সৈয়দ আমীরুজ্জামান

বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা

সৈয়দ আমীরুজ্জামান (জন্ম: জানুয়ারী ১৯২৭ - মৃত্যু: ১৮ জানুয়ারি ২০১০) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে।[১]

সৈয়দ আমীরুজ্জামান (বীর বিক্রম)
জন্ম১৯২৭
মাগুরা
মৃত্যু১৮ জানুয়ারী ২০১০
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব ব্রিটিশ ভারত (১৯৪৭ সাল পর্যন্ত)
 পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর বিক্রম
সন্তান

জন্ম ও শিক্ষাজীবন সম্পাদনা

সৈয়দ আমীরুজ্জামানের জন্ম মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার হরিন্দী গ্রামে। তার বাবার নাম সৈয়দ আবদুল ওয়াহেদ এবং মায়ের নাম আলতাফুননেছা। তার স্ত্রীর নাম রিজিয়া খাতুন। তার দুই ছেলে ও চার মেয়ে।[২]

লেখাপড়া শুরু হয় পাশের গ্রামের মক্তবে। পরবর্তীতে মাগুরা এবং কলকাতা থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। পারিবারিক কারণে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়নি।

কর্মজীবন সম্পাদনা

কর্ম জীবন শুরু হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার মাধ্যমে। পরবর্তীতে ইপিআরের (বর্তমান বিজিবি) সিগন্যাল উইংয়ে যোগ দেন সৈয়দ আমীরুজ্জামান। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন রাজশাহী ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টারের সিগন্যাল ইউনিটে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি কারও নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে সিগন্যাল বেতারের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে বার্তা ছড়িয়ে দেন। প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে ভারতে পুনর্গঠিত হওয়ার পর ৭ নম্বর সেক্টরের লালগোলা সাব সেক্টর এলাকায় যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সম্পাদনা

১৯৭১ সালের ১২ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর থানার অন্তর্গত ইসলামপুর এলাকায় ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শক্ত একটি ঘাঁটি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকবার ইসলামপুরের পাকিস্তান সেনাদের অবস্থানে আক্রমণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সেদিন মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে সাব সেক্টর কমান্ডার গিয়াসউদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর (বীর বিক্রম) নেতৃত্বে সেখানে আক্রমণ করেন। তাঁদের আক্রমণে পাকিস্তান সেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সফল অপারেশন শেষে ক্যাম্পে ফেরার পথে পাকিস্তান সেনারা অতর্কিতে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলকে মরা পদ্মার কাছে পাল্টা আক্রমণ করে। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ইসলামপুর মুক্ত হয়। যুদ্ধ শেষে সৈয়দ আমীরুজ্জামান তার দলের সহযোদ্ধাদের সঙ্গে ক্যাম্পে ফিরছিলেন। তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণে গিয়েছিলেন। তাঁদের সফল আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তারা ক্যাম্পের কাছাকাছি চলে এসেছেন, এমন সময় একজন এসে খবর দিল, তাঁদের অপর একটি দলকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করেছে। সেখানে যুদ্ধ চলছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রের গুলি শেষ হয়ে যাওয়ার পথে। সাহায্য না পাঠালে তারা কিছুক্ষণের মধ্যেই চরম বিপদের সম্মুখীন হবেন। জায়গাটা কয়েক কিলোমিটার দূরে। অন্যদিকে এ খবর কতটা সঠিক তা তারা নিশ্চিত নন। এটা পাকিস্তান সেনাদের ফাঁদও হতে পারে। মুক্তিযোদ্ধারা কী করবেন, চিন্তা করছেন। তা ছাড়া তাঁদের অধিনায়ক সঙ্গে নেই। আমীরুজ্জামানের মনে হলো খবরটা সঠিক। এরপর তিনি এককভাবে সিদ্ধান্ত নিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়ার। সহযোদ্ধাদের নিয়ে রওনা হলেন সেদিকে। কিছুদূর যেতেই শুনতে পেলেন গোলাগুলির শব্দ। দ্রুত তারা এগিয়ে যেতে থাকলেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছেই পাকিস্তান সেনাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করলেন। এতক্ষণ আক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাদের শুধু প্রতিরোধ করে যাচ্ছিলেন। তখন তারাও বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ শুরু করলেন। শুরু হলো ভয়াবহ যুদ্ধ। সৈয়দ আমীরুজ্জামান সাহসিকতার সঙ্গে মর্টার লাঞ্চার দিয়ে গোলাবর্ষণ করতে করতে একদম পাকিস্তান সেনাদের কাছে গিয়ে অবস্থান নিলেন। তার সঙ্গে এগিয়ে গেলেন আরও কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। তাঁদের সবার পাল্টা ঝটিকা আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা প্রায় দিশেহারা হয়ে পিছু হটতে থাকল। এমন সময় হঠাৎ একটি গুলি এসে বিদ্ধ হলো সৈয়দ আমীরুজ্জামানের কোমরে। তিনি পড়ে গেলেন মাটিতে। রক্তে ভেসে যেতে থাকল জায়গাটা। কিন্তু মনোবল ও সাহস হারালেন না তিনি। সঙ্গে থাকা সহযোদ্ধা তাঁকে নিয়ে গেলেন নিরাপদ স্থানে। তবে যুদ্ধরত অন্য সহযোদ্ধা ও পাকিস্তান সেনাদের বুঝতে দিলেন না যে তিনি গুলিবিদ্ধ। কারণ এতে সহযোদ্ধাদের মনোবল ভেঙে পড়তে পারে। একটু পর পাকিস্তান সেনারা পালিয়ে গেল। তখন সহযোদ্ধারা বুঝতে পারলেন তিনি আহত। এরপর তাঁকে নিয়ে দ্রুত রওনা হলেন সীমান্তসংলগ্ন ক্যাম্পে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে পাঠানো হলো বহরমপুর হাসপাতালে। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ:১৮-১০-২০১১[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ১৭১। আইএসবিএন 9789843338884 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা