স্টুই ডেম্পস্টার

নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটার
(স্টিউই ডেম্পস্টার থেকে পুনর্নির্দেশিত)

চার্লস স্টুয়ার্ট স্টুই ডেম্পস্টার (ইংরেজি: Stewie Dempster; জন্ম: ১৫ নভেম্বর, ১৯০৩ - মৃত্যু: ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৪) ওয়েলিংটনে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত নিউজিল্যান্ডীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ও কোচ ছিলেন। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩০ থেকে ১৯৩৩ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অংশ নিয়েছেন।

স্টুই ডেম্পস্টার
১৯৩১ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে কার্লি পেজের সাথে স্টুই ডেম্পস্টার (বামে)
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামচার্লস স্টুই ডেম্পস্টার
জন্ম(১৯০৩-১১-১৫)১৫ নভেম্বর ১৯০৩
ওয়েলিংটন, নিউজিল্যান্ড
মৃত্যু১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪(1974-02-14) (বয়স ৭০)
ওয়েলিংটন, নিউজিল্যান্ড
ডাকনামস্টুই
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি স্লো
ভূমিকাব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ )
১০ জানুয়ারি ১৯৩০ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট৩১ মার্চ ১৯৩৩ বনাম ইংল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯২১/২২-১৯৪৭/৪৮ওয়েলিংটন
১৯৩৫-১৯৩৯লিচেস্টারশায়ার
১৯৪৬ওয়ারউইকশায়ার
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ১০ ১৮৪
রানের সংখ্যা ৭২৩ ১২১৪৫
ব্যাটিং গড় ৬৫.৭২ ৪৪.৯৮
১০০/৫০ ২/৫ ৩৫/৫৫
সর্বোচ্চ রান ১৩৬ ২১২
বল করেছে ৩৮৮
উইকেট
বোলিং গড় ৩৭.৫০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ০/১০ ২/৪
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ২/০ ৯৪/২
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৬ এপ্রিল ২০১৮

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ওয়েলিংটন, স্কটল্যান্ড এবং প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে লিচেস্টারশায়ার ও ওয়ারউইকশায়ারের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন। এছাড়াও, ডানহাতে স্লো বোলিং করতেন স্টুই ডেম্পস্টার

প্রারম্ভিক জীবন সম্পাদনা

স্কটিশ পিতা-মাতা চার্লস ডেম্পস্টার ও এলিজা জেমিমা ওয়েভার্স দম্পতির সন্তানরূপে ১৯০৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জীবনের প্রথম তিন দশক ওয়েলিংটনে পার করে দেন। এ সময়ে নিকটস্থ স্থানীয় ক্রিকেট মাঠ ব্যাসিন রিজার্ভে খেলতেন। শুরুরদিকেই এ খেলাটির দিকে আগ্রহ জন্মায়। তরুণ অবস্থায় ওয়েলিংটন বয়েজ ইন্সটিটিউট দলের মাধ্যমে খেলা শুরু করেন। বাবার উৎসাহ-উদ্দীপনা ও পরামর্শে শতরান করতে থাকেন। প্রতিটি শতরানের জন্য বাবার কাছ থেকে ৫ শিলিং করে অর্থ পেতেন। খেলোয়াড়ী জীবনের সেরা সময়কালে দশটি ইনিংসের মধ্যে নয়টি শতরান করেন। বাদ-বাকী ইনিংসটিতে ৯৯ রান তুলেছিলেন। ফলশ্রুতিতে, তার প্রতি স্থানীয় প্রাদেশিক দল নির্বাচকমণ্ডলীর দৃষ্টি আকর্ষিত হয়।[১]

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট সম্পাদনা

১৯২১-২২ মৌসুমে ওয়েলিংটনের সদস্যরূপে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে স্টুই ডেম্পস্টারের। নববর্ষের দিনে ব্যাসিন রিজার্ভে ক্যান্টারবারির বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় তিনি ১০ ও ১ রান তুলেছিলেন। ১৯২৭ সালে নিউজিল্যান্ড দলের সদস্যরূপে ইংল্যান্ড সফরে যান। তবে ঐ সফরে কোন টেস্ট খেলায় অংশ নেয়নি তার দল। তবে সফরে দলের প্রথম-শ্রেণীর খেলাগুলোয় অংশ নিয়ে ব্যাটিং গড়ে দলের শীর্ষ রান সংগ্রাহক হন। শুরুরদিকে দলের বাইরে ছিলেন। কিন্তু দল নির্বাচকমণ্ডলী আকস্মিকভাবে তাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করে মূলতঃ দ্বিতীয় শ্রেণীর খেলায় তার চমৎকার ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শনের কারণে।[২]

১৯২৯-৩০ মৌসুমে এমসিসি দল নিউজিল্যান্ড সফরে আসে। ডেম্পস্টার ও জন মিলস প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং উদ্বোধনে নামেন ও ২৭৬ রান তুলেন। তাদের সংগৃহীত এ রান ১৯৭২ সাল পর্যন্ত টিকেছিল। ১৯৩১ সালে নিউজিল্যান্ড দল ইংল্যান্ড সফরে যায়। লর্ডস টেস্টে ১২০ রানের ইনিংস উপহার দেন। ২৩০ রানে নিউজিল্যান্ড দল পিছিয়ে ছিল। তৃতীয় উইকেটে কার্লি পেজের সাথে ১১৮ রান তুলেন।[৩]

১৯৩২-৩৩ মৌসুমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছিলেন। খেলায় তিনি অপরাজিত ৮৩ রান তুলেছিলেন।

ইংল্যান্ড গমন সম্পাদনা

এরপর ডেম্পস্টার ইংল্যান্ডের দিকে পা বাড়ান। ১৯৩৩ সালে লিন্ডসে পার্কিনসন্স একাদশ দলের সদস্যরূপে একটি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। এছাড়াও একবার স্কটল্যান্ডের পক্ষে ১৯৩৪ সালে খেলেন। ১৯৩৫ সাল থেকে ইংল্যান্ডে বসবাস করতে থাকেন স্টুই ডেম্পস্টার। লিচেস্টারশায়ারের ধনাঢ্য ব্যক্তি স্যার জুলিয়েন কানের সাথে তার ব্যক্তিগত দলের পক্ষে খেলার জন্য চুক্তিতে আবদ্ধ হন। এ সময় ডেম্পস্টার লিচেস্টারশায়ার দলে খেলার যোগ্যতা লাভ করেন। ১৯৩৬ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত দলের অধিনায়কেরও দায়িত্বে ছিলেন। তবে, ১৯৩৮ ও ১৯৩৯ সালে অনিয়মিতভাবে খেলেন তিনি। ১৯৩৮-৩৯ মৌসুমে কান একাদশ দলের সদস্যরূপে নিউজিল্যান্ড গমন করেন।

এরফলে তিনি কাউন্টি ক্রিকেটে শৌখিন খেলোয়াড়ের মর্যাদা পান ও এরপর কাউন্টি দলনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এছাড়াও, কানের মনোনীত কর্মী হিসেবে লিচেস্টারে আসবাবপত্রের দোকানে ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করতেন। সেখানে অবস্থানকালেই লিচেস্টারে জন্মগ্রহণকারী এক তরুণীর সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন।[৪]

যুদ্ধ-পরবর্তী সময়কাল সম্পাদনা

যুদ্ধ চলাকালীন কাউন্টি ক্রিকেট দলের পক্ষে খেলতেন। কিন্তু যুদ্ধ শেষ হবার পরপরই তিনি দল ত্যাগ করেন। ১৯৪৬ সালে ওয়ারউইকশায়ারের পক্ষে তিন খেলায় অংশ নেন। এরপর নিউজিল্যান্ডে চলে যান ও কোচের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ক্রাইস্টচার্চে সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টেস্টে খেলার জন্য মনোনীত হন স্টুই ডেম্পস্টার। কিন্তু খেলা শুরুর পূর্বরাত্রে চোখে আঘাতপ্রাপ্তির কারণে দল থেকে নিজ নাম প্রত্যাহার করে নেন। তবে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়েছিল। জানুয়ারি, ১৯৪৮ তারিখে ডেম্পস্টার ওয়েলিংটনের পক্ষে সর্বশেষ খেলায় অংশ নেন। ইডেন পার্কে অনুষ্ঠিত খেলায় অকল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি ৭ ও ৪১ রান তুলেছিলেন।

অর্জনসমূহ সম্পাদনা

টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড়ের অধিকারী তিনি। পূর্ণাঙ্গ খেলোয়াড়ী জীবনে ১০ বা ততোধিক ইনিংস খেলা ক্রিকেটারদের মধ্যে স্যার ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যানের পরই তিনি এ অনন্য সাধারণ অর্জনে স্বীয় সক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন।[৫]

১৯৩২ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় অভিষিক্ত হন তিনি।

খেলার জগৎ থেকে অবসর নেয়ার পর ওয়েলিংটনে অনেকগুলো বছর প্রথিতযশা কোচের মর্যাদা লাভ করেন। তন্মধ্যে, ব্রুস এডগারইয়ান স্মিথের ন্যায় খেলোয়াড়েরা তার ছাত্র হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন।

পরিসংখ্যান সম্পাদনা

পূর্ণাঙ্গ টেস্ট জীবন ব্যাটিং গড়
ডোনাল্ড ব্র্যাডম্যান (অস্ট্রেলিয়া)
৯৯.৯৪
স্টুই ডেম্পস্টার (নিউজিল্যান্ড)
৬৫.৭২
সিড বার্নস (অস্ট্রেলিয়া)
৬৩.০৫
গ্রেইম পোলক (দক্ষিণ আফ্রিকা)
৬০.৯৭
জর্জ হ্যাডলি (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
৬০.৮৩
হার্বার্ট সাটক্লিফ (ইংল্যান্ড)
৬০.৭৩
এডি পেন্টার (ইংল্যান্ড)
৫৯.২৩
কেন ব্যারিংটন (ইংল্যান্ড)
৫৮.৬৭
এভারটন উইকস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
৫৮.৬১
কে.এস. দিলীপসিংজী (ইংল্যান্ড)
৫৮.৫২
ওয়ালি হ্যামন্ড (ইংল্যান্ড)
৫৮.৪৫
গারফিল্ড সোবার্স (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
৫৭.৭৮
জ্যাক হবস (ইংল্যান্ড)
৫৬.৯৪
জ্যাক রাসেল (ইংল্যান্ড)
৫৬.৮৭
ক্লাইড ওয়ালকট (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
৫৬.৬৮

উৎস: ক্রিকেটআর্কাইভ
যোগ্যতা: ১০ পূর্ণাঙ্গ ইনিংস,
পূর্ণাঙ্গ খেলোয়াড়ী জীবন।
  • কলামে বর্ণিত খেলা বলতে স্টুই ডেম্পস্টারের টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের খেলার নম্বরকে বুঝিয়েছে।

টেস্ট শতকসমূহ সম্পাদনা

স্টুই ডেম্পস্টারের টেস্ট শতকসমূহ[৬]
# রান খেলা প্রতিপক্ষ শহর/দেশ মাঠ সাল ফলাফল
১৩৬   ইংল্যান্ড   ওয়েলিংটন, নিউজিল্যান্ড ব্যাসিন রিজার্ভ ১৯৩০ ড্র
১২০   ইংল্যান্ড   লন্ডন, ইংল্যান্ড লর্ডস ১৯৩১ ড্র

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Dempster, Charles Stewart, Te Ara, 10 August 2015.
  2. Cricketer Spring Annual 1927
  3. England v New Zealand, Lord's, 1931
  4. Nigel Smith, Kiwis Declare: Players Tell the Story of New Zealand Cricket, Random House, Auckland, 1994, pp. 58–59.
  5. "Batting averages"। ২৭ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১৮ 
  6. Statsguru: Stewie Dempster, Cricinfo, 7 March 2015.

আরও পড়ুন সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা