সোয়ালোটেল প্রজাপতি

কীটপতঙ্গের পরিবার

সোয়ালোটেল (ইংরেজি: Swallowtail) প্রজাপতিরা বড় মাপের রঙিন প্রজাপতি। বিশ্ব জুড়ে ৫৫০টিরও বেশি প্রজাতির সোয়ালোটেল আছে। এরা  প্যাপিলিওনিডি (Papilionidae)  পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। অধিকাংশই ক্রান্তীয় অঞ্চলের প্রজাপতি, অ্যান্টার্কটিকা বাদে বাকি প্রতিটি মহাদেশেই এদের দেখা মিলবে। সোয়ালোটেল পরিবারের মধ্যেই দেখা পাওয়া যায় বিশ্বের বৃহত্তম প্রজাপতির দল বার্ডউইং-দের (birdwing)। বার্ডউইংরা অরনিথোপ্টেরা গণের (genus Ornithoptera) প্রজাতি।[১]

সোয়ালোটেল
Swallowtail butterfly
Some species of the Papilionidae
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Arthropoda
শ্রেণী: Insecta
বর্গ: Lepidoptera
উপবর্গ: Ditrysia
মহাপরিবার: Papilionoidea
পরিবার: Papilionidae
Latreille, [1802]
আদর্শ প্রজাতি
Papilio machaon
(Old World swallowtail)
Subfamilies and genera

There are 31 genera and about 600 species:

একটি সোয়ালোটেল প্রজাপতি

সোয়ালোটেল প্রজাপতিদের অনেকগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে।  যেমন, এদের শূককীটদের শরীরে একটি দুর্গন্ধস্রাবী অঙ্গ দেখতে পাওয়া যায়। একে বলা চলে ‘দুর্বাসা জিহ্বা’[২], ইংরিজিতে বলে ‘ওসমেটেরিয়াম’ (osmeterium)। এই অঙ্গটি লুকনো থাকে শূককীটের বক্ষের সম্মুখবর্তী অংশ প্রোথোরাক্স-এ (prothorax)। উল্টোনো মোজার মতো এটা শরীরের ভেতর ঢোকানো থাকে, ভেতরে ভরা থাকে দুর্গন্ধি তরল। বিপদের আঁচ পেলে এরা এটা বাইরে বার করে আনে, ওল্টানো মোজা সোজা করার মতো ভেতরের পিঠ চলে আসে বাইরে। এই প্রক্রিয়াটা ঘটে শরীরের ভেতরকার তরলের চাপে। [৩]

সোয়ালোটেল প্রজাপতিরা যখন ডানা মেলে বসে থাকে তখন এদের অনেক প্রজাতির ক্ষেত্রে পিছনের ডানার বিন্যাস ও ডানার অন্তিমে থাকা ছুঁচলো অংশটার জন্য সোয়ালো পাখির চেরা-লেজের সঙ্গে একটা সাদৃশ্য আসে। এই বৈশিষ্ট্যটাই এই পরিবারটার সোয়ালোটেল নামের সূত্র।   লাতিন ভাষায় প্রজাপতির প্রতিশব্দ হল Papilio ক্যারোলাস লিনিয়াস এই নামটিকেই পরিবারটির ‘টাইপ জেনাস’ (type genus) হিসেবে ধার্য করেছিলেন। প্রজাপতির নামের প্রজাতিসূচক অংশের (specific epithets) জন্য লিনিয়াস বেছে নিয়েছিলেন গ্রিক বীরদের নাম। যেমন, লিনিয়াসের নির্ধারিত ‘টাইপ স্পিসিস’ (type species) প্যাপিলিও মাখেয়ন (Papilio machaon)-এর প্রজাতি-নামটি এসেছে গ্রিক বীর মাখেয়ন-এর সূত্রে। ইলিয়াড-এ মাখেয়ন-এর উল্লেখ আছে, তিনি ছিলেন আস্ক্লিপিয়াস-এর পুত্র।.[৪]

প্রজাতির বিস্তার সম্পাদনা

বর্তমান পৃথিবীতে ৫৫২টি প্যাপিলিওনিডি পরিবারের প্রজাপতি রয়েছে (২০০৫ সাল অবধি পাওয়া হিসেব)। সমগ্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এরা ছড়িয়ে আছে।[৫] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে শুরু করে পর্বতের উচ্চতর এলাকা অবধি বিভিন্ন উচ্চতায় এদের পাওয়া যায়। অ্যাপোলো প্রজাপতি (পারনাসিয়াস Parnassius প্রজাতি) যেমন পার্বত্য অঞ্চলেই পাওয়া যায়, কোনও কোনও প্রজাতিকে এমনকী ৬০০০ মিটার উচ্চতাতেও মেলে।  তবে ক্রান্তীয় এবং উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলেই এদের ঘনত্ব বেশি, বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ও পূর্ব এশিয়ায়।  [৬]

উত্তরতম অক্ষাংশে যে প্যাপিলিওনিডি প্রজাপতিটিকে পাওয়া যায় তার নাম আর্কটিক অ্যাপোলো (Parnassius arcticus)। প্রাপ্তিস্থান সুমেরু বৃত্তে অবস্থিত উত্তর-পূর্ব ইয়াকুটিয়া (Yakutia, রাশিয়ান ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত একটি রাজ্য)। সেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উচ্চতায় এটির বাস।[৭] হিমালয়ের অ্যাপোলো প্রজাপতি, যেমন কমন রেড অ্যাপোলো (Common Red Apollo, Parnassius epaphusপাওয়া যায় ৬০০০ মিটার উচ্চতায়।[৮]:221

চেহারা/বহিঃ অঙ্গ সংস্থান সম্পাদনা

বিংহ্যাম-এর বইতে [Bingham (1905)] প্যাপিলিওনিডি প্রজাপতিদের বৈশিষ্ট্যসূচক যে বর্ণনা দেওয়া আছে তা এরকম:[৯]

ডিম. "গম্বুজ আকৃতির, তার ত্বক মসৃণ হতে পারে, বা অস্পষ্টরকমে পল-কাটা থাকতে পারে। যতটা চওড়া ততটা খাড়া নয়। কিছুটা চিমড়ে ভাব, অস্বচ্ছ।" (ডোহার্টি, Doherty)

শূককীট. হৃষ্টপুষ্ট। অঙ্গ সচরাচর মসৃণ। কোনও ক্ষেত্রে ওপর পিঠে মাংসল বৃন্তসদৃশ উদ্গম (tubercles) থাকতে পারে। চতুর্থ দেহখণ্ডে একটি উত্থিত মাংসল স্ফীতিও ( protuberance, তথাকথিত ‘হুড’ hood বা ‘ক্রেস্ট’ crest) দেখা যেতে পারে। দ্বিতীয় দেহখণ্ডে একটা আড়াআড়ি ছিদ্র দিয়ে মাংসল ‘দুর্বাসা জিহ্বা’ বা ওসমেটেরিয়ামটি বেরিয়ে আসে। উত্থিত অবস্থায় এটাকে দেখতে ইংরিজি Y-এর মতো। লাল বা লালচে কমলা রঙের। এটি থেকে তীব্র, মিষ্টি-মিষ্টি অথচ অসহনীয় গন্ধ বেরয়। 

পিউপা বা মূককীট. বিভিন্ন প্রজাতির মূককীটের চেহারা বিভিন্ন, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পিছন দিকে একটা বাঁক থাকে। গড়নে কৌণিক ভাব আছে (angulate), মাথার দিকটা যেন হঠাৎ ছেঁটে দেওয়া (truncate) বা কখনও গোলপানা। উদর অংশের ওপর পিঠ কখনও মসৃণ, কখনও কিছু উদ্গম দেখা যায় (tuberculate)। শরীরের অন্তিম অংশে ভর রেখে এটি সচরাচর উল্লম্ব অবস্থায় থাকে। শরীরের মাঝামাঝি অংশ দিয়ে রেশমি সুতোর একটা ঘের একটা বাড়তি অবলম্বন হিসেবে কাজ করে। অ্যাপোলো (Parnassius) প্রজাপতির মূককীট থাকে পাতার আবরণে আলগাভাবে বোনা রেশমি সুতোর জালের ভেতর। 

পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতি. ডানার গড়ন নানারকম। পিছনের ডানায় প্রায়শই ছোট লেজের মতো বেরিয়ে থাকা অংশ দেখা যায়। লেজটার গড়ন কখনও সরু ও লম্বা, কখনও একটানা চওড়া, কখনওবা শেষাংশ চামচের মাথার মতো ছড়ানো হতে পারে।  

জায়ান্ট সোয়ালোটেল (Papilio cresphontes) প্রজাপতির জীবনবিকাশের কয়েকটি ধাপ

স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসমূহ সম্পাদনা

অন্যান্য প্রজাপতি পরিবারের সঙ্গে প্যাপিলিওনিডি প্রজাপতিদের কয়েকটি প্রধান পার্থক্য।[১]

  • ‘দুর্বাসা জিহ্বা’[২] (osmeterium)। এটি একটি দ্বিধাবিভক্ত (forked), মাংসল অঙ্গ, যা eversible, অর্থাৎ মোজা বা থলির মতো ভেতরের দিকটিকে বাইরে টেনে আনা যায়। শূককীটের প্রোথোরাক্স-এ এটি থাকে। 
  • শিরাবিন্যাস : সোয়ালোটেল প্রজাপতিদের দ্বিতীয় অ্যানাল শিরা (Anal vein, যে শিরাগুলি প্রজাপতির উদরের নিকটবর্তী), অর্থাৎ 2A, ডানার প্রান্ত অবধি গিয়েছে। এবং এটা প্রথম অ্যানাল শিরা, 1A-র সঙ্গে জুড়ে যায়নি। অন্যান্য প্রজাপতি পরিবারে এই শিরাদুটো পরস্পর জুড়ে রয়েছে এবং 2A শিরাও ডানার প্রান্ত অবধি পৌঁছয়নি। 
  • মাথা আর বক্ষের মধ্যবর্তী অংশ সারভিক্স-এ (Cervix) চামড়া সদৃশ আবরণী, যেগুলোকে বলে স্ক্লেরাইট (sclerite), সেগুলো পরস্পর জুড়ে গেছে। ঘাড়ের নিচে এই অংশেই মাথা নাড়ানোর জন্য পেশিগুলো আটকানো থাকে।

বিশেষ অভিযোজন এবং আত্মরক্ষা সম্পাদনা

সোয়ালোটেল প্রজাপতিদের ভেতর বেটসিয়ান মিমিক্রির (Batesian Mimicry) চল আছে। কোনও কোনও প্রজাপতির শরীরে বিষবৎ বা অরুচিকর রাসায়নিকের উপস্থিতির দরুন খাদক প্রাণীরা তাদের এড়িয়ে চলে। অপর কোনও নির্দোষ প্রজাপতির রূপে এরকম কোনও অরুচিকর প্রজাতির ঘনিষ্ঠ সাদৃশ্য দেখা গেলে তাকে বলে মিমিক্রি, সাদা অর্থে অনুকরণ। এর সুবাদে সম্ভাব্য খাদকরা তাকেও এড়িয়ে চলতে থাকে। বেটসিয়ান মিমিক্রিতে অনুকারী প্রজাতিটা নিজে অরুচিকর চরিত্রের থাকে না। প্রজাপতিদের মিমিক্রির ধরন অন্য বহু প্রাণীর ভেতর মিমিক্রি যেভাবে কাজ করে তার থেকে আলাদা। কালিম বা কমন মরমন (Papilio polytes) প্রজাপতির বেলায় কেবল স্ত্রী প্রজাতির ভেতরই বেটসিয়ান মিমিক্রি দেখা যায়। আবার অন্য বহু প্রজাতি, যেমন চইতক (Tailed Jay, Graphium agamemnon) মিমিক্রি প্রদর্শন করে না।  

মিমিক্রি বা অনুকরণ সম্পাদনা

সোয়ালোটেলদের কয়েকটা উপগোষ্ঠীর মধ্যেই কেবল মিমিক্রি দেখা যায়। স্ত্রী না পুরুষ, নাকি উভয় লিঙ্গের মধ্যেই মিমিক্রি দেখা যাবে তা প্রজাতি অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। মিমিক্রির অধীন প্রজাতিটা মাত্র একটি রূপেরই নকল করবে (অর্থাৎ মোনোমরফিক, monomorphic), না একাধিক রূপের নকল করবে (পলিমরফিক, polymorphic), তাও প্রজাতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট। মিমিক্রির প্রসঙ্গে বিশেষ কৌতূহলকর ঘটনা হল বহুরূপক মিমিক্রি  যা কেবল স্ত্রী-প্রজাতির ভেতরেই সীমাবদ্ধ (female-limited polymorphism)। এ ক্ষেত্রে স্ত্রী প্রজাপতিগুলি একাধিক অরুচিকর প্রজাতির রূপ নকল করে। অরুচিকর প্রজাতিগুলো খাদকদের কাছে তাদের অরুচিকর চরিত্র জাহির করে শরীরে উজ্জ্বল রঙের সাহায্যে। এ ধরনের প্রজাতিগুলোকে বলা হয় অ্যাপোসিমেটিক প্রজাতি (aposematic)।   কালিম প্রজাপতির মধ্যে এ ধরনের বহুরূপক মিমিক্রি (polymorphism) দেখা যায়। স্ত্রী প্রজাপতিটির তিনটি আলাদা রূপ আছে। তার মধ্যে একটি রূপ হলুদে কালোতে মেশা পুরুষটিরই মতো। অপর রূপ দুটোর একটি আলতে বা কমন রোজ (Pachliopta aristolochiae) প্রজাপতিকে, অপরটি আলসিন্দুরা বা ক্রিমসন রোজ (Atrophaneura hector) প্রজাপতিকে অনুকরণ করে।[২] কমন রোজ এবং ক্রিমসন রোজ প্রজাপতি দুটি তাদের শরীরে উপস্থিত বিষবৎ রাসায়নিকের কল্যাণে খাদক প্রাণীদের গ্রাস থেকে মুক্ত। তাদের মতো দেখতে হওয়ার সুবাদে কমন মরমনের ওই দুটো রূপের স্ত্রী প্রজাপতিরাও তাই সুরক্ষা উপভোগ করে। প্রশ্ন জাগে, পুরুষটি অপর কোনও প্রজাপতির অনুকারী না হওয়ার কারণে নিশ্চয় বেশি করে শত্রুর কবলে পড়ে। তাহলে, স্ত্রী প্রজাতির একাংশ কেন সেই পুরুষটিরই সদৃশ হবে?   আফ্রিকার একটি সোয়ালোটেল প্রজাপতি Papilio dardanus অনুরূপ মিমিক্রির অধীন। এর ব্যাখ্যা জোগানোর জন্য নানা দিক থেকে চিন্তা করা হচ্ছে। যেমন, সিউডোসেক্সুয়াল হাইপোথিসিস (Pseudosexual hypothesis)।[১০] স্ত্রী প্রজাপতিটি পুরুষের মতো দেখতে হওয়ার ফলে হয়তো প্রকৃত পুরুষ প্রজাপতিরা তাদের দিকে প্রথমে আক্রমণাত্মক ভাবে তেড়ে এলেও কাছাকাছি এসে তাকে স্ত্রী বলে চিনতে পারে এবং মিলনাত্মক আচরণের সূচনা হয়। অপর একটি অনুমান হল মেল অ্যাভয়ডেন্স হাইপোথিসিস (Male avoidance hypothesis)।[১১] পুরুষরা হয়তো স্ত্রী প্রজাপতিটিকে পুরুষ বলে ভুল করে এড়িয়ে চলে। তাতে অযথা পূর্বরাগ সম্ভাবনার হাত থেকে স্ত্রী প্রজাপতিটি নিস্তার পায়। পূর্বরাগ সময়সাপেক্ষ এবং তা খাদকের গ্রাসে পড়ার সম্ভাবনাও বাড়ায়।  অপর একটি পরীক্ষা অবশ্য নির্দেশ করে, এ ক্ষেত্রে স্ত্রী প্রজাপতির বেটসিয়ান মিমিক রূপগুলি এবং পুরুষের সদৃশ রূপ, প্রতিটি রূপেরই দক্ষতা বা ফিটনেস সমান। পূর্বরাগ সংক্রান্ত ঝামেলা এড়ানোর সুফল চাপা পড়ে যায় খাদকের আক্রমণ সম্ভাবনার মাত্রা বৃদ্ধির কারণে।

ট্যাক্সোনমি বা বর্গীকরণ সূত্র সম্পাদনা

উপগোত্র সম্পাদনা

বর্তমান পৃথিবীতে যত প্যাপিলিওনিডি পাওয়া যায় তাদের তিনটে উপ-পরিবারে (sub-family) ভাগ করা হয়েছে।  Baroniinae, Parnassiinae এবং Papilioninae। পরবর্তী দুটি বিভাগকে আবার কয়েকটি ট্রাইব (tribe)-এ  ভাঙা হয়েছে। সোয়ালোটেলদের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে অঙ্গসংস্থান বৈশিষ্ট্যে ফারাক তো আছেই, এছাড়াও তাদের আহার্য গাছ, ইকোলজি ইত্যাদিতেও শ্রেণিগত পার্থক্যের প্রতিফলন পড়েছে। 

ব্যারোনায়িনি সম্পাদনা

ব্যারোনায়িনি (Baroniinae) একটি মোনোটাইপিক (monotypic, অর্থাৎ যে-বিভাজনে একটিই মাত্র প্রজাতি রয়েছে) উপ-পরিবার। প্রজাতিটির নাম শর্ট-হর্নড ব্যারোনিয়া (Baronia brevicornis), মেক্সিকোর একটি ক্ষুদ্র অঞ্চলে এই প্রজাতিটিকে পাওয়া যায়।  প্যাপিলিওনিডি প্রজাপতিদের মধ্যে এটিই একমাত্র প্রজাতি, যার আহার্য গাছের তালিকায় রয়েছে একটি বাবলা-জাতীয় (Acacia প্রজাতি) গাছ।[১২]

পারনাসায়িনি সম্পাদনা

পারনাসায়িনি (Parnassiinae) উপ-পরিবারটি মূলত হোলার্কটিক (Holarctic, আর্কটিক সহ উত্তর গোলার্ধের নাতিশীতোষ্ণ অংশ) অঞ্চলের প্রজাপতি। বেশিরভাগ Parnassius গণের প্রজাপতিদের পার্বত্য এলাকায় পাওয়া যায়। তবে, এদের অন্যান্য আবাসস্থলের মধ্যে আছে ‘‘শুষ্ক মরুভূমি (Hypermnestra), আর্দ্র বন (Luehdorfia) এবং এমনকী নিম্ন সমতলভূমি (Zerynthia)"।[১৩] Parnassiinae প্রজাপতিদের তিনটে ট্রাইবে ভাগ করা হয়: Parnassiini, Zerynthiini এবং Luehdorfiini।

Parnassiini ট্রাইবের অন্তর্গত Parnassius গণের অ্যাপোলো প্রজাপতিদের পিছনের ডানায় সচরাচর দুটি ছোট লালচে দাগ থাকে। [১৪]

Subfamily: Parnassiinae.

প্যাপিলিওনায়িনি সম্পাদনা

প্যাপিলিওনায়িনি উপ-পরিবারের অন্তর্গত তিনটি ট্রাইব হল Leptocircini, Teinopalpini, Troidini, এবং Papilionini।

প্রজনন  সম্পাদনা

মিলনের পরে পুরুষ Parnassines প্রজাপতিরা একটা আঠালো পদার্থের সাহায্যে স্ত্রী প্রজাপতির জননাঙ্গের মুখটিকে ঢেকে দেয়, যাতে অন্য কোনও পুরুষ তাদের সঙ্গে মিলিত হতে না পারে। পাতার নিচের পিঠে তারা একটা একটা করে ডিম পাড়ে। 

আহার্য সম্পাদনা

সোয়ালোটেল প্রজাপতির শূককীটেরা বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ আহার করে, তবে মোটামুটি পাঁচটি পরিবারের উদ্ভিদের ওপরেই তারা নির্ভরশীল। সেগুলি হল, Aristolochiaceae, Annonaceae, Lauraceae, Umbelliferae (Apiaceae) এবং Rutaceae। অ্যারিস্টোলোকিয়া উদ্ভিদের পাতায় অ্যারিস্টোলোকিক অ্যাসিড (aristolochic acid) থাকে। শূককীট যখন অ্যারিস্টোলোকিয়া উদ্ভিদের পাতা খায়, তখন তাদের শরীরে এই বিষবৎ পদার্থটি সঞ্চিত হয়, এবং শূককীট ও পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতি, উভয়ের শরীরেই তা উপস্থিত থাকে। এই পদার্থটি থাকার দরুন খাদক প্রাণীরা তাদের শিকার করে না। সোয়ালোটেল প্রজাপতিদের মধ্যে  Zerynthiini (Parnassiinae), Luehdorfiini (Parnassiinae) এবং Troidini (Papilioninae) ট্রাইবগুলি একচেটিয়াভাবে Aristolochiaceae পরিবারের উদ্ভিদগুলিকে আহার্য হিসাবে গ্রহণ করেছে।

প্রাপ্তবয়স্ক সোয়ালোটেল প্রজাপতিরা ফুলের মধু পান করে। কখনও কখনও ভিজে মাটি বা বালি থেকে জল পান করে থাকে।

মানুষ ও সোয়ালোটেল প্রজাপতি সম্পাদনা

প্রজাপতি সংগ্রাহকদের কাছে সোয়ালোটেল প্রজাপতির কদর খুব। বিশেষ করে বিভিন্ন বার্ডউইং প্রজাপতির চাহিদা অনেক। এই প্রজাপতিগুলো ইদানীং বিভিন্ন দেশের খামারে চাষ করে উপাদন করা হয়।  

বেশ কিছু সোয়ালোটেল প্রজাপতির শূককীটদের আহার্য হল নানা ধরনের লেবু গাছ। সে কারণে এদের অনেক সময়ে লেবুগাছের ক্ষেত্রে অপকারী গণ্য করা হয়।  

মহারাষ্ট্র বরুনপাখা প্রজাপতি বা Blue Mormon (Papilio polymnestor)কে তাদের রাজ্য প্রজাপতি হিসেবে গ্রহণ করেছে। ভারতে মহারাষ্ট্রই প্রথম রাজ্য যারা কোনও প্রজাপতিকে এভাবে বরণ করে নিয়েছে।[১৫]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Reed, Robert D.; Sperling, Felix A.H. (২০০৬)। "Papilionidae – The Swallowtail Butterflies" (ইংরেজি ভাষায়)। Tree of Life Web Project। ২৩ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১০  |প্রকাশক= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  2. Dasgupta, Judhajit;  Ananda Publishers (2006), Kolkata, ISBN 81-7756-558-3
  3. Richards, O. W.; Davies, R.G. (১৯৭৭)। Imms' General Textbook of Entomology: Volume 1: Structure, Physiology and Development Volume 2: Classification and Biology (ইংরেজি ভাষায়)। Berlin: Springer। আইএসবিএন 0-412-61390-5 
  4. Salmon, Michael A., Marren, Peter, Harley, Basil.
  5. Häuser, Christoph L.; de Jong, Rienk; Lamas, Gerardo; Robbins, Robert K.; Smith, Campbell; Vane-Wright, Richard I. (২৮ জুলাই ২০০৫)। "Papilionidae – revised GloBIS/GART species checklist (2nd draft)" (ইংরেজি ভাষায়)। ৯ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ নভেম্বর ২০১০ 
  6. Brock, Jim P.; Kaufman, Kenn (২০০৩)। Butterflies of North America (ইংরেজি ভাষায়)। Boston: Houghton Mifflin। আইএসবিএন 0-618-15312-8 
  7. Stumpe, Felix। "Parnassius arctica Eisner, 1968"Russian-Insects.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০১০ 
  8. Mani, M. S. (১৯৬৮)। Ecology and Biogeography of High Altitude Insects। Volume 4 of Series entomologica (ইংরেজি ভাষায়)। Springer। পৃষ্ঠা 530। আইএসবিএন 978-90-6193-114-0। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০১০ 
  9. Bingham, C.T. (১৯০৫)। The Fauna of British India including Ceylon and Burma – Butterflies (Vol 1) (ইংরেজি ভাষায়)। London: Taylor and Francis। পৃষ্ঠা 519। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১০ 
  10. Vane-Wright, R.; C.R. Smith (1991). "Phylogenetic Relationships of Three African Swallowtail Butterflies, Papilio dardanus, P. phorcas, and P. constantinus: a cladistic analysis (Lepidoptera: Papilionidae)". Systematic Entomology. Biology of Butterflies 16 (3): 275–291. doi:10.1111/j.1365-3113.1991.tb00689.x.
  11. Conrad, K.F.; G Pritchard (1989). "Female Dimorphism and Physiological Colour Change in the Damselfly Argia vivida Hagen Odonata: Coenagrionidae)". Canadian Journal of Zoology 67 (2): 298–304. doi:10.1139/z89-044.
  12. Collins, N. Mark; Collins, Michael G. (১৯৮৫)। Threatened Swallowtails of the World: the IUCN red data book। IUCN Protected Area Programme Series (ইংরেজি ভাষায়)। Gland, Switzerland and Cambridge, U.K.: IUCN। পৃষ্ঠা 401 & 8 plates। আইএসবিএন 978-2-88032-603-6। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১০ 
  13. Nazari, Vazrick (২০০৬)। "Parnassius Latreille 1804" (ইংরেজি ভাষায়)। Tree of Life Web Project। ১৫ মে ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১০  |প্রকাশক= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  14. Nazari, Vazrick; Sperling, Felix A.H. (২০০৬)। "Parnassiinae Duponchel, [1835]"Tree of Life (ইংরেজি ভাষায়)। Tree of Life Web Project। ৩০ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ নভেম্বর ২০১০  |প্রকাশক= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য)
  15. Maharashtra gets ‘State butterfly’, The Hindu, June 22, 2015

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা