সৌম্যেন্দ্র নাথ ঠাকুর

সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর (৪ অক্টোবর ১৯০১― ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪) একজন সাম্যবাদী বিপ্লবী, লেখক ও চিন্তাবিদ ছিলেন।[২]

সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর
জন্ম(১৯০১-১০-০৪)৪ অক্টোবর ১৯০১[১]
জোড়াসাঁকো, ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪(1974-09-22) (বয়স ৭২)
জাতীয়তাভারতীয়
আন্দোলনসাম্যবাদ

বংশ পরিচয় সম্পাদনা

সৌম্যেন্দ্র নাথ ঠাকুর কলকাতার বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের সন্তান। মা চারুবালা দেবী ঢাকার বিখ্যাত নবকান্ত চট্টোপাধ্যায়ে কন্যা। পিতা সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রপিতামহ ছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ। যদিও সাম্যবাদী ও মানবতাবাদী চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হয়ে চিরকাল ঠাকুর পরিবারের ব্যতিক্রমী পুরুষ হিসেবে পরিচিত হয়েছেন তিনি। মানবেন্দ্রনাথ রায়ের পরেই আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে বাঙালী হিসেবে সৌম্যেন্দ্রনাথ সমধিক আলোচিত ব্যক্তিত্ব।

শিক্ষা সম্পাদনা

১৯১৭ তে মিত্র ইন্সটিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক ও প্রেসিডেন্সি কলেজ হতে ১৯২১ সালে অর্থনীতিতে অনার্স সহ বি এ পাশ করেন। তিনি মেধাবী ছাত্র ছিলেন, বর্ধমানরাজ-প্রদত্ত এক বছরের জন্য মাসিক ১০ টাকা সিনিয়র স্কলারশিপ পান।

রাজনীতি সম্পাদনা

জোড়াসাঁকোর পারিবারিক ঐতিহ্য ও চিন্তার বিপ্রতীপে তিনি সাম্যবাদী ভাবধারায় আকৃষ্ট হন। নিখিল ভারত ছাত্র সম্মেলনে যোগ দিতে আমেদাবাদে যান ১৯২১ এ। কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো ও রুশ বিপ্লব সম্পর্কিত বইপত্র পাঠ করে এবং কাজী নজরুল ইসলাম, মুজফ্‌ফর আহ্‌মেদের সাহচর্যে তিনি কমিউনিজমে দিকে অগ্রসর হন। বাগ্মী হিসেবে তার ভারতজোড়া খ্যাতি ছিল। তারই কৃত প্রথম কমিউনিস্ট ইস্তেহারের বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয় কবি নজরুল সম্পাদিত 'লাঙল' পত্রিকায়। শ্রমিক কৃষক দলের দ্বিতীয় সম্মেলনে তিনি অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। তার পিতা দেশের ব্রিটিশ বিরোধী রাজনীতি থেকে দূরে রাখার জন্যে ১৯২৭ সালে ইউরোপে পাঠালে বিদেশের কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন।[৩]

আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট কংগ্রেসে সম্পাদনা

১৯২৮ সালে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট কংগ্রেসে ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে মস্কো যান এবং সেসময় থেকে আন্দোলনের পুরোভাগে থাকেন। এর ফলে ব্রিটিশ এবং জার্মান সরকারের জেলে থাকতে হয় বেশ কিছুদিন। দেশে ফেরার পরেও গ্রেপ্তার হন ও আট বছর কারান্তরালে বাস করতে হয়।[৩][৪]

পার্টি গঠন সম্পাদনা

১৯৩৭ সালে The Revolutionary Communist Party of India (আর সি পি আই) দল গঠন করেন পরবর্তী সময়ে তার দল দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যায়।

সাহিত্যচর্চা সম্পাদনা

রাজনীতির পাশাপাশি সৌম্যেন্দ্রনাথ সাহিত্যচর্চা ও সংগীতচর্চা করে গেছেন আজীবন। কল্লোল গোষ্ঠীর একজন সুলেখক হিসেবে পরিচিতি ছিল তার।[৫] জার্মান, ফ্রেঞ্চ, রাশিয়ান ও ইংরেজিতে বহু গ্রন্থ রচনা ও অনুবাদ করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলির মধ্যে আছে বিপ্লবী রাশিয়া, ত্রয়ী, যাত্রী, রবীন্দ্রনাথের গান, কমিউনিজম ও ফ্যাসিজম, গান্ধী ( ফরাসী ভাষায়), ট্যাকটিকস এন্ড স্ট্র‍্যাটেজি অফ রেভলিউশন প্রভৃতি।[৩] কমিউনিস্ট নেতাদের মধ্যে মানবেন্দ্রনাথকে বাদ দিলে তার লেখাপত্রই সবচেয়ে বেশি রাজরোষে পড়ে। ১৯৩৪ সালের আগেই তার তিনটি বই বাজেয়াপ্ত হয়। সেগুলি হল বিপ্লব বৈশাখী, ইনকিলাব জিন্দাবাদ, লাল নিশান। স্বরাষ্ট্র বিভাগ ও গোয়েন্দা দপ্তরের মতে তার সব বইই বাজেয়াপ্ত করার যোগ্য ছিল। 'সাম্রাজ্যবাদ বিরোধীই কংগ্রেস বিরোধী', 'চাষীর কথা', 'বন্দী' ও কিছু ইংরেজি বই 'পেজ্যান্ট রিভোল্ট ইন মালাবার', 'রেড হিন্দুস্থান', 'ওয়েলস ইন বেঙ্গল', 'ব্রিটিশ টেরর ইন ইন্ডিয়া', 'হররস ইন ঢাকা জেল' বাজেয়াপ্ত হয়েছিল সরকারের দ্বারা।[৬]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৮৩৫, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. রীতা রায় মিঠু। "ঠাকুরবাড়ির আঁতুড়ঘরে"। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. প্রমথ খন্ড, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত (২০০২)। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৬০৭। আইএসবিএন 81-85626-65-0 
  4. সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯৭৫)। যাত্রী। কলকাতা: জেনারেল প্রিন্টার্স। পৃষ্ঠা ১২২। 
  5. "RBU Online catalog › Results of search for 'pb:বৈতানিক'"opac.rbu.net.in (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-১৪  line feed character in |শিরোনাম= at position 21 (সাহায্য)
  6. শিশির কর (২০০৯ জুলাই)। ব্রিটিশ শাসনে বাজেয়াপ্ত বাংলা বই। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স প্রা লি। পৃষ্ঠা ১৮১, ১৮৬। আইএসবিএন 81-7066-137-4  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)