, পৃষ্ঠা 27, আইএসবিএন 0810918552,
Some historians state that she was the daughter of Mengili Giray Han, the ruler of the Crimean Tatars. Others mention that Ayse, another wife of Selim I, was the Crimean princess and give as Hafsa's father a man named Abdulmumin or Abdulhay, and unknown person - suggesting that she was of slave origin.
- ↑ Alan Fisher (১৯৯৩)। "The Life and Family of Suleyman I"। Süleymân The Second [i.e. the First] and his time। Isis Press।
- ↑ Encyclopedia of Islam vol. IX (1997), s.v. Suleyman p.833
- ↑ Zaytsev, Ilya (২০০৬), "The Structure of the Giray Dynasty (15th-16th centuries): Matrimonial and Kinship Relations of the Crimean Khans", Kinship in the Altaic World: Proceedings of the 48th Permanent International Altaistic Conference, Moscow 10-15 July 2005, Otto Harrassowitz Verlag, পৃষ্ঠা 341, আইএসবিএন 3447054166,
Only two instances concerning the Ottomans are noted. Ayshe (daughter of Mengli-Giray I) was married to şehzade and governor of Kefe Mehmed, and to his brother Selim I later on (917/1511). Sultan Selim's daughter was married to Saadet-Giray.
- ↑
- Alan Fisher (১৯৯৩)। "The Life and Family of Süleymân I"। İnalcık, Halil; Cemal Kafadar। Süleymân The Second [i.e. the First] and His Time। Istanbul: Isis Press। পৃষ্ঠা 9। আইএসবিএন 975-428-052-5।
- Emecen, Feridun (২০১০)। "Süleyman I"। İslâm Ansiklopedisi। 38। İslâm Araştırmaları Merkezi। পৃষ্ঠা 62–74।
Information indicating that she was the daughter of the Crimean Khan or was related to the family of Dulkadıroğlu is incorrect.
- Peirce, Leslie (১৯৯৩)। The Imperial Harem: Women and Sovereignty in the Ottoman Empire। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 40। আইএসবিএন 0-19-508677-5।
- ↑ Peirce, Leslie P. (১৯৯৩)। The Imperial Harem: Women and Sovereignty in the Ottoman Empire। Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-508677-5।
- ↑ Amy Singer (২০০২)। Constructing Ottoman beneficence: An imperial soup kitchen in Jerusalem। State University of New York Press। পৃষ্ঠা 90। আইএসবিএন 0-7914-5351-0।
- ↑ Minna Rozen: A History of the Jewish Community in Istanbul, The Formative Years, 1453 – 1566 (2002).
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- "হাফসা সুলতান কমপ্লেক্স"। আর্কনেট। ২০০৫।
উসমানীয় রাজপদবী | ||
---|---|---|
পূর্বসূরী গুলবাহার হাতুন (ভালিদে সুলতান হিসেবে) |
ভালিদে সুলতান ৩০শে সেপ্টেম্বর ১৫২০ – ১৯শে মার্চ ১৫৩৪ |
উত্তরসূরী নুরবানু সুলতান |