স্টুয়ার্ট সারিজ

ইংরেজ ক্রিকেটার

ওয়াল্টার স্টুয়ার্ট সারিজ (ইংরেজি: Walter Stuart Surridge; জন্ম: ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১৭ - মৃত্যু: ১৩ এপ্রিল, ১৯৯২) লন্ডনের হার্ন হিল এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৯ সময়কালে সারে দলের পক্ষে ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, নিচের সারিতে কার্যকরী ডানহাতি ব্যাটিং কৌশল উপস্থাপন করেছেন স্টুয়ার্ট সারিজ

স্টুয়ার্ট সারিজ
১৯৫৫ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে স্টুয়ার্ট সারিজ
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
ওয়াল্টার স্টুয়ার্ট সারিজ
জন্ম(১৯১৭-০৯-০৩)৩ সেপ্টেম্বর ১৯১৭
হার্ন হিল, লন্ডন, ইংল্যান্ড
মৃত্যু১৩ এপ্রিল ১৯৯২(1992-04-13) (বয়স ৭৪)
গ্লোসপ, ডার্বিশায়ার
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি ফাস্ট-মিডিয়াম
ভূমিকাবোলার, অধিনায়ক
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৩৯মাইনর কাউন্টিজ
১৯৪৭–১৯৫৯সারে
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ২৬৭
রানের সংখ্যা ৩,৮৮২
ব্যাটিং গড় ১২.৯৪
১০০/৫০ ০/১০
সর্বোচ্চ রান ৮৭
বল করেছে ৩২,৩১৯
উইকেট ৫০৬
বোলিং গড় ২৮.৮৯
ইনিংসে ৫ উইকেট ২২
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ৭/৪৯
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৩৭৬/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৪ মে ২০১৯

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

সম্পাদনা

দক্ষিণ লন্ডনে জন্মগ্রহণকারী স্টুয়ার্ট সারিজ ইমানুয়েল স্কুলে অধ্যয়ন করেছেন।[] ইমানুয়েল স্কুলে অধ্যয়নরত অবস্থায় অধিনায়কত্ব করেছেন। সারে শৌখিন দলের পক্ষে নিয়মিতভাবে খেলতেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত স্টুয়ার্ট সারিজের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ১৯৩৭ সালে কাউন্টি দলটির দ্বিতীয় একাদশে প্রথম অংশ নেন। ১৯৪৮ সালে অ্যালেক বেডসার টেস্টে অংশ নিলে তিনি নতুন বল হাতে নিয়ে ২৮.৬০ গড়ে ৬৪ উইকেট পান। এরফলে দলে তার স্থান নিশ্চিত হয়ে যায়। ১৯৫১ সালে ব্যাট ও বল হাতে নিজস্ব সেরা খেলা উপহার দেন। গ্ল্যামারগনের বিপক্ষে ৮৭ ও ল্যাঙ্কাশায়ারের বিপক্ষে ৭/৪৯ পান।

১৯৫০-এর দশকের শুরুতে সারে দলে বেশ কয়েকজন শীর্ষমানের বোলারের উপস্থিতি ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইংল্যান্ডের পক্ষে সেরা স্ট্রাইক বোলারের মর্যাদা পেয়েছিলেন অ্যালেক বেডসার। সচরাচর, দেশের সেরা অফ স্পিন বোলার ছিলেন জিম লেকার। টনি লক আক্রমণাত্মক স্লো লেফট-আর্ম বোলার ছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটাব্রায়ান স্ট্যাদাম, ফ্রেড ট্রুম্যানফ্রাঙ্ক টাইসনের তুলনায় পিটার লোডার দূর্বলমানের হলেও ফাস্ট বোলার হিসেবে চমৎকার খেলেছিলেন। দলের ব্যাটিংয়ের মান দূর্বল ছিল। কিন্তু, বিশ্বযুদ্ধের পর পিটার মে সারে দলের অন্যতম সেরা প্রতিভাধর ব্যাটসম্যান হিসেবে আবির্ভূত হন। এ সকল খেলোয়াড় থাকা স্বত্ত্বেও সারে দল কম সফলতা পায়। ১৯৫০ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারের সাথে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা লাভ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এটিই দলের একমাত্র সফলতা ছিল।

অধিনায়কত্ব লাভ

সম্পাদনা

১৯৫১ মৌসুম শেষে স্টুয়ার্ট সারিজকে দলের অধিনায়ক হিসেবে মনোনীত করা হয়।[] কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা সফলতম অধিনায়কের মর্যাদা লাভ করেছেন তিনি। আক্রমণাত্মক কৌশল অবলম্বন করে নিচুসারির দলকে স্বর্ণালী শিখরে নিয়ে যান। ১৯৫০-এর দশকে রেকর্ডসংখ্যক সফলতার মুখ দেখে সারে দল। ১৯৫২ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত একাধারে পাঁচবার তার নেতৃত্বে সারে দল শিরোপা লাভ করেছিল। ১৯৫৫ সালে সহঃ অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন পিটার মে। এরপর পিটার মে’র নেতৃত্বে দলটি আরও দুইবার একাধারে জয় পেয়েছিল। জয়ের এ ধারাটি অদ্যাবধি রেকর্ড হিসেবে রয়ে গেছে।

১৯৫২ থেকে ১৯৫৬ সময়কালে কাউন্টি দলটি ১৪০টি খেলায় অংশ নিয়ে ৮৬টিতে জয় পায় ও ২০টিতে পরাজিত হয়েছিল। ১৯৫৩ সাল বাদে দলটি কেবলমাত্র ১৩টিতে জয় পেয়েছিল।[][] বাদ-বাকী ২৮টি খেলায় অর্ধেকেরও বেশি জয় পায়। তিনি পূর্ববর্তী দুই অধিনায়ক পার্সি ফেন্ডারডগলাস জারদিনের গুণাবলীর সংমিশ্রণ ঘটিয়ে খেলায় অগ্রসর হয়েছিলেন। তবে, উল্লেখযোগ্য দিক ছিল প্লেয়ার্সের বিপক্ষে জেন্টলম্যানের সদস্যরূপে তাকে কখনো অধিনায়কের দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়নি। পাঁচ বছর অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে কেবলমাত্র ১৯৫৩ সালে অর্ধেকেরও কম খেলায় সারে দল জয় পেয়েছিল। ১৯৫৫ সালে ২৮ খেলার মধ্যে ২৩টিতে জয় পায় তার দল। অন্য পাঁচটি খেলায় পরাজিত হয়। পুরো মৌসুমে কোন খেলায় ড্রয়ের দিকে যায়নি।[][]

অন্যতম সেরা সফলতা ছিল মে, ১৯৫৬ সালে ওভালে ইয়ান জনসনের নেতৃত্বাধীন দলের বিপক্ষে দশ উইকেটের ব্যবধানে জয়লাভ করা। ৪৪ বছরেরও অধিক সময় পর কোন কাউন্টি দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় পেয়েছিল।

১৯৫৩ সালে ওভালে ওয়ারউইকশায়ারের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত খেলাটি ৩০ মিনিট বিলম্বে শুরু হয়। ওয়ারউইকশায়ার দ্রুত ৪৫ রান তুলে ইনিংস গুটিয়ে ফেলে। সারে দলের পক্ষে তিনটি ছক্কা হাঁকিয়ে ১৪৬ রানে শেষ করে। এরপর দলটি ৭০ মিনিটে ৫২ রান তুলে স্বাগতিকদের কাছে পরাজিত হয়। সারিজ অতিরিক্ত অর্ধ-ঘণ্টা দাবী করেন এবং ঐ দিনই ইনিংস ও ৪৯ রানের ব্যবধানে দলের জয় নিশ্চিত করেন। এক বছর পর আরেকটি ভেজা পিচে ওরচেস্টারশায়ারকে ২৫ ও ৪০ রানে গুটিয়ে দিয়ে পাঁচ ঘণ্টার খেলায় ইনিংস ও ২৭ রানে জয় এনে দেন। অনেকক্ষেত্রে তার চাতুর্যপূর্ণ কৌশল গ্রহণ বেশ হঠকারীপূর্ণ ছিল। দূর্বলতম দল ওরচেস্টারশায়ারের বিপক্ষে প্রতিপক্ষকে ২৫ রানে অলআউট করার পর সারে দল ৯২/৩ তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। এরপর ওরচেস্টারশায়ারকে পুনরায় ৪০ রানে অলআউট করে ইনিংস ও ২৭ রানে জয় তুলে নেয়। আবহাওয়াও তেমন ভালো ছিল না। তিনি বলেছিলেন যে, সারের টেস্ট ক্রিকেটারেরা ইংল্যান্ডের পক্ষে খেলতে গেলেও তাদের পরিবর্তে গঠিত দলও ভালো খেলবে।

২৬৭টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ২৮.৮৯ গড়ে ৫০৬ উইকেট পান। ১২.৯৪ গড়ে ৩,৮৮২ রান করেন। এছাড়াও, ৩৭৫ ক্যাচ করেছিলেন তিনি। তন্মধ্যে, ১৯৫২ সালে পেয়েছিলেন ৫৮ ক্যাচ। ১৯৫৯-৬০ মৌসুমে সারে দলের সাথে রোডেশিয়া গমন করেন। ১৯৬১ সালে একই দলের সাথে বারমুদা যান।

মূল্যায়ন

সম্পাদনা

ঘরোয়া ক্রিকেটে অনন্য সাধারণ ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৫৩ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন তিনি।[] ক্রিকেট ব্যাট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচিত পরিবারে স্টুয়ার্ট সারিজের জন্ম। তিনি মাঝারিমানের ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। নিচেরসারিতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ডানহাতে ফাস্ট-মিডিয়াম বোলার হিসেবে তার পরিচিতি ছিল। ৩০ বছরের পূর্বে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। সচরাচর দলের কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হলে কিংবা টেস্ট খেলায় ব্যস্ত থাকলে শূন্যতা পূরণে তাকে খেলার জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হতো।

স্টুয়ার্ট সারিজ সহজপন্থায় অধিনায়ক কর্মে অগ্রসর হয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে বোলার ও ক্যাচ খেলা জয়ে প্রধান সহায়ক। তিনি যতটুকু সম্ভব খেলায় জয়ের দিকে তৎপর ছিলেন। উইকেটের কাছে ভীতিহীন অবস্থায় ফিল্ডিংয়ে নামতেন। অন্যদেরকেও তা অনুসরণে অন্যদেরকে উদ্বুদ্ধ করতেন।

অ্যালেক বেডসার মন্তব্য করেন যে, সারিজ অধিনায়কত্ব লাভের পর তার দিনপঞ্জীতে উল্লেখ করেছিলেন যে, সারে পরবর্তী পাঁচ বছর চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা লাভ করবে। তিনি কখনো স্বৈরাচারী ছিলেন না। নিজস্ব চিন্তাভাবনা প্রায়শই দলের খেলোয়াড়দের মাঝে বিনিময় করতেন। অধিনায়ক হবার পূর্বে তরুণ খেলোয়াড়দের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখতেন ও অনানুষ্ঠানিক মত বিনিময় করতেন। ব্যাটসম্যান কিংবা বোলার হিসেবে তেমন সফলতা লাভ করেননি স্টুয়ার্ট সারিজ। তবে, তার অধিনায়কত্বে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা সফলতা লাভ করে সারে ক্রিকেট দল। কিন্তু, ইংল্যান্ডের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণের সুযোগ হয়নি তার।

১৮৭০-এর দশকে সারিজের পিতামহ ব্যাট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। ক্রিকেট খেলার বাইরে তিনি তার পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্রিকেট ব্যাট নির্মাণে কাজ করতেন। হার্বার্ট সাটক্লিফদিলীপসিংজীর ন্যায় খেলোয়াড়েরা ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যাট ব্যবহার করতেন। বর্তমানে ঐ প্রতিষ্ঠানটি তার পুত্র স্টুয়ার্ট স্পাইসার সারিজ পরিচালনা করছেন।

১৯৫৬ সালে খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর সারে কমিটিতে অংশ নিতেন ও ব্যাট প্রস্তুতকারী ব্যবসায় ব্যস্ত থাকতেন। ১৯৮১ সালে সারের প্রেসিডেন্ট হন। ১৯৯৭ সালে তার বিধবা পত্নী বেটিও এই দায়িত্বে ছিলেন। প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে ভূপতিত হন ও ১৩ এপ্রিল, ১৯৯২ তারিখে ৭৪ বছর বয়সে ডার্বিশায়ারের গ্লোসপ এলাকায় স্টুয়ার্ট সারিজের দেহাবসান ঘটে। তার সন্তান স্টুয়ার্টও একবার ১৯৭৮ সালে সারে দলের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলেছিলেন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Wisden – Biographies"। Content.cricinfo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১০-২৪ 
  2. "Surrey Club Captains"CricketArchive। cricketarchive.com। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০১১ 
  3. "Batting and Fielding in County Championship 1953 (Ordered by Runs)"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১১ 
  4. "Bowling in County Championship 1953 (Ordered by Wickets)"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১১ 
  5. "Batting and Fielding in County Championship 1955 (Ordered by Runs)"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১১ 
  6. "Bowling in County Championship 1955 (Ordered by Wickets)"। CricketArchive। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১১ 
  7. "Wisden's Five Cricketers of the Year"ESPNcricinfoESPN। ২৩ মার্চ ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০১৫ 

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা