ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসমূহ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীকে কোনো না কোনো হলের সাথে আবাসিক/অনাবাসিক ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে যুক্ত থাকতে হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য ১৪ টি এবং ছাত্রীদের জন্য ৫ টি আবাসিক হল রয়েছে। এছাড়া চারুকলা অনুষদ, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট ও লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছে আলাদা হোস্টেল এবং বিদেশী ছাত্রদের জন্য রয়েছে আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস। [১]
আবাসিক হলসমূহসম্পাদনা
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলসম্পাদনা
১৯২১ সালে এই হলের যাত্রা শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম তিনটি হলের মধ্যে এটি একটি। এর মূলভবন তৈরি হয় বিশের দশকের শেষের দিকে। এই হলের প্রথম প্রোভোস্ট ছিলেন অধ্যাপক এ এফ রাহমান। এই হলের প্রথম নাম ছিল মুসলিম হল, কিন্তু পরবর্তীতে ঢাকার নবাব নবাব স্যার সলিমুল্লাহের নামে এই হলের নামকরণ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় দশ বছর পর নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহর মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তার নামে একটা ছাত্রাবাস করার প্রস্তাব করা হয়। মুসলিম ছেলেদের জন্য তখন হল তৈরি হয়ে গেছে। প্রথমে এ হল ছিল এখনকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বিল্ডিংএ। আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দি বললেন এই হলকে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল করা হোক। এর পর বর্তমান সলিমুল্লাহ মুসলিম হল নির্মাণ করা হয় এবং সলিমুল্লার নামে নামকরণ করা হয়। [২]
এ হলের বর্তমান প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুুুুজিবুর রহমান। এই হলের মোট কক্ষ সংখ্যা ১৮০টি যার মধ্যে ১৫২টি কক্ষ ছাত্রদের জন্য বরাদ্দ। হলের ভিতরে একটা মনোরম বাগান রয়েছে যা দুই ভাগে বিভক্ত। এছাড়াও হলে ১টি মসজিদ, ১টি ডিবেটিং ক্লাব, ১টি লাইব্রেরি, ১টি রিডিং রুম ও ১টি ড্রামা ও ১টি মিউজিক ক্লাব রয়েছে। [৩]
ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলসম্পাদনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ও প্রথম তিন হলের এক হল। প্রথমে এই হলের নাম ছিল ঢাকা হল। ১৯৬৯ সালে এশিয়ার বিখ্যাত পণ্ডিত, জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নামানুসারে এই হলের নাম করণ করা হয় শহীদুল্লাহ্ হল। পরে ২০১৭ সালের ১৪ জুন তারিখের সিন্ডিকেট সভায় “শহীদুলাহ্ হল”-এর নাম পরিবর্ধন করে “ড. মুহম্মদ শহীদুলাহ্ হল” করা হয় এবং সিনেট কর্তৃক ১৭ জুন, ২০১৭ তারিখে উক্ত সংবিধি সংশোধ অনুসমর্থন করা হয়। [৪]
এ হলে মোট ৬টি ভবন রয়েছে। প্রথমে এই হলটিতে ছিল লাল ইটের তৈরি দ্বিতল ভবন, পরবর্তীতে তা তিন তলা করা হয়। পরবর্তীতে ৪টি নতুন ভবন যুক্ত করা হয়। শহীদ শরাফত আলী ভবন ও শহীদ আতাউর রহমান খাদিম ভবন হচ্ছে এই হলের দুটো বর্ধিত অংশ। হলের বর্তমান প্রভোস্ট ডঃ মোহাম্মদ জাবেদ হোসেন। [৫]
জগন্নাথ হলসম্পাদনা
জগন্নাথ হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু তথা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান সম্প্রদায়সহ আদিবাসী ছাত্রদের জন্য সংরক্ষিত বিশেষ হল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম যে তিনটি হল নিয়ে যাত্রা শুরু করে জগন্নাথ হল তার একটি।
শুরুতে এই হলের ধারণক্ষমতা ছিল ৩১৩ জন। বর্তমানে এই হলের অধীনে ৪টা ভবন ও একটা নির্মানাধীন নতুন ভবন রয়েছে। ১৯২৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই হল ভ্রমণ করেছিলেন। বর্তমানে প্রায় ২,৫০০ ছাত্র এই হলে সংযুক্ত আছে। ডঃ মিহির লাল সাহা বর্তমানে এই হলের প্রভোস্ট।
১৯৮৫ খ্রীস্টাব্দের ১৫ অক্টোবর প্রাচীন জগন্নাথ হলের একটি আবাসিক ভবনের ছাদ ধ্বসে পড়লে সংঘটিত হয় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এতে প্রাণ হারায় ৩৯ জন ছাত্র, কর্মচারী ও অতিথি। এরপর থেকেই সাংবার্ষিকভিত্তিতে ঐ দিনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। নিহতদের স্মরণে নির্মিত হয় অক্টোবর স্মৃতি ভবন ও স্মৃতিসৌধ। [৬]
ফজলুল হক মুসলিম হলসম্পাদনা
অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হকের নামানুসারে হলের নামকরণ করা হয় ফজলুল হক হল। ১৯৪০ সালের ১ জুলাই ৩৬৩ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে শুরু হয় এই হলের যাত্রা। এর মধ্যে ২৩১ জন আবাসিক ছাত্র ও ১৩২ জন অনাবাসিক ছাত্র, তম্মধ্যে ০৩ জন ছাত্রী ছিল। [৭]
মূল ভবনের পাশাপাশি বর্তমানে এর একটি বর্ধিত ভবন রয়েছে যা দক্ষিণ ভবন নামে পরিচিত। আবাসিক ছাত্রের সংখ্যা ৭৬৬ জন এবং অনাবাসিক ছাত্রের সংখ্যা ৯৯৭ জন। অধ্যাপক ড.শাহ্ মোঃ মাসুম এই হলের বর্তমান প্রভোস্টের দায়িত্ব পালন করছেন।[৮]
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলসম্পাদনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম হল হিসেবে পাকিস্তানের কবি আল্লামা ইকবালের নামে ১৯৫৭ সালে ‘ইকবাল হল’ স্থাপিত হয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানিদের গুলিতে নিহত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার ৩৫ জন আসামীর অন্যতম শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় ‘জহুরুল হক হল’ রাখেন। ২০১৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল’ নামে নামকরণ করেন। আয়তনে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বৃহত্তম হলগুলোর একটি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই হল বেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। বাঙালির মুক্তির লক্ষ্যে এই হল থেকে গঠিত হয় ‘জয় বাংলা বাহিনী’। এই হলে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ২৫ মার্চের কালরাতে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে বহু ছাত্র, কর্মচারী ও নিরীহ মানুষকে হত্যা করে।
এই হলে আবাসিক ছাত্রের সংখ্যা ৭০৮ জন, দ্বৈতাবাসিক ৬০০ জন এবং অনাবাসিক ছাত্রের সংখ্যা ১০৫৫ জন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম এই হলের ২৩ তম প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্বে আছেন।[৯]
রোকেয়া হলসম্পাদনা
চামেলি হাউজে মাত্র ১২ জন নারী শিক্ষার্থী নিয়ে ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আবাসিক নারী শিক্ষার্থী হল হিসেবে যাত্রা শুরু হয় রোকেয়া হলের। ১৯৬৪ সালে এর নামকরণ করা হয় "রোকেয়া হল" নামে, মূলত বেগম রোকেয়া ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশ এর নারী জাগরণের অগ্রদূত। মিসেস আক্তার ইমাম ছিলেন এই হলের প্রথম প্রভোস্ট। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনা ও দালালদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন তৎকালীন আবাসিক ছাত্রীরা। বাংলাদেশের ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে রোকেয়া হলের ছাত্রীরা সক্রিয় আন্দোলনের মাধ্যমে সাহসী ভূমিকা পালন করেছে।
এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় ছাত্রী হল ও অন্যতম বৃহত্তম হল। স্নাতক সম্মান শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে চারটি ভবন: শাপলা (প্রধান), চামেলী (নতুন), অপরাজিতা (বর্ধিত) এবং ৭ মার্চ ভবন। স্নাতকোত্তর এবং এম. ফিল শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে একটি ভবন-ফয়জুন্নেসা ভবন। বর্তমানে রোকেয়া হলের চারটি ভবনের নাম শাপলা ভবন, চামেলী ভবন, অপরাজিতা ভবন ও ৭ মার্চ ভবন। রোকেয়া হলের এ চারটি ভবনে কক্ষ সংখ্যা মোট ৫২০ টি এবং আবাসিক ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ২,৭০০। রোকেয়া হলের সাথে সংযুক্ত ছাত্রী সংখ্যা প্রায় ৭,০০০ (সাত হাজার)। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চ ভাষণের স্মরণে নির্মিত ১০০৮ আসন বিশিষ্ট ৭ মার্চ ভবনটির উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ২০১৮ সনের ১ সেপ্টেম্বর।
এছাড়া হল সংলগ্ন স্থানেই রয়েছে প্রভোস্ট বাংলো এবং আবাসিক শিক্ষিকাদের বাসভবন। প্রতিবছর মেধাবী শিক্ষার্থীদের রোকেয়া হল কর্তৃপক্ষ “রোকেয়া স্বর্ণপদক” প্রদান করেন। [১০] বর্তমানে রোকেয়া হলের প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপিকা ড. জিন্নাত হুদা। [১১]
মাস্টারদা' সূর্যসেন হলসম্পাদনা
মাস্টারদা' সূর্যসেন হল ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এই আবাসিক হলের নাম ছিল জিন্নাহ হল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে ব্রিটিশ-বিরোধী বিপ্লবী সূর্য সেনের নামানুসারে এই হলের নামকরণ করা হয়। তিনটি ব্লকে ছয়তলা এই হলে ছাত্রদের বসবাসের জন্য রয়েছে প্রায় ৩৫০টি কক্ষ। এছাড়াও রয়েছে একটি মসজিদ, দুইটি পাঠ কক্ষ, একটি গ্রন্থাগার, একটি মিলনায়তন ও খেলাধুলার কক্ষ, অতিথি কক্ষ, কম্পিউটার ল্যাবরেটরি এবং দুইটি খাবার কেন্টিন। হলের বর্তমান প্রধ্যাক্ষ হিসেবে কর্মরত আছেন অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন ভূইয়া। আবাসিক ভবনের মাঝখানে রয়েছে একটি ফুলের বাগান এবং একটি কৃত্রিম জলাধার ও ফোয়ারা। উল্ল্যেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে রয়েছে একটি শহীদ মিনার ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এই হলের শহীদ ছাত্র-শিক্ষকবৃন্দের স্মরণে নির্মিত ভাষ্কর্য স্মৃতির জানালা। হলটির অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাবসায় শিক্ষা অনুষদের ১০০ মিটার উত্তর পশ্চিমে। এর পাশেই রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রাশাসনিক ভবন। উল্লেখ্য যে এই হলের সামনে যে সুবিশাল স্থানটি রয়েছে তা মল চত্বর নামে পরিচিত। [১২]
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান এই হলেরই আবাসিক ছাত্র ছিলেন।
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলসম্পাদনা
প্রতিষ্ঠা ১ জানুয়ারি ১৯৬৭ তারিখে। এটি তৎকালীন সর্ববৃহৎ আবাসিক হল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই হলটির নামকরণ করা হয়েছে উপমহাদেশের অন্যতম শিক্ষানুরাগী এবং দানবীর হাজী মুহম্মদ মুহসিনের নামে।
হলে সর্বমোট ৩৯৫টি কক্ষ রয়েছে যেখানে ১,২৬৬ জন ছাত্র অবস্থান করে যাদের মধ্যে ৫৩৯ জন আবাসিক এবং ৭২৭ জন দ্বৈতাবাসিক। উপরন্ত হলের অধীনে ১,৩২৪ জন অনাবাসিক ছাত্র রয়েছে যাদের প্রশাসনিক কর্মকান্ড হলের অধীনে সম্পন্ন হয়। ছাত্রদের শিক্ষা ও আনুসাঙ্গিক সহযোগিতার জন্য বর্তমানে ১২ জন আবাসিক শিক্ষক সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন। হলের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছেন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: মাসুদুর রহমান। হলে রয়েছে বাহারি ফুল বাগানে সজ্জিত একটি অভ্যন্তরীণ মাঠ ছাড়াও রয়েছে একটি বড় খেলার মাঠ। এই হলে একটি মসজিদ, দুইটি রিডিং রুম, একটি পত্রিকা রুম, একটি লাইব্রেরি (গিয়াস উদ্দিন পাঠাগার), একটি ক্যান্টিন, একটি মেস (ফয়ট'স এন্টারটেইনমেন্ট), টিভি রুম, গেমস রুম, অডিটোরিয়াম, একটি সুসজ্জিত অতিথি কক্ষ, ১৩ টি দোকান, একটি সেলুন, একটি লন্ড্রি, একটি টিভি রুম ও একটি গেমস রুম ও দুটি লিফট রয়েছে। প্রচলিত রয়েছে যে, বাংলাদেশের প্রথম লিফট চালু হয়েছিলো এই মুহসিন হলেই। এটি দেখতে অনেকটাই স্টিলের আলমারির মতো, দরজা টেনে ভেতরে ঢুকতে হয়। [১৩]
এই হলের ৫৬৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি লেখক হুমায়ূন আহমেদ। এখানে বসেই তিনি তাঁর অনেক বিখ্যাত বই লিখেছেন। এছাড়াও বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট লেখক সলিমুল্লাহ খান, লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ, জনপ্রিয় আরজে গোলাম কিবরিয়া, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সহ অনেক বিখ্যাত ব্যাক্তিরা এই হলে তাদের ছাত্রজীবন কাটিয়েছেন। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও এর পরবর্তী দেশের সকল ক্রান্তিলগ্নে এই হলের শিক্ষার্থীরাও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে এই হলের ইতিহাসের সাথে ক্ষমতাসীন সংগঠন কতৃক ছাত্র-নির্যাতনের অনেক ঘটনাও রয়েছে।
শামসুন নাহার হলসম্পাদনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ছাত্রী হল। বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও কবি শামসুন নাহার মাহমুদের নামে এই হলের নামকরণ করা হয়। ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে “New Womens Hall” নামে দ্বিতীয় ছাত্রী হলের নির্মান কাজ শুরু হয়। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার যোগ্য উত্তরসূরি বেগম শামসুন নাহার মাহমুদের নাম অনুসারে স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে ১৯৭২ সালের ২রা আগস্ট শামসুন নাহার হল নামে উদ্ভোধন করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ চৌধুরী।
শামসুন নাহার হলের তিনটি ভবন অনার্স, মাস্টার্স ও বর্ধিত ভবন। ছাত্রীদের পড়াশোনার সুবিধার্থে হলে একাধিক পাঠকক্ষ ও একটি গ্রন্থাগার রয়েছে। একটি হল অডিটোরিয়াম রয়েছে, অডিটোরিয়ামে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। তাছাড়া শামসুন নাহার মাহমুদ বৃত্তি ও ফাতেমা ইকবাল ট্রাস্ট ফান্ড বৃত্তিপ্রদান অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। হল কমনরুমে বার্ষিক ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী, জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিবস ও শিশু দিবস উপলক্ষে মিলাদ ও সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় [১৪]
কবি জসীম উদ্ দীন হলসম্পাদনা
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৬ সালে পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের নামে এই হলের নামকরণ করা হয়। হলটিতে রয়েছে ৫ তলা বিশিষ্ট দুইটি সংযুক্ত ভবন। হলটিতে দুইটি রিডিং রুম, একটি টিভি রুম, একটি পেপার রুম, একটি গেমস রুম, কেন্টিন ও মেস আছে। এছাড়া নিচতলায় মসজিদ, ডিবেটিং ক্লাব এবং স্বেচ্ছা রক্তদানের সংগঠন বাঁধনেরও কার্যক্রম রয়েছে। হলের পাশে রয়েছে একটি খেলার মাঠ এবং সামনের অংশে রয়েছে মনোরম ফুল বাগান।
হলের বিশেষ আকর্ষণ একসারি দোকান যেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী বিশেষ করে ছাত্রীদের কাছে সন্দেহাতীত ভাবে প্রচন্ড। মনোরম ও নিরিবিলি পরিবেশের জন্য হলটি সকলের কাছে পরিচিত।
বর্তমান আবাসিক ছাত্রের সংখ্যা ৩৮৭ এবং অনাবাসিক ছাত্রের সংখ্যা ৭৮৯।
স্যার এ. এফ. রহমান হলসম্পাদনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট এর ২১/০৮/১৯৭৬ তারিখের এক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বাঙ্গালি ভাইস চ্যান্সেলর ও প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ স্যার এ. এফ. রহমানের নামানুসারে তদানীন্তন ১নং হোস্টেলের নাম এ. এফ. রহমান রাখা হয়। ঐ সময় হলের নামের সঙ্গে 'স্যার' শব্দটি যুক্ত না থাকলেও অতি সম্প্রতি গত ১৩/০৩/২০১৪ তারিখে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের এক সভার সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী হলের নামের সংগে 'স্যার' শব্দটি যোগ করে অত্র হলের নাম রাখা হয় স্যার এ. এফ. রহমান হল।
আবাসিক/দ্বৈতবাসিক ছাত্রের সংখ্যা ৯৯২ জন ও অনাবাসিক সংযুক্ত ছাত্র সংখ্যা ৮৯৫ জন। হলটির অবস্থান নীলক্ষেত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলসম্পাদনা
১৯৮৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামানুসারে এ হলের নামকরণ করা হয়। এ হলে আবাসিক ছাত্রের সংখ্যা ৪৮৪ জন এবং অনাবাসিক ছাত্রের সংখ্যা ৩৭৫২ জন। হলটি জাতির পিতার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য নামকরণ করা হয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। এই মহান নেতার নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নামকরণ করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত হলগুলোর মধ্যে এই হল অন্যতম। হলে শিক্ষার্থীদের জন্য তারবিহীন ইন্টারনেট সংযোগ (ওয়াই-ফাই), একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, একটি সুসজ্জিত পাঠকক্ষ, একটি মসজিদ, একটি ক্যান্টিন, একটি ডাইনিং কক্ষ রয়েছে। সবুজ চত্বরে ঘেরা হলের পুরো এলাকা দিনের ২৪ ঘন্টাই সিসি টিভি ক্যামেরার নজরদারীতে থাকে। হলের শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারাম, টেবিল টেনিস, দাবা, ব্যাডমিন্টনসহ নানাবিধ ইনডোর খেলাধুলার সুযোগ রয়েছে। হলের শিক্ষার্থীদের মেধাভিত্তিক প্রতিযোগিতায় উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিবছর বিভিন্ন অনুষদের অনার্স পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ফলাফলধারী হলের শিক্ষার্থীদের বঙ্গবন্ধু মেধা পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রতিবছর বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষে হলে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বির্তক প্রতিযোগিতা প্রভৃতির আয়োজন করা হয়। যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের সাথে ১৭ই মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মবার্ষিকী ও ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়। নির্বাচিত হল সংসদ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিকল্পনা ও সম্পাদন করে থাকে।
মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলসম্পাদনা
১৯৮৮ সালে মরহুম রাষ্ট্রপতি ও বীর উত্তম মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের নামে এই হলের নামকরণ করা হয়। বর্তমানে হলের প্রাধ্যক্ষ, আবাসিক শিক্ষক, সহকারী আবাসিক শিক্ষক এবং ছাত্রদের সহায়তায় সকল কর্মকান্ড পরিচালিত হয়।
হলের দক্ষিণ ভবনের নিচ তলার একটি সংবাদপত্র পাঠকক্ষ আছে। এ কক্ষে ১১টি দৈনিক পত্রিকা, ৪টি সাপ্তাহিক পত্রিকা রাখা হয়। দক্ষিণ ভবনের পশ্চিম পার্শ্বে নিচ তলায় ছাত্রদের তিনটি পাঠকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ কক্ষে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রের নিয়মিত পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। পাঠকক্ষে লকার সুবিধা রয়েছে।
১. এ হলে মশক নিধন কর্মসূিচ পালন করা হয়েছে।
২. হলে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও ছারপোকা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
৩. সাইকেল স্ট্যাণ্ড ও বাইক স্ট্যাণ্ড তৈরিকরণ।
বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলসম্পাদনা
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস থেকে একটু দূরে নিউ মার্কেটের পিছনে বিজিবি ৩নং গেইটের মধ্যবর্তী এলাকাতে এই হল অবস্থিত। এই হলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য। এই হলের পাশেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনিষ্টিটিউট অবস্থিত।
বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত তৃতীয় হল। কুয়েত সরকারের অর্থনৈতিক সহায়তায় ১৯৮৯ সালে এই হলের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয় এবং ১৯৯০ সালের ১৯ মে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।
হলে দুটি প্রধান ব্লক, একটি হল সংসদ অফিস, ডাইনিং হল, একাট অডিটরিয়াম, বিএনসিসি, প্রার্থনা কক্ষ, অভ্যন্তরীন ক্রীড়া কক্ষ, বির্তাকিকদের জন্য কক্ষ, অতিথি কক্ষ, একটি গ্রন্থাগার, একটি পাঠকক্ষ, একটি কমনরুম, সংগীত/নৃত্যকলা কক্ষ, একটি বিপণী-বিতান এবং ফটোকপি কর্নার রয়েছে। হলে রয়েছে কম্পিউটার ল্যাব, আইপিএস সুবিধা এবং ওয়াইফাই সংযোগসহ অত্যাধুনিক সুবিধা। হল থেকে ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য বাসের ব্যবস্থা রয়েছে।
স্যার ফিলিপ হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলসম্পাদনা
ইন্টারন্যাশনাল হোস্টেল নামে ১৯৬৬ সালে বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ২০০১ সালে হোস্টেলটি স্যার পি. জে. হার্টগ ইন্টান্যাশনাল হল নামে রূপান্তরিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য স্যার ফিলিপ জোসেফ হার্টগ (১৮৬৪-১৯৪৭)-এর নামানুসারে এ হলের নামকরণ করা হয়। বর্তমানে এ হলের অধিনে ১১৭ জন বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে, এর মধ্যে ১৭ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ও ইনস্টিস্টিউট এ অধ্যয়নরত। বাকীরা অধিভুক্ত কলেজ ও ইনস্টিটিউটে। কিছু সংখ্যক শিক্ষক ও কর্মকর্তা হলে বসবাস করছেন। ভিজিটিং গবেষক ও স্কলারগণের জন্য এখানে রয়েছে ৯ টি অতিথি কক্ষ। হল যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন করে থাকে। হলে অবস্থানরত ছাত্রদের জন্য কর্তৃপক্ষ ইনডোর গেইমস প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ ডাইনিং হল ও রান্নাঘর রয়েছে। ছাত্ররা কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের সুবিধাসহ একটি লাইব্রেরিও ব্যবহার করছে। এছাড়া হলের সম্মুখে দুইপাশে দুটি বাগান রয়েছে।
বর্তমানে হলের প্রাধ্যক্ষ হিসেবে আছেন ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট এর অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দিন।[১৫]
অমর একুশে হলসম্পাদনা
ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রদর্শন স্বরপ ২০০১ সালের ২৫শে মে তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন অমর একুশে হল। ড. মোঃ শহিদুল্লাহ হলের পিছনে অবস্থিত এশিয়াটিক সোসাইটি ও বাবুপুুরা পুলিশ ফাঁড়ির মধ্যবর্তী এলাকায় হলটির অবস্থান। ভাষা শহিদ স্মরণে হলের ভবনগুলোর নামকরণ করা হয়েছে শহিদ রফিক ভবন, শহিদ সালাম ভবন, শহিদ বরকত ভবন এবং শহিদ জব্বার ভবন। হলের প্রভোস্ট হিসেবে বর্তমানে কর্মরত আছেন পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইশতিয়াক এম সৈয়দ।
হলের আবাসিক ছাত্র সংখ্যা ৪২৫ জন এবং অনাবাসিক ৩৭০ জন।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলসম্পাদনা
মহীয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এর নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত হয় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। ২০০১ সালের ০৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হল উদ্বোধন করেন। এই হলে আছে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা ডিবেটিং ক্লাব, আর্তমানবতার সেবার জন্য বাঁধন সংগঠন, রেঞ্জার ইউনিট, লাইব্রেরি, তিনটি পাঠ কক্ষ। এছাড়াও আছে সংস্কৃতি চর্চা কক্ষ, অডিটোরিয়াম, ইন্টারনেট সুবিধা। হলের অভ্যন্তরে ফোন, লন্ড্রি, ফটোস্ট্যাট ও বিপণী আছে।[১৬]
বিজয় একাত্তর হলসম্পাদনা
৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম, মনোরম স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এ হলটি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, দেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বৃহত্তম হল। হলটির অবস্থান মাস্টারদা সূর্যসেন হল এবং জিয়া হলের মাঝামাঝি স্থানে।
২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নতুন হল উদ্বোধন করেন। এই হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টুইন-টাওয়ার বলে খ্যাত।
এ হলের তিনটি ব্লকের নাম বাংলাদেশের প্রধান ৩টি নদী যথাক্রমে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা নামে নামকরণ করা হয়েছে। হলটিতে ছাত্রদের জন্য চারটি লিফট, একটি সুসজ্জিত গেস্টরুম, একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, দুটি পাঠকক্ষ, একটি কম্পিউটার ল্যাব, একটি কাউন্সেলিং রুম, হল সংসদ কক্ষ (স্থাপিত ২০১৯), একটি সেলুন, একটি সুবিশাল হল অডিটোরিয়াম ও দূরদর্শন কক্ষ, বাঁধনের হল শাখার রুম, একটি ইনডোর গেমসরুম (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় গণরুম নামে খ্যাত), একটি অত্যাধুনিক জিমনেশিয়াম, একটি পত্রিকা পাঠকক্ষ, একটি পাঠাগার ও একটি বিশাল মসজিদ রয়েছে। বর্তমানে এই হলের প্রাধ্যক্ষ ড. আব্দুল বাছির।
কবি সুফিয়া কামাল হলসম্পাদনা
কবি সুফিয়া কামালের নাম অনুসারে এই হলের নাম করন করা হয়। ১৪ ই নভেম্বর, ২০১২ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক কবি সুফিয়া কামাল হল উদ্বোধন করা হয়।
হলটি কার্জন হলের বিপরীতে অবস্থিত, সেখানে উত্তর এবং দক্ষিনে দু’টি ১০ তলা বিশিষ্ট দালান। পূর্ব দিকে নির্মিত হয়েছে চার তলা মাল্টিপারপাস এবং পশ্চিম দিকে নির্মিত হয়েছে ৪ তলা প্রশাসনিক ভবন। ছাত্রীদের অভিভাবকের জন্য নির্মিত হয়েছে মেইন গেট সংলগ্ন রুম। এছাড়া আবাসিক এবং সহকারী আবাসিক শিক্ষকদের জন্য ১১ তলা ভিতসহ ২০টি ফ্লাটে রয়েছে আবাসিক শিক্ষক কোয়ার্টার। ছাত্রীদের পড়াশুনার জন্য পাঠ কক্ষ, লাইব্রেরি, সাহিত্য কর্নার ও কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। নামাজ পড়ার জন্য সুপরিসর নামাজ কক্ষ রয়েছে এবং অন্যান্য ছাত্রীদের নিয়মিত অনুশীলনের জন্য রয়েছে মিউজিক রুম এবং নাচঘর। এছাড়া ছাত্রীদের জন্য জরুরী সুবিধাসহ চার বিছানার একটি সিকরুম রয়েছে। বিদেশী ছাত্রীদের থাকার জন্য অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধাসহ ৪ টি অতিথি কক্ষ রয়েছে। হলের ছাত্রীদের সুবিধার্থে হলের অভ্যন্তরে স্থাপন করা হয়েছে ডাইনিং-ক্যান্টিন, লন্ড্রি, ফটোস্ট্যাট, দর্জি, দোকান, বিউটি পার্লার, মেডিসিন কর্নার ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। এসব দোকান থেকে হলের ছাত্রীরা রাত ১০ টা পর্যন্ত সেবা পেয়ে থাকে। হলের ছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য একজন মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
হলে আবাসন সংখ্যা ১,৪০০। দুটি ১০ তলা ভবন প্রদীপ্ত ও প্রত্যয়।
ছাত্রাবাসসম্পাদনা
আই. বি. এ. হোস্টেলসম্পাদনা
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকাতে এই হোস্টেল অবস্থিত। ব্যবসায়ে প্রশাসন ইনস্টিটিউট বা আই.বি.এ.'র ছাত্রদের জন্য এই হোস্টেল।
ডঃ কুদরত-ই-খুদা ছাত্রাবাসসম্পাদনা
ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি এর ছাত্রদের জন্য এই ছাত্রাবাসটি। এটি হাজারীবাগে উক্ত ইনস্টিটিউটের পাশে অবস্থিত।
নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ছাত্রী নিবাসসম্পাদনা
এটি রোকেয়া হলের পাশে অবস্থিত। এটি মাস্টার্স এবং ডক্টরেট পর্যায়ের ছাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত। এর নামকরণ করা হয় (নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী) এর নামে। তিনি মহিলা শিক্ষা প্রসারের জন্য বিখ্যাত।
শহীদ এ্যাথলেট সুলতানা কামাল হোস্টেলসম্পাদনা
এটি ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি এর প্রাঙ্গনে অবস্থিত। এটি ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির ছাত্রীদের জন্য। ২০১৬ সালের ০১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে চার তলা বিশিষ্ট হোস্টেল ভবনটি উদ্ভোধন করা হয়।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিভিউ | Shikkha Web Blog"। শিক্ষা ওয়েব ব্লগ। ২০১৯-০৭-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-২০।
- ↑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ, অধ্যাপাক আব্দুর রাজ্জাকের আলাপচারিতা, সরদার ফজলুল করিম। পৃষ্ঠা-১৭
- ↑ "Home :: Dhaka University Halls"। www.du.ac.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-১৮।
- ↑ "শহীদুল্লাহ হলের নাম পরিবর্তন"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৯-০৫।
- ↑ "Home :: Dhaka University Halls"। www.du.ac.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-১৮।
- ↑ "Home :: Dhaka University Halls"। www.du.ac.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-১৮।
- ↑ "ফজলুল হক মুসলিম হল"। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৫ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৭, ২০১৪।
- ↑ "ফজলুল হক মুসলিম হল"। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১২ জুন ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৪, ২০১৮।
- ↑ Dhakatimes24.com। "ঢাবির জহুরুল হক হলের ২২তম প্রাধ্যক্ষ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া"। Dhakatimes News। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৩-১২।
- ↑ "রোকেয়া হল"। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৫ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জানুয়ারি ২৭, ২০১৪।
- ↑ "Home :: Dhaka University Halls"। www.du.ac.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-১৮।
- ↑ "Home :: Dhaka University Halls"। www.du.ac.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-১৮।
- ↑ "Home :: Dhaka University Halls"। www.du.ac.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-১৮।
- ↑ "Home :: Dhaka University Halls"। www.du.ac.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-১৮।
- ↑ "স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়"। www.du.ac.bd। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২১।
- ↑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েব সাইট