সোনাল মানসিং

ভারতনাট্যম নর্তকী

সোনাল মানসিং (জন্ম: ৩০শে এপ্রিল, ১৯৪৪) হলেন ভারতনাট্যম এবং ওড়িশি নৃত্যকলায় পারদর্শী একজন ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী এবং নৃত্য প্রশিক্ষক। তিনি ২০১৮ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্বারা মনোনীত রাজ্যসভার একজন সদস্য। নৃত্যকলায় তাঁর অবদানের জন্যে তিনি ১৯৯২ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০০৩ সালে পদ্মবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন।[১][২][৩]

সোনাল মানসিং
নতুন দিল্লিতে সোনাল মানসিংহ নৃত্য প্রদর্শন করছেন।
নতুন দিল্লিতে সোনাল মানসিংহ নৃত্য প্রদর্শন করছেন।
প্রাথমিক তথ্য
জন্মনামসোনাল পাক্বাসা
জন্ম (1944-04-30) ৩০ এপ্রিল ১৯৪৪ (বয়স ৭৯)
বোম্বে, বোম্বে প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত
উদ্ভবভারত
ধরনভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্য
পেশাভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্য, ভারতের সাংস্কৃতিক আদর্শ, গুরু, প্রেরণামূলক বক্তা,
কার্যকাল১৯৬১ – বর্তমান
ওয়েবসাইটsonalmansingh.in
সংসদ সদস্য, রাজ্যসভা (রাষ্ট্রপতি মনোনীত)
কাজের মেয়াদ
১৪ই জুলাই ২০১৮ থেকে

প্রাথমিক জীবন সম্পাদনা

সোনাল মানসিংহ ১৯৪৪ সালের ৩০শে এপ্রিল, মুম্বইয়ে অরবিন্দ এবং পূর্নিমা পাক্বাসার ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিন সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর মা ছিলেন গুজরাতের প্রখ্যাত সমাজকর্মী যিনি ২০০৪ সালে পদ্মবিভূষণ পুরস্কার প্রাপ্ত হন। তাঁর পিতামহ ছিলেন মঙ্গল দাস পাক্বাসা, একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং ভারতের প্রথম পাঁচ রাজ্যপালের একজন।[৪] তিনি চার বছর বয়সে তাঁর বড় বোনের সাথে মনিপুরি নাচ শিখতে শুরু করেছিলেন নাগপুরের এক প্রশিক্ষকের অধীনে। তারপর সাত বছর বয়স থেকে পান্ডানাল্লুর ঘরানার বিভিন্ন গুরুর থেকে ভারতনাট্যম শিখতে শুরু করেছিলেন। মুম্বাইয়ের কুমার জয়কার ছিলেন তাঁর অন্যতম গুরু।[৫][৬] তিনি ভারতীয় বিদ্যাভবন থেকে সংস্কৃতে "প্রবীণ" এবং "কোবিদ" ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন এবং বোম্বের এলফিনস্টোন কলেজ থেকে জার্মান সাহিত্যে সাম্মানিক সহ স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। নাচ নিয়ে তাঁর প্রকৃত প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছিল ১৮ বছর বয়সে। তাঁর পরিবারের বিরোধিতা সত্ত্বেও, তিনি প্রফেসর ইউ. এস. কৃষ্ণ রাও এবং চন্দ্রভাগা দেবীর কাছ থেকে ভারতনাট্যম শিখতে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন। এছাড়া মায়লাপোর গৌরী আম্মালের[৭] অধীনে অভিনয় এবং ১৯৬৫ সালে গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রর অধীনে ওড়িশি নৃত্যে প্রশিক্ষিত হন। সোনালের বিয়ে হয়েছিল প্রাক্তন ভারতীয় কূটনীতিক ললিত মানসিংয়ের সাথে; পরে যদিও তাঁদের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে[৮]। তাঁর শ্বশুর মায়াধর মানসিং তাঁকে গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন; সেখানেই তাঁর ওড়িশি নৃত্যের প্রশিক্ষণ শুরু হয়[৯]

কর্মজীবন সম্পাদনা

১৯৬২ সালে, মুম্বইয়ে সোনাল মানসিংহের পেশাগত নৃত্যজীবন শুরু হয়েছিল, আরঙ্গেত্রমের (তামিল ভাষায় আরঙ্গমের অর্থ মঞ্চ এবং এত্রামের অর্থ উত্থান বা আরোহণ, সুতরাং আরঙ্গেত্রমের আক্ষরিক অর্থ মঞ্চে আরোহণ বা মঞ্চে পৌঁছানো)[১০] পরে। ১৯৭৭ সালে তিনি নতুন দিল্লিতে সেন্টার ফর ইন্ডিয়ান ক্লাসিকাল ডান্স (সিআইসিডি) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন[১১] । বছরের পর বছর ধরে, তিনি বিশ্বজুড়ে[১২] অনুষ্ঠান করেছেন এবং দর্শকদের মন জয় করেছেন। তিনি ১৯৮৭ সালে সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার[১৩], ১৯৯২ সালে সর্বকনিষ্ঠ নৃত্যশিল্পী হিসেবে পদ্মভূষণ[১৪], এবং ২০০৩ সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণ পুরস্কার লাভ করেন। বালাসরস্বতীর পর তিনি দ্বিতীয় নৃত্যশিল্পী যিনি এই পুরস্কার পেয়েছিলেন। এর পরে ২০০৬ সালে তিনি মধ্যপ্রদেশ সরকারের কাছ থেকে কালিদাস সম্মান এবং ২১শে এপ্রিল ২০০৭ সালে তাঁকে উত্তরাখণ্ডের পাটনগরের গোবিন্দ বল্লভ পন্থ কৃষি ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অফ সায়েন্স উপাধিতে (হনারিস কসা-কোনও পরীক্ষা ছাড়াই সাম্মানিক ডিগ্রি, সম্মানের চিহ্ন হিসাবে) ভূষিত করা হয়। সম্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে একইভাবে ডক্টর অব লিটারেচার (হনারিস কসা) প্রদান করা হয়। ২০০২ সালে নৃত্যে তাঁর ৪০ বছর পূর্ণ হওয়ার উপলক্ষে হিন্দি চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত পরিচালক প্রকাশ ঝা তাঁর উপর একটি প্রামাণ্য তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন যার শিরোনাম ছিল সোনাল[১১][১৫]। এই চলচ্চিত্রটি সেই বছরের শ্রেষ্ঠ নন-ফিচার চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছিল।

বিশিষ্ট নৃত্য পরিকল্পনা সমূহ সম্পাদনা

  • ইন্দ্রধনুষ
  • মানবত্ব
  • মেরা ভারত
  • দ্রৌপদী
  • গীত গোবিন্দ
  • সবরস
  • চতুরঙ্গ [১৬]
  • পঞ্চকন্যা
  • দেবী দুর্গা
  • আত্মায়ণ[১৭]
  • সমন্বয়

উদ্ধৃতি সম্পাদনা

  • "একজন নর্তকী কেবল নর্তকী নন। তিনি এই পরিবেশের অংশ। তিনি কোনও মহাশূন্যে অবস্থান করেন না। সমাজ এবং এর ঘটনাগুলি সমস্ত ব্যক্তি বিশেষত শিল্পীদের উপর প্রভাব ফেলে। যদি কোনও শিল্প শৈলী বিদ্যমান পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে প্রতিফলিত না করে, সেটি স্থবির হয়ে যায়."[১৮]
  • "রাধাও একটি দুর্দান্ত চরিত্র তবে তিনি প্রেমের মূর্ত রূপ যাকে ছাড়া কোনও সৃষ্টি নেই। আমাদের পুরুষ-তান্ত্রিক সমাজে রাধার পায়ের কাছে কৃষ্ণের অবস্থান, তাঁর প্রেমের জন্য ভিক্ষা করা, এটি খুবই অস্বাভাবিক। গীত গোবিন্দ এক অত্যন্ত গভীরভাবে আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনার ফলাফল, যা সুন্দর করে লেখা শ্লোকে বর্ণিত"[১৯]

আরও পড়ুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Sonal Mansingh, Ram Shakal among four nominated to RS"The Times of India। ১৪ জুলাই ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১৮ 
  2. "Former MP Ram Shakal, RSS leader Rakesh Sinha among four nominated to Rajya Sabha"New Indian Express। ১৪ জুলাই ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১৮ 
  3. "President nominates RSS ideologue Rakesh Sinha among three others to Rajya Sabha"The Economic Times। ১৪ জুলাই ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জুলাই ২০১৮ 
  4. Sonal Mansingh University of Alberta website, www.ualberta.ca.
  5. National centre for the performing Arts. Quarterly journal. v.12-13, page 3
  6. Sonal Mansingh: The dance of life The Times of India, 9 November 2003.
  7. Sonal Mansingh nrcw.nic.in.
  8. "The art of diplomacy"The Indian Express। ৩১ অক্টো ১৯৯৯। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১২ 
  9. "Sonal Mansingh"। iloveindia.com। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০১২ 
  10. "Arangetram"। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  11. Biography ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৮ জুলাই ২০০৯ তারিখে Official website
  12. Interview
  13. Awards Odissi ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৬ আগস্ট ২০১৮ তারিখে Sangeet Natak Akademi official website.
  14. "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৫। ১৫ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৫ 
  15. "Sonal"। ২৬ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  16. "Famous Personalities of India"। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 
  17. "Legends of India"। ২০০৮-০৪-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০২-১৯ 
  18. Sonal Mansingh ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ মে ২০০৮ তারিখে www.artindia.net.
  19. Art and Culture Hindustan Times, 18 March 2008.