সুমন (ব্যান্ড সঙ্গীত শিল্পী)

বাংলাদেশী সংগীতশিল্পী
নিবন্ধটি বাংলাদেশী ব্যান্ড সঙ্গীত শিল্পী সুমনের উপর। ভারতের প্রখ্যাত গায়ক কবীর সুমন সম্পর্কে জানতে দেখুন কবীর সুমন

সাইদুস সালেহীন খালেদ সুমন (বেইজ-বাবা) (জন্মঃ ৮ জানুয়ারি, ১৯৭৩) বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড অর্থহীনের প্রতিষ্ঠাতা এবং দলনেতা। তিনি মূলত গায়ক এবং বেস গিটার বাজিয়ে থাকেন। তবে কখনো তাকে অ্যাকোস্টিক গিটার কিংবা কি-বোর্ড হাতেও দেখা যায়। তিনি মাত্র ১২ বছর বয়সে বেইজ গিটার বাজানো শুরু করেন। ১৬ বছর বয়সে ফিলিংস ব্যান্ড এর সাথে যোগ দেন। ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ১১ টি ব্যান্ডের সাথে কাজ করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি ওয়ারফেজ এ যোগদান করেন।[১] সঙ্গীত জগতে সুমন বেইজ-বাবা নামে বহুল পরিচিত।[২]

সুমন
'বেইজবাবা' সুমন
'বেইজবাবা' সুমন
প্রাথমিক তথ্য
জন্মনামসাইদুস সালেহীন খালেদ
জন্ম (1973-01-08) জানুয়ারি ৮, ১৯৭৩ (বয়স ৫১)
ঢাকা, বাংলাদেশ
ধরনহেভি মেটাল, প্রগ্রেসিভ মেটাল, হার্ডরক
পেশাসঙ্গীত শিল্পী, গীতিকার, প্রযোজক, অভিনেতা, মডেল এবং ব্যবসায়ী
বাদ্যযন্ত্রবেইজ গিটার, ভোকাল, গিটার, কী-বোর্ড
কার্যকাল১৯৯০–বর্তমান
লেবেলজি সিরিজ
ওয়েবসাইটaurthohin.com

ব্যক্তিগত জীবন সম্পাদনা

সুমনের স্ত্রীর নাম নাজিয়া সালেহীন খালেদ। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে, আহনাফ সালেহীন খালেদ এবং অরোরা সালেহীন খালেদ। তারা দুজনেই বোকা মানুষটা এলবামে গান করেন। ব্যক্তিগত জীবনে সুমন খালেদ গ্রুপের পরিচালক।

ছাত্র জীবন সম্পাদনা

বেজবাবা সুমন ঢাকা সিটি কলেজ এর ছাত্র, তিনি গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা থেকে ১৯৯০ সালে এস.এস.সি. পরীক্ষা দেন, তারপর সংগীতের জগতে প্রবেশ করেন।

সঙ্গীত জীবন সম্পাদনা

  • ১৯৮৬: সুমন তার রক সংগীতের জীবন শুরু করেন। এই বছরই সুমন 'ফ্রিকোয়েন্সি' নামের একটি ব্যান্ড গঠন করেন।
  • ১৯৯০: ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডে সুমন বেস গিটার বাজাতেন। এ বছর সুমনের তার ব্যান্ডের নাম বদলে 'রক ফ্যান্টম' রাখেন। 'সাইল্যান্স' ব্যান্ডে সুমন লীড গীটারিস্ট হিসেবে যোগ দেন। এর কয়েকদিন পর তিনি 'ফিলিংস'-এ বেস গীটারবাদক হিসেবে বাজানো শুরু করেন। এলাকার স্টুডিওতে বেস গীটারবাদক হিসেবে বাজানো শুরূ করেন।
  • ১৯৯২: বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ওয়ারফেইজ, ইন ঢাকা, সুইট ভেনম, রক ব্রিগেডে বেস গীটারবাদক হিসেবে বাজান। এই বছরই তার প্রথম অ্যালবাম 'সুমন ও অর্থহীন'-এর কাজ শুরু করেন।
  • ১৯৯৩: এই বছর সুমন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড ফিলিংস ত্যাগ করেন। তিনি একক অ্যালবাম করার পরিকল্পনা করেন। তার ইচ্ছা ছিল ভিন্ন ধারার গান করার। তিনি এমনভাবে একক গান করা শুরু করেন যাতে ব্যান্ডের পরিবেশটা একক গানেও বজায় থাকে। তিনি ফায়সাল এবং রাসেলের সাথে তার প্রথম গান করেন। তার গানে ড্রাম বাজিয়েছিল রুমি।
  • ১৯৯৪: 'জলি রজার' ত্যাগ করেন।
  • ১৯৯৫: 'শব্দ' নামের একটি ব্যান্ড গঠন করেন এবং এই ব্যান্ড থেকে কিছু গান রেকর্ডিং-এর কাজ শুরু করেন।
  • ১৯৯৬: 'শব্দ' ভেঙে যায়। 'ওয়ারফেইজে' যোগদান করেন।
  • ১৯৯৭: ওয়ারফেইজের চতুর্থ অ্যালবাম 'অসামাজিক'-এর কাজ শুরু হয়। জি-সিরিজ থেকে সুমনের প্রথম একক অ্যালবাম 'সুমন ও অর্থহীন' প্রকাশিত হয়। অ্যালবামটি ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। সমালোচকরাও নতুন ধারার এই গানটির প্রশংসা করেন।
  • ১৯৯৮: 'সুমন নতুন একটি দল গঠন করার পরিকল্পনা করেন। 'ফেইথ' ব্যান্ডের টিটি ও সেন্টু তার পরিকল্পনায় সহায়তা করে। আরো কয়েকজন সংগীতশিল্পীকে নিয়ে সুমন 'সুমন ও অর্থহীন' নাম দিয়ে ব্যান্ডের কার্যক্রম শুরু করেন।
  • ১৯৯৯: ওয়ারফেইজ ত্যাগ করেন। এই বছরই ব্যান্ডের নাম ঠিক হয় 'অর্থহীন'।
  • ২০০০: অর্থহীনের প্রথম অ্যালবাম 'ত্রিমাত্রিক' প্রকাশিত হয়। এই অ্যালবামটির জনপ্রিয়তা ছিল ব্যাপক। সুমনের নাম ওয়ারউইকের 'ফেমাস ইউজার লিস্ট'-এ লিপিবদ্ধ হয়। তিনি প্রথম এশিয়ান সংগীতশিল্পী হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন।
  • ২০০১: অর্থহীনের দ্বিতীয় অ্যালবাম 'বিবর্তন' প্রকাশিত হয়। উল্লেখ্য যে, বিবর্তন বাংলাদেশের ব্যান্ডসঙ্গীতের ইতিহাসে অন্যতম ব্যবসাসফল অ্যালবাম।
  • ২০০২: অর্থহীনের তৃতীয় অ্যালবাম 'নতুন দিনের মিছিলে' প্রকাশিত হয়। এই অ্যালবামে রয়েছে 'সাতদিন' নামের ২৮ মিনিট ৩২ সেকেন্ড এর একটি গান। এটি বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের ইতিহাসে দীর্ঘতম গান। সুমনের দ্বিতীয় একক অ্যালবাম 'স্বপ্নগুলো তোমার মত' প্রকাশিত হয়।
  • ২০০৩: অর্থহীনের চতুর্থ অ্যালবাম 'ধ্রুবক' প্রকাশিত হয়। সুমন অসুস্থ হয়ে পড়েন। সুমন আগের মত আর গান করতে পারবেন না বলেও শঙ্কা দেখা দেয়। সুমন মেটাল সঙ্গীত গাওয়া কমিয়ে দেন।
  • ২০০৪: সুমনের অসুস্থতার কারণে ব্যান্ডের প্রায় সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এই বছরই সুমন এম.টি.ডির (মাইকেল টবিয়াস ডিজাইন) অধিভুক্ত হন।
  • ২০০৫: সুমনের চোয়ালের হাড়ে মারাত্নক সমস্যা দেয়। চিকিৎসক বলেন যে, সুমনের আগের মত গান করতে পারার সম্ভাবনা খুবই কম। অর্থহীনের সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সুমন এবং বাকী সদস্যরা অর্থহীন ভেঙ্গে দেয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সুমন সুস্থ হয়ে উঠতে থাকেন। সুমন আবার গান গাওয়া শুরু করেন। এ বছর সুমন জন ডেনভারের গানের অনুবাদ করে 'মেঘের দেশে' নামের একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেন।
  • ২০০৭: সুমনের তৃতীয় একক অ্যালবাম 'বোকা মানুষটা' প্রকাশিত হয়।
সুমন ও অর্থহীন সম্পাদনা

একক ক্যারিয়ার শুরুর আগে ওয়ারফেইজ এবং ফীলিংস ব্যান্ডে বেজিস্ট হিসাবে কাজ করেন। ১৯৯৩ সালে "ফীলিংস" ব্যান্ড ছেড়ে দিয়ে প্রথম একক প্রজেক্ট "সুমন ও অর্থহীন" এ কাজ শুরু করেন। ১৯৯৭ সালের ঈদে অ্যালবামটি প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে "সুমন ও অর্থহীন" নাম নিয়েই পারফর্ম করেন।

ব্যান্ড পরিচিতিঃ (শুরুর সময়ে)

  • সুমনঃ ভোকাল, বেইজ এবং গীটার
  • টিটি (ফেইথ): ড্রামস
  • সেন্টু (ফেইথ): বেইজ গীটার
  • যুবায়েরঃ বাঁশি
  • আদনানঃ পারকিউশন
  • তন্ময়ঃ গীটার

বর্তমানে ব্যান্ডের সদস্যবৃন্দঃ

  • সুমন (গায়ক, বেজ, গীটার)
  • মার্ক ডন (ড্রামস)
  • শিশির (লিড গীটার, কি-বোর্ড)
  • মহান ফাহিম (লিড গীটার, একুস্টিক)

সুমনের প্রেরণা সম্পাদনা

অনেক গায়ক কিংবা ব্যান্ড সুমনের সঙ্গীত জীবনে পরোক্ষ প্রেরণা যুগিয়েছেন। সুমনের গানে তাদের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এদের মধ্যে আছেঃ

ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্র সম্পাদনা

  • এম.টি.ডি. (মাইকেল টোবিয়াস ডিজাইন) ৫ তারের বেস ( মাইকেল টোবিয়াস সুমনের জন্য এটি বিশেষভাবে তৈরি করে দেন)
  • ক্র্যাফট ৫ তারের সেমি-একোস্টিক বেস।
  • ভেরিএক্স একোস্টিক ৭০০।
  • লাইন ৬ বেস পড এক্সটি লাইভ।
  • এসডব্লিঊআর সুপার রেডহেড।
  • দোতারা

প্রাক্তন ব্যান্ডসমূহ সম্পাদনা

  • রক ফ্যান্টম (১৯৮৬-১৯৯২)
  • সাইলেন্স (১৯৯০-১৯৯২)
  • ফিলিংস (১৯৯০-১৯৯৩)
  • জলি রজার (১৯৯৩-১৯৯৪)
  • এসিস (১৯৯৩-১৯৯৪)
  • শব্দ (১৯৯৫-১৯৯৬)
  • ওয়ারফেইজ (১৯৯৬-১৯৯৯)

প্রকাশিত অ্যালবামসমূহ সম্পাদনা

একক সম্পাদনা

  • সুমন ও অর্থহীন (১৯৯৭)
  • কখনও (১৯৯৯)
  • যদি কভু (১৯৯৯)
  • একটু ঘুম (রক উইথ রেডিও ম্যানিয়া)
  • ওলটপালট (বাপ্পা উইথ রকারস)
  • স্বপ্নগুলো তোমার মত (২০০২)
  • মেঘের দেশে (২০০৫)
  • বোকা মানুষটা (২০০৭)
  • আজ এসেছি (২০১১)
  • প্রতিচ্ছবি (২০১২)
  • মা (২০১৩)
  • চাদর (২০১৩)
  • আমজনতা (২০১৩)
  • সউল ফুড পার্ট ওয়ান (ইন্সট্রুমেন্টাল অ্যালবাম) (২০১৬)

ব্যান্ড অ্যালবাম সম্পাদনা

  • অসামাজিক (ওয়ারফেইজ) (১৯৯৮)
  • ত্রিমাত্রিক (অর্থহীন) (২০০০)
  • বিবর্তন (অর্থহীন) (২০০১)
  • নতুন দিনের মিছিলে (অর্থহীন) (২০০২)
  • ধ্রুবক (অর্থহীন) (২০০৩)
  • অসমাপ্ত-১ (অর্থহীন) (২০০৮)
  • অসামপ্ত-২ (অর্থহীন) (২০১১)
  • ক্যান্সারের নিশিকাব্য (অর্থহীন) (২০১৬)

অন্যান্য সম্পাদনা

  • ফুয়াদ ফিচারিং “এখন আমি" (সুমন ও আনিলা) ৷ প্রকাশকাল ২০০৭ ৷

অসুস্থতা সম্পাদনা

২০১১ সালে তার পাকস্থলীর ক্যান্সার ধরা পড়ে। তারপর তিনি সার্জারী এবং কেমোথেরাপি এর মাধ্যমে ২০১৩ সালে ক্যান্সার মুক্ত হন। ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করা নিয়ে একটি গান করেন, যেটি 'অসমাপ্ত-২' এলবামে প্রকাশিত হয়। তারপর আবার ক্যান্সার ফিরে আসে এবং ১২ টি সার্জারির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে চট্রগ্রাম ও ঢাকায় শো করে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর অর্থহীন নিয়ে ভক্তদের মাঝে স্টেজ পারফরম্যান্সে ফিরে আসেন। [৩]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. "Why I lived happily despite being afflicted with cancer"। Youtube.com। ২০১৪-১১-১৭।  অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য); অজানা প্যারামিটার |2= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  2. "৯৬ ঘণ্টায় সমাপ্ত করেছি 'অসমাপ্ত ২' : বেসবাবা সুমন"। Banglanews24.com। ২০১১-১১-২৭। ২০১৪-০৪-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৬-২১ 
  3. "'Bassbaba' Sumon returns home after treatment"। unb.com.bd। ২০২১-০৮-০৮। ২০২১-০৮-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৮-০৮