সেপাক টার্কো

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্রিড়া
(সেপাক তাকরাও থেকে পুনর্নির্দেশিত)

সেপাক তাকরাও,[১] বা কিক ভলিবল, হল দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি ক্রীড়া[২] একই রকম খেলা ফুট ভলিবল থেকে এটি পৃথক এর বেতের বলের ব্যবহারে। খেলোয়াড়েরা কেবল তাদের পা, হাঁটু এবং মাথা ব্যবহার করে বলটি ছুঁতে পারে।

২০১৪ এশিয়ান গেমসে মহিলাদের দ্বৈত ইভেন্ট
সর্বোচ্চ ক্রীড়া পরিচালনা সংস্থাআইএসটিএএফ
প্রথম খেলা হয়েছেমালয়েশিয়া, ১৫শ শতাব্দীর মাঝামাঝি
বৈশিষ্ট্যসমূহ
শারীরিক সংস্পর্শহয়না
দলের সদস্য২–৪ জন খেলোয়াড়
ধরনইনডোর
খেলার সরঞ্জামবেতের বল, কৃত্রিম রাবারযুক্ত প্লাস্টিক
প্রচলন
অলিম্পিকনেই

ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে একে "সেপাক তাকরাও" বলা হয়। মালয়েশিয়াতে এটি সেপাক রাগ নামেও পরিচিত। ফিলিপাইনেও এই খেলাকে "সেপাক তাকরাও" বলা হয়, এটি সেখানকার দেশীয় খেলা সিপার সাথে সাদৃশ্যযুক্ত, এর আন্তর্জাতিক সংস্করণটি সিপা তাকরাও বা সেপাক তাকরাও নামে পরিচিত। থাইল্যান্ডে এটি কেবল তাকরাও নামে পরিচিত, লাওসে এটির নাম কাটাও[১] মিয়ানমারে এই খেলাটি চিন লোন নামে পরিচিত, এবং প্রায়শই কোনও বিরোধী দল না থাকায় এটি একটি শিল্প হিসাবে বেশি বিবেচিত হয় এবং মূলত বলটি শূন্যে সুচারুভাবে এবং আকর্ষণীয়ভাবে ভাসিয়ে রাখাই আসল।

অনুরূপ খেলাগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ফুটব্যাগ নেট, ফুটভলি, ফুটবল টেনিস, বসাবল, জিয়ানজি, জকগু এবং সিপা

ব্যুৎপত্তি সম্পাদনা

"সেপাক" হল পদাঘাতের মালয় শব্দ এবং থাই ভাষায় "তাকরাও" দিয়ে বোঝায় বেতের বোনা বল; অতএব আক্ষরিক অর্থে সেপাক তাকরাও বলতে বোঝায় "একটি বলে পদাঘাত করা"।[৩]

সেপাক তাকরাও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে অনেক নামে পরিচিত; এর মধ্যে আছে ইন্দোনেশীয়: সেপাক তাকরাও, سڨق تکر; মালয়: সেপাক রাগ, سڨق راݢ; থাই: ตะกร้อ, </noinclude> আরটিজিএসতাকরো, উচ্চারিত [tā.krɔ̂ː]; বর্মী: ပိုက်ကျော်ခြင်း, পাইক কিয় চিন; ফিলিপিনো: সিপা, সিপা তাকরাও, সেপাক তাকরাও, খ্‌মের: សីដក់, সেই ডাক; লাও: ກະຕໍ້, কা-ট; ভিয়েতনামী: ক মে, "ক্যালামিয়ে বল" বা "বেত বল"।

ইতিহাস সম্পাদনা

একটি সেপাক তাকরাও খেলার ভিডিও রেকর্ডিং

প্রাচীনতম ঐতিহাসিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে খেলাটি মালয়েশিয়ার ১৫শ শতাব্দীর মালাক্কা সুলতানিতে খেলা হয়েছিল, কারণ এটি মালয় ঐতিহাসিক লেখা "সেজারাহ মেলায়ু"তে (মালয় অ্যানালস) উল্লেখ করা হয়েছে।[৪]মালয় অ্যানালসে এর বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়, যেখানে সুলতান মনসুর শাহের এক পুত্র রাজা মুহাম্মদ একটি সেপাক রাগ খেলায় দুর্ঘটনাক্রমে তুন পেরাকের এক পুত্র তুন বেসারের দ্বারা একটি বেতের বল দিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। বলটি রাজা মুহাম্মদের পাগড়িতে আঘাত করে সেটিকে উৎপাটিত করেছিল। ক্রুদ্ধ রাজা মুহাম্মদ সঙ্গে সঙ্গে তুন বেসারকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছিলেন। এরপরে তুন বেসারের আত্মীয়রা পাল্টা আক্রমণ করে রাজা মুহাম্মদকে হত্যা করতে চেয়েছিল। সে সময়, তুন পেরাক তাদের এই জাতীয় বিশ্বাসঘাতকতা থেকে বিরত করেছিলেন এই বলে যে, তিনি আর রাজা মুহাম্মদকে সুলতানের উত্তরাধিকারী হিসাবে স্বীকার করবেন না। এই ঘটনার ফলস্বরূপ, সুলতান মনসুর শাহ তাঁর পুত্রকে মালাক্কা থেকে চলে যাবার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং তাঁকে পাহাংয়ের শাসক হিসাবে স্থাপন করেছিলেন।[৫]

ইন্দোনেশিয়াতে, সপ্তম শতাব্দীর শুরুতে সেপাক তাকরাও সমুদ্রের ওপারের পার্শ্ববর্তী মালয়েশিয়া থেকে রিয়াউ দ্বীপপুঞ্জ এবং সুমাত্রার রিয়াউ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেখানে স্থানীয় মালয় ভাষায় একে সেপাক রাগ নামেও ডাকা হয়।[৬][৭] সেই সময় সুমাত্রার কয়েকটি অঞ্চল মালাক্কা সুলতানির অংশ ছিল। সেখান থেকে মালয় লোকেরা দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং সুলাওসিতে বুগিনি সম্প্রদায়কে এই খেলায় প্রশিক্ষিত করেছিল। তারপরে খেলাটি বুগিনিদের ঐতিহ্যবাহী খেলা হিসাবে বিকশিত হয় যা "রাগ" নামে পরিচিত (খেলোয়াড়দের "পা'রাগা" বলা হয়)। "রাগ" এর উৎস মালাক্কা সুলতানি বলে নিশ্চিত করা যেতে পারে,[৮] এবং ১৯ শতক থেকে দক্ষিণ সুলাওসিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। কিছু পুরুষ একটি দলের মধ্যে ঘিরে "রাগ" খেলে, বলটি একজন থেকে অন্যজনে যেতে থাকে এবং যে ব্যক্তি বলটি পদাঘাতে সর্বাধিক উঁচুতে পাঠাতে পারে সে বিজয়ী হয়। এছেড়াও "রাগ" আনন্দের জন্য খেলা হয়, কিছু কৌশল দেখানো হয়, যেমন বলে পদাঘাত করে সেটিকে খেলোয়াড়ের মাথার ওপরে টেংকোলোক বুগিসএ (বুগিস কাপড়ের পাগড়ি, মালয় তানজাক এর মত) ধরে রাখে।

থাইল্যান্ডে (পূর্বে শ্যাম), প্রমাণ পাওয়া যায় যে, আয়ুত্থ্যা রাজত্বে থাইদের মধ্যে সেপাক তাকরাও খেলা হত, অন্তত রাজা নরেসুয়ানের রাজত্বকালে (১৫৯০-১৬০৫) এই খেলা চলত।[৯] একজন ফরাসী ঐতিহাসিক, ফ্রাংকোইস হেনরি তুরপিন, লিখেছেন শ্যামদেশীয়রা শরীর ঠিক রাখার জন্য সেপাক তাকরাও খেলত। [৯] ১৭৮৫ সালে ব্যাংককের ওয়াট ফ্রা কেওতে নির্মিত মুরালগুলিতে চিত্রিত হয়েছে হিন্দু দেবতা হনুমান বানরদের সাথে একটি বৃত্তের মধ্যে সেপাক তাকরাও খেলছে। খেলাটি কয়েকশ বছর ধরে বৃত্তাকারের মধ্যে খেলা হত। সেপাক তাকরাওএর আধুনিক সংস্করণ ১৭৪০ এর দশকের প্রথমদিকে থাইল্যান্ডে আকার নিতে শুরু করেছিল। ১৯২৯ সালে শ্যাম স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশন তাকরাও প্রতিযোগিতার জন্য প্রথম বিধি তৈরি করেছিল।[৯] চার বছর পরে, এই অ্যাসোসিয়েশন ভলিবলের মত জাল (নেট) চালু করে এবং প্রথম পাবলিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে শ্যামের বিদ্যালয়গুলিতে পাঠ্যক্রমের মধ্যে তাকরাও চালু হয়েছিল। খেলাটি এমন এক বাঁচিয়ে রাখা স্থানীয় রীতিতে পরিণত হয়েছিল যে ১৯৩৩ সালে, থাইল্যান্ডে সম্পূর্ণ রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হওয়ার এক বছর পরে, রাজ্যের প্রথম সংবিধান উদযাপনের জন্য ভলিবল ধাঁচের তাকরাওয়ের আরও একটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

আরো দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Shawn Kelley। "Takraw: A Traditional Southeast Asian Sport"। ১০ জুলাই ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুলাই ২০০৭ 
  2. J. A. Mangan, Fan Hong (২০০২)। Sport in Asian society: past and present। Frank Cass Publishers। পৃষ্ঠা 220। আইএসবিএন 978-0-7146-8330-0 
  3. "sepak takraw | Definition of sepak takraw in US English by Oxford Dictionaries"Oxford Dictionaries | English। ২০১৮-০৯-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-১৮ 
  4. Dunsmore, Susi (১৯৮৩)। Sepak RagaUniversity of Michigan। পৃষ্ঠা 2। 
  5. Brown, Charles Cuthbert (১৯৭০)। Sejarah Melayu; or, Malay annals: an annotated translation [from the Malay]Oxford University Press। পৃষ্ঠা 89। 
  6. "Permainan Sepak Raga"। Melayuonline.com। ২৫ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মার্চ ২০১৪ 
  7. "Sepak Raga, Permainan Tradisional Masyarakat Di Propinsi Kepulauan Riau"। Id.voi.co.id। ৭ নভেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মার্চ ২০১৪ 
  8. "Permainan Marraga/Akraga (Bugis)"। Melayuonline। ১২ এপ্রিল ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ আগস্ট ২০১০ 
  9. "The History of Takraw in Thailand"। Sepaktakrawworld.com। ২৭ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০১৮ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা