সুভাষ মুখোপাধ্যায় (চিকিৎসক)

ভারতীয় চিকিৎসক

সুভাষ মুখোপাধ্যায় (জানুয়ারি ১৬, ১৯৩১ - জুন ১৯, ১৯৮১) একজন ভারতীয় চিকিৎসক ছিলেন, যিনি ভারতে প্রথম এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় নল-জাত শিশু দুর্গার সৃষ্টিকর্তা হিসেবে স্বীকৃত।[১] দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের নিকট তার গবেষণার ফল জানানোর ক্ষেত্রে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দ্বারা প্রচণ্ড ভাবে বাধাপ্রাপ্ত হন এবং হতাশ হয়ে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে জুন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।[২] তার জীবন ও মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তপন সিংহ এক ডক্টর কি মউত নামক হিন্দি চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন।[৩]

সুভাষ মুখোপাধ্যায়
বিজ্ঞানী সুভাষ মুখোপাধ্যায়
জন্ম(১৯৩১-০১-১৬)১৬ জানুয়ারি ১৯৩১
মৃত্যু১৯ জুন ১৯৮১(1981-06-19) (বয়স ৫০)
জাতীয়তাভারতীয়
নাগরিকত্ব(১৯৩১- ১৯৪৭) (ব্রিটিশ ভারত)
(১৯৪৭-১৯৮১) (ভারত)
মাতৃশিক্ষায়তন
পরিচিতির কারণ
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্র
প্রতিষ্ঠানসমূহ
ডক্টরাল উপদেষ্টাসচ্চিদানন্দ ব্যানার্জি

প্রথম জীবন সম্পাদনা

তিনি ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে কলিকাতা জাতীয় আয়ুর্বিজ্ঞান বিদ্যামন্দির থেকে এমবিবিএস পাশ করেন এবং ধাত্রীবিদ্যায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। তিনি ঐ বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শারীরবিদ্যা বিষয়ে বিএসসি ডিগ্রী অর্জন করেন এবং ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক সচ্চিদানন্দ ব্যানার্জীর অধীনে প্রজনন শারীরবিদ্যা বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইংল্যান্ড যান এবং ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যাপক জন লোরেনের সঙ্গে গবেষণা করে লিউটিনাইজিং হরমোনের পরিমাপ নির্ণয়ের এক নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করে দ্বিতীয়বার পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন।[৪]

গবেষণা সম্পাদনা

১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩রা অক্টোবর তিনি ভারতের প্রথম চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী হিসেবে এক নল-জাত শিশুর জন্ম দিয়ে ইতিহাস স্থাপন করেন। তিনি এই শিশুটির নাম রাখেন দুর্গা (কানুপ্রিয়া আগরওয়াল)।[৫][৬] ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিক প্যাট্রিক স্টেপটোরবার্ট জিওফ্রি এডওয়ার্ডস দ্বারা ওল্ডহ্যাম জেনারেল হসপিটালে পৃথিবীর প্রথম নল-জাত শিশু লুইস জন ব্রাউনের জন্ম দেওয়ার ৬৭ দিন পরে সুভাষের গবেষণার দ্বারা দুর্গার জন্ম হয়।[৭]

কিন্তু আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে তার গবেষণার সম্বন্ধে বক্তৃতা দিতে চাইলে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে অস্বীকার করে। এই গবেষণার স্বীকৃতি প্রদান না করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্যদপ্তর তার গবেষণার সত্যতা সম্বন্ধেই সন্দেহ প্রকাশ করে ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই নভেম্বর পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সুভাষের সমস্ত গবেষণা মিথ্যা বলে এই কমিটি রায় দেয়। শাস্তি স্বরূপ সুভাষকে রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি নামক প্রতিষ্ঠানের চক্ষু বিভাগে স্থানান্তরিত করে দেওয়া হয়, যার ফলে প্রজনন শারীরবিদ্যা সমন্ধে সমস্ত গবেষণা তাকে বন্ধ করে দিতে হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আমলাতান্ত্রিকতা ও পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসক সমাজ দ্বারা ক্রমাগত বিদ্রুপ ও অপমানে হতাশ হয়ে[৮] সুভাষ ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের ১৯শে জুন কলকাতায় নিজের বাসভবনে আত্মহত্যা করেন।[৩][৮]

স্বীকৃতি সম্পাদনা

টি. সি. আনন্দ কুমারের গবেষণার ফলে ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই আগস্ট হর্ষবর্ধন রেড্ডি বুরি জন্মগ্রহণ করলে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম নলজাত শিশু বলে গণ্য করা হয়।[৯] ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে আনন্দ কুমার কলকাতা শহরে অনুষ্ঠিত একটি বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে যোগ দিতে এলে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের গবেষণা নথিগুলি তার হাতে আসে। এই সমস্ত নথিগুলি যাচাই করে ও দুউরগার পিতা-মাতার সাথে আলোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ই ছিলেন প্রথম নল-জাত শিশুর স্রষ্টা।[৯] পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরকে পাঠানো গবেষণা সংক্রান্ত সুভাষের চিঠির কথা তিনি সংবাদমাদ্যমে প্রচার করেন।[৯] কানুপ্রিয়া আগরওয়ালা বা দুর্গা তার ২৫ তম জন্মদিনে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের এক স্মৃতিসভায় নিজের পরিচয় সর্বসমক্ষে জানিয়ে ঘোষণা করেন যে, সুভাষের গবেষণা মিথ্যে ছিল না।[১০]

তথ্যসূত্র সম্পাদনা

  1. Is an "Indian Crab Syndrome" Impeding Indian Science? ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৭ জুন ২০১৩ তারিখে sciencemag.org. Retrieved 20 August 2013
  2. "IVF Pioneer Wins Nobel Prize in Medicine"TopNews.co.uk। ১০ মে ২০১০। ২৫ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১২ 
  3. "Subhash Mukhopadhyay - the unlucky doctor behind India's first Test-tube baby"Sify.com। ৪ অক্টোবর ২০১০। ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১২ 
  4. সুভাষ মুখার্জী মেমোরিয়াল রিপ্রোডাক্টিভ বায়োলোজি রিসার্চ সেন্টারের ওয়েবসাইট ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৮ আগস্ট ২০১৩ তারিখে, সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জীবনী
  5. "Test tube triumph & tragedy - Nobel for UK scientist stirs memory of a Bengal doctor"The Telegraph (Calcutta)। ৫ অক্টোবর ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১২ 
  6. "Medicine Nobel for IVF pioneer"Hindustan Times। ৪ অক্টোবর ২০১০। ২১ অক্টোবর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১২ 
  7. Narayan, Pushpa (৫ অক্টোবর ২০১০)। "Indian lost test tube baby race to Edwards by 67 days"The Times of India। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১২ 
  8. "Honour fails to cheer doctor's wife"The Times of India। ১৪ অক্টোবর ২০০৩। ২১ এপ্রিল ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১২ 
  9. "Late honour for test tube pioneer"The Times of India। ৮ জানুয়ারি ২০০৪। ৬ নভেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১২ 
  10. Ghosh, Aditya (১৯ আগস্ট ২০০৫)। "It's official: Kanupriya's India's first test-tube girl"DNA। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০১২ 

বহিঃসংযোগ সম্পাদনা