সৈয়দপুর
সৈয়দপুর বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের নীলফামারী জেলার একটি শহর। প্রশাসনিকভাবে এটি বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের তৃতীয় বৃহত্তম শহর (রংপুর প্রথম ও দিনাজপুর দ্বিতীয়)। এটি সৈয়দপুর উপজেলার সদরদপ্তর ও জেলার প্রধান বাণিজ্যিক শহর। ভৌগোলিকভাবে এটি বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে খরখড়িয়া নদীর পূর্ব তীরে সমতল এলাকাতে অবস্থিত। সৈয়দপুর শহর এলাকার জনসংখ্যা প্রায় ১৩৩,৪৩৩ জন। জনসংখ্যার বিচারে এটি বাংলাদেশের ৩২তম বৃহত্তম শহর।[২] রংপুর বিভাগের একমাত্র বিমানবন্দরটি এখানে অবস্থিত হওয়ায় একে উত্তরাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ যোগযোগ কেন্দ্রে পরিণত করেছে। বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এন৫, যা এশিয়ান মহাসড়কের অংশ এ শহরের মধ্য দিয়ে গেছে।
সৈয়দপুর | |
---|---|
শহর | |
![]() | |
সৈয়দপুর শহরের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°৪৬′৪১″ উত্তর ৮৮°৫৩′৫১″ পূর্ব / ২৫.৭৭৮০৬° উত্তর ৮৮.৮৯৭৫০° পূর্ব | |
রাষ্ট্র | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রংপুর |
জেলা | নীলফামারী |
উপজেলা | সৈয়দপুর |
অন্তর্ভূক্তি | ১৯৫৮ |
সরকার | |
• ধরন | পৌরসভা |
• শাসক | সৈয়দপুর পৌরসভা |
• মেয়র | রফিকা আক্তার জাহান বেবি |
উচ্চতা[১] | ৪৩ মিটার (১৪১ ফুট) |
জনসংখ্যা | ১,৩৩,৪৩৩ |
সময় অঞ্চল | বামাস (ইউটিসি+০৬.০০) |
সৈয়দপুর শহরের আবহাওয়া ক্রান্তীয় আর্দ্র ও শুষ্ক প্রকৃতির। গড় তাপমাত্রা এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ প্রায় ৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস[৩] এবং জানুয়ারি মাসে সর্বনিম্ন প্রায় ১০.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস।[৪]
নামকরণসম্পাদনা
সৈয়দপুর নামের উৎপত্তি সম্পর্কে নিশ্চিতভাবে কিছুই জানা যায়নি। এটা অনেক আগে থেকেই জানা যায় যে ভারতের কোচ বিহারের একটি সৈয়দ পরিবার এসে এই এলাকায় বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচার শুরু করে। সাধারণত এটি বিশ্বাস করা হয় যে, এই সৈয়দ পরিবারের নামে এই সৈয়দপুর নামটি নামকরণ করা হয়েছে।[৫]
ইতিহাসসম্পাদনা
সৈয়দপুরের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে তেমন কোন জানা যায় না। পূর্বে এটি কামরুপ রাজ্যের অধীন ছিল। আলাউদ্দিন সৈয়দ হোসেন শাহ কামরূপ অভিযানের সময় সৈয়দপুরের নিকটে কেলাবাড়ীর হাটে একটি দুর্গ নির্মাণ করে সেখান থেকে কামরুপ অভিযান পরিচালনা করেন। ১৮৭০ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত সৈয়দপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপের কাছাকাছি সৈয়দপুর শহরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই সময় সৈয়দপুরে বিহারীদের আগমন হয়। ১৯১৫ সালে রেলওয়ে স্টেশনের পাশে সৈয়দপুর থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৮ সালে সৈয়দপুর পৌরসভা গঠিত হয়।[৬]
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় দ্বিতীয় দফায় অনেক বিহারী সৈয়দপুরে চলে আসে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে ২৩ মার্চ বিহারিগণ বাঙ্গালিদের উপর হামলা চালায়, যাতে কয়েকজন বাঙালি নিহত হন। ৭ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী কিছু নিরহ বাঙালিকে হত্যা করে। ২৩ জুন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ৩৫০ জন বাঙালিকে ধরে নিয়ে গোলাহাটে গণহত্যা করে।[৬]
ভূগোলসম্পাদনা
সৈয়দপুর বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের রংপুর বিভাগের নীলফামারী জেলায় ২৫.৪৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৫.৫২ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৮.৫১ ডিগ্রি দক্ষিণ দ্রাঘিমাংশ থেকে ৮৯.০১ ডিগ্রি দক্ষিণ দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক পথে এর দুরত্ব ৩৩৯ কিলোমিটার (২১১ মা)[৭], রংপুর বিভাগীয় শহর হতে ৪০ কিলোমিটার (২৫ মা) এবং নীলফামারী জেলা শহর হতে ২০ কিলোমিটার (১২ মা)। সমুদ্র সমতল থেকে এর উচ্চতা ৪৩ মিটার (১৪১ ফুট)।[১] এই শহর বাঙালিপুর, কামারপুকুর, বোথলাগাড়ি, চিরিরবন্দর উপজেলার আলোকডিহি ইউনিয়ন দ্বারা পরিবেষ্টিত। সৈয়দপুর শহরের মোট আয়তন ৩০.৪ বর্গকিলোমিটার, এর মধ্যে ২৪.৮৮ বর্গকিলোমিটার পৌরসভার অধীন এবং বাকি ৫.১৬ বর্গকিলোমিটার বাঙালিপুর ইউনিয়নের অধীন।[৫]
জনসংখ্যাসম্পাদনা
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সৈয়দপুরের মোট জনসংখ্যা ১৩৩,৪৩৩ জন, যা সৈয়দপুরকে বাংলাদেশের ৩২তম বৃহৎ শহরে (জনসংখ্যার ভিত্তিতে) পরিণত করেছে[৫], যারা ২৭,৫১৫টি খানায় বসবাস করে। তাদের মধ্যে ৬৮,৮৮৪ জন পুরুষ এবং ৬৪,৫৪৯ জন নারী। নারী ও পুরুষের অনুপাত হল ১০০:১০৭, যা ২০০১ সালে ছিল ১১১ জন।
শিক্ষাসম্পাদনা
সৈয়দপুরের সবচেয়ে প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল সৈয়দপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, যা ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সৈয়দপুরকে নীলফমারী জেলার শিক্ষার শহরও বলা হয়। এখানে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যা জেলার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, এখানে ইলেক্ট্রিক্যাল, কম্পিউটার, ব্যবসায় প্রশাসনসহ প্রধান বিষয়সমূহে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে। আরও ৩টি কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহ দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত। এখানকার গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ হল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, সৈয়দপুর, সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড হাই স্কুল, সৈয়দপুর সরকারি কলেজ, সৈয়দপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজ, সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল-উলুম মাদ্রাসা, লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আল ফারুক একাডেমি। এছাড়া আরও প্রায় ৯টি কলেজ, ৫০টির উপরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কিন্ডারগার্ডেন রয়েছে।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সৈয়দপুরের শিক্ষার হার ৬৩.৯%[৫], যার মধ্যে নারী শিক্ষার হার ৬০% এবং পুরুষ শিক্ষার হার ৬৫.৮%। ১৯৯১ সালে এ শিক্ষার হার ছিল ৫৭.৮%।[৬]
প্রশাসনিক ব্যবস্থাসম্পাদনা
সৈয়দপুর শহর ১৫টি প্রশাসনিক ওয়ার্ড বিশিষ্ট্য একটি পৌরসভা দ্বারা এবং কিয়দংশ ইউনিয়ন (বাঙ্গালীপুর ইউনিয়ন) দ্বারা শাসিত হয়। সৈয়দপুর পৌরসভা ১৯৫৮ সালে গঠিত হয়েছিল, পৌর প্রধানের পদবি হল মেয়র, তিনি পাঁচ বছরের জন্য সরাসরি জনগনের ভোটে নির্বাচিত হন। এটি নীলফামারী-৪ সংসদীয় আসনের আওতাভুক্ত।
যোগাযোগসম্পাদনা
সৈয়দপুর বাংলাদেশের বুড়িমারী, রংপুর, বাংলাবান্ধা, দিনাজপুর, ঢাকাসহ অন্যান্য প্রধান শহরসমূহের সাথে সড়ক, আকাশ ও রেলপথে সংযুক্ত। সমস্ত প্রতিবেশী জেলার বিভিন্ন যাত্রীদের জন্য এটি একটি বড় আন্তঃবদল শহর।
জাতীয় মহাসড়ক এন৫ এ শহরকে ছুয়ে অতিক্রম করেছে, যা সৈয়দপুরকে রাজধানী ঢাকা, বিভাগীয় সদরদপ্তর রংপুর, বাংলাবান্ধা স্থল বন্ধরের সাথে সংযুক্ত করেছে। এবং এন৫১৮ শহরের মাঝ বরাবর গিয়ে এন৫ কে সংযুক্ত করেছে। আর৫৭০ আঞ্চলিক মহাসড়ক সৈয়দপুরকে নীলফামারী জেলা সদরের সাথে সংযুক্ত করেছে। সৈয়দপুর থেকে সড়ক পথে বাংলাদেশের প্রায় সকল শহরে যাওয়া যায়। অন্যান্য সড়ক পরিবহনের মধ্যে রয়েছে রিকশা, অটোরিকশা, ভ্যান প্রভৃতি।
তথ্যসূত্রসম্পাদনা
- ↑ ক খ "Geographic coordinates of Saidpur, Bangladesh" (ইংরেজি ভাষায়)। DATEANDTIME.INFO। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০১৯।
- ↑ "23: Area, Household, Population and Literacy Rate of the Cities, 2011"। Population & Housing Census-2011 [আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১] (পিডিএফ) (প্রতিবেদন)। জাতীয় প্রতিবেদন (ইংরেজি ভাষায়)। ভলিউম ৩: Urban Area Rport, 2011। ঢাকা: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। মার্চ ২০১৪। পৃষ্ঠা XI। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ "Monthly Maximum Temperature"। bmd.gov.bd। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-২১।
- ↑ "Monthly Minimum Temperature"। bmd.gov.bd। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-২১।
- ↑ ক খ গ ঘ Population & Housing Census-2011 [আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১] (পিডিএফ) (প্রতিবেদন)। জাতীয় প্রতিবেদন (ইংরেজি ভাষায়)। ভলিউম ৩: Urban Area Rport, 2011। ঢাকা: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। মার্চ ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ ক খ গ আবদুস সাত্তার (২০১২)। "সৈয়দপুর উপজেলা"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ "Saidpur to Dhaka"। গুগল ম্যাপ। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৩-২১।