সুলতান সুলাইমান মসজিদ, মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ার মসজিদ

সুলতান সুলাইমান মসজিদ (মালয়: Masjid Diraja Sultan Sulaiman) হচ্ছে সেলাঙ্গরের রাজকীয় মসজিদ, যা মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গরের ক্লাং শহরে অবস্থিত। এটি ১৯৩১ সালের গোড়ার দিকে ব্রিটিশদের দ্বারা নির্মিত হয়েছিল এবং ১৯৩৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আলমারহুম সুলতান স্যার আলাউদ্দিন সুলায়মান শাহ এবং ব্রিটিশ সংযুক্ত মালয় রাষ্ট্রের (ফেডারেলেটেড মালয় স্টেটস) সংঘবদ্ধ মালয়েশিয়ার হাই কমিশনার স্যার লরেন্স নুনস গিলমার্ড দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উদ্বোধন করা হয়েছিল।

সুলতান সুলাইমান রয়েল মসজিদ
Masjid Diraja Sultan Sulaiman
مسجد دراج سلطان سليمان
সুলতান সুলাইমান মসজিদের বহিরঙ্গন
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিইসলাম
শাখা/ঐতিহ্যসুন্নি (শাফিঈ)
অবস্থান
অবস্থানমালয়েশিয়া সেলাঙ্গর, মালয়েশিয়া
স্থাপত্য
স্থাপত্য শৈলীপশ্চিমা আর দেকো
নব্য-ধ্রুপদী
ইংরেজ স্থাপত্য
মুরিশ
মিনার১টি

মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী পশ্চিমা আর দেকো এবং নব্য-ধ্রুপদী ক্যাথিড্রাল শৈলীর সংমিশ্রণ। ব্রিটিশ স্থপতি লেওফ্রিক কেস্টেভেন (১৮৮২-১৯৭৪) মসজিদটির নকশা করেছিলেন। মসজিদটির নকশার কাজে, মালয় ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টের চেয়ারম্যান (১৯৩১–১৯৩৩) লেওফ্রিক কেস্টেভেন; ইউনাইটেড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের সাথে সংযুক্ত কংক্রিট বিশেষজ্ঞ জন থমাস চেস্টার এবং সিঙ্গাপুর ভিত্তিক ইতালীয় ভাস্কর রোডল্ফো নোলিও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। রোডল্ফো নোলিও মসজিদ ভবনের অলঙ্কারে কাজ করেছিলেন।

এর আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে রয়েছে ইস্তানা আলম শাহের টাঙ্গা দিরজা (রাজকীয় সিঁড়ি) এবং একটি রাজকীয় স্মৃতিসৌধ। প্রয়াত সুলতান সালাহউদ্দিনকে মসজিদের মাঠে সমাহিত করা হয়েছিল।

সুলতান সুলাইমান মসজিদের গম্বুজের নিচে বহুবর্ণের নকশাকৃত কাচ।

স্থাপত্য সম্পাদনা

 
সুলতান সুলাইমান মসজিদের মিনার

ক্লাংয়ের সুলতান সুলাইমান মসজিদের নকশার ধারণাটি রাজ্যের অন্যাম্য মসজিদের পাশাপাশি মালয়েশিয়ার বাকী অংশের তুলনায় একেবারেই আলাদা। সুলতান সুলায়মান মসজিদটির উল্লেখযোগ্যতার কারণ এটি ইসলামী স্থাপত্য, মুরিশ, নব্য-ধ্রুপদী, ইংরেজ এবং (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল) আর দেকো স্থাপত্যের প্রভাবের সংমিশ্রণ প্রদর্শন করে। মসজিদের অর্ধবৃত্তাকার আকৃতির গম্বুজটি স্বর্ণ দ্বারা আবৃত নয়; কুসুম হলুদ রঙে রং করা। মূল নামাজের স্থানের উপরের বৃহৎ গম্বুজটি কয়েকটি ছোট ছোট গম্বুজ দ্বারা বেষ্টিত।

মসজিদের চারপাশে ছোট ছোট আটটি টাওয়ার এবং মাঝখানে একটি বড় টাওয়ার রয়েছে যার মূল বারান্দা থেকে একটি উঁচু প্রবেশদ্বার রয়েছে। টাওয়ারটির শীর্ষভাগ হলুদ গম্বুজ দিয়ে সজ্জিত। মসজিদটিতে একসাথে প্রায় ১,০০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারে।

মসজিদটি বিভিন্ন প্রক্রিয়া এবং অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন-পরিবর্ধনের মধ্য দিয়ে বর্তমান রূপে এসেছে। মসজিদটির সর্বশেষ সংস্কার কাজ ২০১৭ সালে সম্পন্ন হয়েছিল। এসময় এর রঙিন বাস-রিলিফগুলো পুনরুদ্ধার করা হয়।[১]

উপরের দিক থেকে দেখলে মসজিদের মূল নকশাটি ক্রস বারের মতো দেখা যেতো, যেমনটি প্রায়ই ইউরোপে গির্জার পরিকল্পনাগুলিতে ব্যবহৃত হয়। তবে এখন মসজিদটি সেলাঙ্গরের ইসলামিক ধর্মীয় বিভাগের (জেএআইএস) বর্গীয় কাস্টমাইজেশনের মতো দেখায়।

ইতিহাস সম্পাদনা

সুলতান সুলাইমান মসজিদটি ১৯৩২ সালে সমাপ্ত হয় এবং ১৯৩৪ সালে সেলাঙ্গরের তৎকালীন সুলতান সুলাইমান আলাউদ্দিন শাহ এর উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের সময়, মসজিদটি তৎকালীন সংঘবদ্ধ মালয়েশিয়ার (ফেডেরেল মালয় স্টেটস) বৃহত্তম মসজিদ ছিল।[২]

১৯৮৮ সালে সেলাঙ্গরের রাজধানী শাহ আলমের সুলতান সালাহউদ্দিন আব্দুল আজিজ মসজিদ সমাপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত সুলতান সুলাইমান মসজিদটির সেলাঙ্গরের রাষ্ট্রীয় মসজিদের মর্যাদা ছিল। ১৯৮৮ সালের পর থেকে সুলতান সুলায়মান মসজিদটি শুধু রাজকীয় মসজিদ হিসাবে থেকে যায়।[৩]

মসজিদটি ১৯১৫ সালের মার্চ মাস থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত পুনর্নির্মাণ কাজের জন্য জনসাধারণের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।পুনর্নির্মাণ কাজে ১২ মিলিয়ন রিঙ্গিত ব্যয় হয়েছিল।[৪]

রাজকীয় সমাধি সম্পাদনা

সমাধির তালিকা সম্পাদনা

এটি সুলতান এবং রাজপরিবারের সদস্যদের একটি তালিকা যাদেরকে এই মসজিদে সমাধিস্থ করা হয়েছে

সুলতানদের সমাধি সম্পাদনা

  • সুলতান স্যার আলাউদ্দিন সুলায়মান শাহ ইবনে আলমারহুম রাজা মুদা মুসা (মৃত্যু: ৩১ মার্চ ১৯৩৮)
  • সুলতান মুসা গিয়াসুদ্দীন রিয়া'ত শাহ ইবনে আলমারহুম সুলতান স্যার আলাউদ্দিন সুলায়মান শাহ (মৃত্যু: ৮ নভেম্বর ১৯৫৫)
  • সুলতান স্যার হিশামুদ্দীন আলম শাহ ইবনে আলমারহুম সুলতান স্যার আলাউদ্দিন সুলায়মান শাহ - ২য় ইয়াং ডি-পার্টুয়ান আগোং (১৯৬০) (মৃত্যু: ১ সেপ্টেম্বর ১৯৬০)
  • সুলতান সালাহউদ্দিন আবদুল আজিজ শাহ ইবনে আলমারহুম সুলতান স্যার হিসামুদ্দীন আলম শাহ - ১১তম ইয়াং ডি-পার্টুয়ান আগং (১৯৯৯–২০০১) (মৃত্যু: ২১ নভেম্বর ২০০১)

টেংকু আম্পুয়ান/পেমাইসুরি কবর (রাজ সঙ্গিনীদের সমাধি) সম্পাদনা

  • রাজা ফাতিমাহ বিনতে আলমারহুম সুলতান ইদ্রিস প্রথম মুর্শিদুল আল আজম রহমতউল্লাহ (মৃত্যু: ৮ এপ্রিল ১৯৮৩)
  • টেংকু পেমাইসুরী শরীফাহ মস্তুরা বিনতে সৈয়দ শাহাবুদ্দিন কেদাহ (মৃত্যু ১৯৫৮)
  • টেংকু আম্পুয়ান জেমাহ বিনতে রাজা আহমদ (মৃত্যু: ৮ এপ্রিল ১৯৭৩)
  • টেংকু আমপুয়ান রহিমাহ বিনতে আলমারহুম সুলতান আবদুল আজিজ লাংকাট (মৃত্যু: ২৭ জুন ১৯৯৩)

সেলেঙ্গোরের পাদুকা বোনদা রাজা / (রাজ সঙ্গিনীদের সমাধি) সম্পাদনা

  • রাজা নূর সাইদাতুল ইহসান বিনতে আলমারহুম টেংকু বদর শাহ (মৃত্যু: ১ জুন ২০১১)

রাজ পরিবারের সদস্যদের সমাধি সম্পাদনা

  • আর আজমি - মালয় অভিনেতা এবং গায়ক (মৃত্যু ১৯৭৭)
  • রাজা তুন স্যার উদা বিন রাজা মোহাম্মদ - সেলাঙ্গরে দ্বিতীয় মেন্তেরি বেসার (প্রধানমন্ত্রী) (১৯৪৮–১৯৫৩) এবং পেনাংয়ের প্রথম ইয়াং ডি-পের্টুয়া নেগেরি (গভর্নর) (মৃত্যু ১৯৭৬)
  • টেংকু খালাদিয়াহ বিনতি আলমারহুম সুলতান স্যার আলাউদ্দিন সুলায়মান শাহ (মৃত্যু: ২০১৩)
  • টেংকু আজমান শাহ ইবনে আলমারহুম সুলতান স্যার হিসামুদ্দিন আলম শাহ - টেংকু বেন্দাহারা সেলাঙ্গর (মৃত্যু ২০১৪)
  • টেংকু তোথ পুয়ান নূর সাদাহ বিন্তি আলমারহুম সুলতান স্যার আলাদ্দিন সুলায়মান শাহ (মৃত্যু ২০১৪)
  • টেংকু হাজা রায়হানী বিনতে আল-মারহুম সুলতান স্যার আলাউদ্দিন সুলায়মান শাহ (ব্রুনেইয়ের টেংকু আমপুয়ান ১৯৩৪–১৯৫০) (মৃত্যু ২২ সেপ্টেম্বর 1993)

যাতায়াত সম্পাদনা

সেরানাস গ্রুপের বাসের রুট ৭০২  KD14  কেটিএম ক্লাং থেকে জালান কোটা রাজা   হয়ে যেতে হয়।

আরও দেখুন সম্পাদনা

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Sultan puas hati kerja pulihara Masjid Diraja Sultan Suleiman"Selangorkini। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  2. "Exhibition on the art deco-inspired Sultan Suleiman Royal Mosque in Klang"। ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  3. "THE SULTAN SULEIMAN MOSQUE"। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 
  4. "RM12j pulihara Masjid Diraja Sultan Suleiman"Harian Metro। সংগ্রহের তারিখ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯