হবিবুর রহমান
শহীদ ড. হবিবুর রহমান (১ জানুয়ারি ১৯২১ - ১৫ এপ্রিল ১৯৭১) ছিলেন একজন বাঙালি শিক্ষাবিদ এবং অধ্যাপক। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যপক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী হবিবুর রহমানকে তার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবন থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং এরপর তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যলয়েই থেকে যান এবং এখানে অবস্থানরত বিভিন্ন মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের নানা সহযোগিতা করেন।
ড. হবিবুর রহমান | |
---|---|
জন্ম | ১ জানুয়ারি ১৯২১ |
মৃত্যু | ১৫ এপ্রিল ১৯৭১ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
পেশা | শিক্ষকতা |
দাম্পত্য সঙ্গী | ওয়াহিদা রহমান |
পুরস্কার | একুশে পদক |
জন্ম এবং শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাহবিবুর রহমান ১৯২১ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার বালিয়াধার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৌলবি কলিম উদ্দিন ভূঁইয়া ও মাতার নাম সিদ্দীকা খাতুন। পিতার পেশা ছিল মূলত কৃষিকাজ। নিজের ইচ্ছায় বালিয়াধার গ্রাম থেকে পাশ্ববর্তী কয়েকটা গ্রামের পরে বটগ্রামের কাছে অবস্থিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। প্রতিদিন প্রায় দেড়-দুই মাইল পথ পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে পড়তে যেতেন হবিবুর রহমান। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকতেই তার অসাধারণ মেধার পরিচয় পাওয়া যায় তার। তিনি পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি লাভ করেন।[১] প্রাথমিক পর্যায় শেষ করে হবিবুর রহমান ভর্তি হন নোয়াখালী জেলাস্থ চাটখিল উপজেলার দত্তপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। এই স্কুল থেকেই ১৯৩৮ সালে পাঁচটি বিষয়ে লেটারসহ স্টারমার্ক পেয়ে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ম্যাট্রিক পাশ করার পর তিনি ভর্তি হন তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে। তিনি ১৯৪০ সালে প্রথম বিভাগে আই.এস.সি. পাস করেন এবং একই বছরে তিনি ভর্তি হয় কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের গণিত বিভাগে বি.এস.সি. অনার্স শ্রেণীতে । ১৯৪৩ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে তিনি অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি এম.এস.সি. ডিগ্রীতে ভর্তি হয় আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৪৬ সালে তিনি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রেকর্ড নম্বরসহ গণিতে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এম.এস.সি. ডিগ্রি লাভ করেন। তার এই অসাধারণ ফলাফলে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ও প্রখ্যাত গণিত বিশারদ স্যার জিয়াউদ্দীন বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এ. কে. ফজলুল হকের নিকট হবিবুরকে স্টেট স্কলারশিপ ও চাকরি দেওয়ার জন্য বিশেষ সুপারিশপত্র দেন।[২]
কর্মজীবন
সম্পাদনাহবিবুর রহমান কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে গণিতের প্রভাষক পদে যোগদানের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে এবং ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ঢাকা কলেজে কর্মরত ছিলেন। ১৯৫৪ সালের নভেম্বরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালেই তিনি কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত শাস্ত্রে ট্রাইপস ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে গণিত বিভাগের রিডার পদে উন্নীত হন। তিনি ফলিত গণিতে উচ্চতর শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে ১৯৬২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে গমন করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলের প্রাধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৭০ সালে পুনরায় গণিত বিভাগের প্রধান নিযুক্ত হন এবং নিখোঁজ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ পদেই নিয়োজিত ছিলেন।[২]
পারিবারিক জীবন
সম্পাদনাআলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই হবিবুর রহমান বিয়ে করেন ওয়াহিদা রহমান'কে। তাদের দুই পুত্র এবং চার কন্যা সন্তান রয়েছে।
প্রকাশনা
সম্পাদনাতার প্রকাশিত গ্রন্থাবলীর মধ্যেঃ
- On Crisis of Civilization (1950),
- On Fermat's Last Theorem ,
- On Fundamental Human Rights (1969),
- নতুন শিক্ষানীতি(১৯৬৯),
- ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক (১৯৭০),
- On Pell's Equation - ইত্যদি উল্লেখযোগ্য।
তিনি ১৯৭০ সালে গণিতের একটি অমীমাংসিত সূত্রের সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
সম্মননা
সম্পাদনারাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার নামানুসারে একটি ছাত্র হলের নামকরণ 'শহীদ হাবিবুর রহমান হল' রেখেছেন। এছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মদানকারী সকল বুদ্ধিজীবির সম্মানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শহীদ হবিবুর রহমান হলে 'বিদ্যার্ঘ' নামে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন।[৩]
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার শহীদ হাবিবুর রহমানকে মরণোত্তর 'একুশে পদক' প্রদান করেছেন।[২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ শহীদ হবিবুর রহমানের সংক্ষিপ্ত জীবনী; শহীদ হবিবুর রহমান হল; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; ২০০৭। - শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারকগ্রন্থ; বাংলা একাডেমী; ১৯৯৪।
- ↑ ক খ গ ":: Welcome to GUNIJAN :: The Eminent :: Largest electronic journal of bangladeshi eminents :."। gunijan.org.bd। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৫।
- ↑ "মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে রাবিতে 'বিদ্যার্ঘ' ভাস্কর্যের উদ্বোধন"। cutimes24.com। ৫ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৫।