স্বয়ম্ভু রাধারমণ মন্দির

স্বয়ম্ভু শ্রীরাধারমণ মন্দির হল বৃন্দাবনের একটি পুরনো হিন্দু মন্দির। এই মন্দিরে কৃষ্ণকে "রাধারমণ" রূপে পূজা করা হয়। ১৫৪২ সাল নাগাদ গোপাল ভট্ট গোস্বামীর অনুরোধে এই মন্দির নির্মিত হয়। এই মন্দিরের কারুকার্য সুন্দর। গৌড়ীয় বৈষ্ণবদের কাছে এই মন্দির বিশেষ পবিত্র। এই মন্দিরে রাধার বিগ্রহের পাশে মন্দিরের মূল শালগ্রাম শিলাগুলি এখনও রাখা আছে।[১]

স্বয়ম্ভু রাধারমণ মন্দির
স্বয়ম্ভু রাধারমণ মন্দিরের প্রবেশদ্বার
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
অবস্থান
অবস্থানবৃন্দাবন, মথুরা জেলা, উত্তর প্রদেশ, ভারত
স্থাপত্য
ধরনরাজস্থানি
সৃষ্টিকারীগোপাল ভট্ট গোস্বামী
উচ্চতা১৬৯.৭৭ মি (৫৫৭ ফু)
ওয়েবসাইট
http://www.radharaman.org/, www.shriradharaman.com/

ইতিহাস সম্পাদনা

“রাধারমণ” কথার অর্থ “রাধার প্রেমিক”। প্রায় ৫০০ বছর আগে গোপাল ভট্ট গোস্বামী এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

চৈতন্য মহাপ্রভুর প্রয়াণের পর গোপাল ভট্ট গোস্বামী অত্যন্ত শোকগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কথিত আছে, এই সময় তিনি স্বপ্নে তার প্রভুর দর্শন পান। স্বপ্নাদেশ অনুসারে তিনি নেপালে গিয়ে কালী-গণ্ডকী নদীতে স্নান করেন। নদীতে পাত্র ডোবানোর সময় তিনি কতকগুলি শালগ্রাম শিলা পেয়েছিলেন। তিনি শিলাগুলিকে নদীতে ফেলে দেন। কিন্তু দ্বিতীয়বার পাত্র ডোবানোর সময় আবার কিছু শালগ্রাম শিলা তার পাত্রে উঠে আসে। তিনি গুনে দেখেন মোট ১২টি শালগ্রাম শিলা তার পাত্রে উঠে এসেছে।

কথিত আছে, জনৈক ভক্ত এই শালগ্রাম শিলাগুলির জন্য কিছু পোশাক ও গয়না দান করতে ইচ্ছুক হন। কিন্তু শিলায় এগুলি নিবেদন করতে সম্মত হননি। আবার ভক্তের দান তিনি ফিরিয়েও দেননি। তাই দানসামগ্রীকে তিনি শিলাগুলির সঙ্গেই রেখে দিতেন। এক পূর্ণিমার সন্ধ্যায় শিলাগুলিকে পূজা করে তিনি একটি বেতের ঝুড়ি চাপা দিয়ে রাখতেন। রাতে সামান্য বিশ্রামের পর ভোরবেলা তিনি যমুনায় স্নান করতে যেনে। স্নান করে ঝুড়ি সরিয়ে শিলাগুলিকে পূজা করতে গিয়ে গোপাল ভট্ট গোস্বামী দেখেন সেখানে শিলার সগে একটি বংশীধারী কৃষ্ণমূর্তিও রয়েছে। শিলাগুলিকে গুণে তিনি দেখেন সেখানে ১২টির জায়গায় ১১টি শিলা ও একটি মূর্তি রয়েছে। ভক্তদের বিশ্বাস অনুসারে, দামোদর শিলা ত্রিভঙ্গানন্দ কৃষ্ণের রূপ ধারণ করেছিলেন। শালগ্রাম শিলা থেকে আপনাআপনি পূর্ণাঙ্গ মূর্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য এই মূর্তিটিকে স্বয়ম্ভু রাধারমণ নামে ডাকা হয়।[২] ভক্তরা এই বিগ্রহটিকে জাগ্রত মনে করেন। তাদের বিশ্বাস, রাধারমণ নির্দিষ্ট পরিবারকে তার দৈনিক সেবার সুযোগ দেন।[২] এই ভাবেই “পাথর থেকে মূর্তিতে রূপান্তরিত হয়ে কৃষ্ণ তাঁর ভক্তের ইচ্ছা পূর্ণ করেছিলেন।” [৩] রাধারমণের সঙ্গে সম্পর্কিত কিংবদন্তিটি কৃষ্ণভক্তিবাদে ঈশ্বর-মানব প্রণয় সম্পর্ক-সংক্রান্ত মতবাদের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় মনে করা হয়।[৪]

এই মন্দিরেই একটি আলাদা চত্বরে গোপাল ভট্ট গোস্বামীর সমাধি আছে। চৈতন্য মহাপ্রভুর ব্যবহৃত একটি বস্ত্রখণ্ডও এই মন্দিরে রক্ষিত আছে।

পাদটীকা সম্পাদনা

  1. The history of Sri Radha Raman Temple
  2. Hawley, John C. (১৯৯২)। At Play with Krishna: Pilgrimage Dramas From Brindavan। Motilal Banarsidass Pub। পৃষ্ঠা 4–5। আইএসবিএন 81-208-0945-9 
  3. D. Anand (১৯৯২)। Krishna: The Living God of Braj। Abhinav Pubns। পৃষ্ঠা 162। আইএসবিএন 81-7017-280-2 
  4. Valpey, Kenneth Russell (২০০৬)। Attending Kṛṣṇa's image: Caitanya Vaiṣṇava mūrti-sevā as devotional truth। New York: Routledge। আইএসবিএন 0-415-38394-3 p.53